‘কেন এমন হয়? যে আমাদের সবচেয়ে কাছের হয় আমরা তাদের থেকেই আলাদা হয়ে যাই। যাদের সংগ সবসময় পেতে চাই অর্ধেক পথে কেন তাদের হাত ছুটে যায়? কেন জীবন আমাদের প্রতিনিয়ত পরীক্ষা নেয়?…..কেন?’
– নিশা তার ডায়রী বন্ধ করে পাশে রেখে দিল। সে বুঝতে পারেনি সে এটা লেখার সময় কখন কেঁদে দিয়েছে। ঠিক তখনি নীল একটা ছোট বাচ্চাকে নিয়ে ঘরে ঢুকল। নিশা তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে পেছনে তাকালো। বাচ্চাটি আপন মনে নিজের আংগুলের সাথে খেলা করছিলো। নিশাকে দেখে সে তার হাত বাড়িয়ে মা মা করতে থাকলো। নিশা এগিয়ে এসে নীলের কাছ থেকে তার বাচ্চটি নিল।
নীল বলল – খুব ভাল, মা কে পেয়ে বাবা কে ভুলে গেলে? বাচ্চাটি তার দিকে রাগী চোখে তাকালো।
নীল – দেখো তো এখনি কিভাবে তাকাচ্ছে? নীল তার বাচ্চার কাণ্ড দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল। নিশা তাদের দেখে হাসতে শুরু করে দিলো। নীলও এই হাসিতে যোগ দিলো।
নিশা- নিশানকে কিছু বলবে না। সে তার মা বাবা দুজনকেই ভালবাসে। তাই না নিশান?
নিশান – বাবা….মা….. । সে বলতে চাচ্ছে যে নিশা ঠিক বলছে। নিশান হলো নীল আর নিশার দুই বছরের ছেলে। নিশা নিশানকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। কারন সে কোলেই ঘুমিয়ে গেছে। পেছনে ফিরে নিশা দেখল নীল তার ডায়রি পড়ছে। নিশা নীলের দিকে প্রশ্নসূচক চোখে তাকালো।
নীল- এক বছর হয়ে গেছে তুমি এখনো এটা কেন ভাবো?
নিশা – আমি ভুলার চেষ্টা করি।কিন্তু যত ভুলতে চেষ্টা করি ততই মনে পরে যায়।
নীল-আমিও ওকে খুব মিস করি। নিশান আছে তো আমাদের সাথে।
নিশা- হুম। নিশান রাইসা আপুর নিশান।
নীল- তোমার কি মনে হয় নিশান প্রথমে তোমাকেই কেনো মা বলে ঢেকে ছিলো।
নিশা-মানে?
নীল-মানে নিশান কেন তোমাকেই মা ঢেকেছিলো? ওখানে তো আয়শা আর সাদিয়াও ছিল। এমন কি রাইসা আপুও ছিলো। নিশা নীলের দিকে তাকিয়ে ওর কথা বোঝার চেষ্টা করল।
নীল- কারন রাইসা আপু আগের থেকেই জানত ওর প্রেগন্যান্সিতে সমস্যা ছিলো। কিন্তু ও কাউকে বলতে পারে নি।কারন তখন অনেক দেরি হয়ে গেছিলো। যখন নিশান তোমাকে মা বলেছিলো তখন ওর চেহারায় একটা হাসি ছিলো।সে বুঝতে পেরেছিল তার যাওয়ার পর তার ছেলে মা তার সাথেই আছে। নিশা চোখ বন্ধ করে রাইসার মুখটা মনে করতে লাগলো। যখন রাইসা শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছিল তখন তার মুখে একটা হাসি ছিলো।
নীল- নিশা তুমিই বলো নিশান রাইসা আপুর নিশান। তাহলে কেন বলো সে আমাদের সাথে নেই। যতদিন নিশান আমাদের সাথে আছে আপুও আমাদের সাথে আছে।
নিশা- রাইসা আপু কেন আমাদের বলেনি ওর প্রেগন্যান্সিতে প্রব্লেম ছিল।আপু কি আমাদের বিশ্বাস করত না। নীল- বিশ্বাস করত বলেই তার নিশ্বান কে নিয়ে চিন্তা ছিলো না।কারন ও জানত ও চলে গেলও নিশান অনেক ভাল থাকবে। হঠাৎ তারা নিশানের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল। নীল নিশানের কাছে গেল আর নিশা তার খাবার আনতে গেল। নিশা খাবার আনার পর দেখল নীল আর নিশান ঘুমিয়ে গেছে। নিশা তার টেবিলে গিয়ে বসল। সে তার ডায়রী খুলল। ”চোখের সামনে নেই কিন্তু তোমার স্মৃতি মনের মধ্যে আছে”। “প্রতিটা হাওয়ার সাথে তোমার হাওয়ার অনুভুতি আছে”। “আলাদা হয়েও আমরা আলাদা হয় নি”। “তোমার নিশান আমাদের সাথে আছে”।
Its really good.
Khub bhalo