লেখা: শাহাদাত আবিন
শেষ বিকেলের সূর্যের আলোয় দিঘির জল চিকচিক করছে। দিঘীর জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দে মুখরিত পুরো গ্রাম। দিঘির পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে একটি বকুল গাছ । লোকমুখে শোনা যায় বকুল গাছের নামানুসারেই গ্রামের নামকরণ করা হয়েছে। গ্রামের নাম বকুলতলী ।
বকুলতলীর অন্যান্য পরিবারের মতই নিরক্ষরতা আর দারিদ্র্যতায় জর্জরিত কলিম উল্লাহর পরিবার । স্ত্রী, মেয়ে আর ছেলে নিয়েই তার সংসার।
মেয়ের নাম বকুল , যেমন দিঘীর জলের মত , স্বচ্ছ তার মন তেমনি বকুল ফুলের মত সাদা তার রুপ । ইচ্ছে লেখাপড়া শিখে বিরাট বড় চাকরি করার , কিন্তু সেই ইচ্ছে ইচ্ছেতেই থেকে যায় , পূর্ণ হয় না । জলের ঢেউয়ে দিঘীর পাড় ভাঙার মতোই একদিন তার স্বপ্ন ভাঙে । নিজ গ্রামে কোনো স্কুল না থাকায় পাশের গ্রামের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে হতো । একদিন স্কুল যাবার পথে বিদেশ ফেরত ঐ গ্রামের যুবক নাজিম তাকে দেখে । দেখেই তার পচ্ছন্দ হয়ে যায় । পছন্দ হবেই না কেনো, এতো সুন্দরী,রুপসী, মেয়ে আর একটাও আছে বলে মনে হয় না । মায়া ভরা মুখ আর কাজল কালো চোখের চাইনি যে কোন যুবকের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট । অর্থ সম্পদের কোনো কিছুর অভাব ছিলো না নাজিমের, অভাব শুধু শিক্ষার ।
তাতে কি আসে যায়, বকুলের দরিদ্র বাবাকে টাকার প্রলোভনে বশ করে সে , তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় । তার বাবা রাজি হয়ে যায়, যে পরিবার দুমুঠো পান্তা জোগাতেই হিমশিম খায়, সেখানে টাকা পেলে রাজি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, সাথে বোনাস হিসেবে ছেলেকে বিদেশ পাঠাবে বললে তো কোনো কথাই থাকে না ।
যত অমত আছে সব শুধু বকুলের ,,বাবাকে বলে
-বাবা ,আমি এখন বিয়ে করবো না ,আমি পড়ালেখা করবো।
-মাইয়্যা মাইনাসের অত লেহাপড়া কইরা কাম নাই
-আমার বয়স ত মাত্র ১৫
–অত কতা হুনতে চাই না
বাবা মেয়ে যেনো শত্রু হয়ে গেলো, দু’জনের স্বপ্ন যখন দুই মেরুতে আর বাস্তবতা যখন বিপরীতে তখন রাজি না হয়ে উপায় নেই। বিয়ে হয়ে যায় বকুলের , যে বয়সে নূপুর পায়ে সারা গ্রাম মাতিয়ে তোলার কথা সেই বয়সে সংসার নামের শিকলে বন্দি । বন্দি হয়ে যায় একটি কিশোরীর বুকের মাঝে লালন করা স্বপ্ন ।এদিকে মেয়ের জামাইয়ের টাকায় ছেলেকে বিদেশ পাঠায় কলিম উল্লাহ ।তারপর…
দিন যায়, মাস যায়, মাস পেরিয়ে বছর , ছেলের টাকায় কলিম উল্লাহর সংসার ভালোই চলছে । বকুল ও বই খাতা ঝাপ্টে ধরার পরিবর্তে গর্ভে সন্তান আঁকড়ে ধরেছে , ধীরে ধীরে সন্তান তার গর্ভেই বড় হয়ে উঠছে ।
একদিন হঠাৎ কলিম উল্লাহর বাড়িতে ডাক পিয়নের আগমন। কলিম চাচা বাড়িতে আছেন? ডাক শুনে ঘর হলো সে,
-কে ? কে ডাকে?
-চাচা আমি,
-কোনো খবর আছে নাকি ?
-বিদেশ থেইকা চিঠি আইছে,
খবরটা শুনেই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠলো কলিম চাচা । ডাক পিয়ন কে চিঠিটা পড়তে বলে কলিম চাচা । চিঠিতে কি লেহা একটু পড়ে হুনাও দেহি , জানোই তো লেখাপড়া না জানা মানুষ । ডাক পিয়ন বিড়বিড় করেই পড়তে লাগলো , পড়া শেষ করে বললো,,,চাচা ভাই দূর্ঘটনায় মারা গেছে, সেই খবর ই দিছে চিঠিতে । এই কথা শোনার পর মূর্ছা যাওয়ার মত অবস্থা, সারা বাড়ি কান্নার আওয়াজে ভারি হয়ে যায় । খবর শোনে বকুল ও ছুটে আসে বাবার বাড়ি । এমনিতেই তাঁর অবস্থা ভালো না, অল্প বয়সেই গর্ভধারণ । তার এই দুঃসংবাদ যেনো তাকে আরও অসুস্থ করে দেয় । দিন ঘনিয়ে রাত হয়, বকুলের স্বামী এসে সবাইকে সান্ত্বনা দেয় , ধৈর্য্য ধরার কথা বলে বকুলকে শশুর বাড়ি নিয়ে যায় ।
কলিম চাচার বাড়িতে যেনো অন্ধকার নেমে এলো, শোকে স্তব্ধ পুরো পরিবার। কেউই দানাপানি মুখে দেয়নি, আস্তে আস্তে শোক কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করে কলিম চাচার পরিবার। এভাবেই দিন যেতে থাকে,,
কিছুদিন পর কান্নার জল না শুকাতেই আরেকটা ঝড় এসে লন্ডভন্ড করে দিলো পুরো পরিবার ।
শশুর বাড়ী থেকে খবর আসলো বকুল মারা গেছে , খবর শোনে পাগলপ্রায় বকুলের বাবা ছুটে যায় মেয়ের শ্বশুর বাড়ি । কিভাবে মারা গেলো? বড় আশা কইরা মাইয়্যাডা বিয়া দিছিলাম, মনে হরছিলাম কপাল বুঝি ফেরলো- বিড়বিড় করে বিলাপ করছে করিম চাচা। কিন্তু কপাল ফেরেনি , পোড়া কপালে সুখ বেশিদিন লেখা থাকেনি বকুলের ।, জানা যায- প্রসবকালে রক্ত শূন্যতার কারণে বকুল আর তার সন্তান দুজনে মারা যায় । লোকজন বলাবলি করছে.. আহারে,, অল্প বয়সে বিয়া কইরা মাইয়্যাডা মইরাই গেলো ।
মেয়ের নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে আছে কলিম চাচা , তার মন চাইছে চিৎকার করে কাঁদতে, কিন্তু পারছেনা সে । স্তব্ধ হয়ে গেছে, চোখের জল আর গড়িয়ে পড়েনা ,শুকিয়ে গেছে, একসাথে দুটো মৃত্যুর শোক যেনো তার চোখের সব জল কেড়ে নিয়েছে , কেড়ে নিয়েছে তার সব আশা আর স্বপ্ন । চোখের জল জমাট হয়ে বুকের ভিতর পাথর হয়ে গেছে। আর কান্না সেই পাথরের নিচে চাপা পড়ে যায় । এভাবেই চাপা পড়ে যায় হাজারো মেয়ের স্বপ্ন আর হাজারো বাবার আশা আকাঙ্ক্ষা । দারিদ্র্যতার কারনেই বাল্যবিবাহ , আর এই বাল্যবিবাহ একটি মেয়ের জীবনে ধ্বংস যন্ত্র হয়ে যায় ।
নিচের ভুলগুলো দেখে সংশোধন করে নিবেন। পরবর্তীতে ভালো করবেন আশা করি।
পচ্ছন্দ – পছন্দ
চাইনি – চাহনি
দুমুঠো – দু’মুঠো
ডাক শুনে ঘর হলো সে – ঘর থেকে বের হলো সে
ডাক পিয়ন কে – ডাকপিয়নকে
শশুর – শ্বশুর
খবর শোনে – শুনে
জানা যায – যায়
বাস্তব বিষয় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।
বাল্যবিয়ে অনেক খারাপ। সমাজে এটা বেড়েই চলেছে।
কিছু বাবা-মা সন্তানের ভালোর কথা চিন্তা করেই অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়।
কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভাবে না।
শুভ কামনা রইল।
ধন্যবাদ ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য.
ভালোবাসা নিবেন
অত্যন্ত সুন্দর একটি গল্প। গল্পের প্রতিটি লাইনেই লেখকের সুচারু পারদর্শিতার লক্ষ্য করা যায়। এই শিক্ষণীয় গল্পের থেকে অনেকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে এবং বাল্যবিবাহের ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারবে। মেয়েদের সঠিক বয়স না হওয়ার আগেই তাদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে বিয়ে দেয়া কঠিন অপরাধ। এসময় তাদের ও তাদের গর্ভের সন্তান দু’জনের জীবনেরই ঝুঁকি থাকে। ফলে সুন্দর একটি জীবন দেখার আগেই ঝরে যায় দু’টি প্রাণ।
খুব সুন্দর যত্ন নিয়ে গুছিয়ে লিখেছেন। বানানে খুব বেশি ভুল নেই।
চাইনি- চাউনি।
ঝাপ্টে- জাপ্টে।
অনেক ভালো লাগলো।
অনেক গুছিয়ে লিখেছেন।
দবে বানানের ব্যাপারে আরও নজর রাখতে হবে।
শুভকামনা ❤