গল্প লেখকঃ
মাহমুদ হাসান
(মার্চ – ২০১৮)
…………
পড়ন্ত বিকেল, আসে পাশে ঝিঁঝিঁ পোঁকার ডাক, সূর্য যেন তার দায়িত্ব থেকে অবসর নিতে চলেছে, দিনের অবসানের সাথে সাথে একটি জীবনেরও অবসান।
টেবিলটার উপর কি যেন একটা কাগজের লিখা, পাশেই কিছু স্মৃতি জর্জরিত জিনিস, দুপাতায় লিখা নোট, বাবার হাতের লিখা।
“জীবনের ইতিবৃত্ত টেনে গেলাম, তোর আর তোর বউয়ের স্বাধীনতাটুকু হরন করতে চাই না। যুদ্ধে যেটা করতে পারেনি, তোরা তা করে দিয়েছিস, আমাকে হারিয়ে দিয়েছিস।
যখন যুদ্ধ চলে তখন তুই ৫ মাসের, তোর মা মারা যায়, তোকে কিভাবে মানুষ করবো সেটা ভাবতে ভাবতে কখন যে তুই বড় হয়ে গেলি টের পাই নি। সত্যি খোকা তুই অনেকটা বড় হয়ে গেছিস। তোকে এখন আর খাইয়ে দিতে হয় না। রাতে গল্প শুনিয়ে ঘুম পারাতে হয় না।
জানিস খোকা সেদিন তোর বউ আমাকে কি বলেছে? আমি নাকি পেটুক, বসে বসে শুধু খাই। আর তুইও তোর বউ এর কথা শুনে আমাকে যা তা বল্লি?
জানিস খোকা, তুই খেতে পারতিস না, তোকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছি। তুই যেন খেতে পারিস তার জন্য মান্যত করেছি কত মাজারে তোর সেগুলো জানার কথা না। তোর মা তো স্বার্থপর তাই আমাকে রেখে আগেই চলে গেছে।
জানিস বড্ড বাজে মহিলা ছিল, বড় বেহায়া মহিলা ছিল। তাই আমি যখন বলতাম,”ছেলেকে এত আদর করো যদি ছেলে আমাদের ভাত না দেয়?” তোর মা বুক ফুলিয়ে কি বলতো জানিস?
“আমার খোকে কখনই এমনটি করবে না”
আজ ইচ্ছে করছে বেহায়া মহিলাটাকে ডেকে দেখাতে, দেখ সুদিপ্তা দেখ, তোর ছেলে বড় হয়ে গেছে। ছেলের আর এখন আমাকে প্রয়োজন নেই। তোর ছেলে এখন আর আমাকে ভাত দেয় না।
তোর বউতো আমাকে বিষ দিয়ে সেই কবেই মেরে ফেলতে চেয়েছিলো। তার পাপের বোঝাটা কমাতে দুধটা খাই নি। বার বছরে তোর বউ কোনদিন পানিটা এগিয়ে দেয় নি। আজ হাতে দুধের গ্লাস দেখে অবাক হয়েছিলাম।
জানিস খোকা, সবাই বলে নতুন বিয়ে করলে নাকি তার আগের ঘরের সন্তানদের ভুলে যায়। তোর কথা ভেবে ২৬ বছর বয়সকালেও কোন নারী সঙ্গ নেই নি।
আর বউমা, তুমিতো পরের মেয়ে, তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। দোয়া করি যেন তুমি তাড়াতারি মরে যাও। না বদ দোয়া না, ভাল দোয়া। কারন যে কষ্টগুলো তুমি আমাকে দিলে, যে কষ্ট একটা যোদ্ধাকে হার মানায়, সে কষ্ট তুমি সহ্য করতে পারবে না।
তোমারওতো ছেলে আছে। আমার মত যেন আমার শত্রুরও না হয়। আর খোকাকে বলে দিও, ও যেন বেশি জোরে না হাটে তাহলে ও হাপিয়ে যায়, দম ছাড়তে পারে না। তোমার কথাতো শোনে, ওই ছাইপাশ কম খেতে বলো।
আর তোমার কাছে একটা অনুরোধ, তোমাদের পয়সা দিয়ে আমার দাফন কার্য করো না। আমার পান্জাবির পকেটে তোমার শাশুরির জমানো কিছু টাকা আছে। মহিলাটা অনেক কষ্টে জমিয়েছে। মরার সময় আমার হাতে দিয়ে গিয়েছিল। সে টাকা দিয়ে আমার দাফন কার্য করো।”
ইতি,
জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক
osthir hoise dst
Thanks dst????
বন্ধু ভাল লিখছিস
ধন্যবাদ বন্ধু????
Thanks our canvass for publishing my story.