লেখাঃ M B G Bijoy
ছনের বেড়া দেওয়া বাড়িটার ঠিক সামনেই একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। মানুষজন বলাবলি করছিল, লোকটি নাকি ক্যান্সারে মারা গেছে। গাড়িকে ঘিরে ছোট একটা জটলা পেকে আছে। গাড়িটা লাশ বহনকারী একটা পিকআপ ভ্যান।
একটা অচেনা পথিককে দেখা গেল সেই ভিড়ে।পথিকটি এমনই একজন, যার কিনা মৃত ব্যক্তির সাথে কোনো’ই সম্পর্ক নেই।সে পাশ দিয়ে যাবার সময় হাঁটা থামিয়ে থমকে দাঁড়াল।
জানাজা কোন মসজিদে পড়ানো হবে তা নিয়ে আলোচনা করছে জটলার একাংশ। জটলার একটা অংশ চাইছে মহল্লার মসজিদে জানাজা হোক।অন্য আরেকটি অংশ আপত্তি করে বলছে,সেই মসজিদে নাকি লোক কম হয়। জানাজায় লোক যত বেশি হয় ততই ভালো।
দু’জন মেয়ে মানুষের কান্না ভেসে আসছে ভেতরের ঘর থেকে। এদের একজন এক নাগাড়ে কাঁদছে অন্যজন কিছুটা থেমে থেমে,ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। এক একটা মানুষ একেক ভাবে কষ্ট পাচ্ছে। মুরুব্বী ধরণের একজন এসে বলে গেলেন,”ভালো একটা দিনে মারা গেছে।ভালো লোক ছিল”। এরপর থেকে অনেক’কেই এই কথাটা বলতে শোনা গেছে।
মাগরীবের নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই কোথায় থেকে দুই তিনজন লোক দৌড়ে এসে বলতে লাগল, তারা মৃতকে এখানে কবর দিতে দেবে না।জটলার একটা অংশ এখন তাদেরকে ঘিরে আছে।সান্ত্বনা দিতে যারা এসেছিল তাদের কেউ কেউ লোকগুলোকে বুঝাচ্ছে।এমন একটা অবস্থায় হঠাৎ একজনকে বলতে শোনা গেল,
-এত বছর টাকা রোজগার করছে,কবরের জায়গাটা কিনে রেখে যেতে পারল না।দিনে পঞ্চাশ টাকা করে জমালেও তো দুই তিন বছরে একজনের কবরের জায়গা কিনে ফেলা যায়।বদ্যাইল্লা যে পুরাই বদ্যাইল্লা!
আর কারো কিছু বলার থাকে না!
ত্রিশ বছরের অচেনা সেই পথিকটি দুপুর থেকে এই লাশবহনকারী পিকআপ ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এবার গ্রামের কিছু লোক মিলে সেই পিকআপ ভ্যানে লাশটা উঠিয়ে দাফন করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।সন্ধ্যা ছয়টা বেজে তেরো মিনিট।পিকআপ ভ্যানটাতে লাশ নিয়ে আরও পাঁচ ছয়জন নিকট আত্নীয় উঠে পড়ল।সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিকট আত্মীয়ের সাথে সেই অচেনা পথিকও রওনা দিল। কিছু অতি উৎসাহী লোকজন পিকআপ ভ্যানটার পিছন পিছন আসছে।পিকআপ ভ্যানটা চরের কাছে এসে থামল।এখানে বর্ষাকালে পলি জমে চর হয়ে গেছে।
বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি। নদীর করাল স্রোতের সর্বগ্রাসী আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। এর ভেতরেই দু’জন লোক কবর খোড়া শুরু করেছে।এরাও লোকটির সাথে দিনমজুরের কাজ করত।মৃত লোকটির একমাত্র ছেলেটি এতক্ষণ অজ্ঞান হয়ে ছিল। হঠাৎ চোখ খুলে সামনে লাশের গাড়িটা দেখা মাত্র হাউমাউ করে চিৎকার করে কেঁদে উঠল। যেন ঘুম ভাঙ্গা মাত্রই কেউ তাকে পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম সত্যটা মনে করিয়ে দিল! আবার জ্ঞান হারালো মৃত দিনমজুর লোকটার পনেরো বছরের একমাত্র ছেলেটা।
গোরস্থানে বৃষ্টি, কুরআন তিলাওয়াত আর কান্নার শব্দে চারপাশ ভৌতিক হয়ে গেলো। মুরুব্বী করে একজন এসে বলে গেলেন, “এই বৃষ্টি,রহমতের বৃষ্টি”। এরপর থেকে অনেককেই এই কথা বলতে শোনা গেছে। কোনরকমে নদীর চরে গর্ত করে লোকটাকে দাফন করা হল।মৃত লোকটির পনেরো বছরের একমাত্র ছেলেটা বাবার জানাজাটাও পড়তে পারল না।এখনো ছেলেটা অজ্ঞান।জানাজা শেষে সবাই যার যার বাড়িতে চলে গেল।
“অনেক রাত হয়ে গেলো;ভারী বর্ষণ হচ্ছে!কেমন দূর্যোগের পূর্বাভাস দিচ্ছে প্রকৃতি”,কবর খোড়া লোক দু’জন সবার শেষে বাড়ির পথ ধরতে ধরতে বলে উঠল।
যুবক ছেলেটি এখনো মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।কবর খোড়া লোক দু’টো তাকে দেখা মাত্রই পরিচয় জানতে চাইলে সেই অজানা পথিক জবাব দিল,
“আমিও একজন দিনমজুর,ক্যান্সারের পেশেন্ট,যার শেষ ঠিকানা কবরের জায়গাটুকু নেই”।
দুনিয়াটা এতো কঠিন কেন? কিছু মানুষের কপালে তো শেষ সম্বল হিসেবে সাড়ে তিন হাত জায়গাও জোটে না যেখানে সে নিশ্চিন্তে আরামে ঘুমাতে পারবে। ভালো লিখেছেন। আপনার গল্প আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে।
বানানের তেমন ভুল নেই।
জটলা পেকে আছে- জটলা পাকিয়ে আছে।
ধরণেরগ ধরনের।
খোড়া- খোঁড়া।
বেশ ভাল গল্প। জীবনবোধে ভরপুর। ডিটেইলিঙে আরেকটু মনোযোগ দিলে ভাল হত। শেষ বাক্যটা সংলাপে না দিলেও হত।
খুব ভালো ছিলো গল্পটা।বানান তেমন একটা ভুল নেই।গল্পটা আর একটু বড় হলে ভালো হতো। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
পথিক তার শেষ ঠিকানা দেখছে।এমন কজন মানুষ আছে যারা জানে তাদের মৃত্যু এগিয়ে আসছে।তখন তাদের মাঝে অনুভূতিটা কিরকম হয়?প্রত্যেকদিন মৃত্যুকে কাছে আসতে দেখে।সে নিজের পাপ আর পূণ্যের গণনায় রত থাকে।
পথিক আর আমাদের সুস্থ্য মানুষের মাঝে পার্থক্যক আমরা আমাদের মৃত্যুদিন জানি না।তাই হয়তো এক মহান আল্লাহকে ভুলে দুনিয়ার রঙে ঢঙে মগ্ন।
মৃত্যু আমাদের খুব নিকটে।মৃত্যুর কথা আমরা ভুলে যাই।পথিকের মতো আমাদেরও মৃত্যুর কথা স্মরণ করা উচিৎ।
আমরা দুনিয়ায় খেলায় মত্ত্ব থাকি।এ দুনিয়ার বাহাদুরী করি।দুনিয়ার সুখকেই সুখ মনে করি।পরকালের চিন্তা করি না।কিন্তু পরকাল নিয়েই আমাদের চিন্তা করা উচিত।ভাবা দরকার।
ভালো লিখেছেন।পড়ে ভালো লাগলো।
আত্নীয়–আত্মীয়
বানানে ভুল নেই।
তবে গল্পটা আরেকটু বড় করলে পারতেন।
শুভ কামনা।এগিয়ে যান।আরও ভালো লিখতে পারবেন।