তালহার দেশপ্রেম
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 2,127 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

জাকারিয়া আল হোসাইন
.
দাম্পত্ব্য জীবনের সুদীর্ঘ প্রায় বার বছর পর পিতা আবু হেলাল ও মাতা আকলিমা বেগমের কোল জুড়ে দুনিয়ায় আগমন ঘটে ফুটফুটে সুন্দর একটা ছেলে সন্তানের। খুশির আমেজ পড়ে যায় দেশ বিদেশের সকল আত্মীয় স্বজনের ঘরে ঘরে। আনন্দে আত্মহারা হন নবজাতকের দাদা ও দাদী। পূর্ব পরিকল্পনা মতে ছেলের নাম রাখা হলো প্রখ্যাত সাহাবী হযরত তালহা রাঃ এর নাম অনুসারে সাইফুর রহমান তালহা। পরিবারের সকলের আদর সোহাগ আর ভালোবাসায় বড় হতে লাগলো নবজাতক তালহা অর্থ্যাৎ সাইফুর রহমান তালহা। এটা সত্য যে তালহা ছোটবেলা থেকেই বাবার তেমন আদর পায়নি। মা, দাদা আর দাদীর কোলেই তার বড় হওয়া। তাঁর বাবা আবু হেলাল সাহেব ব্যবসার কাজে সদা ব্যস্ত। আজ ঢাকা যেতে হবে, কাল লন্ডন যেতে হবে, তারপরের দিন মিটিং আছে ইত্যাদি। এইতো গত মাসেও লন্ডনে গেছে এখনো বাড়ি ফেরেনি। এদিকে দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরো বারটি বছর। আজ একটু পরেই তালহার পিএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবে। তাই তালহা সারাটা দিন চিন্তায় মগ্ন ছিলো। অবশেষে ধেয়ে এলো কাঙ্খিত সময়। দাদা ল্যাপটপটা বের করে ডাটা কানেকশন দিলো। আর বললেন দাদুভাই তোমার রোল নাম্বারটা বলো?
তালহা তাঁর রোল নম্বর বললো। দাদু তখন রোল
সার্চ দিতেই ল্যাপটপের মনিটরে ভেসে
উঠলো তালহার রেজাল্ট। কিন্তু একি! তালহা পাশে নেই। দাদু তখন জোড়ে বললো
আলহামদুলিল্লাহ্! তালহা তুমি কোথায়?
কোথায় তালহার আম্মু, দাদী
এদিকে এসো। দ্যাখো দ্যাখো আমাদের
তালহা খুব ভালো রেজাল্ট করেছে। তালহা (এ+) পেয়েছে। সবাই আনন্দে আত্মহারা। মুহুর্তের
মধ্যেই ভিডিও কনফারেন্সে কথা হলো লন্ডনে
থাকা তালহার আব্বুর সাথেও। তাঁর আব্বুও খুব খুশি।
তালহা ততদিনে তাঁর দাদুর কাছে কুরআন পড়া শিখেছে। সে ছোট্টবেলা থেকেই অনেক
চালাক আর মেধাবী। সাথে সাথে জেদি,
কৌতুহল মুখর আর বইপোঁকাও বটে। এই বয়সে সে
অনেক গল্প আর উপন্যাস শেষ করেছে। সে
দাদুর সাথে গল্প করতে করতে দাদুর রুমে
গেলো। নতুন কভারের একটি বই দেখতে পেলো
টেবিলের উপরে। প্রচ্ছদটা অত্যান্ত সুন্দর আর
ঝকঝকে। বইটি হাতে নিলো এবং ভালোভাবে
দেখলো। বইটির নাম ‘বিশ্বনবীর জীবনি’।
বিশ্বনবীর নাম দেখেই তাঁর কৌতুহল বেড়ে
গেলো। দাদুকে বলল, দাদু বইটি কি পড়তে
পাড়ি? অবশ্যই কেন নয় ! হাসিমুখে জবাব
দিলেন দাদু। তালহা তখন দাদুর টেবিলে বসেই
বইটি পড়তে শুরু করলো।
এখন তো আর ক্লাসের পড়া নেই। বইটি ভালো
করে বুঝে বুঝে পড়া যাক। মনে মনে ভাবলো
তালহা। ঠিক তখনি কানে এলো আসরের
আযান। দাদু তো মসজিদ পাগল মানুষ।তাতে সাথী হয়েছে তালহা। তালহা আর দাদু
মসজিদে জামায়াতের সাথে নামাজ পড়লো।
নামাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতেই ঘটে গেলো
বিশাল এক দুর্ঘটনা। দাদু একটু সামনে আর
তালহা পিছুপিছু হাটছে। রাস্তা পাড় হতেই
তালহার চিৎকার। দাদু চোখ ফিরাতেই দেখে
তালহার একটা পা গাড়ি নিচে। দাদুও তালহা
বলে চিৎকার করে উঠল! মুহুর্তেই অনেক লোক
জড় হলো। ট্রাফিক পুলিশও আসলেন। দ্রুত
হাসপাতালে নেওয়া হলো তালহাকে।
ততক্ষণে সে অজ্ঞান ছিলো। অনেক রক্ত
ঝরেছে পা থেকে। ভাগ্য যে শুধু একটা পা
ভেঙ্গে গেছে। আর তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
কিছুক্ষণ পড়ে ব্যান্ডেজ অবস্থায় বাড়িতে
আনা হলো তালহাকে। মা আর দাদী দেখেই
তো কান্না। কী হয়েছে তালহার? এ কেমন
করে হলো? ইত্যাদি শব্দে মুখরিত পুরো বাড়ি।
তালহা ততক্ষণে মুখ খুললো কেঁদো না মা।
ডাক্তার বলেছে আমি দ্রুত ভালো হয়ে যাবো।
কানে আসলো মাগরিবের আযান। কিন্তু
নামাজ! দাদু আমি কি নামাজ পড়তে পারবো
না। অবশ্যই দাদুভাই। আগে সুস্থ হয়ে নাও
তারপর আবার নামাজ পড়তে যাবো। না দাদু
আমি তায়াম্মুম করে ইশারায় নামাজ পড়বো।
কেননা আমাদের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা
বইয়ে তায়াম্মুমের বিধান আছে। নামাজ কাযা
না করতে বলা হয়েছে। যে কিনা নামাজ
কাযা করে সে জান্নাতে যাবে না। আমি তো
এখনো পাগল হইনি। আমি ইশারায় নামাজ
পড়বো। চোখ বন্ধ করে যেন কথাগুলো বললো তালহা।
তালহার কচি মনে এমন সব কথা শুনে উপস্থিত
সবাই যেন তাঁক লেগে গেলো। এতটুকু একটা
ছেলে এত কথা বলতে পারে। সকলে বলাবলি
করতে লাগলো।
এভাবে প্রায় পাঁচ দিন কেটে গেলো। তালহার
বাবাও বাড়ি আসলেন। একদিকে আনন্দ আর
অন্যদিক অশ্রুসিক্ত মন। তোমার মত ছেলের
এমনটি হবে ভাবতেই পারিনি তালহা। কেমন
লাগছে তোমার আব্বু? আর মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন তালহার পিতা আবু হেলাল সাহেব।
আজ সকালে অবশ্য ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে।
তালহা এখন প্রায় সুস্থ হওয়ার পথে। এভাবে
কেটে গেলো আরো কয়েকদিন। তালহা এখন
মোটামুটি সুস্থ। হাটতে পারে দৌড়াতেও
পারে। মোটকথা আগের মতই প্রায়।
আজ সকালে সবাই ঠিক আগের মত খাওয়া শেষ করলো।
হঠাৎ আবু হেলাল বললেন সবাই আব্বার
রুমে যাই। কিছু কথা আছে। তখন সবাই দাদুর
রুমে আসলেন।হেলাল সাহেব তালহার দাদুকে
বললেনঃ
: আব্বা, আমাদের লন্ডনের ফ্লাট বাসাটার
কাজ শেষ হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্।
: আলহামদুলিল্লাহ্। অনেক খুশির খবর। বললেন
তালহার দাদু।
: তো চাচ্ছি যে, আমরা সেখানে থেকে যাই।
আর দেশে তো তেমন শিক্ষার পরিবেশ নাই।
ওদিকে তালহাকে আবার ভর্তির সময় হয়ে
আসছে। তাই ঠিক করেছি তালহাকে লন্ডনে
ভালো একটা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা যায়
কিনা।
: তা তো অনেক ভালো। তালহা এই বয়সে যতটা
দুরন্ত বড় হলে তো আরো অনেক দুরন্ত হবে।
তাতে আবার বিদেশের পড়ালেখা। হাসিমুখে
টুপটুপ করে বললেন তালহার দাদী।
: দাদুও বললেন, অবশ্যই কেন নয়।
: তাহলে আমরা আগামী চারদিনের মধ্যেই
ল্যান্ড করছি।
কিন্ত পিতামাতা একবারেও জানতে বা বুঝতে
চায়নি তালহার কি মতামত এতে? সবার কথা
যখন শেষ তখন তালহা হঠাৎ বলে উঠলোঃ
: না আব্বু। এটা হতে পারে না।
অমনি যেন আসমান ভেঙ্গে মাথায় পড়লো
হেলাল সাহেবের। আর ভাবতে থাকে কি
বলতে চাচ্ছে ছেলেটা? হয়তো দেশের বাইরে
থাকার কারণে ছেলের কথা বলার ভাব
ভঙ্গিমা ঠিক জানা নাই তাঁর।
: আমি দেশ ছেড়ে কোথ্থাও যাবো না।
: কেন আব্বু? আমাদের দেশে কি শিক্ষার
পরিবেশ নেই। তাহলে বড়আব্বু, মেজআব্বু আর
আপনি কিভাবে এত বড় ব্যবসায়ী হতে
পাড়লেন? আপনারা কি লন্ডনে গিয়ে
পড়ালেখা করেছিলেন?
: অবশ্যই বলবেন, না।
: তাহলে আমাকে নিয়ে কেন টানাটানি
করছেন।
ছেলের কথা শুনে হতবাক হচ্ছেন আবু হেলাল
সাহেব।
: তাছাড়া রাসুল সাঃ নিজের দেশকে অনেক
ভালোবাসতেন। তিনি বলেছেন দেশপ্রেম
ঈমানের অঙ্গ। নিজের দেশকে ভালোবাসা,
দেশের জন্য কাজ করা প্রত্যেক মুসলমানের
নৈতিক দায়ীত্ব।
: রাসুল সাঃ কে যখন দেশ থেকে বের করে
দেয়া হয়েছিলো। তিনি অনেক কেঁদেছেন আর
বলেছেন,
“হে মাতৃভূমী, আমি তোমাকে কোনদিন ছেড়ে
যেতাম না।যদি ওরা আমাকে বাধ্য না করতো।”
“হে মাতৃভূমী, আমি তোমাকে অনেক
ভালোবাসি, তোমাকে কিছুই দিতে পাড়লাম
না। আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
: আমরা রাসুলের তুলনায় কিছুই নই। অথচ নিজের
দেশকে ভালোবাসা তো দূরের কথা কুটসা
রটনা করে বেড়াই।
: এটা কি ঠিক আব্বু?
: অতএব, আমি এই দেশেই বড় হতে চাই। এই
দেশকে ভালোবাসতে চাই। দেশের জন্য কাজ
করতে চাই।
: আমাকে ক্ষমা করবেন আব্বু।
ততক্ষণে যেন হুশ এলো হেলাল সাহেবের।
কান্না আর আবেগ ভরা মন নিয়ে জড়িয়ে
ধরলেন ছেলেকে। আর বলতে লাগলেন, তুমি
আমার চোখ খুলে দিলে তালহা। এই বয়সে তুমি
এত কিছু জেনেছ। সত্যিই আমি গর্বিত। আর
হ্যা, তোমাকে এই দেশেই ভর্তি করাবো। এই
বাংলাদেশেই তোমাকে অনেক বড় করে গড়ে
তুলবো ইনশাআল্লাহ্।
তখন সকলেই হাসতে লাগলো।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

৩ Comments

  1. আখলাকুর রহমান

    বার – বারো (“বার” শব্দ এখন লেখা হয় না)

    দ্যাখো – দেখো

    তালহা (এ+) – বেরিকেটে যদি লিখে দেন তাহলে বেরিকেটের বাইরে ইংরেজিতে লিখবেন

    দাদু তখন জোড়ে – জোরে

    অত্যান্ত – অত্যন্ত

    পড়তে পাড়ি – পারি

    রাস্তা পাড় – পার

    কিছুক্ষণ পড়ে – পরে

    কেন নয়। – নয়? (“?” হবে শেষে)

    কিন্ত – কিন্তু

    কি মতামত – কী

    হতে পাড়লেন? – পারলেন

    সুন্দরভাবে শিক্ষণীয় বিষয় উপস্থাপন করেছেন।
    সহজ কিছু বানান ভুল হয়েছে।
    লেখার থিমটা চমকপ্রদ ছিল।
    প্রত্যেক শিশুকে ছোটকাল থেকে ইসলামী শিক্ষা দেওয়া উচিৎ।
    শুভ কামনা রইল।

    Reply
  2. আফরোজা আক্তার ইতি

    চমৎকার আর শিক্ষামূলক একটি গল্প পড়লাম। খুবই ভালো লাগল। সব বাবা মায়েরই উচিৎ সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই ইসলামের পথে পরিচালিত করা, সঠিক শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলা। তাদের সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলার সময় এটাই। তালহাকে তার দাদু-দাদী সুন্দরভাবে গড়ে তুলেছেন যার কারণে সে এখনই নামাজের প্রতি আগ্রহী এবং দেশপ্রেমিক। এই গল্প পড়ে অনেকেই শিক্ষা নিতে পারবে।
    বানানে বেশ কিছু ভুল আছে।
    দাম্পত্ব্য- দাম্পত্য।
    বার- বারো।
    অর্থ্যাৎ- অর্থাৎ।
    জোড়ে- জোরে।
    জীবনি- জীবনী।
    ভাগ্য যে শুধু- ভাগ্য ভালো যে শুধু।
    হাটতে- হাঁটতে।
    পাড়লেন- পারলেন।
    দায়ীত্ব- দায়িত্ব।
    হুশ- হুঁশ।
    হ্যা- হ্যাঁ।

    Reply
  3. মাহফুজা সালওয়া

    অসম্ভব সুন্দর, শিক্ষনীয়, শিশুতোষ গল্প।
    ভীষণ ভালো লেগেছে।
    ঘরে ঘরে আজ তালহার প্রয়োজন।
    প্রয়োজন ইসলাম, সুন্নাহর যথার্থ প্রয়োগ!
    আল্লাহ আপনার লেখনীকে সাদকায়ে জারিয়াহ হিসেবে কবুল করুন -আমিন।
    বানানের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকবেন।
    শুভকামনা রইল????

    Reply

Leave a Reply to আফরোজা আক্তার ইতি Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *