লেখিকাঃ সুবর্ণা ইসলাম
(জুন – ২০১৮)
………………
কলেজ ছুটি শেষে ফুচকার দোকানে বসে আছি। ফুচকা খাব বলে। অনেক দিন ফুচকা খাওয়া হয় না আমার। যেইদিন ই বলি ফুচকা খাব সেদিনই কোন না কোন কাজ চলে আসে। আজ খাবই যে করে হোক।
পুরো দশ মিনিট পর ফুচকাওয়ালা আমার হাতে ফুচকা বানিয়ে দিলেন। যেই না আমি একটা ফুচকা মুখে দেব পাশ থেকে একটা ডাক শুনতে পেলাম
-আফা, একটা ফুচকা দিবেন।
একটা ৫-৬ বছরের ছেলে আমার দিকে হাত পেতে দাঁড়িয়ে আছে।
হাত টার উল্টো পিঠ কুচকুচে কালো। বোঝাই যায় এটা ওর শরীরের নিজের রং নয় রোদে পুড়ে নিজেকে কালো রঙে রাঙিয়েছে ও
“ফুচকা দিবেন” কথাটা বলে ক্ষান্ত হয় নি ও ওর মুখের দাতঁ গুলো বের করে দিয়েছে ।
আমি কিছুর বলার আগেই আমার শিক্ষিত বান্ধবী বলল
-এই গুলোকে এক দম পাত্তা দিবি না। একটাকে দিলে আরেকটা এসে হাজির হবে। একজন আরেকজনকে বলে হাত পাততে।
আমি তাকে অবাক করে দিয়ে বললাম
-হ্যাঁ কারণ ওরা নিজের ভালটা বুঝার পাশা পাশি অন্যের ভালটাও বুঝে। ওরা তো অশিক্ষিত তাই শুধু নিজের ভাল থাকার মারপেচটা না বুঝে অন্যকেও বলে হাত পাততে। যাতে ওরাও ভাল থাকে।
আমার বান্ধবী আর কিছু বলে না। চুপ করে যায়।
আমার বান্ধবীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে,
ফুচকাওয়ালা মামাকে আরও এক প্লেট ফুচকা বানাতে বলে ওর সাথে গল্প জুড়ে দিলাম।
-কোথায় থাকিস তুই?
-রাস্তায়
-ঘুমাস কোথায়?
-মায়ের আচলের উপরে
-বাড়িতে কে কে আছে তোর?
-আমার বাড়িই নাই
আমি হেসে দিয়ে বললাম।
-না মানে তোর সাথে কে কে থাকে?
-আমার পাগল মা।(এটা বলে একটু মুচকি হাসি দিলো)
-সারাদিনে কিছু খেয়েছিস?
-না আজকে কেউ ময়লার ঝুড়িতে খাওন ফালাই নাই, কেউ মায়া কইরা খাইতেও দেয় নাই,তাই এহন পর্যন্ত খাই নাই।
আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে।
এর মধ্যেই ফুচকাওয়ালা মামা ওর হাতে ফুচকার বাটি টা দেয়।
ও দুটো ফুচকা খেয়ে বাকি গুলো একটা পলিথিনে ঢুকিয়ে নেয়।
আমি অবাক হয়ে ওকে বলি
-কিরে ফুচকা খাচ্ছিস না কেন?
ও মিষ্ট একটা হাসি দিয়ে বলল
-আমার পাগল মাও কিচ্ছু খায় নাই। তাই হের লেইগা নিয়া যাইতাসি।
আমি ছল ছল দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-দুটো ফুচকায় পেট ভরেছে তোর।
-খাইতে পারছি এই হাজার শুকরিয়া আল্লাহ্র কাছে। দুইডা আর তিন্ডা নাই আমাগো কাছে। তয় আমার মার মনে হয় না পেট ভরবো এই খাওনে।
এটা বলে একটা মিষ্টি হাসি দিলো ও।
আমি ওর মিষ্ট হাসিতে মুগ্ধ হয়ে মনে মনে ভাবলাম,
অশিক্ষিত পাগল মায়ের অশিক্ষিত ছেলে তার মায়ের স্থান দিয়েছে সবার উপরে।
অপর দিকে,
আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত মায়ের শিক্ষিত ছেলে তাদের স্থান দেয় বৃদ্ধাশ্রমে।
০ Comments