শেষ বিকেলের হাসি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 1,604 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

 

শেষ বিকেলের হাসি

লেখা : মো: মেহেদী হাসান হৃদয়।

“ও গিন্নী, এক কাপ চা দাও না গো, মনটা যে শুধু চা চা করছে।” চারতলার বেলকুনীতে আরাম কেদারায় বসে চায়ের জন্য অপেক্ষাতে আছে মেঘ।
ভেতরের ঘর থেকে কড়া জবাব আসে, “আমি আর চা বানাতে পারবো না, কত সময় পরপর চা লাগে? একটু আগে চা দিয়েছি তো! আমি পারবো না।”

– ও গিন্নী, রাগ করো কেন? পরে কিন্তু মনে পরবে। তখন কিন্তু আপসোস করতে পারবে না।

হঠাৎ নূপুরের নিক্কণ, সাথে চামচ আর কাপের টুংটাং শব্দ তারসাথে ভারী কণ্ঠে, ” দেখ বুড়ো, ইমোশনাল ব্লাকমেইল করবে না বলে দিলাম। তাহলে কিন্তু ভালো হবে না।”

ও বউমা, দেখ তোমার মেয়ের গোস্বা হয়েছে। মুখ বাংলার পাঁচ করে রেখেছে। বউমাকে নালিশ দিতেই বউমা উত্তর দেয়, ” আপনার গিন্নীর রাগ এবার আপনি নিজে সামলান। ” বলেই হাসতে শুরু করে।

– ও গিন্নী, রাগ হয়েছে? সাথেসাথেই উত্তর আসে, “হু ”
মেঘ আবার প্রশ্ন করে,”এবার আমি কী করবো? কী করে আমার গিন্নীর রাগ ভাঙাবো?”
– চলে যাওয়ার কথা বলো কেন? জানো না কষ্ট হয়!
– একটা কথা বলবো তোমাকে?
এক কথায় জবাব আসে, “হু”
– কিছু বলতে পারবে না কিন্তু।
– হু

“তোমাকে রাগলে না…” কথাটা শেষ না করতেই মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে, ” দিম্মার মতো লাগে নাকি কোনো নায়িকার মতো লাগে! ”

এক বুক হতাশা নিয়ে বলে, “কারো মতো না গিন্নী!”
অতি উৎসুখ হয়ে রাত্রি প্রশ্ন করে, “তাহলে?”

– লক্ষ্মীপেঁচা চেনো?
– চিনি, কিন্তু মনে নেই।

তোমাকে তো একদম সেই লক্ষ্মীপেঁচার মতো লাগে। রাত্রি সাথে সাথেই চিৎকার দিয়ে বললো, ” কিহ্! আমি পেঁচা? তোমার সাথে আমার আর কোনো কথা নেই।”

মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বুকের মধ্যে টেনে নেয় রাত্রিকে। টেনে নিয়ে বলে, ” কোন নায়িকার সাধ্যি আছে আমার গিন্নীর মতো সুন্দর হবে? আমার গিন্নী যে আমার স্বপ্নের রাণী।”

রাত্রি মুখ গোমড়া করে বলে, ” তাহলে, পেঁচা বললে যে?”

মেঘ হাসতে হাসতে উত্তর দেয়, ” আরে পাগলী, পেঁচা তো বললাম ভালোবেসে, ঠিক তোমার দিম্মাকে যেমন করে শালিক পাখি বলতাম! আর শালিক পাখি বললেই সে তোমার মতো মুখ গোমড়া করে বসে থাকতো।”

“তুমি দিম্মাকে খুব ভালোবাসো? ” খুব কোমল স্বরে প্রশ্ন করে রাত্রি।
“ভালোবেসে তো আঁটকে রাখতে পারলাম না। আর, ভালোবাসা যে পরিমাপ করে বলা যায় না এটা অনুধাবন করে নিতে হয়।” কথাটা বলে একবুক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মেঘ।

রাত্রি, তোমাকে কতবার বলেছি যে কথা কম বলবে? দাদুর চা তো ঠান্ডা হয়ে গেল। নিজেই চা বানিয়ে আনলে, আবার কথা বলে ঠান্ডা করে দিলে? এই বলে ত্বাহা হালকা বকা দেয় রাত্রিকে।

মেঘকে উদ্যেশ্য করে ত্বাহা বলে, ” বাবা, আরেক কাপ বানিয়ে আনি? ”
– না মা, এখানে বসো। এখন আর চা খেতে ইচ্ছা করছে না।
– বাবা, তাহলে অন্যকিছু বানিয়ে আনি?
– না মা, একটু পরে অভি চলে আসবে। তখন কিছু একটা আনলেই হবে। একসাথে বসে খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া যাবে।

– দাদু, দিম্মার গল্প বলবে?
– কি গল্প শুনবে, বলো?
– তোমার যেটা ভালো লাগে। সেটাই শুনবো।

আমি ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসছি। বাড়িতে ঢুকবো, ঠিক তেমন সময় বাড়ি থেকে একজন বেরিয়ে গেল। আমি কিছু না ভেবে দৌড়ে আমার মাকে জড়িয়ে ধরি। আমাকে দেখে মা তো মহাখুশি। অনেক আদর যত্ন করছে। রাতে একসাথে খেতে বসেছি, তখন তোমার বড়মা মানে আমার মা আমাকে বলছে,

– বাজান, একখান কথা কমু?
– কী? বলো মা।
– বাজান, অনেক তো বড় হইলি, একখান চাকরিও করিস। এইবার একখান বিয়া কর। কবে মইরা যামু, মরার আগে তোর বউডারে দেইখা যাই। আইজকে মজিবর ঘটক আইচিলো। খুব সুন্দর একটা মাইয়ার খোজ দিয়া গেছে। তিন গেরাম পরে বাড়ি। মাইয়ার একখান ফটো দিয়া গেছে ঘটকে।

গিন্নী, তোমাকে কি বলবো! মা যখন বিয়ের কথা বললো তখন যে কি খুশি হয়েছিলাম, নাচতে ইচ্ছা করছিলো। কিন্তু লজ্বার কারনে নাচতে পারলাম না আবার বলতেও পারলাম না যে, “আমি বিয়ে করবো।”
– তারপর কি হলো দাদু?

তারপর আর কি! সম্মান রক্ষার্থে আমি বললাম, ” মা, আমি এখন বিয়ে করবো না। কিছুদিন পরে। ”
মা বললো, ” থাউক, আর লজ্বা পাইতে হবে না। আমার বালিসের তলে ফটো আছে। লইয়া যাস একসময়। ”

আমি আর কিছু না বলেই খেয়ে ঘরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে মায়ের ঘরে যায়, মায়ের বালিসের নিচে হাত দিবো, এমন সময় মা বলে উঠলো,”কি রে বাজান, এহন এইহানে? ”
– আমি দেখতে এসেছিলাম তুমি ঘুমাইছো নাকি।
“থাউক বাজান, আর মিছা কথা কওন লাগবো না। এই ধর ফটো। বলিসের তলে হাত দিলেও পাইতি না। এইদিক আছিলো।” এই বলে মা হাসতে শুরু করলো।

সেদিন যে কি লজ্বা পেয়েছিলাম! বলে বোঝাতে পারবো না। তবে ঘরে গিয়ে দেখি, সে যেন মানুষ না আস্ত একটা পরী। কোনো মেয়ে মানুষ যে এতো সুন্দরী হয়, আমার জানা ছিলো না। পরেরদিন সকালে আমি মাকে বললাম যে আমি এখন এই মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না। মা এই কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পরলো।

– দাদু, তুমি এমন কথা বলতে পারলে? ওতো সুন্দরীকে তুমি বিয়ে করবে না?
– আরে গিন্নী, আমাকে আগে শেষ করতে দিবে তো।
– হ্যাঁ দাদু, বলো। তারপর?

আমি মাকে বললাম, ” মা, আমি পরে বিয়ে করবো। আগে ওই মেয়ের সাথে প্রেম করবো। তারপরে বিয়ে করবো “।
মা অবাক হয়ে বলে, “বাজান, তোর মাথা ঠিক আছে? এ কি কথা কস?
আমি অনেক কষ্টে মাকে এই বলে রাজি করাই যে, “আগে প্রেম করে নিলে চেনাজানা ভালো হবে, সংসার সুখের হবে। আগে প্রেম করবো, তারপরে বিয়ে।”

– ছিঃ দাদু! প্রেম কত খারাপ। আর তুমি বিয়ে না করে প্রেম করতে?
– কে বলেছে দিদিভাই, যে প্রেম খারাপ?
হতাশার সুরে রাত্রি বললো, ” দাদুভাই, এখন নিউজেই তো দেখা যাই কত খারাপ কিছু হয়। ”
– দিদিভাই, আমাদের সময় প্রেম এমন ছিল না, একদম ফুলের মতো পবিত্র ছিল।

হঠাৎ ত্বাহা বলে উঠলো, ” বাবা, তারপরে কি হলো?”

ও হ্যাঁ, তারপর,

আমি একদিন বিকেলে তোমার শাশুড়িদের বাড়ির দিকে গিয়েছি ওকে দেখার জন্য। দেখি তোমার শাশুড়ি শাঁক তুলছে। আমি অনেক ভাব নিয়ে কোকিলের মতো কুহু কুহু করে ডাকতে গেছি, কিন্তু গলা দিয়ে কাকের মতো কা কা শব্দ বের হলো,

– এই জুই, এই অবেলায় কাক ডাকে কোথায় রে? কাক ডাকা তো মোটেও ভালো না!
– বুঝছি না তো,বৃষ্টি। আর এতো পুরোটা কাকের মতো ডাকলো না। কেমন জানি!

আমি বেশকিছু সময় আস্তে আস্তে কোকিলের মতো ডাকার প্র্যাকটিস করি। কিন্তু যেই ডেকেছি, আবারো সেই কা কা শব্দ।

– এই বৃষ্টি, চল এখান থেকে। আমার ভালো লাগছে না।
“হ্যা রে জুই, চল এখান থেকে। বাড়ি চলে যায়।” এই বলে তোমার দিম্মারা বাড়ি চলে গেল।

অতী ভাবুক কণ্ঠে রাত্রি প্রশ্ন করলো, ” আচ্ছা দাদু, দিম্মার নাম তো বৃষ্টি, তাহলে তুমি পরী নামে ডাকো কেন?”
হাসতে হাসতে মেঘ উত্তর দিলো, ” এটা তো ভালোবেসে ডাকতাম। ”
– বললে যে, শালিক পাখি বলতে?
– ভালোবেসে তো কত নামেই ডাকা যায়। এটাও তারমধ্যে একটা ছিলো।

আচ্ছা দাদু, তারপরে কি হলো?

আমি বেশকিছুদিন তোমার দিম্মাকে দেখতে যেতাম আর কোকিলের মতো ডাকতে গিয়ে কাকের মতো ডাকতাম। অন্য সময় কোকিল কিন্তু তোমার দিম্মার কাছে গেলেই কাক হয়ে যেতাম! একদিন তোমার দিম্মা আমাকে দেখে বুঝে যায়। পরে সব জানাজানি হয়ে যায়। ব্যাস, আর প্রেম করা হলো না।

“তাতো হবেই দাদু, কাকের সাথে কি আর কেউ প্রেম করে?” কথাটা বলেই হাসতে হাসতে লুটিয়ে পরে রাত্রি।

কিছুদিন পরে আমাদের বিয়ে হয়। সেদিন তোমার দিম্মা যে কি কান্নাটা করেছিলো, তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। অনেক কষ্টে সান্ত্বনা দিয়ে বাড়িতে আনলাম। বাসরঘরে ঢুকে তো আমি অবাক।

“কেন দাদুভাই? দিম্মা কি জানালা দিয়ে পালিয়ে গেছিল? ” বলেই আবার হাসিতে লুটোপুটি খাচ্ছে রাত্রি।

ধুর, পালাবে কেন? ঘরে ঢুকে দেখি লাল টুকটুকে শাড়ি পরে বিছানার ঠিক মাঝখানে একটা লালপরী বসে আছে। নাহ্ লালপরী না। কৃষ্ণচূড়া ফুল। আমি একটু করে এগুচ্ছি আর বৃষ্টি একটু একটু করে কেঁপে উঠছে। কাছে গিয়ে বসে বললাম, ” ওযু করে এসো। নামায পরতে হবে।” সে বাধ্য মেয়ের মতো গিয়ে ওযু করে আসলো। দু’রাকাত নফল নামাজ পরে আমরা নতুন জীবন শুরু করলাম। বিছানাতে বসে আছি। প্রথমে একটা নূপুর উপহার দিলাম। যেটা এখন তোমার পায়ে।
উপহার পেয়েই বৃষ্টি বলে উঠলো, “এটা আমার জন্য? আমি পায়ে দিবো?”
– হ্যাঁ পরী, তুমি পায়ে দেবে।

তখনকার সময়ে আমাদের বাংলা সিনেমাতে আলমগীর শাবানার খুব নাম ছিলো। ওদের কোনো একটা সিনেমাতে দেখেছিলাম, আলমগীর শাবানাকে নূপুর পরিয়ে দিচ্ছে, সেটা ভেবেই বললাম, ” তুমি না, আমি পড়িয়ে দিবো। ”
“ছিঃ ছিঃ কী বলেন? আপনি আমার পায়ে হাত দেবেন কেন? আমার যে পাপ হবে।” এই বলে পা গুটিয়ে নিলো। আমার আর নায়ক সাজা হলো না! ও নিজেই নূপুর পরে নিলো। কার সাথে কিরকম ব্যবহার করতে হবে, কারো কষ্ট দেওয়া যাবে না, এমন নানা উপদেশ দিলাম সে রাতে।

এভাবে বেশ ভালোই চলছিলো, আমার ছুটি শেষ হয়ে গেল, আমি শহরে চলে আসবো। কথাটা শুনে যে কি মুখ ভার করে রেখেছিলো, ঠিক তুমি এখন মাঝে মাঝে যেমনটা করে রাখো। যেদিন চলে আসবো সেদিন রাতে নিঃশব্দে অনেক কেঁদেছিলো। কিন্তু, আমাকে তো আসতেই হবে। চলে আসলাম শহরে।

একটা ছোট বাসা ভাড়া করলাম, টুকটাক গুছিয়ে রেখেছি। দুই মাস পরে বাড়ি গিয়ে মা আর বৃষ্টিকে নিয়ে শহরে আসি। ছোট্ট একটা বাড়ি, ছোট্ট সংসার।

– আচ্ছা দাদু, কেমন ছোট? নিচের গাছের ওই ঘুঘুপাখির বাসার মতো?
– হ্যাঁ গিন্নী, ছোট্ট কিন্তু ভালোবাসাতে পূর্ণ। একদিন সন্ধায় লাল পেড়ে সাদা একটা সিল্কের শাড়ি এনেছি। পরদিন ঘুরতে যাবো বলে। পরদিন বৃষ্টি যখন শাড়ীটা পড়ে বের হলো, তখন বৃষ্টিকে ছাঁড়া চোখে আর কিছুই দেখছিলাম না। সেদিন দুজনে দূর অজানা পর্যন্ত হেঁটেছিলাম। এভাবেই কাঁটতো আমাদের জীবন। একদিন অফিস থেকে বাড়ি এসেছি,

– এই শুনছো?
– হুমম পরী, বলো। কিছু বলবে?
“আমাদের সংসারে তো নতুন লোক আসছে ” বলেই মুখটা আড়াল করতে চাইলো।
-কে আসবে? তোমার বাবার বাড়ি থেকে কেউ আসবে?
– ধুর বুদ্ধু! তুমি বাবা হবে।

এই সংবাদটা শুনে সেদিন বাচ্চা ছেলেদের মতো লাফিয়োছিলাম। সিনেমার নায়কদের মতো বৃষ্টিকে কোলে করে ঘুরাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ঘুরায় নি, যদি পরে যেত? আস্তে আস্তে দিন গেল, সপ্তাহ্ গেল, মাস গেল। তোমার বাবা আসলো পৃথিবীতে। সেদিন আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম। অত খুশি বোধয় আগে কখনো হয়নি।

“ত্বাহা, রাত্রি, সবাই কোথায়? কাউকে তো দেখতে পারছি না। বাবা, কোথায় তুমি? ” ওই দেখেন বাবা, আপনার ছেলে শুধু পৃথিবীতেই না সোজা বাড়ি চলে এসেছে।
“এই শোনো আমরা বেলকুনীতে, দ্রুত চলে এসো। গল্প হচ্ছে, পরে ফ্রেশ হবে” ত্বাহা অভিকে ডাক দেয়।

“কি আড্ডা হচ্ছে বাবা? ” শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে প্রশ্ন করে অভি।

বুঝেছো গিন্নী, দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। তোমার বাবা বড় হতে থাকে। এক দুপুরে আমি, মা, বৃষ্টি সবাই একসাথে বসে খাবার খাচ্ছি। আর অভি সিনেমা দেখছিলো। হঠাৎ অভি এসে বললো, ” বাবা, বাবা, আমাকে কয়তা তাকা দিবে, আমি তিকিত কিনবো “।এই কথা বলছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে। আমরা সবাই অবাক। জিজ্ঞাস করলাম “টিকিট কি করবে?” ও তখন বললো,

“বাবা প্লিজ, এই কথাটা বলো না, তাহলে ত্বাহা, রাত্রি সবসময় যে আমাকে ক্ষ্যাপাবে। প্লিজ বাবা, বলো না।” অভি কথাটা না বলার জন্য খুব অনুরোধ করছে আর অন্যদিকে রাত্রি আর ত্বাহা জোর করছে।

অভি তখন বললো, ” ওইদে বাবা, জছিম টিকিত কিনলেই কোতোপতি অয়ে যায়, আমিও তিকিত কিনবো, আমিও কোতোপতি অবো”। সেদিন প্রচুর হেসেছিলাম সবাই। কিন্তু সেই হাসি স্থায়ী হয় নি। দুদিন পরে অভির দাদি আমাদের একা করে চলে যায় না ফেরার দেশে। আবার তারপরেই বৃষ্টি সংবাদ দেয়, আমি আবার বাবা হবো। সব অনুভূতি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিলো। সময় বহমান, বৃষ্টির শরীর আস্তে আস্তে খারাপ হতে থাকে, ডেলিভারির ডেট চলে আসে।

– ওগো শুনছো, আমার খুব ভয় করছে।
– ধুর পাগলী, ভয় কিসের? আমি তো আছি।
“আমার যদি কিছু হয়ে যায়? তাহলে তোমাকে আর অভিকে দেখবে কে?” কথাটা বলেই কান্নায় ভেঙে পরে বৃষ্টি।
– আমি আছি না? কিছুই হবে না তোমার। একসাথে বাঁচার কথা দিয়েছিলে না তুমি?
– আমার যদি কিছু হয়ে যায়, আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর অভির খেয়াল রাখবে। আর নতুন একটা সংসার শুরু করবে।
” পাগল হয়েছো তুমি? এমন কথা বললে আর কোনোদিন কথা বলবো না ” এই বলে বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কেঁদেছিলাম দুজনে। সেদিন বুঝেছিলাম না, যে সত্যই ওর সাথে আর কোনোদিন কথা বলতে পারবো না।

সেই অবস্থাতেই অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় বৃষ্টিকে। আমি বাইরে কতসময় যে অপেক্ষা করি, ভেতর থেকে কোনো সংবাদ আসে না, আসে না আমার সন্তানের কান্নার শব্দ। হঠাৎ একটা ডাক্তার এসে বলে, “আমি দুঃখিত মেঘ। মা শিশু কাউকে বাঁচাতে পারলাম না “! কথাটা শুনে একদম চুপ হয়ে গেছিলাম। কোনো কথা বেরোচ্ছিলো না মুখ থেকে। চতুর্দিক নিস্তব্ধ। এমনকি একফোটা অশ্রুকণাও বের হয় নি। পাশথেকে হঠাৎ মেঘ বলেছিলো, “কি হয়েছে বাবা? আমার বনু কখন আসবে?” সেদিনের কোনো উত্তর দিতে পারি নি।

“তাই তো দাদুভাই, তুমি কাঁদবে কেন? একদম কাঁদবে না। বাবার কাছে শুনে দেখো, বাবা আর কখনো তোমাকে প্রশ্নটা করবে না। তুমি একদম কাঁদবে না ” কথাগুলো বলতে বলতে মোটা ফ্রেমের চশমাটা সরিয়ে আলতো হাতে চোখের পানি মুছিয়ে দিচ্ছে রাত্রি।

“দাদুভাই, তুমিও দিম্মার মতো আমাদের ছেরে চলে যাবে?” প্রশ্ন করতে কথা জড়িয়ে যাচ্ছে রাত্রির।
– হ্যাঁ গিন্নী। যে তে হবেই।
– কিন্তু আমার যে অনেক কষ্ট হবে। আমাকে তাহলে পেঁচা বলে ডাকবে কে?
– দিদিভাই, এটা যে জগতের নিষ্ঠুর নিয়ম। আমাদের সবাইকে তো একদিন যেতে হবে। চাইলেও যে থাকতে পারবো না।

কথাগুলো শুনেই দাদুর বুকে মুখ গুজে দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে রাত্রি। পরিবেশ একদিম নীরব।

কিছুসময় পরে, হঠাৎ মেঘ বলে, “ও গিন্নী , গিন্নী, আমাকে তাকা দাও না, আমি তিকিত কিনবো, কতোপতি অবো।”

কথাটা শুনে সবাই হাসছে, এ এক অনাবিল হাসি, যে হাসিতে নেই কোনো কষ্ট, নেই কোনো অপ্রাপ্তি। শুধু সুখ আর শান্তিতে পরিপূর্ণ।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

৭ Comments

  1. আফরোজা আক্তার ইতি

    হাসি-কান্না মেশানো সুন্দর, মিষ্টি একটি পরিবারের গল্প পড়লাম।বেশ ভালো লাগল। কিছু জায়গায় কান্না চলে এলো, কিছু জায়গায় দাদুর দুষ্টুমিতে হেসে ফেললাম। জগতের নিয়ম বড় কঠিন, এর মাঝেই আমাদের হাসি-কান্না নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়।
    শুভ কামনা।

    Reply
  2. Md Rahim Miah

    ভেতরের -ভিতরের
    হু-হ্যাঁ
    খোজ-খোঁজ
    কারনে-কারণে
    ‘লজ্জা’ এইভাবে হবে বানানটা
    হ্যা-হ্যাঁ
    নামাজ পরতে হবে-নামাজ পড়তে হবে
    শুনে-শোনে
    শাড়ীটা-শাড়িটা
    ছাঁড়া-ছাড়া
    ঘুরায় নি-ঘুরায়নি
    ছেরে-ছেড়ে
    গল্পটা অনেক ভালো ছিল আর পড়ে ভালোও লেগেছে। তবে গল্পের মানুষরা যেহেতু মুসলিম,
    গিন্নী, দিম্মা এইসব শব্দ ব্যবহারের কারণে গল্পের সুন্দর্য্য হারিয়ে গেছে। প্রথমে ভেবেছিলাম হিন্দু ধর্মের লোক হবে গল্পের চরিত্র মানুষরা, পরে মুসলিম দেখে অবাক হয়ে গেলাম। এইসব শব্দ মুসলিমরা ব্যবহার কখনো করে না। যাইহোক শুভ কামনা রইল

    Reply
  3. Tanjina Tania

    কতোপতি না লিখে কোতিপতি লিখলে ভালো হত। ঘুরায়নি না হয়ে ঘুরাইনি হবে। ভালোই লিখেছেন। শুভকামনা।

    Reply
  4. Tanjina Tania

    শব্দটা কতোপতি না লিখে কোতিপতি লিখলে ভালো হত। ঘুরায়নি না হয়ে ঘুরাইনি হবে। ভালোই লিখেছেন। অনেক শুভকামনা।

    Reply
  5. Halima tus sadia

    অসাধারণ লিখেছেন।পড়ে ভালো লাগলো।
    হাসি খুশিও কান্নায় ভরা একটি মিষ্টি পরিবারের গল্প।
    বাস্তবতা বড় কঠিন।তবে জগতের নিয়মকে মনে চলতে হবে।
    বানানে কিছু ভুল আছে। শুধরে নিবেন।
    গল্পে হিন্দু ধর্মে ব্যবহার করা কিছু শব্দ না বললেই ভালো।
    শুভ কামনা রইলো।

    Reply
  6. অচেনা আমি

    আসসালামু আলাইকুম। গল্প প্রসঙ্গে কিছু কথা :
    গল্পটা মোটামুটি লেগেছে। অনেক ভুল রয়েছে গল্পে যা না থাকলে আরও সুন্দর হতো। নিচে সেগুলো লক্ষণীয়:
    প্রথমে যেটা বলতে চাই তা হলো নাম বিষয়ে। মেঘ নামটা শুনে যে কারোই মনে হবে এটা কোনো বাচ্চা ছেলের নাম বা ইয়াং কোনো ছেলের নাম। বয়স্ক ব্যক্তিদের নামের শেষে সাহেব, চৌধুরী এগুলো যোগ করতে হয়। তাহলে বুঝতে সুবিধা হয় এবং পড়তেও ভালো লাগে। তাছাড়া মুসলিম পরিবারে দিম্মা, দিদিভাই ডাকগুলোও ঠিক মানায় না।
    ইসলাম মতে নাতি / নাতনির সাথে সব ধরনের মজা করা নিষিদ্ধ এবং নাতি/নাতনিকে নিজের সান্তানের মতো দেখার কথা বলা হয়েছে অথচ এখানে নাতনিকে গিন্নি বলে সম্বোধন করা হচ্ছে যা ইসলাম পরিপন্থী। এছাড়াও রয়েছে অনেক ভুল।

    মনে পরবে – মনে পড়বে
    আপসোস – আফসোস
    দেখ – দেখো
    ঠান্ডা – ঠাণ্ডা
    খোজ – খোঁজ
    লজ্বা – লজ্জা
    কারনে – কারণে
    বালিসের – বালিশের
    আমি চলে যায় – আমি চলে যাই
    কিছুক্ষণ পর মায়ের ঘরে যায় – কিছুক্ষণ পর মায়ের ঘরে যাই
    আকাশ থেকে পরলো – আকাশ থেকে পড়লো
    চেনাজানা – চেনা জানা
    সন্ধায় – সন্ধ্যায়
    শাড়ীটা পড়ে – শাড়িটা পরে
    ছাঁড়া – ছাড়া
    কাঁটতো – কাটতো
    লাফিয়েছিলাম – লাফিয়ে ছিলাম
    শাঁক – শাক
    জুই – জুঁই
    অতী – অতি
    আমি পড়িয়ে দিবো – আমি পরিয়ে দেবো
    কারো কষ্ট দেওয়া যাবে না – কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না
    ছেরে – ছেড়ে
    যে তে – যেতে
    একদিম – একদম
    কি / কী এর ব্যবহার ঠিক নেই।
    জসিম টিকিট কেটে বড়লোক হয় না। লটারি হবে কথাটা
    পাশ থেকে মেঘ বলছিল… আমার বনু – ছেলের নাম তো মেঘ না। ছেলের নাম আরিফ হবে। খেয়াল রাখা উচিত ছিল।

    যাইহোক আগামীতে খেয়াল রেখে লিখবেন। শুভ কামনা।

    Reply
  7. অচেনা আমি

    আসসালামু আলাইকুম। গল্প প্রসঙ্গে কিছু কথা :
    গল্পটা মোটামুটি লেগেছে। অনেক ভুল রয়েছে গল্পে যা না থাকলে আরও সুন্দর হতো। নিচে সেগুলো লক্ষণীয়:
    প্রথমে যেটা বলতে চাই তা হলো নাম বিষয়ে। মেঘ নামটা শুনে যে কারোই মনে হবে এটা কোনো বাচ্চা ছেলের নাম বা ইয়াং কোনো ছেলের নাম। বয়স্ক ব্যক্তিদের নামের শেষে সাহেব, চৌধুরী এগুলো যোগ করতে হয়। তাহলে বুঝতে সুবিধা হয় এবং পড়তেও ভালো লাগে। তাছাড়া মুসলিম পরিবারে দিম্মা, দিদিভাই ডাকগুলোও ঠিক মানায় না।
    ইসলাম মতে নাতি / নাতনির সাথে সব ধরনের মজা করা নিষিদ্ধ এবং নাতি/নাতনিকে নিজের সান্তানের মতো দেখার কথা বলা হয়েছে অথচ এখানে নাতনিকে গিন্নি বলে সম্বোধন করা হচ্ছে যা ইসলাম পরিপন্থী। এছাড়াও রয়েছে অনেক ভুল।

    মনে পরবে – মনে পড়বে
    আপসোস – আফসোস
    দেখ – দেখো
    ঠান্ডা – ঠাণ্ডা
    খোজ – খোঁজ
    লজ্বা – লজ্জা
    কারনে – কারণে
    বালিসের – বালিশের
    আমি চলে যায় – আমি চলে যাই
    কিছুক্ষণ পর মায়ের ঘরে যায় – কিছুক্ষণ পর মায়ের ঘরে যাই
    আকাশ থেকে পরলো – আকাশ থেকে পড়লো
    চেনাজানা – চেনা জানা
    সন্ধায় – সন্ধ্যায়
    শাড়ীটা পড়ে – শাড়িটা পরে
    ছাঁড়া – ছাড়া
    কাঁটতো – কাটতো
    লাফিয়েছিলাম – লাফিয়ে ছিলাম
    শাঁক – শাক
    জুই – জুঁই
    অতী – অতি
    আমি পড়িয়ে দিবো – আমি পরিয়ে দেবো
    কারো কষ্ট দেওয়া যাবে না – কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না
    ছেরে – ছেড়ে
    যে তে – যেতে
    একদিম – একদম
    কি / কী এর ব্যবহার ঠিক নেই।
    জসিম টিকিট কেটে বড়লোক হয় না। লটারি হবে কথাটা
    পাশ থেকে মেঘ বলছিল… আমার বনু – ছেলের নাম তো মেঘ না। ছেলের নাম অভি হবে। খেয়াল রাখা উচিত ছিল।

    যাইহোক আগামীতে খেয়াল রেখে লিখবেন। শুভ কামনা।

    Reply

Leave a Reply to আফরোজা আক্তার ইতি Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *