লেখা: মারুফ হোসেন
– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুমুসসালাম। মসজিদ থেকে ফিরলেন?
– হ্যাঁ গো। নামাজ শেষে আবার একটু কবরস্থান এ গিয়েছিলাম। বাবার কবর টা জিয়ারত করে আসলাম।
– যাক। ভালো কাজ করেছেন। এখন ঘরে গিয়ে ফ্যান এর নিচে বসে বিশ্রাম করুন। আমি মাত্র চুলায় রান্না দিলাম।
– ও আচ্ছা তাই বুঝি? বেগম সাহেবান, আজ কী রান্না হচ্ছে?
– আজ আপনার পছন্দের মুরগি বিরিয়ানী এবং গরুর গোস্ত রান্না করা হচ্ছে হযরত।
– বাহ! আলহামদুলিল্লাহ। তা আজ কী কোনো বিশেষ দিন? যে এসব আয়োজন হচ্ছে।
– কেন? এই আয়োজন এর জন্য যে বিশেষ দিন লাগবে এটা কোথাও লিখা আছে?
– তা নাই। আচ্ছা কথা কথা না বাড়াই। একটু বাহিরে আসবেন? রান্নার ঘ্রাণ নেব একটু।
– না লাগবে না। রান্না শেষ হোক পরে মন ভরে, পেট ভরে ঘ্রাণ নেন আর না হয় যা মনে চায় করুন। এখন সোজা ঘরে গিয়ে বসুন যান। (হালকা রেগে)
– আরে আসো না। এক মিনিটের জন্য ই তো। এমন করো কেন? আপন হয়ে যেন পরের মতো আচরণ ।
– মুখের আগায় কথা এসেই থাকে যেন। জবাব দিতে চুল পরিমান সময় ও দেরী হয় না। আসুন করুন যা মনেচায়। না হলে তো আবার গোমড়া মুখে করে বসে থাকবেন।
– হা হা হা। এইতো এবার বলেছো অবাধ্য স্বামীর বাধ্য স্ত্রীর মতো কথা।
–
উপরের কথোপকথন এক দম্পতির। তিন জন মিলে তাদের পরিবার। মা, ছেলে এবং ছেলের বউ। ছেলে একজন হাফেজ, মাওলানা। এক মসজিদে ইমামতি করে যা বলতে গেলে খুবই অল্প বেতনের চাকরি। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তাদের সংসার খুব ভালোভাবেই চলে যায়। এবং ছেলের বউ ও একজন হাফেজা। সে ইবাদত করার সময় টুকু বাদ দিয়ে সংসারের কাজেই ব্যস্ত থাকে। এই দম্পতির বিয়ে হয়েছে আজ প্রায় সাত বছর। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সন্তানের মুখ দেখে নাই। এ নিয়ে মায়ের যেমন নেই কোনো অভিযোগ, তেমনি তাদের দু’জনের মাঝেও এর যেন কোনো অভিযোগের রেশ নেই। সত্যিকার অর্থেই নেই, তারা দু’জনেই বিশ্বাস করে যে অধিক সন্তান দেওয়ার মালিক ও আল্লাহ এবং নিঃসন্তান রাখার মালিক ও আল্লাহ। এতে নিঃসন্দেহে মানুষের কোনো হাত নেই। তাই তারা রোজ তাহাজ্জুদ এর নামাজে বসে দু’চোখের পানি ঝরায় আর আল্লাহর কাছে একটা সন্তান ভিক্ষা চায়। এত কিছুর মাঝে ও দু’জন দু’জনের প্রতি রয়েছে অন্ধ বিশ্বাস আর পাহাড় পরিমাণ পবিত্র ভালোবাসা। যেই ভালোবাসায় নেই কোনো নোংরামি আর না’ই বা আছে শয়তানের কোনো প্রচারণা। ছেলেটার নাম মোঃমারুফ হোসেন আর মেয়েটার নাম মোসাঃআছিয়া বেগম। আসুন গল্পে ফেরা যাক।
–
– এই যে! হলো আপনার চেখে দেখা? যান এবার, ঘরে যান আর আমাকে আমার কাজ করতে দিন।
– এক কাজ করো, তুমিই ঘরে চলে যাও। আর ফ্যান এর নিচে বসে একটু ঠাণ্ডা হও গিয়ে। রান্নাঘরে বসে থেকে গরমে একদম ঘেমে গিয়েছো তুমি।
– এই-এই-এই কি বললেন হ্যাঁ? যান বলছি।
– যাবো না। করো দেখি কি করতে পারো তুমি। আর আমিও এদিকে রান্নার কাজ টা সেরে ফেলি।
– ও আচ্ছা তাই বুঝি? ঠিক আছে আমি আম্মু কে ডাকছি যে তার গুণধর পূত্র মহাশয় আমাকে রান্নার কাজ থেকে উঠিয়ে সে নিজে বসে গেছে যে নিজে রান্না করবে বলে।
– আচ্ছা যাও। আর আম্মু কে নিয়ে আসার সময় লেবু দিয়ে ঠান্ডা পানির শরবত করে এনো।
– ইশ সখ কতো। বয়েই গেছে তার জন্য আমার শরবত আনতে।
–
এই বলে আছিয়া ঘরমুখো হলো তার শাশুড়ি আম্মার কাছে বিচার দিবে বলে যে, তার ছেলে আছিয়া কে রান্নাঘর থেকে বের করে দিয়ে সেটা নিজ দখলে নিয়ে নিছে।
– আম্মু!ও আম্মু কই তুমি।
– এই তো মা ঘরে। কাঁথা সেলাই করছি। কেন কী হয়েছে?
– এই দুপুর বেলা তুমি কাঁথা নিয়ে বসছো? তোমাকে না বলেছি যে প্রতিদিন বিকেলে শুধুমাত্র এক ঘন্টার জন্য কাঁথা সেলাই করার টাইম পাবা। আর সারাদিনে যেন না দেখি। এমনিতেই চোখের পাওয়ার আগের মতো নাই। তার মধ্যে কাঁথা সেলাই করো। হাতে সুঁই ফুটলে তখন কী হবে? এই আমি আগেই বলে রাখলাম তখন তোমাকে আমি ছুঁয়ে ও দেখবো না কিন্তু।
– হাহাহা পাগলী মেয়ে আমার। কিছুই হবে না। যার ঘরে এত আদুরে আর এত খেয়ালি বৌমেয়ে আছে তার আবার আঙুলে সুঁই ফোঁটার ভয় পেলে হয় নাকি?
আছিয়া গিয়ে তার শাশুড়ি আম্মু কে জড়িয়ে ধরলো। বাহির থেকে বুঝাই যায়না যে তারা শাশুড়ি-ছেলের বউ। যে কেউ অনায়াসেই বিশ্বাস করে নিবে তারা আপন মা-মেয়ে। আর এরকম দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়া, দুষ্টু-মিষ্টি শাসন তাদের নিত্যদিনের ঘটনা। জড়িয়ে ধরেই আছিয়া বলা শুরু করলোঃ
– তুমি কেন বুঝোনা আম্মু, তোমার কিছু হলে তোমার থেকে আমাদের দু’জনের বেশি কষ্ট লাগে।
– আচ্ছা বাবা ঠিক আছে, আর ভুল হবেনা। এবার বল কেন এসেছিস। তুই না রান্না করছিস? রান্না চুলায় রেখে এখানে কেন।
– কেন আবার? তোমার গুণধর সন্তান আসছে। বাহির থেকে ঘরে ফিরেছে মাত্র। বললাম যে ঘরের ভেতর গিয়ে একটু রেস্ট নিতে। না উনি আমাকে উঠিয়ে রান্না করতে বসে গেলো।
– হাহাহা! ছেলেটাও আমার। একদম ওর বাবার থেকেও বেশি।
– কেন? আব্বু ও কি এমন কাজ করতো নাকি?
– তা আর বলতে। প্রায় ই আমাকে জোর করে উঠিয়ে ঘরে পাঠাতো, নিজে সব রান্নাবান্না করে রান্নাঘর গুছিয়ে, বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে সবাই কে ডেকে নিজেই পরিবেশন করে খাওয়াতো। তার রান্না করা খাবারে যেন অমৃতের স্বাদ পেতাম।
– ও আচ্ছা। তাহলে তো উনি ও বাপ কা বেটা-সিপাহি কা ঘোড়া।
– হাহাহা। তা যা বলেছিস।
– হুম আচ্ছা তুমি কাঁথা রাখো। আমি লেবুর শরবত বানাই। পরে চলো রান্নাঘরে গিয়ে আমরা দু’জন উনার রান্না করা দেখি। মনে হয় না যে সেখান থেকে উঠবে। কিন্তু কোনো ভুলভাল যেন না হয় তাই দেখি।
-আচ্ছা ঠিক আছে চল।
–
এই বলে আছিয়া তার শাশুড়িকে নিয়ে আর সাথে লেবুর শরবত নিয়ে রান্নাঘরে গেলো। এবং সেখানেই তিন জনে বসে কথাবার্তা করতে করতে লাগলো। ওই দিকে মারুফ ও রান্নার কাজ শেষে সব ঠিক করে সবাই একসাথে বসে খাবার খেলো।
এভাবেই চলে তাদের নিত্যদিনের পারিবারিক কার্যকলাপ। তাদের সংসারে অন্য কিছুর অভাব থাকলে ও ভালোবাসার কখনোই অভাব হয় নাই। মারুফের মা বেগম হুছনে আরার মন টা খারাপ থাকে মাঝেমধ্যেই। কারণ মারুফের জন্ম তার বিয়ের প্রায় চার সাড়ে চার বছর পর। তার বৌমার ও আজ সাত টি বছর পার হয়ে গেলো কিন্তু তিনি কোনো নাতির মুখ দেখলেন না। এসময় তার শাশুড়ির(মারুফের দাদি) কথা মনে পরে গেলো। বিয়ের তিন বছর যাওয়ার পর ও যখন নাতি-নাতনি আসার কোনো মুখ ই দেখলেন না তখন থেকেই শুরু হলো কথা শুনানো। কপালপোড়া, অলক্ষুণে আরও কত কি। কিন্তু তার স্বামী আর তার শশুড় সবসময় তাকে সাপোর্ট দিয়েছে। এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছে যে আল্লাহ চাহে তো অবশ্যই সন্তান দিবে। বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে চাও। কবুল করার মালিক আল্লাহ। হঠাৎ একদিন শুনে যে তার শাশুড়ি মারুফের বাবা কে আর একটা বিয়ে দিবেন। কারণ তার মরার আগে নাতির মুখ দেখে যাওয়া চাই। কিন্তু তার শ্বশুড়ের সোজাসাপ্টা জবাব যে আল্লাহ চাহে তো হুছনে আরার ঘরেই সন্তান দিবে। যদি না ও দেয় তবুও তার ছেলে কে আর একটা বিয়ে করাবে না। এত উত্তম আখলাকের মেয়েটার মনে আঘাত দিতে সে পারবে না। সেই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই খবর আসলো যে হুছনে আরা মা হতে চলছেন। দুনিয়ার সুখ আর যায় কই? সব যেন এই বাড়িতেই এসে ঠাঁয় নিয়েছে।
–
আর ঠিক এই কারণেই তার ছেলের বউ আছিয়া কে সে কোনো কটু কথা বলে না। কারণ যেখানে আছিয়ার কোনো দোষ নেই সেখানে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা একপ্রকার বোকামো ছাড়া আর কিছুই নয়।
–
এভাবেই চলে যায় তাদের দিনকাল। পরবর্তী তে মারুফ হয়তোবা সন্তানের মুখ দেখেছিলো। হয়তোবা দেখে নাই। সেটা আরেক গল্প। যদি না দেখে তবে মনের ভেতর একটা চাপা কষ্ট অবশ্যই রয়ে যাবে কিন্তু তাদের কারোই মনে এই বিশ্বাস নাই যে কোনো মেয়ে কপালপোড়া, অলক্ষুণে বলেই মা হতে পারে না। কারণ এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে।
বাহ বাহ বেশ লিখেছেন, একটি ইসলামিক পরিবারের বাস্তব চিত্র। আপনার গল্প পড়ে আমার মনটা ভালো হয়ে গেল।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে গল্পটি পড়ার জন্য।
কিন্তু দুইটা জায়গায় একই শব্দ পরপর দুইবার লিখেছেন, কথা কথা এবং করতে করতে।
আবার ও ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। পরবর্তীতে আরও খেয়াল রাখার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
খুব সুন্দর একটি ইসলামিক পরিবারের গল্প। এরকম দ্বীনের আলো প্রতিটা মুসলিম পরিবারে থাকুক এই কামনাই করি। তবে মারুফ আর আছিয়া ফুটফুটে একটি সন্তানের মুখ দেখুক এই দোয়াও রইল, নয়ত একটা সুক অপূর্ণ রয়ে যাবে। গল্পটা ভালো হয়েছে। আরেকটু যত্ন নিয়ে লিখলে আরো ভালো হত। বেশ কিছু জায়গায় একটা শব্দ দু’বার হয়েছে। আর বাংলা গল্পে অহেতুক ইংরেজি শব্দ গল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।বানানের ভুলগুলো সঠিক করে দিচ্ছি।
ওয়ালাইকুমুসসালাম- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
মনেচায়- মনে চায়।
ইশ সখ কতো।- ইশ সখ কতো!
এছাড়া আর তেমন কোন ভুল নজরে পড়ে নি।
শুভ কামনা রইল। ধন্যবাদ।
পাহাড় পরিমাণ না লিখে পাহাড়সম লিখতে হতো।
সুন্দর লিখেছেন।অনেক গুছিয়ে লেখা। ভাললাগলো।শুভ কামনা।
ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য।
বাহ! ভালো লিখছেন…এভাবে লিখে যান, গল্পটা পড়ে মন ভালো হয়ে গেল। শুভ কামনা আপনার জন্য…
ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি পড়ার জন্য
ভালো লাগলো।ইসলামিক গল্প।
মারুফ আর আছিয়ার মতো দম্পতি যদি সবাই হতো তাহলে সব দম্পতির সংসারে ঝগড়া হতো না।
ইসলাম একটি পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান।আমরা টাকা পয়সার মোহে পরে গেছি।তাইতো সুখটা টাকার মধ্যে খুঁজি।
আসলে সুখতো মনে।
অল্প বেতনে চাকরি করেও মারুফ ন্যায় পথে ইনকাম করে।তাইতো টাকায় বরকত রয়েছে।
সংসারে অশান্তি নেই।
বানান ভুল আছে
ওয়ালাইকুমুস সালাম–ওয়ালাইকুম আসসালাম
কবর টা–কবরটা
রান্না দিলাম–রান্না বসালাম
হবে।
বেগম সাহেবান–সাহেবা হবে
দেরী–দেরি
হা হা হা –হাহাহা
চেখে–চোখে
প্রায় ই–প্রায়ই
মনেচায়–মনে চায়
পূত্র–পুত্র
সখ–শখ
পাহাড় পরিমাণ–পাহাড় সমান হবে।
শুভ কামনা রইলো।
ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য। হ্যাঁ ইসলামই পূর্নাঙ্গ জীবন বিধান আমরা যদি তা মেনে চলি। হালাল পথে অল্প আয়েও বরকতময় জীবন পার করা যায় এটাই তার দৃষ্টান্ত। আল্লাহ আমাদের সকলকে হালাল রোজগার করার এবং হালাল খাওয়ার তৌফিক দান করুক। আমীন।
বাকি ভুল গুলো ঠিক আছে। পরবর্তীতে আরও খেয়াল রাখবো কিন্তু সালামের জবাব টা ওয়ালাইকুম আসসালাম না, ওয়ালাইকুমুসসালাম ই হবে এতে আমি পুরোপুরি ১০০% শিউর।
এমন একটি পরিবার প্রত্যেক মুসলিম ঘরে ঘরে থাকা দরকার।
নেই কোন অভিযোগ,নেই কোন ভালোবাসার কমতি।
পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য একে অপরকে বুঝলে সেই পরিবারে আর ভালোবাসার কমতি থাকে না।
গল্পটা অনেক ভালো লেগেছে।বানানে কিছু ভুল আছে।
শুভকামনা রইলো।