লেখকঃ
এইচ, এম, আবদুর রহমান।
এম, এস, এস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
…………………
রকির ফোন এল। হ্যালো ভাই, রুনা আপু আসছে, তাড়াতাড়ি কার্জনে আসেন। কোন রকমে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে রওয়ানা করলাম। একটা রিকশা ঠিক করলাম। রিকশাওয়ালার সাথে গল্প শুরু করলাম। ছেলেটি প্রায় আমার সম বয়সি। এক পর্যায়ে ছেলেটি বলল, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। আমি অবাক হয়ে বললাম,
– তোমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা!! তাহলে রিকশা চালাও কেন? তুমি লেখা পড়া করনি?
-ও বলল, না। পড়া লেখা করিনি।
-তোমার বাবা কি করেন?
-বাবা ও বিভিন্ন কাজ করে। কখনো রিকশা চালায়, কখনো বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেন।
আমি প্রশ্ন করলাম, কেন? উনি ভাতা পাননা?
– নাহ। আগে পেত। এখন পায়না।
– কারণ?
-আমাদের ঘরে আগুন লেগে সব কাগজ পুড়ে যায়। আর পরবর্তীতে কাগজ উঠাতে পারিনি।
– চেস্টা করেনি?
– করেছে অনেক। কিন্তু টাকা ছাড়া দেয়না।
-কি! একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সনদ উঠাতে টাকা লাগে!!
– টাকা ছাড়া এ দেশে কিছুই হয়না। দেখা করতে গেলে ২০০০/৫০০০ টাকা এমনিতেই দেয়, কিন্তু কাজটা কেউ করে দেয়না।
মনটা খারাপ হয়ে গেল! রিকশা ৩ নেতার মাজার পর্যন্ত পৌছতেই, দেখলাম কেউ একজন আমার পাশে উঠে রিকশায় বসেছে। বলললাম, কিরে তুই কে?
– আমি রাজাকারের প্রেতাত্মা।
-এখানে?
– খাজা সাহবের সাথে দেখা করতে আসলাম।
-কি কথা হল?
– আর বলবেন না, কাছে যেতেই হক সাহেব লাথি মারল। কোন রকম দৌড়ে এসে আপনার পাশে রিকশায় বসলাম।
-যাহ ভাগ! না হলে আমার লাথি খাবি। আমি ও রাজাকারদের ঘৃণা করি।
– একটু সবুর করেন। তো আপনার মন খারাপ কেন?
– আর বলনা। রিকশাচালক একজন মুক্তিযুদ্ধার ছেলে।
– এ জন্য মন খারাপ?
– ওর বাবাও কোন রকম জীবন যাপন করে।
– আরে আপনিতো মহা বোকা দেশের কোন খবর রাখেন না। বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পরিবার কেমন আছে?
– আমি বলতে পারবনা।
– খুবতো বললেন আমায় ঘৃণা করেন। তো যারা ৪০০০০ টাকায় সনদ কিনে ৪/৫ সন্তান সরকারী চাকরি করে তাদের ঘৃণা করেননা? সচিবরা যখন চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ভুয়া সনদ নেয়, তাদের কিছু বলছেন?
— দেখ আমার মন খারাপ, তুই নেমে যা।
— কেন? সত্য কথা তিতা লাগে? মুক্তিযোদ্ধারাও কেন এসবের প্রতিবাদ করেনা জানেন??
— কেন?
– কারণ তারাও অনেকে সনদ বাণিজ্যের সাথেজড়িত আছে। তাছাড়া তারা নিজেরাও জানে যে বৈষম্য দুর করতে তারা যুদ্ধ করেছে, তা দুর হয়নি। বরং তাদের দ্বারা নতুন বৈষম্যের দরজা উন্মুক্ত হলো।
– তুই চুপ কর। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গর্ব। তাদের নিয়ে আর কোন বাজে কথা বলবিনা। তাদের সব সুবিধা প্রাপ্য।
– বুঝলাম। তবে যারা মুক্তিযোদ্ধা সেজে বসে আছে? যারা ৭১ এ জন্ম না নিয়েও মুক্তিযোদ্ধা তাদের কি বলবেন?
– তাদেরকে আমি সহ, সমস্ত বাঙ্গালী তোর চেয়েও বেশি ঘৃণা করি!!
– দেখলেনতো, এতক্ষণ আমার দিকে তাক করা ঘৃণার আঙ্গুলটা আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। হা হা হা হো হো হো…..
আমি চুপ হয়ে গেলাম। ঐ দিকে শয়তানটা খুশিতে অট্টহাসি দিচ্ছে!
রিকশা কার্জনের গেটে থামল। আমি রিকশাওয়ালা ছেলেটিকে কিছু বাড়তি টাকা সহ ভাড়া দিয়ে নেমে হাটতে লাগলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম রাজাকারের প্রেতাত্মাটা ছেলটির ঘাড়ে বসে অট্টহাসিতে আকাশ বাতাস কাপাচ্ছে। হাটতে হাটতে ভাবলাম যাদের কারনে আজ আমি হেরে গেলাম, যাদের কারণে রাজাকারের প্রেতাত্মা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের উপর চেপে বসেছে, তাদের বিবেক জাগবেতো…!!
০ Comments