লেখা : সুবর্ণা ইসলাম
সকাল ৭.৩০ টা। আমি খুব দেরী করে ফেলেছি ঘুম থেকে উঠতে। আসলে গতরাতে বেশি রাত অবধি ফেসবুক চালানোর ফল আজকে সকালে দেরী করে উঠা।
এই দিকে ক্লাস শুরু হতে মাত্র ৩৫ মিনিট বাকি। কলেজে লেট করে গেলে ফাইন নেয় তার থেকেও বড় কথা কান ধরে স্কুলের বাচ্চাদের সামনে দাড়া করিয়ে রেখে দেয়
এতে মান -সম্নানের যথারীতি ফালুদা হয়ে যায়।
আমি আনিকা রিতু আমরা তিনজন মিলে রোজ একসাথে কলেজ য়াই আজ দেরী হলেও আজও আমরা একসাথেই যাচ্ছি যদিও দেরী করে ঘুম থেকে উঠায় ওদের কাছে বেশ ভালই ঝাড় খেতে হয়েছে
তাও কি আর করার এত কিছু ভাবতে ভাবতে যখন আমরা মেইন রোডে আসলাম তখন দেখলাম পুরো রোডে বাস তো নেই ই এমনকি একটাও খালি রিকশা নেই। আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।কোন উপায় না দেখে আমরা হাটতে শুরু করলাম।খানিকক্ষন হাটার পর একজন ওতি বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা কে দেখতে পেলাম। লোকটার মধ্যে এক অদ্ভুদ ধরনের মায়া ছিলো।
বয়সের ছাপ পড়লেও লোকটা যে জোয়ান অবস্থায় অতি মাত্রার সুন্দর ছিলেন তা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই।
আমি জখন লোকটার গুনাগুন পরীক্ষা নিরীক্ষা করছিলাম। আমার বান্ধবী আনিকা তখন জাওয়ার ভাড়া নিয়ে তার সাথে কথা বলছিলো। আমি এমনিতে তার রুপ নিয়ে কিছুটা মুগ্ধ ছিলাম। তবে আমি বোকা হয়ে গেলাম তখন যখন সে বলল
-মামা তিনজনরে কিন্তু ১৫ টাকায় নিয়া জামু
আমরা তার কথা শুনে কিছুটা ভিম্রি খেলাম। মিরপুর ১৪ থেকে কলেজ যাওয়ার ভাড়া ৩০ টাকা। রোজই তো এই টাকা দিয়েই যাওয়া আসা করি।কিন্তু এই মামা তো পুরো অর্ধেক টাকা কমিয়ে বলছে।
এই ভাড়া শোনার পর আনিকা এক সেকেন্ড আমার আর রিতুর দিকে তাকালো তারপর কিছু না বলে রিক্সায় উঠে বসলো। আমি আর রিতুও ওর দেখা দেখি রিক্সায় উঠে বসলাম আমি উপরে আর ওরা দুজন নিচে বসলো
কিছুক্ষন কেও কারো সাথে কথা বললাম না। খানিক বাদে আনিকা ফিস ফিস করে বলল
–কিরে? উনি কি আমাদের সাথে রসিকতা করছে নাকি আমরা ভুল শুনলাম
আমি আনিকাকে বললাম
–রসিকতা কেনো করবে। আর ভুল শুনলে তিনজন তো এক সাথে শুনবো না তাই না?
আমাদের কথা শুনে রিতু বলে উঠলো
–উনি বোধ হয় এই খানে নতুন ভাড়াটা জানে না
এরপর আনিকা বলল– তাইলে ১৫ টাকাই দেই বলার দরকার নেই আসল ভাড়াটা
আমি বললাম দেখ উনি জানেন না আমাদের উচিত ওনাকে জানানো আর বাকি ১৫ টাকা দিয়ে তো কেও বড়লোক হতে পারবে না তাই না
আমার কথা শুনে রিতু বলল-হ্যা ঠিক কিন্তু এই ১৫ টাকা দিয়ে আমরা কাল আবার ভাড়া দিতে পারব এমনিতে রোজ কলেজে আসার টাকাটা আম্মুর কাছ থেকে নিতে লজ্জা লাগে। খুব খারাপ লাগে আমরা তো মধ্যবিত্ত আম্মু খুব কষ্ট করে এক এক টা টাকা আমাদের জন্য বাচিয়ে রাখে।যদি রোজ কিছুটাকা বাচানো যায় আম্মু-আব্বুর উপর থেকে চাপ কমে।
আমি এরপর আর কিছু বললাম না রিতু ঠিক বলছে
সত্যিই তো আম্মু-আব্বু নিজের জন্য কিছুই কেনেন না শুধু মাত্র আমাদের কথা ভেবে। কিন্তু রিকশাওয়ালা মামার জন্যও আমার মন খারাপ লাগছিলো
এরপর প্রায় ১০ মিনিট পর আমরা আমাদের কলেজের সামনে চলে আসলাম
আমি আনিকা রিতু রিক্সায় বসেই যে জার ভাড়া বের করলাম দেখলাম ওরা দুজনেই ৫ টাকার নোট বের করেছে আমিও তাই করতে যাচ্ছিলাম কিন্তু হঠাৎ আমার মনে হলো তার চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে আছে। সেই উজ্জ্বলতায় একটা আশা তাকাইয়ে আছে আমাদের দিকে। আমি সেই আশার জন্যই ৫ টাকার দুটি নোট বের করে তার দিকে এগিয়ে ধরলাম।তার পর দেখলাম আমার দুই বান্ধবীও ৫ টাকা রেখে দুজনেই ১০ টাকা এগিয়ে ধরলো তার দিকে। সে আমাদের ৩০ টাকা দেখে হাপাতে হাপাতে একটা হাসি দিল। সেই হাসিতে কৃতজ্ঞতার একটা ছায়া পড়েছিলো বড় সড়ও ভাবেই তার ওই মায়াবী মুখে দাতবিহীন মাড়িতে সেই হাসিটা ছিল হীরের টুকরোর মতন।
আমরাও হাসি দিয়ে যখন নামতে যাব সে বলে উঠলো- মামা কাদা এখানে নাইমেন না ওইপাশে নামেন। তার এই কথাটা আমার কাছে আমার বাবার বলা কথার মতই লাগছিলো। যিনি এই রিক্সাওয়ালা মামার মতই তার অফিসে আমার মুখে হাসি দেখার জন্য পরিস্রম করে যাচ্ছেন। আর কেও তাকে দুটো টাকা বেশি দিলে হীরের টুকরোর মতন হাসি দিচ্ছেন।
‘হিরের টুকরোর মত হাসি’- সুন্দর শব্দঋণ চয়ন। ভাল লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ ????
কবির ভাষায় বলতে ইচ্ছে করছে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেক আমরা পরের তরে।
সেই হীরের টুকরার হাসি কোন থামে কেনা যাবে না,কেনা যাবে না এই সুখ।
দারুণ।
,ধন্যবাদ আপনাকে
শিরোনামেই ভুল। ‘রিক্সা’ বলে কি কোনো শব্দ আছে? রিক্সাওয়ালা ভুল শব্দ। এটার বাংলা উচ্চারণটা হয়, ‘রিকছাওয়ালা’। অথচ শুদ্ধ শব্দটি হবে, রিকশা ও রিকশাওয়ালা।
আপনার মুল্যবান মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ পরের বার থেকে এই ব্যপারে সচেতন হবো
সেই হীরের টুকরোর হাসি কখনো কেনা যাবে না।
রিকশাওয়ালাদের দুই টাকা মেরে খেয়ে কেউ বড় হতে পারে না।তাদের জন্য মাঝে মধ্যে খারাপ লাগে।দুইটা টাকা বাড়িয়ে দিতে বললে খারাপ আচরণ করে।
কতো কষ্ট করে প্যাডেল ঘুরায়।
বানানে ভুল আছে
দেরী-দেরি
দাড়া-দাঁড়া
হ্যা-হ্যাঁ
খানিকক্ষন–খানিকক্ষণ
অদ্ভুদ–অদ্ভুত
পরিস্রম–পরিশ্রম
জখন–যখন
জামু–যামু
যার–যাও
কেও-কেউ
য়াই–যাই
ওতি-অতি
সম্নানের–সম্মানের
জাওয়ার–যাওয়ার
শুভ কামনা।
ধন্যবাদ আপু
পরের বার থেকে খেয়াল রাখব
সুন্দর লিখেছেন। তারা রিকশাওয়ালা হলেও তারা মানুষ, তাদেরও পরিবার আছে,তাদের সন্তানও হয়ত ভালো কিছুর আশায় বাবার পথ চেয়ে বসে থাকে।তারা যেভাবে কষ্ট করে আমাদের রোদে পুড়ে,বৃষ্টিতে ভিজে রিকশা চালিয়ে নিয়ে যায়, সেখানে তাদের প্রাপ্য অধিকার না দিলে আমরাই দায়ী থাকবো। অনেকেই আছে বাড়তি টাকা তো দিতেই চায় না,তাদের প্রাপ্য টাকা চাইলেও গায়ে হাত তুলে। সুন্দর লিখেছেন তবে বানানে বএসএশ কিছু ভুল আছে।
দাড়া- দাঁড়া।
য়াই- যাই।
ওতি- অতি।
অদ্ভুদ- অদ্ভুত।
জখন- যখন।
বাচিয়ে- বাঁচিয়ে।
শুভ কামনা রইল।