আয়েশা অর্থি
সেই সকাল হতে আকাশজুড়ে অভ্রের ছোটাছুটি। কখন যে অভ্রের সাড়ায় আকাশ কেঁপে বৃষ্টি নামে।আমার কাছে সে সবটাই জলছায়া মাত্র।কারণ আকাশ দেখার সাধ্য আমার নেই।এমনটাই জন্ম হতে জেনেছি।
আজকাল নিজেকে অচেনা একটা পরিবেশ এর সাথে মিলিয়ে নেবার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করছি।
বারান্দা র গ্রিল ঘেষে দাড়িয়ে আছি,হঠাৎ বৃষ্টি র মাঝে ভেসে এলো বাঁশির সুমধুর সুর।কি শ্রুতিমধুর তার প্রতিটি ধ্বনি।
কিছুসময় পর বাঁশরী র বাঁশি থেমে গেলো, সাথে মনে হলো যেনো বৃষ্টি গতিও কিছুটা কমেছে ক্রমেই।
আনমনে দাড়িয়ে আছি,হঠাৎ ডাক শুনলাম
-নীলা! তুমি কি আছো বারান্দা তে?
এই পরিবার এর সবথেকে অবহেলিত মানুষটি আমার সবথেকে পছন্দের।কথাটা তাকে কখনও বলি নি।বলার সুযোগ ও হয়নি।এই প্রথম আমার নাম শুনলাম আমার পছন্দের মানুষটির মুখে।।এই অনুভূতি টা যে কতোটা অপূর্ব সেটা শুধু অনুভব করা যাই,বলে বোঝাতে পারবো নাঃ)
সে আবারও ডেকে উঠলো
-নীলা তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?
আমি তাকে শুনতে পারছি,অনুভব করতে পারছি তার কথাগুলো,তার চাহনি। তাকে আর বেশিক্ষন অপেক্ষা না করিয়ে আমি বললাম
-জি আমি শুনতে পারছি
-তুমি কি আমার কাছে একটু আসবে?আমি নিজে যেতে পারলে ভালো হতো তবে সে সাধ্য আমার নেই।
আমি কিছু না বলে নীচে নামলাম। তার পাশে যেয়ে বসলাম।
আমাদের বিয়ে হয়েছে তিন মাস হলো।এই তিনটা মাসে একটিবারও তারসাথে আমার আলাপ পরিচয় হয়নি। হয়নি ঠিক না।কল্পনাতে পরিচয় পর্বটা অনেকটা দীর্ঘ।তবে বাস্তবে সবটাই অস্বাভাবিক। বিয়ের পরও আমাদের আলাদা বসবাস,আলাদা নির্ভর,আলাদা জগৎ।
আমি পাশে যেয়ে বসতেই সে আমাকে বললো
-নীলা চলো আমরা দূরে কোথাও চলে যাই।যে চলার পথে আছে শুধু অসাধারণ সৌন্দর্য!
-আপনি সেই পথে চলতে পারলে আমি রাজি।
-নীলা তুৃমি কি জানো আমি চলতে পারি।তবে সেটা একান্তই সংগোপনে।
-এমনটা কেনো?
-ছোট থেকে আমার মাথার মাঝে একটা ভারি কথার ছাচ এঁকে দেওয়া হই।
কথাটা এমন ছিলো “তুমি হাঁটতে পারো না কোনদিন পারবেও না।এটা তোমার দূর্বলতা তুমি স্বাভাবিক মানুষ নও।”আমিও চারদেয়াল এর মাঝেই আমার জগৎ এমনটাই জেনেছিলাম। আমি প্রচুর বই পড়তাম। বইতে পড়েছি পাহাড়,সাগর,বালুকণা এবং প্রেমাস্পর্শের কথা।
আমারও ইচ্ছে হতো চলতে। কিন্তু এতো বাধাকে জয় করার সাধ্যি আমার নেই,ছিলোও না কখনও। আমার আকাশছোঁয়া সপ্নগুলো ঘরের চারদেয়াল এর মাঝেই আঁকিবুঁকি খেলেছে আজীবন।
-আপনি কি ভেবে নিয়েছেন আপনার জীবন শেষ?
-না কেনো এমনটা বলছো?
-যেখন থেকে শেষ সেখান থেকেই আবার শুরু করুন নতুন পর্বের। নতুন আলোর।জীবন সবসময় সুন্দরঃ)
-আচ্ছা তুমি কখনও বৃষ্টি তে ভিজেছো?
-জি।অনেকবার। তবে প্রতিবারই ভিজেছি পছন্দের বৃষ্টিতে।
-বৃষ্টি র মাঝে পছন্দ অপছন্দের কি আছে?
-বৃষ্টি র নানা রূপ।যেমন রোদের মাঝে বৃষ্টি, অতিবৃষ্টি,অসময়ে বৃষ্টি।
-এমনটা তো ভাবি নি। তোমার কোনটা পছন্দ?
-অসময়ে বৃষ্টি । হঠাৎ মাঝরাতে বৃষ্টি র শব্দে ঘুম ভাঙবে।ছাদে উঠে মাঝরাতে বৃষ্টি ভেজার মাঝে আলাদা ভালোলাগা কাজ করে।
আবার কখনও আকাশে ধুম ধরে সাদাকালো অভ্রের মেলা।সকাল গড়িয়ে গোধুলী প্রহরে বৃষ্টি র আগমণ। কি অপরূপ সে দৃশ্য।
-বৃষ্টি তে ভিজলেই আমার ঠান্ডা লাগে।তাপমাত্রা বেড়ে যাই।
-এটাই তো বৃষ্টি র সার্থকতা।আমরা তো রোজ গোছল করি এটাকে তো আমরা ভেজা বলি না।বৃষ্টি র পানি পড়লে বলি ভিজেছি।এর মাঝে আলাদা প্রকৃতির ছোঁয়া আছে যার জন্য বৃষ্টি ভেজার স্মৃতিরূপে ঠান্ডা লাগে প্রতিবার,আর মনে করিয়ে দেই কতোটা সুন্দর ভাবে বৃষ্টি টা উপভোগ করেছিলাম।
-তুমি তো বেশ ভালো কথা বলো।
-আপনি বাঁশি বাজাতে পারেন সুন্দর।
-তোমার কথা বলো।তোমার জীবন কি আমার মতোই বোঝা?
-না আমি অস্বাভাবিক সাথে আমি অসাধারণ,এমনটা আমি মনে করি।
-এমনটা কেনো?
-জানেন কি জলে ফোঁটা ফুলের কোন সুবাস থাকে না,কিন্তু পানির উপর সুন্দর করে ভেসে থাকতে পারে।কি অপরূপ সৃষ্টি।
নিম কখনও মিষ্ট হয় শুনেছেন??
-না।
-কিন্তু একজন মুমূর্ষু রোগীর কাছে নিমই সবথেকে উপকারী সেবা মাধ্যম।এই সময় নিম তার কাছে সবথেকে মিষ্টি।
আচ্ছা একজন নারীরকে ভালোবাসা যাই তার দেহের বিশেষ কিছু দেখে কেনো?সবটাকে ভালোবাসা যাই না?এমনও তো হতে পারে ঠোঁট এর চেয়ে তার চোখদুটো অপূর্ব সুন্দর!!
ঠিক ছেলেদের ক্ষেত্রেও একই।
-এটা ঠিক। ভালোবাসা মানেই শুধু বিশেষ অঙ্গ না।
-আচ্ছা বাবুই পাখি বাসা বুনতে পারে সবাই জানি! কিন্তু পাখি র প্রশংসা করলে প্রথমেই ময়না,টিয়া,কোকিলের ঠাই!!এমনটা কেনো?
কোকিলের ডাক মানুষ নকল করতে পারে তবুও কোকিলের ডাক সুন্দর, বাবুই এর মতো আপনার বাসা তো সবাই বুনতে পারে না।
এই সবকিছুর জন্য লাগে শৈল্পিক মন শৈল্পিক চাহনি। একজন পরিপূর্ণ মানুষ রূপ থাকলেই যে এসব গুণাবলি থাকবে এমন ধারণা হওয়া নিতান্ত ই ভুল।
-তুমি কোনটা?
-আমি কোনটা আমি জানিনা।তবে আমার জগৎ অন্ধকার সেটা বাইরের মানুষের কাছে।আমার কাছে আমার জগতে আলোর রেখার ছড়াছড়ি। আমার কল্পনা শক্তি তীব্র বলে আমি মনে করি!আমি সবটা দেখতে পাই।জন্মের পর যখন বুঝতে শিখলাম দেখতে না পাওয়াটাকে অন্ধত্ব বলে, সেদিন থেকে আমি ভেবেছি আমি অস্বাভাবিক না আমি অসাধারণ ও বটে!আমি প্রকৃতির ছবি আঁকি,আকাশের গল্প বলি,অভ্রের মতো কল্পনাতে ভাসি। এটাই আমি। আমি আপনার মতো দূর্বল নই।
-নীলা আমরা পারবো জগৎ এ নিজেদের মুল্যবান প্রমাণ করতে?
-আমরা পারবো। কারণ “সকল অস্বাভাবিকতার মাঝেই বসবাস করে অন্যরকম অসাধারণ কিছু।”
-নীলা আমরা পারবোঃ)
আজও শুভ্র কল্পনাতে নীলার মতো সাহসী হতে চাই। কারণ সে জানে সে অনেক কিছু পারে কিন্তু তার প্রকাশ করা বারণঃ)নীলা চরিত্রটি শুভ্র র পছন্দ। এমন ভিন্ন দৃষ্টি কোণ এর মানুষ স্বভাবত কম ই হয়।
লেখনি পড়ে শুভ্র লেখকের কথা ভাবে নি ভেবেছিলো লেখনীতে উল্লেখিত চিরিত্রটির কথাঃ)
কথায় আছে না তীব্র ইচ্ছা পোষণ করলে সেটা যেভাবে ই হোক পূরণ হয়।তেমনটাই হয়েছিলো শুভ্রের সাথে।শুভ্রের ইচ্ছা ছিলো নীলার মতো কোন মেয়ের সাথে তার পরিচয় হবে।
ভাগ্যচক্রে এমনি এক মেয়ের সাথে তার পরিচয় পালা শুরু হয়। পরিচয় বললে ভুল হবে প্রণয় বলা সাজে।
শুভ্র নীলা চরিত্রের কথা মেয়েটিকে অনেকবার বলেছে।
মেয়েটি কখনও বুঝতেই দেইনি আসলে নীলা চরিত্রের সৃষ্টি ই হয়েছিলো তার হাত ধরে।
খুব ভালো লিখেছেন। তারা অস্বাভাবিক হলেও অসাধারণ। আমরা যেভাবে প্রকৃতিকে উপভোগ করি, পৃথিবীকে অনুভব করি, তারা সেভাবে করে না।ততারা উপলব্ধি করে মনের চোখ দিয়ে। ষষ্ঠ স্নায়ু দিয়ে। তাই তারা অসাধারণ।
খুবই সুন্দর গল্প। তবে কিছু শব্দের সাথে র আলাদা হবে না, একসাথে হবে। য় এবং ই এর মধ্যে গড়মিল করেছেন।এছাড়াও আরো কিছু বানান ভুল আছে,সংশোধন করে দিই।
দাড়িয়ে- দাঁড়িয়ে।
সবথেকে- সবচেয়ে।
সপ্নগুলোকে- স্বপ্নগুলোকে।
আগমণ- আগমন।