সমাধান
প্রকাশিত: জুন ৭, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 3,020 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

লেখকঃ মৌমিতা সরকার নীলাভ
(জুন – ২০১৮)
………………

প্রতিদিনের মতো আজো সকালে খবরের কাগজ নিয়ে বসে পড়লেন বারান্দায়। তার আর ভাবনার কিছুই নেই। ছেলে মেয়ে সবাই জায়গা মতো বসে গেছে। চিন্তা আর তাকে ভাবায় না। হতাশার মাঝে আর তিনি ডুবেন না। মাঝরাতে দুঃশ্চিন্তারা আর ডেকে তোলে না। সব কিছুর সমাধান হয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু শান্তি! শান্তি! আর শান্তি!!

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে খবরের কগজের পাতা উল্টালেন নেহা। আজকাল খবরগুলো কেমন জানি। খুন, ধর্ষণ, মারামারি, কাটাকাটি ছাড়া কিছু নেই। দেশের অবস্থা রসাতলে চলে গেছে। হঠাৎ একটা পাতায় গিয়ে চোখ আটকে গেলো। লিখাটা এইরকম ছিলো, “আজ বিশিষ্ট লেখক আবির চৌধুরীর ৪৭ তম জন্মদিন।

আজ আবিরের জন্মদিন অথচ তার মনে নেই। কিন্তু এইদিনটা তার কাছে অনেক স্পেশাল ছিলো। কখনোই এইদিনটা ভুলতো না। সময় বদলে গেছে।
আজ সে অনেক বড় হয়েছে। যখন কেউ বড় হতে চায় তখন তাকে আর নিজের কাছে আটকে রাখা যায় না। আবির এটাই চেয়েছিলো। সে অনেক বড় হবে। সেটাই হয়েছে।

আবিরের সাথে পরিচয়টা দীর্ঘদিনের। ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে। স্কুল, কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিতেও একসাথে। মাঝের বছরগুলোও সুন্দর কেটেছে। তাহলে তাদের মধ্যে এখন এতো দূরত্ব কেনো?

আপা আপনার নামে একটা চিঠি এসেছে।
টেবিলের উপরে রেখে দে, আমার জন্য এক কাপ চা নিয়ে আয়।
আচ্ছা বলে চলে গেলো রোশনী।
রোশনী এ বাড়িতে জন্মের পর থেকেই আছে। ওর মা কাজ করতো। ওর মা মারা যাওয়ার পর থেকে ওই ই কাজ করছে।
পত্রিকা রেখে উঠে পড়লেন নেহা। আজ আর পত্রিকা পড়ার ইচ্ছা নেই। মানুষের মন কখন যে কি হয়। এখন বের হবেন নেহা বাহিরে। সেই কখন চা দিতে বলেছি রোশনী কে এখোনো এলো না। মেয়েটা এতো উদাসী হলো কবে থেকে।

চা না খেয়েই বেরিয়ে পড়লেন নেহা। সংসার এখন তিনি একাই সামলান। কোনো ঝামেলাই হয় না। আজ ব্যাংকে এসেছিলেন কিছু হিসাব বাকি ছিলো সেটা দেখার জন্য। আজ তেমন রোদ্দুর নেই আকাশ জুড়ে ধুসর মেঘ। এমন দিনে হাটতে ভালোই লাগে। ফুলের দোকানের সামনে দাঁড়ালেন নেহা কিছু ফুল কিনলেন। কেনো কিনলেন সেটা তিনি জানেন না।
বাসায় চলে এলেন নেহা। তাকে আসতে দেখে রোশনী বললো, আপা আপনি চা না খেয়েই চলে গেছেন কেনো? আমি ঘরে এসে দেখি আপনি নেই।
তোর দেরী হচ্ছিলো দেখি চলে গেছি। আর এক কাপ চা বানাতে তোর এতো সময় লাগছে কবে থেকে। মন কোথায় থাকে তোর।
লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলো রোশনী,”না আপা আপনি যে কি বলেন আমার মন এখানেই আছে।”
খুব না। ঠিক আছে। আজ বিকেলে আমার সাথে একটা যায়গাতে যেতে হবে বুঝলি। কাজ সব দুপুরের মধ্যেই শেষ করবি বলে দিলাম।
আচ্ছা। আপা ফুল কিনেছেন যে? কেউ আসবে নাকি আজ?
না কেউ আসবে না। আমাকে এখন একটু একা থাকতে দে।
আমি নীচে আছি আপা দরকার পড়লে ডাক দিয়েন।

খোলা জানালাটা দক্ষিণে। বাতাসের কারণে জানালার পর্দাটা বারবার উড়ছে। বৃষ্টি আসতে পারে। নেহা উঠে জানালা দিতে গেলেন। আকাশটা খুব চুপচাপ। নেহা কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলেন জানালার সামনে। মনে পড়তে লাগলো পুরোনো সেইসব দিনের কথা …..”
‘শুভ জন্মদিন আবির’ এইবার তুই আর একটু বড় হলি।
তোর কিরে ….উইশ করলি এবার উপহার দে।
নে তোর জন্য … এই ফুল।
তুই কিপটাই থেকে গেলি।
শোন আবির …যখন আমার বিয়ে হবে তখন তোকে বড় বড় উপহার দিবো। চিন্তা করিস না। আর আমার মতো এতো মনে রেখে তোকে কে উইশ করে বলতো? আর এতো সুন্দর করে ফুল ও তোকে কেউ দিবে না।
বাহ্…আমার টাকায় আমাকেই ভুলাবি!
বুদ্ধি আছে তাহলে তোর।
শোন একদিন আমি অনেক বড় লেখক হবো বুঝলি। আমার নাম প্রতিটা পত্রিকাতে ছাপানো হবে। জন্মদিন ও পালন হবে।
সেটাই যেনো হয়। এবার চল খুব খিদে পেয়েছে।
চল ….যাওয়া যাক।
ওদের দুজনের বন্ধুত্বের আড়ালে একটা মিষ্টি ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো। পুরো ক্যাম্পাসে ওদের নিয়ে ছোটোখাটো কথা হতো৷
একদিকে আবির ছিলো একটু লাজুক টাইপ। আর একটু কবি কবি ভাব। আসলে বলতে গেলে খুব ভালোই লিখতো …গল্প, কবিতা, উপন্যাস। সবার প্রিয় একজন হয়ে ছিলো। অন্যদিকে নেহা ছিলো একদম চঞ্চল। গলায় ছিলো অসাধারণ সুর। গান গাইতে পারতো চমৎকার। সেই দিক দিয়ে ওদের জুটিটা সবার নজর কাটতো।
নেহার ইচ্ছে ছিলো গায়িকা হবে। কিন্তু সে ইচ্ছা তার পূরণ হয়নি। হঠাৎ করে নেহার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরিবারে সমস্যা এসে দাড়ায়। বাসা থেকে নেহার বিয়ের কথা উঠে।
বিয়ের কথা আবিরকে জানাই নেহা। সে সময় আবির কোনোমতে বিয়ে করতে পারবেনা। কারণ তার জীবনের স্বপ্ন পূরণ বাকি আছে। বড় হওয়ার ইচ্ছেটা যে মরে যাবে। অপেক্ষা করতে বলেছিলো নেহাকে। অপেক্ষা করার মতো সময় ছিলোনা নেহার হাতে।

আবির আমাকে যেতে হবে।
তোমাকে ছাড়া থাকতে হবে ভাবিনি আমি নেহা।
আমাকে বিদায় দিয়ে ভালোবাসার সমাধান করে ফেলো।
সমাধান?
হুম! সমাধান। আমাদের সম্পর্কের সমাধান। ভালো থেকো।
চলে যাচ্ছে নেহা। আবির অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
বিয়ে হয়ে যায় নেহার। সমস্যার সমাধান ও হয়ে যায়।

এরপর কখনো আর আবিরের সাথে নেহার দেখা হয়নি। কথা ও হয়নি। নেহার শশুড়বাড়িতে তার ইচ্ছেটা গ্রহণযোগ্য নয় তাই আর গায়িকা হয়ে উঠা হয়নি। সময়ের সাথে আস্তে আস্তে সবকিছু হারিয়ে গেলো। এখন সে একা। ছেলেমেয়েরা নিজেদের মতো করে সেটেল হয়ে গেছে। বাকিটুকু জীবন সে নিজের মতো করে কাটাবে।
রোশনীকে নিয়ে নেহা ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। পুরোনো সেই ক্যাম্পাস এ। আজকের এইদিনের কাটানো মুহূর্তগুলো চোখের সামনে পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ব্যথায় ভরে উঠতে লাগলো মন। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এলেন নেহা।
আজ তার খুব ক্লান্ত লাগে। দুনিয়াজুড়ে বিভিন্ন রঙ এর খেলা দেখতে পান।
টেবিলে রাখা চিঠিটি হাতে নিয়ে দেখলেন, চিঠির উপরে আবিরের নাম। বুঝতে বাকি নেই চিঠিটা আবির পাঠিয়েছে। এতোদিন পর কেনো?

…. নেহা,
ভালো আছো? মনে হয়তো ভাবছো এতদিন পর কেনো চিঠি দিলাম। তুমি বলেছিলে সমাধান করে ফেলতে। কিন্তুু আমি আজও পারিনি। কারণ, ভালবাসার সমাধান হয় না। জীবনে একটা ভুল করেছিলাম তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে। যা হতে চেয়েছিলাম তাই পেয়েছি। জানো নেহা, আজ আমাকে অনেকে উইশ করেছে। কিন্তু তোমার মতো এতো স্নিগ্ধতা নেই। ফুলের মধ্যে কোনো সুবাস নেই। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। আমি কিছুদিনের মধ্যে বিদেশে চলে যাচ্ছি। আর হয়তো ফিরবো না। ভালো থেকো। ক্ষমা করো শুধু একটাই কথা, “আমি কিন্তু সম্পর্কের সমাধান করতে পারিনি।”
ইতি,
“আবির চৌধুরী”

নেহা চিঠি বন্ধ করে একটা ছোট শ্বাস ফেলে বললেন, “সমাধান তো অনেক বছর আগেই হয়েছে!!

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

২ Comments

  1. minhazul abedin

    hmmm…onk abeg r ovinan jorito akta golpo..ja sottie ridoy suae gesay…mind blowing …

    Reply
  2. minhazul abedin

    hmmm..onk oviman r lokiea thaka valobasa bijorito akta golpo…ja sottie ridoy suae gesay… .ak kothai mind blowing …

    Reply

Leave a Reply to minhazul abedin Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *