লেখক:রাহিম মিয়া।
‘
‘
—জনাব রফিকুল সাহেব প্রতিদিনের মতো আজও বের হয়ে গেলেন কর্মরত শহরে অফিসের উদ্দেশ্যে। তিনি যে কোটিপতি তেমন কিন্তু নয়, তবে চালচলন সেইরকমই। কিন্তু উনার একটাই সমস্যা ছিল মাঝে মাঝে ভুলে যাওয়া। এক কথায় মন ভুলা যাকে বলে। উনার বস উনার প্রতি অনেক বিশ্বাসী, যার জন্য সবকিছু উনার সাথে শেয়ার করে। এমন কি মাঝে মাঝে টাকাও দিয়ে রাখে। আজকেও সেইরকমভাবে বসের এক ব্রিটকেস বড়া টাকা নিয়ে বের হলেন অফিসের উদ্দেশ্যে বসের কাছে দিবে বলে। রাস্তাতে বের হয়ে উনার মনে হল, যে উনি চাকরটাকে দিয়ে জুতাটা রং করিয়ে চিকচিক বানাতে ভুলে গেছে। তাই গাড়ির থেকে নেমে রাস্তার পাশে জুতাটা রং করাবে বলে নামলেন। কিন্তু ব্রিটকেস তো আর গাড়িতে রেখে আসা যায় না। কারণ সেটার মাঝে অনেক টাকা ছিল, তাই হাতেই রাখতেন সব সময়। কি জানে যদি চুরি হয়ে যায়, তাহলে তো উনাকেই এই টাকা দিতে হবে। নামার পর উনি দেখলেন একটা পিচ্চি ছেলে এই ধরনের কাজ করছে জুতা রং করার। তাই নিজের জুতাটা এগিয়ে দিলেন আর ছেলেটাকে বললেন ভালো করে যাতে রং দিয়ে চিকচিক বানিয়ে দেয়। রং করার শেষে টাকা দেওয়ার সময় উনি ব্রিটকেসটা একটু হাতের থেকে রেখে ম্যানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিলেন আর তাড়াহুড়া করে গাড়িতে উঠে চলতে লাগলেন। কারণ হাতের ঘড়ি দেখে উনি বুঝতে পারলেন অফিসের জন্য আর বেশি সময় নেই উনার কাছে। অফিসে যাওয়ার সাথে সাথেই বসের ডাক আসলো বসের কাছে আসার জন্য। তাই চেয়ারে বসতে আর পারলেন না, সাথে সাথেই বসের কাছে চলে গেলেন।
>>স্যার আপনে কি আমাকে আসতে বলেছেন?
>>ও হ্যাঁ আসুন রফিকুল সাহেব। চেয়ারে বসুন কথা আছে।
>>জ্বী বলেন স্যার কি কথা?
>>আপনাকে না কয়েকদিন আগে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম রাখার জন্য। সেটা তো আজ আনতে বলেছিলাম গতকাল আপনাকে। তা সেটা কি এনেছেন?
>>ও সিট। স্যার আমি তো টাকা রাস্তার পাশে ভুলে ফেলে চলে এসেছি। এখন কি হবে?
>>আপনাকে নিয়ে আর পারলাম না, আজ সকালেও আপনাকে ফোনে বারবার বলেছি সাবধানে আসবেন। আর টাকার ব্রিটকেস সব সময় হাতে রাখবেন। কারণ আপনার যে মন ভুলা অভ্যাস তা তো আমি জানি। এখন বসে রয়েছেন কেন? দৌড় দেন তাড়াতাড়ি।
>>আচ্ছা স্যার।
—তারপর জনাব রফিকুল সাহেব বিদ্যুৎ গতিতে গাড়িতে করে সেখানে গেলেন, যেখানে জুতা রং করেছিলেন। গিয়ে ছেলেটিকে দেখলেন বসে রয়েছে নিজের জায়গাতে। কিন্তু তাঁর ব্রিটকেস নেই যেখানে ভুলে রেখে গিয়েছিলেন। উনি যেন দুনিয়া অন্ধকার দেখছে। কারণ এত টাকা উনি এখন দিবে কীভাবে। ভাবতে লাগলেন ছেলেটাকে জিজ্ঞাসা করলে কেমন হয়। ব্রিটকেস তো ওর সামনেই রেখে গিয়েছিলাম। যেইভেবে সেইকাজ উনি কথা বলার জন্য এগিয়ে গেলেন।
>>আচ্ছা বাবা তুমি কি কালোর রং এর কোনো ব্রিটকেস পেয়েছ?
>>জ্বী পেয়েছি তো। কিন্তু আপনাকে আগে বলতে হবে সেটা পুরাটা দেখতে কীরকম আর নাম কি লেখা আছে ব্রিটকেসে?
–তারপর তিনি তাঁর ব্রিটকেসের বর্ণনা দিলেন।
>>ও আচ্ছা তাহলে এটা আপনারই। এই নেন আপনার ব্রিটকেস আর সবকিছু ঠিক আছে কিনা দেখে নিন।
>>হা হা হা কি দেখবো। এটার মাঝে তো লক লাগানো আছে। জানো বাবা ব্রিটকেসের মাঝে কি আছে ১০ লক্ষ টাকা। তবে বাবা তোমার মতো সতত্যাবাদী মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। আর ব্রিটকেসটা যাতে ভুল মানুষের হাতেও না যায় সেইদিকেও খেয়াল রেখেছো। সত্যিই সতত্যাবাদী লোক তুমি, আচ্ছা বাবা তুমি কি পড়ালেখা করো?
>>জ্বী নবম শ্রেনীতে আর আব্বু মারা গিয়েছে কয়েকমাস আগে। তাই আব্বুর রেখে যাওয়ার কাজটাও করি সাথে পড়ালেখাটাও চালিয়ে যাচ্ছি।
>>অনেক ভালো তো। আচ্ছা আমি যদি তোমার পরিবার আর তোমার পড়ালেখা সবকিছুর দায়িত্ব নেয় তাহলে কেমন হয় বলতো?
>>আপনে আমার জন্য এতসব করবেন কেন?
>>কারণ আমি তোমার মাঝে সতত্যা খুঁজে পেয়েছি। যা মহৎগুন সবার মাঝে থাকে না। আজ থেকে তুমি এইসব কাজ করবে না। আর তোমার পরিবার ও তোমার সব দায়িত্ব আমার। তাঁর আগে চল স্যারের সাথেও তোমার পরিচয় করিয়ে দিবো। পড়ালেখার শেষে চাকরিটা আমাদের এইখানেই করবে। স্যার দেখলে হয়তো অনেক খুশি হবে এইরকম সোনার টুকরার ছেলেকে। ও হ্যাঁ তুমি তো তোমার নামই বলনি আমাকে।
>>জ্বী আমার নাম রাহিম। আর আপনে আমার জন্য এতসবকিছু করবেন সত্যিই ভাবতে পারছি না।
>>আরে ছেলে কান্না করছিস কেন? বোকা ছেলে একটা। কান্না করবে না একদম, চল এইসব রেখে আমার সাথে।
—–তারপর জনাব রফিকুল সাহেব ছেলেটাকে নিয়ে উনার বসের কাছে গেলেন টাকা সহকারে।
>>স্যার আসতে পারি কি?
>> হ্যাঁ আসুন রফিকুল সাহেব। তা টাকাটা পেয়েছেন কি? আর সাথে ছেলেটা বা কে শুনি?
>>জ্বী স্যার টাকা পেয়েছি এই নেন। আর জানেন স্যার আজ ১০ লক্ষ টাকা ফিরে পেয়েছি শুধু এই ছেলেটার জন্য। আমি তো বলেই দিয়েছি ওর মতো সতত্যাবাদী মানুষের সব দায়িত্ব আজ থেকে আমার। আপনাকে সব খুলে বলছি শুনেন। ওর বাবা নেই, পড়ালেখা করে নবম শ্রেনীতে আর বাবার রেখে যাওয়ার জুতা সেলাই ও রং দেওয়ার কাজ করে। জানেন স্যার রাহিম ব্রিটকেসটা যত্ন করে রেখেছিল নিজের কাছে। আর আমি যখন জানতে চাইলাম পেয়েছে কিনা আমাকে বর্ণনা দিতে বললো সেটার। যাতে ভুল মানুষের হাতে না যায়। এমন সতত্যাবাদী আর উপকারী মানুষ কোথায় পাবেন। যাইহোক ওর পরিবার আর ওর সব দায়িত্ব আমি নিজের কাঁধে নিয়ে ফেলেছি। পড়ালেখা শেষে আমাদের এইখানেই চাকরি করবে।
>>ও আচ্ছা সব বুঝতে পারলাম। তবে রফিকুল সাহেব আপনে কিছু মনে না করলে ওর সবকিছুর দায়িত্ব আমাদের কোম্পনি থেকে নেওয়া হবে। ওর মতো খাঁটি ছেলে পেলে আর কিছু লাগে না। তাই আমি ভেবে নিয়েছি ওর সবকিছু কোম্পনির পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। পড়ালেখা শেষে তো এইখানেই চাকরিও করবে তাই না।
>>আচ্ছা স্যার আপনে যেটা ভালো বুঝেন।
(সমাপ্ত)
পূনর্জন্ম
জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...
ভালো লিখছেন শুভ কামনা রইল আপনার জন্য…
আপনার মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
বড়া- ভরা
ব্রিটকেস-ব্রিফকেস।
তাঁর-তার
গুন -গুণ
এতসবকিছু- এতসব কিছু
কোম্পনি-কোম্পানি
পুরাতন থিম। কাঠুরে আর জলপরির গল্পের মত।
তবুও ভাল।শুভ কামনা।
আপনার মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আর সঠিক বলে দেওয়ার জন্য।
গল্পের মূল বিষয় খুব চমৎকার। ছেলেটি তার সততার জন্য খুব সুন্দর একটি পুরষ্কার পেয়েছে, যার ফলে তার জীবন বদলে যাবে। এই গল্পের থেকে অনেকেই বুঝতে পারবে সততার মূল্য কতটুকু এবং এর পুরষ্কার কতটা সুন্দর হতে পারে। আরেকটু যত্ন নিয়ে লিখলে আরো ভালো লেখা হত। বানানে একটু ভুল আছে। সঠিক করে দিচ্ছি।
মনভুলা- মন ভোলা।
ব্রিটকেস- ব্রিফকেস।
বড়া- ভরা।
চিকচিক- চকচকে।
আপনে- আপনি।
ও সিট- ওহ শিট!
সত্যতাবাদী- সত্যবাদী।
নেয়- নেই।
সত্যতা- সততা।
কোম্পনি- কোম্পানি।
আপনার মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আর সঠিক বলে দেওয়ার জন্য
ভালো লিখেছেন।তবে কমন থিম।
তেমন বর্ণনা হয়নি।আর একটু বড় করলেও পারতেন।
সততার জন্য তো আল্লাহর কাছে পুরস্কার আছেই।তবে এ জীবনে সে খুব ভালো মানুষ।মানুষের ব্যবহারেই বুঝা যায়।সে কেম হবে।যদিও গরীব তবে টাকার প্রতি লোভ নেই।
বানান ভুল আছে
সত্যতাবাদি–সত্যবাদি
নেয়–নেই
কোম্পনি–কোম্পানি
বড়া–ভরা
চিকচিক–চকচক
গুন–গুণ
সত্যতা–সততা
ওসিট–ওহ শিট
শুভ কামনা রইলো।
আপনার মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আর সঠিক বলে দেওয়ার জন্য
দারুণ লিখেছেন।
সততা এমন এক জিনিস যা টাকা দিয়ে কেনা যায়না,যার মধ্যে এই গুণটি থাকে তার জীবনে কোন দুঃখ কষ্ট থাকে না।কারণ তিনি এক আল্লাহর উপর ভরসা করেন।তিনি তার সততার পুরষ্কার একদিন না একদিন পাবেনি।
রফিকুল সাহেবের সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিলো।বানানে তেমন ভুল নেই।
শুভকামনা রইলো।
বস জানতেন সে মন ভুলো, তাই টাকার ব্যাগটা পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিতভাবে অন্যভাবে রেখেছিলেন।
বস এটাও জানতেন যে উনি ভুলো মনের মানুষ। উনার ভুলো মনের কারনেই উনি এতগুলো টাকার কথা একটু পরেই ভুলে যাবেন। যে ব্যক্তি এতগুলো টাকার কথা ভুলে যেতে পারে সে আর যাই হোক অসত হওয়ার যোগ্যতা অন্তত তার নাই। টাকার কথা বরং বেশি মনে হলেই তো বিপদ! এক পর্যায়ে লোভ জাগতে পারে।
ছেলেটি বুঝা যাচ্ছে যে ব্যগটি ভালোমতো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছে। নয়তো সে পরীক্ষা নিতে পারতোনা৷ এটাও সত্য, তালা লক থাকার কারনে সে ব্যাগের ভিতর কি আছে দেখতে পারেনি। তাই ব্যাগের ভিতর কত টাকা থাকতে পারে সে সেটা বুঝতেই পারেনি। এক কথায় বলা যায়, ছেলেটি পরিশ্রমী, দায়িত্বশীল, আগ্রহী কিন্তু অতি আঘ্রহী নয়,সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণী এবং লক্ষ্যপূর্ণ করতে বদ্ধ পরিকর, বিচক্ষণ তবে চতুর নয়।
বস মানেই বস। সে নিশ্চিতভাবে রফিকুল সাহেবের উত্তরসূরী ছেলেটির মাঝে দেখতে পাচ্ছিলেন। তাই ভুলো মনের রফিকুল সাহেবের উপর বেশি ভরসা না করে একই সাথে সবার কাছে নিজেকে তুলে ধরে ছেলেটির লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার ছলে ছেলেটিকে নিজের কাছেই আটকে রাখলেন।
বস জানতেন সে মন ভুলো, তাই টাকার ব্যাগটা পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিতভাবে অন্যভাবে রেখেছিলেন।
বস এটাও জানতেন যে উনি ভুলো মনের মানুষ। উনার ভুলো মনের কারনেই উনি এতগুলো টাকার কথা একটু পরেই ভুলে যাবেন। যে ব্যক্তি এতগুলো টাকার কথা ভুলে যেতে পারে সে আর যাই হোক অসত হওয়ার যোগ্যতা অন্তত তার নাই। টাকার কথা বরং বেশি মনে হলেই তো বিপদ! এক পর্যায়ে লোভ জাগতে পারে।
ছেলেটি বুঝা যাচ্ছে যে ব্যগটি ভালোমতো খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছে। নয়তো সে পরীক্ষা নিতে পারতোনা৷ এটাও সত্য, তালা লক থাকার কারনে সে ব্যাগের ভিতর কি আছে দেখতে পারেনি। তাই ব্যাগের ভিতর কত টাকা থাকতে পারে সে সেটা বুঝতেই পারেনি। এক কথায় বলা যায়, ছেলেটি পরিশ্রমী, দায়িত্বশীল, আগ্রহী কিন্তু অতি আঘ্রহী নয়,সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণী এবং লক্ষ্যপূর্ণ করতে বদ্ধ পরিকর, বিচক্ষণ তবে চতুর নয়।
বস মানেই বস। সে নিশ্চিতভাবে রফিকুল সাহেবের উত্তরসূরী ছেলেটির মাঝে দেখতে পাচ্ছিলেন। তাই ভুলো মনের রফিকুল সাহেবের উপর বেশি ভরসা না করে একই সাথে সবার কাছে নিজেকে তুলে ধরে ছেলেটির লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার ছলে ছেলেটিকে নিজের কাছেই আটকে রাখলেন।
overall, জটিল হিসাব, সহজ উপস্থাপন