গল্প লেখকঃ
এ আর জে
(Joni Rahman)
(এপ্রিল – ২০১৮)
……………
চারিদিকে অন্ধকার। অথচ এখন মধ্য দুপুর। আকাশে ছাই মেঘ স্তব্দ হয়ে ঝুলে আছে। বাতাস নেই। পাখিরা এখনই আধপেটা হয়ে ঘরে ফিরে যাচ্ছে। তার মানে আজ হেভি ঝড় হবে। পশুপাখিরা প্রাকৃতিক দূর্যোগের সিগনাল আগে আগে পেয়ে যায়। অবশ্য কিছু মানুষও এই সিগনাল পেয়ে যায়। যেমন হাজী মিয়া। সে হজ্জ করেনি,তার নামই হাজী মিয়া। পেশায় ছিচকে চোর।আমার সাথে তার ভালো খাতির। সে কিভাবে চুরি করে তা দেখার জন্য আমি নিমন্ত্রণ পেলাম। সে খুপড়ি ঘরে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে ঝিম ধরে বসে আছে। আমাকে দেখেই সে আশাহত হলো। তার আশাহত হওয়ার কারণ পরে জানলাম। একটু পরই নাকি আকাশ ভেঙ্গে ঝড় নামবে। তার খুপড়ি ঘর ঝড়ে উড়ে যাবে। কোথায় থাকবে এটা নিয়ে সে চিন্তিত না। মিউনিসিপিলিটির বড় বড় পাইপ রাস্তার পাশে ফেলে রাখা আছে। আরামসে তার ভেতরে থাকা যাবে। চুরি করার দৃশ্য সে আজ আমাকে দেখাতে পারবেনা বলেই সে শরমিন্দা।
বাইরে ঝকমকে রোদ। সে বলছে ঝড় আসবে। কেন জানি হজম হলনা। আমি তার খুপড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে এলাম। কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই। কিছুক্ষনের জন্য হন্টক হয়ে গেলাম। রাস্তায় হাটব। ইন্টারেস্টিং কিছু চোখে পড়লে দেখব।রাস্তায় হাটলে অনেক ইন্টারেস্টিং জিনিস দেখা যায়। বেশিক্ষণ হাটতে হলনা। হঠাৎ খেয়াল করলাম চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেছে।মিনিটের ভেতর তুমুল ঝড়। সেই সাথে বাজ পড়ছে। আমি দাড়িয়ে আছি একটা গেটের সামনে। হাজী মিয়ার কথা ভাবছি। তার কথামত ঝড় শুরু হয়েছে। স্বভাবে চোর,অথচ কি আশ্চর্য সে আগেভাগেই সব জেনে গেল? তার কি….
চিন্তায় ছেদ পড়ল। দাড়োয়ান শ্রেণীর একলোক গেট খুলে দাড়িয়ে আমাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। ভালমত দেখতে পাওয়ার কথা না। ঝড়ো হাওয়ায় তার রেইনকোটের হেট নৌকার পালের মত তাকে পেছনে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। এজন্য সে মহাবিরক্ত হয়ে বলল-স্যার আপনারে বুলাইছে।
কোন স্যার, কিজন্য বুলাইছে কে জানে। আমি আগ্রহ নিয়ে গেটের ভেতর ঢুকে গেলাম। বাড়ির দুপাশে বিশাল গোলাপ বাগান।আফসোস,সবক’টা গাছ মাটিতে মিশে আছে। আমি হাটছি অথচ বাতাসের ধাক্কায় মনে হচ্ছে দৌড়াচ্ছি। মেঘের শব্দে কান ঝালাপালা অবস্থা। আমি কাক ভেজা হয়ে দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছি। দারোয়ানের নির্দেশ, ঘরে প্রবেশ নিষেধ। আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে মার্বেল পাথরের কাজ দেখছি আর শিশ দিতে চেষ্টা করছি। শিশ দেয়া যাচ্ছেনা। ফু দেয়ার সাথে সাথে মুখ থেকে বৃষ্টির পানি বেরিয়ে আসছে। এখন শরীর কাপিয়ে ঠান্ডা লাগছে। বৃষ্টিতে দাড়ালেই এই ঠান্ডা কেটে যেত। কিন্তু স্যারজি ডেকেছেন বলেই সেটা সম্ভব হচ্ছেনা। দারোয়ান বেটা দেখি এখনও আসছেনা। এই সুযোগে কি কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে দাড়িয়ে থাকব? থাকা যায়।আমি আবার এসে বৃষ্টিতে দাড়ালাম। সুচের মত বৃষ্টির ফোটা গায়ে এসে লাগছে। তবে ঠান্ডার ধাত কমে গেছে। বৃষ্টির পানি উষ্ণ।দরজা খুলে দারোয়ান বেড়িয়ে এলো। তার সাথে একটা মেয়ে। ইনি হয়ত স্যারের মেয়ে। লখৌনতি বাংলা সমাজের অমলাঙ্গী নারীদের মত উনি তাকিয়ে আছেন। আমার এখন কি করা উচিত? হায় বলব? না সালাম দেব। মেয়েদের মতিগতির ঠিক নেই।যদিও কেন জানি বলতে ইচ্ছে করছে আসেন, একটু বৃষ্টিতে ভিজে যান। আমাকে কিছু বলতে হলনা। মেয়েটিই শাসন কন্ঠে বলল-আপনি বৃষ্টিতে দাড়িয়ে আছেন কেন?
আমি মহা একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম। শালা দাড়োয়ান আমার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আমি নরম স্বরে বললাম-দাড়োয়ান স্যার এখানে দাঁড়াতে বলেছেন। ভেতরে আসলে যায়গাটা পিছল হয়ে যাবে। আমার শরীর ভেজাতো মনে হয় এজন্য বলেছেন।
আমার কথা শুনে দাড়োয়ানের গোফ ঝুলে পড়ল। মিস কমলাঙ্গীনী অগ্নি চোখে দাড়োয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। দাড়োয়ানের মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। মনে হচ্ছে চাকরী নিয়ে টানাটানি লেগে যাবে।
ভেতরে আসুন।
আমি যন্ত্রের মত ভেতরে চলে গেলাম। বিশাল সিটিং রুম। দেয়ালে ব্যাঙ্, তেলাপোকার সুন্দর পেইন্টিং। এত কিছু থাকতে এরা ওয়াখ থু পেইন্টিং কেন লাগিয়েছে কে জানে।
স্যার বসুন।
আমি ঝট করে ভেজা কাপড় নিয়ে সোফায় বসে পড়লাম। মেয়টার কন্ঠ কেমন পরিচিত মনে হচ্ছে। যে বুয়া চা নিয়ে এসেছে তাকেও পরিচিত মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছুই মনে পড়ছেনা। মনে করার দরকারটা কী। আমি বরং চা খাই।
স্যার চায়ে চিনি কি ঠিক আছে? চায়ে আপনি ৪ চামচ চিনি খান। ৩ চামিচ দুধ।
হুমমমম ঠিক আছে। লিকারটা কম হয়ে গেছে। তবে খেতে খারাপ না।
আপনি কি জানেন কতদিন পর আমাদের বাসায় এসেছেন?
অনেকদিন পর।
তাও বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাবা উপরের বারান্দা থেকে আপনাকে দেখায় ডেকে পাঠালেন।
ও আচ্ছা।
কেমন আছেন স্যার?
ভাল আছি।
আপনার সম্পর্কে কত কি শুনি। তা কি ঠিক?
কি শুনেছ?
মেয়েটা আর উত্তর দিতে পারলনা। তার গলা ধরে এসেছে। বয়স্ক একজন লোক আমার সামনে এসে বসতেই মেয়েটি বলে গেল,বাবার সাথে কথা বলে আপনি আমার রুমে আসবেন। আজ উওরটা অবশ্যই দেবেন। আর নিতে পারছিনা।
আমি বললাম,আচ্ছা।
মেয়েটি হনহন করে চলে গেল।
কেমন আছ হেমন্ত?
ভালো আছি স্যার।
কোথায় থাক আজকাল।
এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই তাই ছোট করে হাসলাম।
মাঝে মাঝেই তোমার মিসিং নিউজ শুনি। কখন ফিরে আসো কখন নিখোজ হও কিছুই জানিনা। ব্যাপারটা কী? প্লিজ এক্সপ্লেইন ইট।
বেটা কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। মাথায় ঝিম ঝিম করছে। প্রচন্ড ঠান্ডা লাগছে। বৃষ্টিতে নেমে গেলেই ঠান্ডা থেকে মুক্তি।আমি মুখে তেলতেলে হাসি দিয়ে বললাম, স্যার, আজ যাই। অন্য একদিন আসব।
যাবে যাও। মাঝে মাঝে এসো। আমার জন্য না হলেও..আচ্ছা থাক। যাও।
আমি এই কথাও ঠিক বুঝলামনা। মুখে হাসি ধরে রেখে বৃষ্টিতে নেমে পড়লাম। মাথার ভেতর সুক্ষ একটা যন্ত্রণা হচ্ছে। এতক্ষণ যাদের সাথে কথা বললাম তারা কে। নাম কি। কিছুই মনে করতে পারছিনা। পাশে কোথাও প্রচন্ড শব্দে বাজ পড়লো। ধরণী কেপে উঠলো।
আজও আকাশ ভয়ানক মেঘলা। এইতো, ঝড় শুরু হয়ে গেছে। আমি তরিঘড়ি করে রাস্তায় নেমে পড়লাম। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে হাটব। তবে আমার একটা নির্দিষ্ট গন্তব্য আছে। আমি যাচ্ছি জীবনানন্দের বাসায়। কমলাঙ্গীনী হয়তো অপেক্ষা করে আছে। ও আচ্ছা, কমলাঙ্গীনীর নাম নিশি।
আমার ছাত্রী। গত দু বছর ধরে তাকে ঝুলিয়ে রেখেছি। বাবা মেয়ের ভালোবাসার মধ্যে কারটার দাম দেব? কারো বিশ্বাস নষ্ট করা ঠিক হবেনা আবার কাউকে কষ্ট দেয়াও ঠিক হবেনা। তৃতীয় পক্ষ হয়ে আছে আমার চাওয়া টা। সেটাও স্বার্থপরের মত,,,,,। তবে আজ উওর দিয়ে দেব। কি বলব তা মাথার ভেতর তৈরীই আছে। সব মনে থাকলেই হয়। ঐদিন মনে করতে পারিনি। মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি। হুটহাট সব কিছু ভুলে যাচ্ছি। কিছুই মনে থাকেনা। আজ মনে থাকলেই হয়। মনে হয় মনে থাকবে। প্রকৃতি সবার জন্যই সব কিছুর দরজা খুলে রাখে। কেবল সেটা ঠিকমত বেছে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। প্রচন্ড শব্দে কোথাও বাঁজ পড়লো। প্রবল ঝড় মাথায় নিয়ে আমি পথে নামলাম।
Athiya Chowdhury, rayhan5068@gmail.com
অসাধারন। চমৎকার লেখেন আপনি কবিজি। আশা করি বাকি অংশ তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো। শুভ কামনা রইল!
কিয়া বাত হে ভাই।অনেক ভালো একটা গল্প পড়লাম।কেরি অন
ভালো লাগার চরম উপলব্ধি ভোগ করলাম।তবে আরেকটু ক্লিয়ার করলে ভালো হত।যাই হোক,আরও গল্প পাব আশা করি
গল্পটা ভালো ছিলো কিন্তু অনেক গুলি বানান ভুল ছিলো। বিশেষ করে গল্পের নামে।আশাকরি ভবিষ্যতে লেখকের বিষয়টি চোখে পড়বে