সম্মানীয় বাবা
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 1,571 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

:-জিন্নাত রিমা

টানা তিন মাস পর ছুটি পেয়ে গ্রামে যাচ্ছি। ভাবতে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। অনেকদিন পর মাকে দেখব মন ভরে। নিতুকেও। বাবাকে কাছ থেকে খুব একটা দেখা হবে না। দরজা, জানলার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে যতটুক দেখা যায় ততটুক। বাবার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস আমার এখনো হল না। মাঝে মাঝে বাবাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখি। বাবাকে আমি প্রচণ্ড ভয় পাই ছোট থেকেই। ভয়টা মারধোর কিংবা কড়া শাসনের জন্য নয়। সেটা হলে ভালোই হতো। তবে কেন ভয় পাই সেটাও আমি নিশ্চিত জানি না।
বাবা ছিলেন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন রাগি শিক্ষক। যাকে দেখলে ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে কয়েক হাত দূরে চলে যায়। যিনি ক্লাসে ঢুকলে ক্লাসের দেওয়ালও যেন ভয় পেত। বাতাসও যেন থমকে যেত। কিন্তু এই রাগি বাবা আমাকে কখনো কড়া শাসন কিংবা মারধোর করেন নি।
ছাত্র হিসেবে খুব একটা খারাপ ছিলাম না, আমার মতে। বাবার মতে একজন শিক্ষকের ছেলে হয়ে লেখাপড়ায় এতটা কাঁচা মানেই লোকজনের কাছে বাবাকে অসম্মান করা। বাবা সবসময় বলতো আমার ছেলে তুই। তোর রোল থাকার কথা একে। কিন্তু তুই সবসময় দশের বাইরে থাকিস। আমার এখনো সুস্পষ্ট মনে আছে। তৃতীয় শ্রেণীর রেজাল্ট পেয়ে আমি যথেষ্ট খুশি। রোল তেরো থেকে এগারোতে আনলাম। খুশি মনে বাবার হাতে মার্কশিটটা তুলে দিলাম। বাবা কিছুক্ষণ সেটার উপর চোখ বুলিয়ে মার্কশিটটা আমার মুখের উপর ছুঁড়ে দিল। কোনো কথা বলল না। সেদিন বাবা যদি আমাকে একটু শান্তস্বরে বলতো,’ অনেক ভালো করেছ তুহিন।সামনে আরও ভালো করতে হবে।’ আমি নিশ্চিত পারতাম। কিন্তু আমার ভেতরের মেধাটা বাবার ভয়ে চুপসে গেল।
আমার স্বপ্ন ছিল বাবার মতো কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। কিন্তু বাবার ভয়ে স্বপ্নটা তখনি খুন করেছি। বাবা প্রায় বলতো, ‘ ভুল করেছি। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে। তুহিন তুই হবি ব্যাংকার কিংবা পুলিশের বড় কোনো অফিসার।’ আমার ইচ্ছে করতো বাবাকে বলি,’ আমি আপনার মতো শিক্ষক হব। রাগি শিক্ষক। ভয়ে বলা হতনা।
প্রাইমারি শেষ করে ভর্তি হলাম বাবার স্কুলে। নিজের অবশিষ্ট মেধাটুকু সেখানেই খুন! ষষ্ঠ শ্রেণীর প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় দেখা গেল আমার ফলাফল মাত্রাতিরিক্ত খারাপ। সেই রাতে বাবা প্রচণ্ড বকাঝকা করলেন। আমার ফলাফলে যেন আমার চেয়ে বাবাই বেশি অপমানিত হল। সম্ভবত নিজের ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতেও লজ্জা।
একটু যতনের অভাবে আমি হারিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার জন্য বাইরের কোনো শিক্ষক বরাদ্দ ছিল না। বাবাই আমার প্রাইভেট শিক্ষক।
বাবা নিজের সম্মান রক্ষার্থে ‘পরীক্ষার আগে সমস্ত প্রশ্ন তোলে দিত আমার হাতে। আমি রাত জেগে পরতাম। সকালে ‘পরীক্ষার খাতা ভরিয়ে দিতাম।ক্লাসে হয়ে উঠলাম ফাস্ট বয়। আমার ফলাফলে বাবা খুশি। বাবার গর্ব হয়। এই না হলে শিক্ষকের ছেলে! আমার ফলাফলে আমিও খুশি। কৃত্রিম খুশি। অথচ আমাকে একটু যতন করলে সম্ভবত এই ফলাফলটা কৃত্রিম হত না। ধরা খেলাম দশম শ্রেণীর ফাইনালে।মেট্রিক পরীক্ষায়। ‘পরীক্ষার আগে প্রশ্ন হাতে আসল না। ফলাফল ‘গ্রেড বি। বাবা লজ্জায় কাউকে বলতেন না।
তারপর কলেজ। ভার্সিটি। আমার প্রকৃত মেধা শত চেষ্টা করেও ফিরিয়ে আনতে পারি না।
কোনরকম পাশ করা ফলাফল নিয়ে আমি বের হয় শিক্ষাজীবন থেকে। শুরু হয় চাকরি নামক যুদ্ধ। কিন্তু এই ফলাফল কিংবা মেধা আমাকে চাকরির দোরগোড়া অবধি নিয়ে যায় না।
বাড়ি আসতে রাত হওয়ায় নিতুর সাথে দেখা হয়নি। ও ঘুম ছিল। এখন ঘুম থেকে উঠেই পাগলামি শুরু করে দিয়েছে। ওর জন্য একটা টুকটুকে লাল শাড়ি এনেছি। আবদার করেছিল অনেক আগে। চাকরিটা পাওয়ায় আনতে পারলাম।
বাবার সাথে রাতেই কথা হয়েছিল। বাবা বারান্দায় বসে পত্রিকায় চোখ বোলাচ্ছেন। নিতুকে শাড়িটা দিয়ে চমকে দিব। তাই ব্যাগ থেকে শাড়িটা বের করছি। এমন সময় বারান্দায় কারোর আওয়াজ শোনা গেল। মিজান চাচার আওয়াজ।
,’ মাস্টার, শহর থেকে তুহিন আসছে মনে হয়?’ সকালে দেখলাম একটু করে দূর থেকে।’
,’ মিজান ভাই, তুহিন রাতে আসছে।’
,’ তা মাস্টার, শহরে চাকরি পাইছে নি?’
,’ছেলে আমার ব্যাংকের চাকরি পাইছে। দেখতে হবে না, ছেলেটা কার! আসো মিজান ভাই, এক কাপ চা খায় যাও।’
,’ শোনে খুশি হইলাম মাস্টার, চা অন্যদিন খাব।আজ তাড়া আছে।’
বাবা আমাকে নিয়ে গর্ব করছে। করারই কথা। কিন্তু নিজেকে নিয়ে আমি নিজেই গর্ব করতে পারি না। নিতুর শাড়িটা নিতে নিতে চোখ পড়লো,’ আইডি কার্ডে।’
শহরের বড় দোকানের একজন বিক্রয় প্রতিনিধি আমি।
এর চেয়ে ভালো চাকরির যোগ্যতা বা মেধা কোনটার সঞ্চয় নেই আমার কাছে। ভয়ে বাবাকে বলতে পারি নি কখনো।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

২ Comments

  1. Parvej Mosharof

    লেখনীর হাত কাঁচা মনে হচ্ছে। গল্প নির্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে হয়। কিন্তু গল্পের কোন বিষয় খুঁজে পাচ্ছিনা। এখানে সময়ের অনুভূতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। যাই হোক শুরু থেকে সবাই এমন থাকে। তবে গল্প পড়ুন নিয়মিত। কিভাবে শুরু করতে হয়, গল্পে সময়ের অবস্থান, চরিত্রের সাথে মিল রেখে বাক্য। এসব জেনে যাবেন ক্রমান্বয়ে। শত গল্প পড়ুন, একটি লিখুন। একদিন, নিজেকে যোগ্য গড়ে তুলবেন, ইনশাআল্লাহ।

    Reply
  2. Parvej Mosharof

    লেখনীর হাত কাঁচা মনে হচ্ছে। গল্প নির্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে হয়। কিন্তু গল্পের কোন বিষয় খুঁজে পাচ্ছিনা। এখানে সময়ের অনুভূতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। যাই হোক শুরু থেকে সবাই এমন থাকে। তবে গল্প পড়ুন নিয়মিত। কিভাবে শুরু করতে হয়, গল্পে সময়ের অবস্থান, চরিত্রের সাথে মিল রেখে বাক্য। এসব জেনে যাবেন ক্রমান্বয়ে। শত গল্প পড়ুন, একটি লিখুন। একদিন, নিজেকে যোগ্য গড়ে তুলবেন, ইনশাআল্লাহ।

    Reply

Leave a Reply to Parvej Mosharof Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *