লেখা:- মারিয়াম ইয়াসমিন
.
আজ আমিনার বিয়ে৷
তাই সকাল থেকেই ওদের বাড়িটা অনেক সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। রঙিন কাগজ দিয়ে নানারকম ফুল বানিয়ে লাগানো হয়েছে বাড়ির দেয়ালে, আঙিনায়৷ নীল রঙের কাগুজে গোলাপগুলো সবচেয়ে বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে৷
চারপাশের পরিবেশটা কেমন উৎসবমুখর! সবার চোখেমুখে উপচে পড়া আনন্দ!
বাড়ির দুষ্টু মেয়েরা মাঝেমাঝে আমিনার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসছে৷ এক অজানা সুখের শিহরণ খেলা করে ওর হৃদয় তন্ত্রিতে! ফর্সা মুখটা সন্ধ্যা সূর্যের মত রক্তিম হয়ে ওঠে! শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে লজ্জাবতী বৃক্ষের মত নুইয়ে পড়তে ইচ্ছে করে ওর৷
কলিঘাতি গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমিনা৷
পরিবারের কর্তা আবদুস সুবহান সাহেব একজন স্কুল টিচার। বড্ড সহজ সরল মানুষ তিনি৷ জীবনে অকারণে কখনই নামাজ কাযা করেননি। কাউকে প্রতিশ্রুতি দিলে সেটা রক্ষা করতে তিনি বদ্ধপরিকর। আদর্শবান মানুষ হিসেবে যেমন তিনি অনন্য, তেমনি বাবা হিসেবেও অতুলনীয়!
আবদুস সুবহান সাহেবের তিন কন্যা। তবে পুত্র সন্তান নেই বলে কখনও আক্ষেপ করতে দেখা যায়নি তাকে। বরং তিন মেয়েকে নিয়েই ভীষণ খুশি ! তিন তিনটে মেয়ের বাবা হওয়ার মত সৌভাগ্য কি সবার হয়?
আবদুস সুবহান সাহেবের কাছে এই তিনটে মেয়ে যেন আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার! মাঝেমাঝেই তিনি আল্লাহর প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতায় লুটিয়ে পড়েন সেজদায়৷
প্রথম সন্তান হিসেবে আমিনা ছিল তার ভালোবাসার জীবন্ত পুতুল। শুধু কোলে পিঠে করে নয়, হৃদয়ে রেখে লালনপালন করেছিলেন তিনি আমিনাকে৷
জন্মের দিন হাসপাতালের কেবিনে পরম যত্নে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন এবং গভীর আবেগে বলেছিলেন, ‘আমার বুকের ভেতরে থাকা হৃদপিন্ডটা এখন আর বুকে নেই; ওটা এখন নেমে এসেছে আমার কোলে!
সেই দিনটার কথা আজো স্মৃতিপটে জ্বলজ্বল করে আবদুস সুবহান সাহেবের।
ভালবাসার চাঁদরে মুড়িয়ে রাখা সেই ছোট্ট আমিনা আজ অনেক বড় হয়েছে৷ একটু পরেই তার বুক খালি করে চলে যাবে নতুন ঠিকানায়৷ এক অসহ্য বেদনায় মনের ভেতরটা চিনচিন করে ওঠে আব্দুস সুবহান সাহেবের৷
চোখের কোণে জমা হয় কয়েক ফোঁটা অশ্রু! অশ্রুগুলো মুছতে মুছতে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করেন তিনি৷ বাবাদের যে কাঁদতে নেই!
.
বর বেশে বসে আছে নূরানী চেহারার অধিকারী আহমাদ ইলিয়াস। মুখে পরিপাটি করে আঁচড়ানো চাপ দাড়ি৷ গায়ে সাদা পাঞ্জাবী৷ মাথায় জড়ানো অ্যারাবিয়ান পাগড়ি৷ আভিজাত্যের ছাপকে উপেক্ষা করে এক টুকরো লাজ ছড়িয়ে আছে চোখেমুখে৷ যেন গোধূলির রক্তিম ছায়ার নিচে বসে আছেন এক আরব রাজপুত্র!
কলিঘাতি গ্রামের জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হচ্ছে আহমদ এবং আমিনার বিয়ে। কাবিন শেষে সকলের মাঝে খেজুর বিতরণের মাধ্যমে সুন্নাতী তরিকায় সম্পন্ন হল বিবাহের মূলপর্ব- আক্বদ।
গানবাদ্য ছাড়াই একটা মার্জিত পরিবেশে ওয়ালীমার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সম্পূর্ণ পর্দার সাথেই অতিথি–আপ্যায়ণ চলছে। আবদুস সুবহান সাহেব নিজেই সব তদারকী করছেন। আহমদের মত একজন হাফেয ও আলেম জামাতা পেয়ে তিনি আল্লাহর কাছে বারবার শুকরিয়া আদায় করছেন।
আমিনার হৃদয়ে আজ এক পবিত্র অনুভূতি!
জীবনসঙ্গী হিসেবে আহমাদের মতই একজন ছেলেকে সে কল্পনা করে এসেছে মনেপ্রাণে।
পাঞ্জাবী পরিহিত একজন দাড়িওয়ালা যুবক৷ যার পবিত্র মুখ থেকে প্রতিদিন ভোরে শুনতে পাবে মধুর কন্ঠের কুরআন তেলাওয়াত!
আল্লাহ আজ তার আশা পূরণ করেছেন৷
.
বিবাহের প্রথম রাত ছেলে মেয়ে উভয়ের কাছেই একটা বিশেষ কাঙ্খিত মুহূর্ত৷
আমিনা আর আহমাদের কাছেও এর ব্যতিক্রম নয়। চিরদিনের জন্য অচেনা দুটি প্রাণ আজ একই প্রাণে বাঁধা পড়বে।
এক পবিত্র ভালোবাসায় দুটি দেহ একটি আত্মায় নিশ্বাস নিবে।
ফুলের সৌরভে সুরভিত বিছানার মাঝে বসে আমিনার মনে এক অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করছে। দ্বিধা,সংকোচ এবং ভাললাগার এই মিশ্র অনুভূতি বড় অদ্ভুত!
দরজায় মৃদ করাঘাত, এরপর বলিষ্ঠ পুরুষালী কন্ঠের সালাম শুনে লজ্জায় নুইয়ে পড়ল আমিনা৷ লাল শাড়ির ঘোমটাটা কপালের উপর টেনে দিলো আরেকটু৷ কিছুতেই সে সামনে দাঁড়ানো মানুষটার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। এটাই কি তবে ভালোবাসা? এটাই কি তবে পবিত্র সম্পর্কের মাঝে লুকিয়ে থাকা অনুপম শ্রদ্ধাবোধ?
মাথায় হাতের ছোঁয়া পেয়ে একটু যেন শিহরিত হয়ে উঠল আমিনা৷ ওর আনত চিবুকটা পরম আদরে আলতো করে উঁচু করল আহমাদ৷ চোখ তুলে তাকালো আমিনা। এই প্রথম কোনো যুবকের চোখে চোখ রাখা! আহমাদও তাকিয়ে আছে নিষ্পলক৷
সময় থমকে গেছে! প্রকৃতি যেন হয়ে পড়েছে শব্দহীন! অনুরাগের উষ্ণ ছোঁয়ায় দুজনে আজ আত্মসমাহিত!
ডিম লাইটের নীলাভ আলোয় অপ্সরীর মত লাগছে আমিনাকে! আহমাদের চোখে মিশে আছে এক পৃথিবী মায়া!
মন কেমন করা এক মোহনীয় পরিবেশে দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক। যেন চোখের ভাষা পড়তে গিয়েই তারা পার করে দেবে অনন্তকাল!
আহমাদ মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল৷ তিনি একজন আদর্শবান, সুন্দর এবং পর্দানীশি জীবনসঙ্গীনি মিলিয়ে দিয়েছেন তাকে৷ ক্ষুদ্র এই জীবনে এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি যে আর নেই!
আহমদ কোমল সুরে বলল, ‘অযু করে এসো আমিনা! দুজনে মিলে নামায পড়বো।
আহমাদের কথায় যেন সম্ভিত ফিরে পেল আমিনা। আলমারী থেকে দুটো জায়নামাজ বের করে আহমাদের হাতে দিল৷ এক টুকরো লাজুক হাসি ছড়িয়ে বলল, ‘আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমি অযু করে আসছি৷
গভীর রাতে যখন পুরো গ্রাম ঘুমিয়ে পড়েছে, ঠিক তখনই নিস্তব্ধতার আড়ালে নামাজের পাটিতে দাঁড়িয়ে গেল দুটি নিষ্পাপ প্রাণ। তারা আজ সেজদায় লুটিয়ে পড়ে আল্লাহর কাছে দুফোঁটা অশ্রুর নযরানা দিতে বড়ই ব্যাকুল!
নামায শেষে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে দুজনেই নতুন জীবনের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করল। হাতে হাত রেখে শপথ নিল এক সাথে পথচলার। বাইরে তখন জোছনা ভেজা প্রকৃতি৷ মেঘ নেই বলে আকাশে চলছে অগুনতি তারাদের আলো–উৎসব! অসংখ্য আলোই আজ নিরব রাতের সঙ্গী!
পূনর্জন্ম
জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...
গল্পটা পড়তে না পড়তেই প্রশান্তির ছায়ায় মন জুড়িয়ে গেল। গল্পের নামকরণের সার্থকতা আছে। বেশ সুন্দর একটি গল্প। যেই গল্পের ব্যাখ্যা দেয়া যায় না, বারবার পড়তে মন চায়। আহমাদের মত একজন নেককার স্বামী সকল মেয়েদেরই কাম্য,তেমনি আআর মত একজন পরহেজগার স্ত্রীও সকল পুরুষের কাম্য। আল্লাহ তায়ালা পরম যত্নে দু’টি আত্মা একই ডোরে বেঁধে দেন।
লেখার ধাঁচ খুবই সুন্দর। বানানেও বেশ যত্নশীল। কোন ভুল পেলাম না।
চাঁদরে- চাদরে।
শুভ কামনা রইল।
nice story
কাগুজে – কাগজে
দুফোঁটা – দু’
সফলময় লেখনী। যতক্ষণ পড়েছি ততক্ষণ প্রশান্তি ছিলো। যার রেশ এখনো রয়ে গেছে।
অনেক শুভ কামনা রইল।
অনেক বেশী ভালো লেগেছে গল্পটা।
যুগ যুগ ধরে আহমদ আর আমিনাদের হাত ধরেই, এক পৃথিবী প্রশান্তির ছায়ায় থাকতে কে না চায়?
একজন দ্বীনদার সঙ্গীর চেয়ে ভালো উপহার, এই ইহজগতে আর কিছু আছে?
হৃদয় ছোঁয়া গল্প।
খুব যত্ন করে লিখা,বুঝাই যাচ্ছে।
আল্লাহ আপনার লেখাকে সাদকায়ে জারিয়াহ হিসেবে কবুল করুন – আমিন।
দু’একটা বানানো ত্রুটি আছে।
শুভকামনা থাকলো আপনার জন্য।।।