গল্প লেখকঃ
লিখা-ইমতিয়াজ হক
(ফেব্রুয়ারী)
………………
‘সাইকেলের চেনটা রোজ এখানে এসেই পড়ে। নাদিয়ার বাসার সামনে আসলেই কেন, ক্যামনে এমনটা হয় সেটা নিয়ে আমার বন্ধুগুলা রীতিমত গবেষণা করেও কুলকিনারা করতে পারে না। না পারাটাই স্বাভাবিক কারণ কাজটা আমিই করি অতি দক্ষতার সাথে। সেই ৪ বছর সাড়ে আট মাস হলো করে আসছি; তবু রাতুল ছাড়া বিষয়টা আর কেউ জানতে পারেনি। সেও হয়তো জানতোনা আমি না বললে!
সকাল-বিকাল দুইটা সময় আমি সেখানে যাই। বেশিরভাগ দিনই কোন একসময় দেখা হয়েই যায়। মাঝে মাঝে আবার হয়ও না, আর সেসব দিন আমার যাচ্ছেতাই কাটে। আর কোনদিন দুইবেলায় দেখা হলে তো যেন আমার ঈদ ।
নাদিয়া কে প্রথম দেখেছিলাম, ‘১৩ এর ম্যাথ অলিম্পিয়াডে। তখন সে ক্লাস ৮ এ আর আমি ১০ । একই ক্যাটাগরিতে সে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর আমি রানার আপ। চোখের দেখায় ভালো লেগেছিল তবে তা শুধু রুপের জন্য নয়, তার অনেক গুণ আছে। সে গাইতে পারে, সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারে আর সবচেয়ে বড় কথা সে মনখুলে হাসতে পারে। এককথায় সে হাসিটায় আমাকে পুরোদমে কাবু করেছিল।’
অজানা ব্যক্তিঃ তারপর !?
আমিঃ বলছি বলছি…
‘তারপর তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে অনেক কিছু জানি। বাসার ঠিকানা জানার পর শুরু হয় রোজ সাইকেল নিয়ে চক্কর। মাঝে মাঝে দেখা হলেও সে হয়ত বুঝত না যে আমার তাকে ভালো লাগে, তার জন্য আসি। আর আমিও নিজ থেকে বলার সাহস পেতাম না। এমনই একদিন অনেকক্ষণ হলো, তাকিয়ে আছি তার বাসার দিকে, তার কোন খোঁজ নাই। ছাদে, বেলকোনিতে, জানালায় কোথাও নাই। মনে খারাপ করে সাইকেলে উঠে প্যাডেল মারতে গিয়ে সামনে দেখি নাদিয়া!’
অজানা ব্যক্তিঃ থাপ্পড় মেরেছিল ?
আমিঃ ওই, না ।
‘এমনিতে দূর থেকে দেখলেই আমার হার্টবীট দ্বিগুণ হয়ে যেত আর এখন এত কাছে দেখে হার্ট তো পুরা রেস শুরু করে দিল।
নাদিয়াঃ রোজ রোজ হাতে কালি মাখতে ভালো লাগে?
আমিঃ না মানে, চেন পরে গেলে………
নাদিয়াঃ মিথ্যা বলার গুণ আছে তাহলে !!
আমিঃ কই! না তো!
নাদিয়াঃ চেনের কি রোগ আছে যে বছরের ৩৬৫ দিন একই জায়গায় পরে যাবে !
আমিঃ ………
নাদিয়াঃ ভালোবাসো?
আমিঃ না মানে…
নাদিয়াঃ বাসোনা ?
আমিঃ হুম, বাসি ।
নাদিয়াঃ সেই অলিম্পিয়াড এর পর থেকে !!
আমিঃ হুম । তুমি কিভাবে জানলা ?
নাদিয়াঃ আমার কি চোখ, কান নাই !!!
আমিঃ …
নাদিয়াঃ কিছু বলবা ?
সব সাহস এক করে বললাম, “তোমাকে খুশি রাখতে চাই ।”
নাদিয়াঃ কাল সকালে থাকবনা, বিকালে এসো । আর হাত কালি করে চেন ফেলার দরকার নাই, এমনিই দাড়িয়ে থেকো,আমি আসব । (তাকে একটু দেখার জন্য আমার রোজকার কীর্তিকলাপ সম্পর্কে হয়তো বুঝতে পেরেছিল )’
অজানাঃ তারপর তারপর !!!
আমিঃ হুম,…
‘পরদিন,
নাদিয়া বলল, “তোমার বাজে গুণ আছে , নিজেকে বেশি বেশি খারাপ বলো। সেটা যেন আর না হয় ।” আমি,”খারাপ হলে তো………” আমাকে থামিয়ে দিয়ে,”চুপ । আর শোনো, আমার ফ্যামিলি টাকা-পয়সার জন্য হয়তো কিছু করবে না কিন্তু একটা যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলে কিন্তু অবশ্যই চাইবে। কিছু বুঝলা?” আমি,” হুম, আমি জানি। আর তোমাকে খুশি রাখার জন্যও তো নিজের সামর্থ্য থাকা লাগবে। আমার নিজের সে চিন্তা আছে ।”
অজানাঃ আচ্ছা, সবার লাভস্টোরি তেই তো হাজার সমস্যা থাকে, তোমাদের ছিল না কেন ?
আমিঃ আল্লাহ হয়তো চাননি। আর সবগুলাতেই সমস্যা থাকলে ভিন্ন হবে কোনটা!!
অজানাঃ আচ্ছা, তারপর বলো ।
‘তারপর দেখা সাক্ষাতের মাঝে দিন কাটছিল। প্রতিটা দিনের মাঝেই ছিল হয়তো খুশি, নয়তো রাগ আবার কখনও অভিমান, কখনও একটু কান্না। এভাবেই কাটতে কাটতে এখন সে তার জায়গায় আর আমি আমার।’
অজানাঃ সে তার জায়গায় মানে, নাদিয়া আন্টি এখন কোথায় ?
আমিঃ তোমার আম্মুকে জিজ্ঞাসা করো তো?
মাশুর চিৎকার ,”আম্মু আম্মুউউউ”
আমিঃ এই নিদু, তোমার ছেলে জিজ্ঞাসা করছে “নাদিয়া” কে !! বলো তো …
নিদুর মুখে সেই প্রাণখোলা স্বতঃস্ফূর্ত হাসি ❤
(এতক্ষণে হয়তো বুঝতে পেরেছেন অজানা ব্যক্তিটি হলো মাশু, আমার ছেলে। আর তাকেই শোনানো হচ্ছিল আরিব আর নাদিয়ার ……………… গল্প )
০ Comments