#লেখিকা :-জিন্নাত রিমা
#গল্প :- সৎ পথের উপার্জন
.
আব্বা প্রায় সময় আমাকে ইসলামিক উপদেশ দিতেন। নামাজ পড়ার তাগাদা দিতেন। আমি আস্তিক না। তবে পুরোপুরিভাবে নাস্তিকদের দলেও না। আমি বিশ্বাস করতাম উপরওয়ালা নামের কেউ একজন আছেন। যিনি আমাদের সৃষ্টি কর্তা। এর বেশি কিছু না। চার ভাই-বোনের মধ্যে আমি সবার বড়। বয়স গেল ডিসেম্বরে সাতাশ পূর্ণ হল। এই বয়সের একজন ছেলের সংসারের হাল ধরার কথা। কিন্তু আমাদের ৬ সদস্যের পরিবারটি বাবা একাই নিয়ে যাচ্ছে। রুনু, ঝুনুর বিয়ের পর সংসারটা এখন চার সদস্যের। আব্বা মসজিদের একজন সাধারণ ইমাম। ইমামতি করে সম্ভবত মাসে হাজার দশেকের বেশি টাকা আসার কথা না। অথচ আমাদের পরিবারটি দিব্যি সুখের। কোনো কিছুরই কমতি নেই।
এলাকার সবাই আব্বাকে শ্রদ্ধা করে। প্রচলিত একটা কথা আছে, আলেমের ঘরে জালেমের জন্ম হয়। সম্ভবত কথাটা আমার জন্য প্রযোজ্য। ধূমপান, ইভটিজিং, অল্পসল্প চাঁদাবাজি। কি’না করি আমি! কিন্তু আব্বাকে শ্রদ্ধা করে বিধায়, সবাই আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে কিন্তু নালিশ কেউ করে না। সম্ভবত তাই আব্বা আমাকে বিয়ে করানোর ব্যবস্থাটা করেছে। যদিও আমার বিয়ের প্রতি কোন আগ্রহ নেই। তবুও আব্বার জোরাজুরিতে রাজি হয়ে বিয়েটা করলাম।
বিয়ের পর আব্বার মতো বউও শুরু করলো ইসলাম নিয়ে জ্ঞান দেওয়া। সকাল হলে নামাজ পড়ার জন্য বউয়ের ঘ্যানঘ্যানানি শুরু হত। আমিও এত সহজ না। যে কাজটা আব্বা হুজুর হয়েও করতে পারলো না সেটা বউয়ের কথাই করা মানে বউকে মাথায় তোলা।
আব্বা হয়তো ভেবেছিল বিয়ে করলে আমি সঠিক পথে চলে আসবো। সংসারের প্রতি মাথা ঘামাবো। তার কোনটাই আমার দ্বারা হয়ে উঠেনি। উল্টো আব্বার ঘাড়ে আরেকটা সদস্যের দায়ভার বেড়ে গেল। আমি মাঝে-মাঝে চাইতাম আমার চাঁদাবাজি করা থেকে কিছু টাকা আব্বাকে দিতে সংসার খরচের জন্য। আব্বা আমার অসৎপথের টাকা না খাওয়ার শপথ করেছেন। হুজুর মানুষ বলে কথা। এরপর থেকে সংসারে আর টাকা দেওয়ার কথা ভাবিনি। শুধু আব্বা না। আমার বউও আমার টাকায় কেনা কোন কিছুতেই হাত দিত না। অত্যন্ত ধার্মিক মেয়ে বলে কথা।
একদিন ভর সন্ধ্যেবেলায় ঘরে ফিরে দেখি, আব্বা হাত দ্বারা নিজের বুক চেপে বসে আছেন। ‘কী হয়েছে জিজ্ঞেস করাতেই আব্বা উত্তর দিলেন,’ খোকা বুকে প্রচণ্ড ব্যাথা করছে। প্রাণটা বুঝি চলে যাবে।’ আম্মা আর ছোটবোন আব্বার পাশে দাঁড়িয়ে নিরব চোখের জল মুছে যাচ্ছে। আমি আব্বাকে বললাম,’ চলুন আব্বা আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
আব্বা বললেন,’ খোকা, তুই তো জানিস মাসের শেষের দিকে আমার হাতে টাকা থাকে না। ‘
আমি বললাম,’ আপনার টাকা লাগবে না, আমার কাছে টাকা আছে।’
আব্বা বুক চেপে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লেন। আমি আব্বাকে নিয়ে রওনা দিলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ।
পকেট ভর্তি টাকা আমার। সন্ধ্যেবেলায় এক মহিলার ব্যাগ ছিনতাই করেছিলাম। তাই আব্বাকে সরকারি হাসপাতালে না নিয়ে একটা বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। চিকিৎসাও ভালো হবে। কিন্তু আব্বা আমার অসৎপথের টাকায় বাঁচার আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন। হাসপাতালে ভর্তি করার বিশ মিনিট পরই আব্বা স্টোক করে মারা যান।
আব্বার মৃত্যুর পর আমার চার সদস্যের দায় দায়িত্ব এসে পড়ে আমার কাঁধে। এই যুগে গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করা ছেলেরা বেকার ঘুরে সেখানে আমার মতো ম্যাট্রিক ফেল করা ছেলে চাকরি খোঁজা মানেই বোকামি। বাড়ির কেউ আমার অসৎপথের উপার্জনে আহার করবে না। তারা প্রয়োজনে অনাহারে মরবে। পড়ে গেছি বিপাকে। আমার দ্বারা অন্য কাজ করাও সম্ভব না। তাই বাধ্যতামূলক অসৎ পথটাতেই থাকতে হবে। আব্বার মৃত্যুর কিছুদিন পর , শহরে চাকরি পেয়েছি বলে ঘর থেকে বের হয়। কোন রকম আজ এই বন্ধু, কাল ঐ বন্ধুর বাসায় রাত কাটায়। আর চুরি, ছিনতাই যা পারি তা করে বাড়িতে টাকা পাঠাই।
বেশ কয়দিন এভাবে চলার পর খেয়াল করলাম, আব্বার হাজার দশেক টাকায় চালানো সংসারে আমার হাজার বিশেক টাকায়ও সুখ শান্তি নেই। আছে অভাব, অনটন, অসুস্থতা। আজ আম্মা, কাল বউ, পরশু ছোটবোন একটার পর একটা অসুখে ভোগছে। অথচ আব্বা যখন সংসার চালাতো তখন এতো এতো ‘সমস্যা ছিল না।
হয়তো অসৎ পথের টাকায় আল্লাহ পাকের কোন বরকত নেই। পরীক্ষা করার জন্য গ্রামে এসে একটা দোকানের কর্মচারীর কাজ নিলাম। খেয়ে পড়ে মাসিক বেতন দশ হাজার টাকা। আহা! কি সুখ , কি শান্তি সৎ উপার্জনে। রাতে শান্তির ঘুম হচ্ছে। পরিবারের অভাব অনটন দূর হচ্ছে। সৎপথের দশ হাজার টাকায় যে সুখ, শান্তি অনুভব করছি তা হয়তো অসৎপথের এক লক্ষ টাকায়ও হয়না। সকাল সকাল বউয়ের সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত শুনে ঘুম ভাঙে। নামাজ পড়ি। আরও আগে যদি অসৎ পথটা ছেড়ে দিতাম তাহলে হয়তো আব্বা এত তাড়াতাড়ি ইহকাল ত্যাগ করত না।
পূনর্জন্ম
জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...
প্রতি কোন – কোনো
বউয়ের কথাই – কথায়
ব্যাথা – ব্যথা
স্টোক – স্ট্রোক
বের হয় – হই
চমকপ্রদ থিম। শিক্ষণীয় বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।
সৎ পথে আল্লাহ্ বরকত দান করেন।
আরও ভালো লেখা পাবো আশা করি।
আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
বাহ! অনেক সুন্দর শিক্ষামূলক একটা গল্প পড়লাম। পড়েই মনটা ভরে গেল। অনেক কিছুই শেখার আছে এই গল্পে। অসৎপথের টাকায় কোন বরকত নেই, সুখ নেই। আল্লাহর পথে থেকে নেক নিয়তে উপার্জন করলে তা যত কমই হোক না কেন তাতে তৃপ্তি আসে। খুবই সুন্দর লিখেছেন। বানানে ভুল পেলাম না। গুছিয়ে লেখা।
ভর সন্ধ্যাবেলা- ভরা সন্ধ্যাবেলা।
ধন্যবাদ আপু।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।