নামাজি ব‌উ
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 2,290 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

লেখা: ঈশরাত জাহান (মিম)

বিয়েটা আমার অমতেই হয়ে গেল। ভেবেছিলাম গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করে একটা জব করবো তারপর বিয়ে। কিন্তু কী আর করার! ভাগ্যের লিখন তো আর খন্ডানো যায় না। ছেলে নাকি খুব ভালো একটা জব করে। ছেলের ফ্যামিলিও নাকি অনেক ভালো। বিত্তবান ফ্যামিলি।তাই আব্বু বিয়েটা দিয়ে দিলো। আমি আব্বুকে অনেকবার বোঝালাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আব্বু উল্টো আমাকে বোঝালো এমন ছেলে নাকি আমি আর পাবো না। যাই হোক আব্বুর মান রক্ষার্থে বিয়েটা করে নিলাম। বিয়ের আগে ছেলের সাথে ভালোভাবে কথা বলারও সুযোগ পাইনি।
আজ আমার বিয়ে। বাড়িতে কত লোকজন। কত হৈহুল্লোড়। আব্বু সব কাজের তদারকি করছে। খালামনিরা আম্মুকে সাহায্য করছে। আর আপু ভাবীরা আমাকে সাজিয়ে দিতে ব্যস্ত। কিন্তু আমার এসব ভালো লাগছে না। আব্বু আম্মুকে ছেড়ে কী করে থাকবো? যেই নতুন ফ্যামিলিতে আমি যাচ্ছি পারবো কি তাদের সবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে? আমার বর কি আমাকে সত্যিই খুব ভালোবাসবে? এমন হাজারো প্রশ্নের ঢেউ আমার মনকে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে। আর এসব ভাবতে ভাবতে ভুলেই গেছি আজ আমার বিয়ে! বাহিরে সবার চিৎকার শুনে আমার ভাবনার ঘোড় কেটে গেলো। “বর এসেছে,বর এসেছে” বলে সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করছে। সবাই কতই না খুশি।আব্বু আম্মুও কত পাষাণ। আজ থেকে বোধহয় তারা আমাকে পর করেই দিলো। আমি চলে যাবো অথচ তারা কত আনন্দ করছে! কিছুক্ষণের মধ্যে কাজি আমার রুমে চলে আসলো। বিয়ে হয়ে গেলো আমার। এখন আমি নতুন শ্বশুড় বাড়িতে যাবো। সবার কাছে বিদায় নেবার পালা। আব্বু আম্মুর মুখ দেখে বুঝতে পারলাম যে ভেতর থেকে তারাও দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। এতক্ষণে আমার ভুল ধারণা ভেঙ্গে গেল। কোন বাবা মা’ই চায় না তাদের সন্তান তাদের থেকে দূরে থাকুক। কিন্তু মেয়ে হয়ে জন্মেছি যে! তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আমাকে আব্বু আম্মু তাদের নিজের কাছে রাখতে পারবে না। বুকে পাথর চাপা দিয়ে হলেও আমাকে হাসি মুখে বিদায় দিতে হবে। পাঠাতে হবে অন্যের ঘরে। সবার কাছে বিদায় নেওয়া শেষ। এবার ফেরার পালা। গাড়িতে উঠলাম। চোখ দিয়ে অঝড় ধারায় অশ্রু ঝড়ছে। পৌঁছে গেলাম শ্বশুড় বাড়ি। আমাকে বরণ করে নেওয়া হলো। আমি ভেতরে ঢুকে গেলাম। সব কিছু কেমন যেন অচেনা লাগছে। নতুন বাড়ি। সব মানুষ নতুন। কেমন যেন নার্ভাস লাগছে আমার।
আমাকে একজন মহিলা বাসর ঘরে দিয়ে এল। উনি সম্ভবত আমার বরের বড় বোন। আমি বাসর ঘরে মুখে ঘোমটা টেনে খাটের উপর বসে আছি। অনেক ফুল দিয়ে সাজানো বিছানাটা। গোলাপ, রজনীগন্ধা আরও অনেক ফুল। সবগুলোই আমার পছন্দের ফুল ছিল। খুব ভালো লাগছে ফুলগুলোর ঘ্রাণ। আমি ফুলের ঘ্রাণ শুখছি আর বরের জন্য অপেক্ষা করছি। সবাই বলে বাসর রাত নাকি কোন ছেলে বা মেয়ের জীবনের স্বরণীয় রাত। আমার বুক ধড়ফড় করছে। অনেকক্ষণ থেকে অপেক্ষা করছি কিন্তু আমার বরের কোন খবর নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১২ টা বেজে গেছে। একটু পরে শুনতে পেলাম কে যেন দরজা নক করছে। এত রাতে সদ্য বিবাহিত নববধূর ঘরে বর ছাড়া আর কে’ই বা ঢুকবে? তবুও আমি ভয়ে ভয়ে উঠে দরজা খুললাম। দরজা খুলে তো আমার চক্ষু চড়কগাছ। একি! আমার বর নেশা করে এসেছে। যে বাসর রাত স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাকে আর আমার বাসর রাত কাটবে একটা মাতাল লোকের সাথে! এর থেকে বড় ব্যথা বোধহয় মেয়েদের জীবনে আর কোনকিছু নেই। কী করে সইবো আমি এসব?
কোন রকমে সেদিনের বাসর রাতটা কাটালাম। অনেক কষ্ট করে। সকালে উঠে নামাজ পড়লাম। তারপর বাহিরে এসে আমার শ্বাশুড়ি মাকে সব কাজে হেল্প করলাম। আমার শ্বশুড় বাড়িতে আমার স্বামী বাদে বাকি সব মানুষগুলোই ভালো। তারা আমাকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু তারা জানতো না যে তাদের ছেলে রাতে নেশা করে। মাতলামি করে। কারণ সজিব ওর পরিবারের সবার সামনে সবসময় ভালো সেজে ছিল। ও হ্যাঁ, আমার বরের নাম সজিব। তাই আমি যদি ওদের বলতাম যে সজিব একটা মাতাল তাহলে আমার কথা কেউ বিশ্বাস করতো না। উল্টো তারা আমাকেই ভুল বুঝতো। না, কাউকে কিছু বলা যাবে না। যা করার নিজেকেই বুদ্ধি খাটিয়ে করতে হবে।
দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের ১৫ দিন হয়ে গেল। কিন্তু সজিবের মাতলামি কমলো না। ও আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ওর মর্ডান মেয়ে পছন্দ। আমার মতো ঘরোয়া মেয়ে ওর একেবারেই পছন্দ না। আর আমিও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি যে করেই হোক আমি সজিবকে নামাজি করে তুলবোই। যেই কথা তেই কাজ! ও যত রাত করেই বাড়ি ফিরুক না কেন আমি ওর জন্য অপেক্ষা করি। না খেয়ে খাবার নিয়ে বসে থাকি খাবার টেবিলে। ও যখন বাড়িতে ফিরে তখন রাগ না করে ঠান্ডা মাথায় ওকে বোঝানোর চেষ্টা করি। ওকে নামাজ পড়ার কথা বলি। মদ্যপান করা যে হারাম ওকে এটা বোঝাই। সারাদিন সংসারে শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে বিভিন্ন ধরণের কাজ করি আর রাত হলেই ওকে বোঝাই। এভাবে বিয়ের ২০ দিন হয়ে গেল। আমার কেন জানি মনে হতে লাগলো সজিব আমার কথাগুলো একটু হলেও বোঝার চেষ্টা করছে। কারণ আগে যখন আমি নামাজ পড়ার জন্য উঠতাম তখন সজিব আমাকে ওর পাশ থেকে উঠতেই দিত না। অনেক বুঝিয়ে নামাজ আদায় করতে হতো। আমি যখন কুরআন তিলাওয়াত করতাম তখন ও বিরক্তবোধ করতো। কিন্তু এখন আর সেসব করে না। এখন আমার উঠতে একটু দেরি হলেই সজিব আমাকে জাগিয়ে দেয় নামাজ আদায় করার জন্য। আমি যখন কুরআন তিলাওয়াত করি তখন ও মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। মনোযোগ সহকারে আমার তিলাওয়াত শোনে।
ইদানিং সজিবের মাতলামি অনেক কমেছে। আমি ভালো কিছুর ইঙ্গিত পাচ্ছি ওর মাঝে। হয়তো আমার চেষ্টা সফল হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে যাচ্ছে।
একদিন রাতে সজিব আর আমি রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে এলাম। শুয়েও পড়েছি দু’জনে। কিন্তু মশাগুলো খুব ডিস্টার্ব করছিল। তাই সজিব মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাকে মশারি টাঙ্গিয়ে দিতে বলল। আমি উঠতে উঠতে সজিবকে একটা কথা বললাম, “তুমি সামান্য মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য মশারির মাঝে ঢুকছো। কিন্তু জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য কখনো কি মসজিদে ঢুকেছিলে?” কিন্তু সজিবের কোন সাড়া এল না। আমিও আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকালে উঠে আমি নামাজে বসলাম। একটু পর আন্দাজ করতে পারলাম আমার পাশে কেউ বসে আছে। আমি সালাম ফিরিয়ে পাশে তাকালাম। দেখি সজিব জায়নামাজে বসে নামাজ আদায় করছে। এটা দেখে আমার চোখ দিয়ে খুশির অশ্রু ঝড়তে লাগলো। আর কিছু পারি বা না পারি আমার বরকে নামাজি করে তুলেছি এটাই অনেক।
সেই তখন থেকে আজ অবধি সজিব এক ওয়াক্ত নামাজও ক্বাজা করেনি। আমি প্রতিদিন ওকে মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য ডেকে দিই। আর ও মসজিদে যাওয়ার আগে আমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে হাসি মুখে মসজিদের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। ওকে বিদায় দিয়ে আমিও নামাজ আদায় করি আর দু’হাত তুলে আল্লাহ্র দরবারে প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন সারাজীবন সজিবকে নামাজ বন্দেগীতেই নিয়োজিত রাখে।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

৩ Comments

  1. আখলাকুর রহমান

    অসাধারণ লিখেছেন। সামান্য মশার জন্য যদি মশারীর মধ্যে আসা যায় তাহলে নিশ্চয় জাহান্নামের ভয়ে মসজিদে যাওয়াও সম্ভব।
    শেষে আরো একটু বড় হলে ভালো হতো। সম্ভবত দ্রুত স্কিপ করা হয়েছে।
    শ্বশুড় – শ্বশুর
    তেই কাজ – সেই কাজ

    আল্লাহ্ সজিবের মতো সকলে নামাজের প্রতি আকৃষ্ট করে দিন।
    আমিন

    শুভ কামনা রইল।

    Reply
  2. আফরোজা আক্তার ইতি

    অনেক সুন্দর একটি গল্প। শেষটুকু আরো চমৎকার। যে যুক্তি দিয়ে মেয়েটি তার স্বামীকে আল্লাহর পথে আনতে পেরেছে সেটি খুবই চমকপ্রদ ছিল। এই গল্প থেকে অনেকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। একমাত্র সালাতই আমাদের বেহেশতে যাওয়ার জন্য সাহায্য করবে।
    বানানে কিছু ভুল আছে।
    ছিড়ে- ছিঁড়ে।
    ঘোড়- ঘোর।
    অঝড়- অঝোর।
    তেই- সেই।
    আল্লাহ হবে।

    Reply
  3. মাহফুজা সালওয়া

    আল্লাহ আপনার লেখনীকে সাদকাহে জারিয়াহ হিসেবে কবুল করুন – আমিন।
    খুব সুন্দর শিক্ষামূলক একটা গল্প উপহার দিয়েছেন আমাদের।
    তবে,গল্পটা আরো ধীরস্থির ভাবে আগানো উচিত ছিলো।
    মনে হলো কাহিনী খুব তাড়াহুড়োর মাঝে এগুচ্ছে।
    বানানে, বিরামচিহ্নে অল্পকিছু ভূল আছে।
    পরের বার খেয়াল রাখবেন।
    শুভকামনা রইল।

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *