সাত মিনিট
প্রকাশিত: জানুয়ারী ২৪, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 2,293 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

গল্প লেখকঃ
Khairunnesa Sultana
……………….

মাত্র সাত মিনিটে আমি কিভাবে বুঝাবো যে আমার সমস্যা কোথায়? কেন আমি এমন? কেন ডিপ্রেশন? কেন কস্ট? কেন দুঃখ! শুধু সাত মিনিটের একটা থেরাপী সেশনে সাইক্রেটিসকে এত্তোকিছু বুঝিয়ে বলা সম্ভব তুমি বলো মা, সম্ভব ? ”

মায়ের ছবি দেখতে দেখতে তেইশ বছরের অরুনের এই প্রশ্নের আজও কোনো উওর তার মা দিতে পারলোনা, কে জানে হয়তো ছবির ভিতর থেকে নাহয় সেই দুরের আকাশ থেকে মা চোখের পানি মুচ্ছেন আর ভাবছেন তার ছেলের এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলোনা!

অরুনের বাবা মার একটা কার একসিডেন্ট হয়। সবার ধারনা ছিলো তারা বেচে যাবেন, কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমান করে তিন সপ্তাহের যুদ্ধের পর অরুনের বাবা মারা যায়, আর মা মারা যান চতুর্থ সপ্তাহের শুরুর দিকে। মা বেশিদিন বেঁচে থাকায় হয়তো মার জন্য অরুনের মায়াটা বেশি।
সেই ঘটনারও প্রায় ছয় বছর হলো কিন্তু অরুন আজও আইসিইউর বাইরে বসে থাকা সেই সতেরো বছরের অসহায় ছেলেটার মধ্যে নিজেকে খুজে পায়। সে যেন আটকে আছে হসপিটালের সেই করিডোরের কোনো কোণায়! ভাবতে ভাবতে সে আর বেশি কিছু ভাবতে পারেনা। কিন্তু তার মনে পড়ে সে খুব কেদেছিলো, একবার সৃষ্টিকর্তার কাছে সাহায্য চেয়ে আর তার বাবা মার মৃত্যুরপর সৃষ্টিকর্তার সাথে অভিমান করে!
এরপর অরুন আর কখনো সৃষ্টিকর্তার আদালতের দরজায় কড়া নাড়ে নি, আজ ছয় বছর হয় সে মসজিদের হাজারো মানুষের মতো রহমতের আশায় হাত তোলেনি, সিজদায় করেনি। সে এখন নাস্তিক না কিন্তু দুঃখ সে আর আস্তিক না!
অরুন পড়ালেখায় ভালো, ভাল ভার্সিটিতে চান্স হয়েছে, বুদ্ধি দিয়ে দুনিয়া জয় করতে পারবে সে, কিন্তু সে সবই যেন দিনের আলোতে, রাতের অন্ধকারে কি যেন হয় তার, সে নাইকটোফিলিক, ইনসমনিয়াক, কিন্তু সে ডিপ্রেসড ও। ভার্সিটিতে একদিন পর একদিন যাওয়ার অভ্যাসের পরিবর্তন ঘটিয়ে আজ পরপর দুইদিন ভার্সিটি যাবে অরুন। ক্লাসে এটেন্ডেন্স চেক করতে গিয়ে দেখলো তার এটেন্ডেন্স কম, বড় বড় অক্ষরে লেখা আছে, অরুন হাসনাত রহমান : 38% ..”ধেত ভার্সিটিতে আরও আসতে হবে! ” ভাবতেই বিরক্ত লাগছে তার। ক্যান্টিনে বসে সিগারেটটা ধরাতেই স্যার বড়ভাই এসে সিগারেটটা এক প্রকারে ছিনিয়ে নিলো, বিরক্ত লাগলো কিন্তু কিছু বল্লো না অরুন, আজ উঠা যাক ভেবে সে রাস্তায় গেল। রাস্তায় সিএনজি আসে আর যায়, কিন্তু দাড়ায় না, আজ পুরো দিনটাই বাজে ভাবতে ভাবতে সে রাস্তার মোড় ধরে হাটছে, হাটতে হাটতে আবার একটা সিগারেট ধরালো, ধোয়াময় আশপাশে রাস্তার সাথে অরুনের সামনের দিকে যাওয়া। হঠাৎ রাস্তায় একটা ডায়রী, যদিও অরুন যথেষ্ট আত্নকেন্দ্রিক ধরনের, নিজ কাজ ছাড়া তার আর তেমন কিছু গায়ে লাগেনা, কিন্তু সেদিন সে ডায়রীটা উঠিয়ে নিজ সাথে বাড়ি নিয়ে গেল।

রাত আড়াইটে। ডিপ্রেসড অরুন ডিপ্রেশনকে সায় দিচ্ছেন। ঘরের সিলিংয়ে আলো অন্ধকারের খেলা দেখছেন, একা একা ছয়টা বছর কেটে গেলো, ভালোবাসার কোনো মানুষ নেই আজ, ছিলো এককালে একজন …একজন প্রিয়তমা! আজ সেও নেই, বাহ্যিক আড়ম্বরতার ঝড়ে সে আজ অন্য একজনের হাত ধরে খুশে আছে। ফেসবুকে তার আইডিটা এখনো দেখা হয়, বোঝা হয় সে ভালোই আছে। দীর্ঘশ্বাস, দীর্ঘশ্বাস, দীর্ঘশ্বাস…….. ..আর গভীর নিস্তব্ধতা, সাথে কিছু অপ্রকাশিত শব্দের চিৎকার, হাহাকার আর জীবন নামের ধ্বংসস্তুপ।

হঠাৎ অরুন রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া ডায়রীটা হাতে নিলো, পড়তে ভালোই লাগে তাই আগপিছ না ভেবেই পড়তে শুরু করলো সে।
প্রথম পৃষ্ঠা :
আজকে দিনটা সুন্দর, জীবনটা সুন্দর।
দ্বিতীয় পৃষ্ঠা : আজকেও দিনটা সুন্দর, জীবনটা সুন্দর।
তৃতীয় পৃষ্ঠা : …
এভাবেই বারো পৃষ্ঠায় বারোটা আলাদা আলাদা তারিখে একই কথা লেখা। আশ্চর্য তো! তোতাপাখির মতো কোনো কথা মুখস্ত করে লেখার চেস্টা করছিলো বোধ হয় লেখক! এটা ভেবে লেখকের পরিচয় খুজতে লাগলো অরুন। ডায়রীর শুরুতে কোনো পরিচয় না পেয়ে আবার পড়তে শুরু করলো সে।

সাদা কাগজ …সাদা কাগজ …সাদা কাগজ।

অবশেষে কিছু লেখা আছে।

Seven minutes after you die :
Our brain still function for seven minutes after we die, and play some memories in a sequence like dreams .
তারপর একটা বর্ননার মতো লেখা আছে, অরুন খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।

প্রথম মিনিট :
আমাদের প্রথম চলা। আমাদের জীবনের একেবারে প্রথম স্মৃতিগুলো মৃত্যুর সময় হয়তো এইজন্যই মনে পড়ে যাতে আমরা বুঝতে পারি আমাদের শুরুটা কোথায় ছিলো। হয়তো প্রথম হাসিটা মনে পড়ে, হয়তো মায়ের সেই উষ্ণ জড়িয়ে ধরা, বাবার সেই আগলে রাখা। প্রথম হাটতে শেখা, প্রথম লেখতে শেখা।

দ্বিতীয় মিনিট :
আমাদের বন্ধুদের দেখা। আমাদের প্রিয় মানুষগুলোকে দেখা, তাদের ভালোবাসার কথা মনে পড়া।

তৃতীয় মিনিট :
আমাদের তাদের কথা মনে পড়বে যাদের আমরা ভালোবাসতাম, যাদের ভালোবাসায় একসময় আমাদের বুকের বাম পাশটা যেমন চিনচিন ব্যথা অনুভব করতো আবার যাদের ভালোবাসায় আনন্দে চাঙ্গা থাকতাম সারািদন, যাদের জন্য আকাশের চাঁদটাও এনে সাজিয়ে দিতে পারতাম তাদের বেলকুনিতে কিংবা ঘরের দেয়ালে, এই সম্ভব ভালোবাসার, ভালোলাগার মানুষগুলো সেদিন চোখে আসবে কিন্তু সময় আর মাত্র চার মিনিট!

চতুর্থ মিনিট :
এই মিনিটে ভাঙা মনের সেই কান্নাগুলো মনে পড়বে, মনে পড়বে প্রিয় মানুষটির সেই প্রত্যাখ্যান অথবা ভেঙে যাওয়া স্বপ্নগুলো! প্রিয় মানুষের চলে যাওয়া, কিংবা মৃত্যু! একলা একা বসে কাদাঁ সেই সকল কান্নার হিসেব মিলবে এইসময়, কিন্তু হাতে সময় খুব বেশি নেই, আর মাত্র তিন মিনিট !

পঞ্চম মিনিট :
শিক্ষা, খুব বড় বড় শিক্ষা! শিক্ষা হাসতে শেখার, শিক্ষা কাদতে শেখার, ভালবাসতে শেখার, ঘৃণা করতে শেখার, ভালবাসা, বন্ধুত্ব, হারানোর দুঃখ, সবকিছুর শিক্ষা আবার শেখাতে শেখাতে পার হয়ে যাবে এই মিনিটও , সময় এইবার আসলেই কম, আর মাত্র দুইমিনিট!

ষষ্ঠ মিনিট :
এখন তুমি জানো তুমি কে।
কি ছিলে তুমি। জীবনের শুরু থেকে শেষটা এমনকি নিজের ভুলটা, অপ্রিয় মুখগুলোর পিছনেও একটা মায়া আছে তা এত্তোক্ষনে জানা হয়েছে তোমার। শেষ কান্না, হাসির ছাপ ছাড়িয়ে হাতে আর মাত্র এক মিনিট!

সপ্তম মিনিট :
সবকিছুর সারমর্ম হবে। না জানা প্রশ্ন গুলোর অর্থ বুঝতে পারবে, না বোঝা, অমীমাংসিত, নিরর্থক,ঘোলাটে অনুভুতি গুলোর অর্থ পরিষ্কার হবে । ভুলগুলো বুঝতে পারলেও এখন অনেককক দেরি হয়ে গেছে, কাওকে কিছু বলতে চাইলেও দেরি হয়ে গেছে, দেরি হয়ে গেছে শেষ বার ক্ষমা চাওয়ার বেলায়, দেরি হয়েছে শেষবার ভালোবাসি বলার বেলায়! দেরি হয়ে গেছে কারন হাতে আর এক মুর্হূর্তও সময় নেই। এইবার সময় শেষ!
“সবশেষে তোমার জীবন তোমারই চোখের সামনে ভেসে উঠবে, তাই এটিকে এমন ভাবে তৈরী করো যাতে এটি দেখার মতো হয় ।
ভালবাসো নিজেকে, সবাইকে। ক্ষমা চাও, এতে সম্মান শেষ হবেনা কিন্তু একদিন সময় ঠিকই শেষ হয়ে যাবে। ”
….শেষ পাতা।

অরুন চুপচাপ বসে আছে । তার ঘরে ফজরের আযানের শব্দ আসছে। অবশেষে অরুন মসজিদে যাওয়ার জন্য তৈরী হতে গেলো। আর ভাবতে লাগলো ক্ষমা চাইতে হবে সময় শেষ হওয়ার আগেই! 🙂

সম্পর্কিত পোস্ট

শয়তানকে পরাজিত করুন –

শয়তানকে পরাজিত করুন –

কোন এক দাওয়াতে এক ভাবী গল্প করছিলেন যে, এক মহিলা যখন তার Husband রাগ হয় তখন তিনি আয়াতুল কুরসি পড়েন আর তার স্বামী বিড়াল হয়ে যান । তখন আর এক ভাবী বললেন," ভাবী - আয়াতুল কুরসি পড়লে উনার স্বামী বিড়াল হন না বরং ঐ মহিলার সাথের শয়তানটা পালিয়ে যায়” । ভাবীদের এই...

একজন মানুষের গল্প

একজন মানুষের গল্প

দুই টাকার আইসক্রিম, বই সামনে নিয়ে চিৎকার করে পড়া, কলম দিয়ে এক অক্ষর বারবার লিখে হাত ব্যাথা সহ্য করতে করতেই ছোটবেলা কাটিয়ে দেওয়া। একটু বড় হওয়ার পর ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়া। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়া কোনো এক বট তলা। যেখানে বসে আড্ডা দিত কয়েকজন স্কুল পালানো...

অস্ফুট কান্না

অস্ফুট কান্না

লেখা: মোহসিনা বেগম , প্রচণ্ড শীত পড়েছে আজ। চারদিক কুয়াশা যেন চাদর বিছিয়ে রেখেছে। সকাল এগারোটা বেজে গেছে এখনও সূর্যের দেখা নেই। ছুটিতে কয়েকটা দিন গ্রামে থেকে আনন্দ করব কিন্তু প্রচণ্ড শীতে জমে যাচ্ছি। লেপের নীচ থেকে বের হতেই ইচ্ছে করছে না। ওদিকে মা কতক্ষণ ধরে ডেকেই...

৫ Comments

  1. Atika Ananna

    অসাধারণ! ☺

    Reply
    • খায়রুন্নেসা

      ধন্যবাদ!

      Reply
    • Fahrial

      এন্ডিং টা????

      Reply
    • খায়রুন্নেসা

      ধন্যবাদ

      Reply
  2. Fahrial

    খুববিইইইই ভালো…

    Reply

Leave a Reply to খায়রুন্নেসা Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *