সেরা ঈদ
প্রকাশিত: অগাস্ট ২১, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 2,010 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

@নূরানা হক
.
.
রায়হানের মনটা আজ খুব ভালো। আগামীকাল ঈদুল আযহা তাই তো একটু বেশিই খুশি সে। জীবনের প্রথম সে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য কিছু একটা করতে যাচ্ছে; ভাবতেই মনটা ভরে ওঠে রায়হানের। ঘুমের দোয়া পড়ে শান্তির ঘুম দিল রায়হান। ফজরের আযানের আগেই ঘুম ভাঙল রায়হানের। তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ে মসজিদের দিকে রওয়ানা হয় রায়হান।
.
মসজিদে যেতে যেতে রায়হান বারবার শিহরিত হচ্ছিল। এবারের এ ঈদটি তার কাছে এত গুরুত্ত্বপূর্ণ কেন? আনন্দের চেয়ে দায়িত্ত্বের অনুভূতিটাই যেন বেশি কাজ করছে।
গত রোজার ঈদে রায়হানদের বাসার কাজের মেয়ের জন্য কিছু কেনা হয়নি। রায়হান তার বাবাকে বলল, “বাবা, এটা কি ঠিক হলো? আমাদের নবী (সঃ) বলেছেন, “তোমরা যা খাবে, গৃহকর্মীদেরও তাই খাওয়াবে। তোমরা যা পরবে, তাদেরকেও তাই পরাবে।”
রায়হানের বাবা বললেন, “আমার ভুল হয়ে গেছে বাবা। চলো আমরা এখনই শিমুর জন্য জামা নিয়ে আসি।”
হাসি মুখে রায়হান সম্মতি জানায়।
.
গত জুমায় ইমাম সাহেবের ভাষণ শুনে সে। তিনি বলেন, “ঈদ কারও একার নয়। ছোট-বড়, ধনী -দরীদ্র সবার জন্যই ঈদ। অভাবী মানুষেরাও যাতে ইদের আনন্দে শামিল হতে পারে, এজন্য ফিতরা দেয়াকে ধনীদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে। তা ছাড়া সাধ্য অনুযায়ী সবারই উচিত নতুন পোশাক, ভালো খাবার দিয়ে গরিবদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করা।
.
শুনে রায়হান বুঝতে পারল যে, ঈদের দিনের চেয়ে উত্তম কোনো উৎসবের দিন নেই। ঈদ-ই শিখায়, ‘মানুষ মানুষের জন্য।’ঈদ হাসতে শেখায় ভালোবাসতে শেখায়।
তাই সে পরিকল্পনা করল রোজা ইদে তো কিছু করতে পারলাম না এবারের ইদে কিছু একটা করলে কেমন হয়! আমরা পঞ্চম শ্রেনীর প্রায় ৫০জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছি।সবাই যদি তাদের পাওয়া উপহার গুলো দুঃখী ছেলে মেয়েদেরকে বিলিয়ে দেয় তাহলেই তো হয়।যেই ভাবা সেই কাজ। সকল বন্ধুদের বলার পর বন্ধুরাও খুশি মনে রাজি হলো। আর ইদের দিন সেলামী যা পাবে তাও সবাইকে দিয়ে দিবে।
ইতিমধ্যেই তার হাতে নতুন পোশাকের অনেক গুলো প্যাকেট এসে গেছে আরোও আসবে। ইদের সালাতে যাওয়ার আগেই পাড়ায় বেড়িয়ে পড়বে সে। তার বয়সী কিশোরদেরকে নিজ হাতে পরিয়ে দেবে পোশাক।
.
রায়হানের বাবা একটি গরু কুরবানী দিচ্ছেন। রায়হান অনেক খুশি। গরীব দুঃখীদের মাঝে মাংস বিলিয়ে দিতে পারবে সে যে কী আনন্দ! গত জুমায় ইমাম সাহেব এক মুহূর্তে বলেছিলেন, “পবিত্র ‘জিলহজ্ব’ মাস এক মহামহিমান্বিত ও বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসেই মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে স্বীয় পুত্র হযরত ঈসমাইল (আ.) কে কুরবানি করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। যা সৃষ্টির আদিকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত নজীরবিহীন। হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর আদর্শ অনুসরণেই মুসলিম উম্মাহ দিবসটিকে পবিত্র ঈদুল আযহা হিসাবে পালন করে আসছে। তিনি মহিমান্বিত এই মাসে প্রিয় পুত্র ঈসমাঈল (আ.)কে কুরবানি করতে গিয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে যে ত্যাগের নজরানা পেশ করেছিলেন তা শত-সহস্র বছর পরেও মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। ঈদুল আজহার দিনে কুরবানী করা পশুর মাংস গরীবদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। ঈদুল আযহা মূলত আরবী বাক্য। এর অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব। আসলে এটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা তাদের সাধ্যমত ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী উট, গরু, দুম্বা কিংবা ছাগল কুরবানি বা জবেহ্ করে। মূলত কুরবানি হলো সৃষ্টির প্রতি ত্যাগী হয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশনানুযায়ী নির্দিষ্ট করে দেওয়া পশু জবেহ্ করা। কিন্তু অনেকেই এটাকে আনন্দানুষ্ঠান বলে মনে করে থাকেন। পশু জবেহ্ করে তা গরীব মানুষকে তিন ভাগের একভাগ বন্ঠন করা ও দিল্-মন ঠিক রেখে আত্মীয়দের বন্ঠন শেষে নিজেদের জন্যে একভাগ নেওয়া এটাকে সহজ কাজ মনে করলে চলবে না। কাজের ভেতর যথেষ্ট আন্তরিকতা থাকতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় সাত ভাগের কিংবা পাঁচ ভাগের একভাগ নিতে গেলেও কেই বেশি নিয়ে নেচ্ছেন আমার বোধ হয় কম পড়ে গেলো এমন একটা মনোভাব মনের মধ্যে চলে আসে, যা গোপন মনোভাব।এটা করলে কুরবানী কবুল হবে না।”
.
আরো বলেন, “জাগতিক লোভ-লালসা ও কামনা-বাসনার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে প্রবৃত্তির উপর বিজয় অর্জনই ঈদুল-আযহার প্রকৃত শিক্ষা। অন্যায়-অসত্য, অনাচার-পাপাচার, হিংসা-বিদ্বেষ, জুলুম-নির্যাতন, বিভেদ-বিসংবাদ বন্ধ করে সমাজে সার্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করে মানবজাতির প্রকৃত কল্যাণ সাধন করা পবিত্র ঈদ-উল-আযহার উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য যখন সাধিত হয়, তখনই আমাদের জন্য ঈদ আনন্দঘন ও অর্থবহ হয়ে ওঠে।”
ঈদের নামাজ থেকে এসে রায়হানদের গরু কুরবানী দেয়া হলো। তিন ভাগ করার পর একভাগ রায়হান নিজেও গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিল।
এভাবে একটি অনন্য ঈদ-আয়োজনের পরিকল্পনায় রায়হান আবেগাপ্লুত হয়ে গেছে। আর যা-ই হোক, অন্তত কয়েকটি গরীব শিশুদের মুখে তো হাসির রেখা ফুটে ওঠেছে!
(সমাপ্ত)

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

৬ Comments

  1. Mahbub Alom

    দারুণ লেখনী।শিক্ষা এবং কোরবানির মূল উদ্দেশ্য এখানে পরিলক্ষিত হয়েছে।আমরা বর্তমান মুসলমানরা কোরবানির মূল উদ্দেশ্য থেকে খানিকটা দূরে সরে।তাই এক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ভূমিকা রাখার উপযোগী একটি গল্প।

    Reply
  2. Mahbub Alom

    বাকি রোমান্টিক ভালোভাসাগুলোর মতোই লেগেছে।তবে একটা জিনিস খুব ভালো লেগেছে।সৌম্যর আম্মুর ফল ফুলের গাছ লাগানো।আর ছাদে আব্বু,আম্মুর সাথে সৌম্যর আড্ডা,খাওয়া দাওয়া।
    এইটুকুই কাহিনীটাকে একটু আলাদাভাবে ভাবাতে শুরু করেছে।

    Reply
    • Mahbub Alom

      দুঃখিত,অন্য গল্পে কেমন্ট ভুল করে এখানে করে ফেলেছি।

      Reply
  3. Mahbub Alom

    দারুণ লেখনী।শিক্ষা এবং কোরবানির মূল উদ্দেশ্য এখানে পরিলক্ষিত হয়েছে।আমরা বর্তমান মুসলমানরা কোরবানির মূল উদ্দেশ্য থেকে খানিকটা দূরে সরে।তাই এক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ভূমিকা রাখার উপযোগী একটি গল্প।

    ধন্যবাদ

    Reply
  4. Halima tus sadia

    ভালো লিখেছেন।
    কুরবানি নিয়ে গল্প।রায়হানের মতো যদি সবাই বুঝতো তাহলে কিছু ধনীরা শুধু গোস্তের জন্য কুরবানি দিতো না।তারা নিজেরা খেতে পারলেই হয় মনে করে।তিন ভাগ থেকে দুই ভাগই নিজের জন্য রাখে।আর এক ভাগ বিলিয়ে দেয়।কুরবানি মানে ত্যাগ করা।আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশুকে বিসর্জন দেওয়া।
    শুধু গোস্ত খাওয়া নয়।

    বানানে তেমন ভুল নয়।
    দায়িত্ত্বের–দায়িত্বের
    দরীদ্র–দরিদ্র
    রোজা ঈদে–রোজার ঈদে
    শ্রেনীর–শ্রেণীর
    শুভ কামনা রইলো।

    Reply
  5. আফরোজা আক্তার ইতি

    এখনকার মানুষ কুরবানী দেয় প্রতিযোগিতা করে, কে কার চেয়ে কত বেশি দামের গরু কুরবানি দিতে পারে।বলতেও লজ্জা লাগে যে,আমরা কুরবানিকে শো অফ বানিয়ে ফেলেছি, এর মূল অর্থ আর উদ্দেশ্য কি সেটাও ভুলে গেছি। কুরবানি মানে আল্লাহকে খুশি করার জন্য নিজের প্রিয় জিনিস ত্যাগ করা,আর এজন্য কুরবানি দেয়া হয়,তাতে যে গরীবেরও সমান অধিকার থাকে সেটাও ভুলে যাই। সুন্দর শিক্ষামূলক একটি গল্প লিখেছেন। আমাদের সব্রই উচিৎ ইদের আনন্দ গরীব- ধনী সকলে মিলে উপভোগ করা। বানানে তেমন কোন ভুল নেই।
    দায়িত্ত্ব- দায়িত্ব।
    গুরুত্ত্বপূর্ণ- গুরুত্বপূর্ণ।
    জুমায়- জুম্মায়।
    দরীদ্র- দরিদ্র।
    শ্রেনীর- শ্রেণির।

    Reply

Leave a Reply to Mahbub Alom Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *