মেয়েরাই আমার গর্ব
প্রকাশিত: জানুয়ারী ৭, ২০১৯
লেখকঃ augustmault0163

 1,626 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

গল্পঃ মেয়েরাই আমার গর্ব
লিখাঃ নওমিতা সুপ্তি

–মেয়ে দিয়ে কোনো ভবিষ্যৎ হয় না। মেয়েরা শুধু বোঝা। আর কিছু না। বুঝলে? শোনো আমাদের বংশের জন্য ছেলে দরকার!
–ছেলের আশায় দুটো মেয়ে হয়েছে। আমি বলি কী ছেলে-মেয়ে দুজনই সমান। আমরা আমাদের মেয়েদের দিয়ে স্বপ্নটা পূরণ করি।
— শুনো নাজমা তোমাকে আমি যা বলেছি তাই। এবারও চেষ্টা করবো।আমার বিশ্বাস আমাদের ছেলে হবেই। আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। ছেলের জায়গা মেয়েরা নিতে পারে না। মেয়েদের জন্মই পরের বাড়ির বউ হওয়া। কিন্তু ভবিষ্যৎ ধরে রাখা না। এটা ছেলেদেরই কাজ। আমার সম্মানের মান আমার ছেলেই বাড়াতে পারবে। মেয়ে না। আচ্ছা এখন ফোন রাখছি।আমি আগামী মাসে দেশে আসবো।
নাজমা শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। নাজমা আর নিজাম ভালোবেসে বিবাহ করে। ওদের সম্পর্কটা প্রথমে কেউ মেনে না নিলেও পরে মেনে নেন ওদের পরিবার।
নিজাম সৌদিআরব থাকেন। বাবা-মার একমাত্র আদরের ছেলে। চারবোনের একভাই। চারবোনই বিয়ে হয়ে গেছে।তবে বাবার বাড়ি এসে ভাইয়ের বউয়ের উপর অত্যাচার করেন তারা।
নাজমা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। তবে বাবার আদরের একমাত্র মেয়ে। মধ্যবিত্ত হলেও ওদের পরিবারের একটা নামডাক আছে।
নাজমা বাবার রাজকন্যা হলেও বিবাহের পর শ্বশুরবাড়িতে চাকরানীর মতো থাকছে সে। নাজমা ভাবে ও এ বাড়ির বউ। বউ হিসেবে ওর একটা কর্তব্য আছে। এটা ওর পরিবার। পরিবারের সবার মন জয় করা ওর কর্তব্য। যতই ওর সাথে অন্যায় হোক না কেনো ও এ পরিবারেরই একজন সদস্য।
নাজমার দ’ুটো মেয়ে। বড় মেয়ে অষ্টম শ্রেণীতে আর ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। ছেলের আশায় দু’টো মেয়ে হয়েছে। নিজাম চান একটি ছেলে। নিজাম তার মেয়েদের মেনে নিতে পারেন নি এখনো। প্রতিমুহূর্তে সেটা সে বোঝায়।
–মা মা মা তুমি কোথায়? দেখো না নোভা ঘুমাতে চায় না। একটু এদিকে আসবে?
–নাজমা চোখ মুছে এসে বলছে, কি হয়েছে তোদের? সব কাজে আমাকে কেন ডাকিস? কয়দিন পর আমি তো থাকবো না। তখন কী করবি শুনি?
— নাবিলা মায়ের কথা শুনে চুপ হয়ে নোভার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে, ঘুমাও বোন। না ঘুমালে ভূত এসে মাকে নিয়ে যাবে। নাবিলা কাঁথায় মুখ ঢেকে কাঁদছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে।
–নোভা বোনের কান্না দেখে মাকে বলছে, মামণী তুমি যাও।আমি ঘুমিয়ে যাচ্ছি।
নাজমা কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে এসেছে। মেয়েদেরকে আলাদা শুতে দেন।
–নাজমা বলছে, তোরা আমাকে ক্ষমা করিস। আমি মা নামে কলংক। তোদের আমি জন্ম দিয়ে তোদের মা হতে পারলাম না। আমি জানি তোরা আমার ব্যবহারে আমাকে ঘৃণা করিস।আমিও চাই আমাকে ঘৃণা করে দূরে সরে যা। কিছুদিন পর তোদেরকে নানুর বাসায় চলে যেতে হবে রে।
–আপু তুমি কাঁদছো? কেঁদো না। আমি আর না ঘুমানোর বায়না করবো না। আমি তোমার কাছেই ঘুমাবো। মাকে আর ডেকো না। আমি আর দুষ্টুমি করবো না। নোভা নাবিলার চোখ মুছে দিচ্ছে। দুজন গলাগলি ধরে জরিয়ে শুয়ে আছে।
পরদিন সকালে….
নাবিলা ঘুম থেকে খুব ভোরে উঠে ওযু করে নামাজ পড়ে বোনকে তুলে বলছে,
নোভা উঠো সকাল হয়েছে।
নাবিলা ব্যাগ গুছিয়ে স্কুলের জন্য তৈরি হয়েছে।তারপর নোভাকে রেডি করিয়ে রান্নাঘরের দরজায় দাড়িয়ে আছে।
নাজমা নাস্তা তৈরী করছে। বিশটা রুটি সাথে ভাজি।
নাবিলা মায়ের কষ্ট দেখে চুপ করে দাড়িয়ে আছে। ভাবছে, আমার মায়ের এত কষ্ট? কতো কাজ করে মা।তারপরও দাদু,ফুপুরা মাকে কতো বকাবকি করেন। পড়ে পড়ে ঘুমান।আর আমার মাকে দিয়ে কাজ করান।
— নাজমা বলছে কিরে ওখানে দাড়িয়ে কী করিস? আয় ভিতরে রুটি নিয়ে দুজন খেয়ে নে। আমার অনেক কাজ।
— নাবিলা চারটে রুটি আর ভাজি হাতে নিয়ে ওদের রুমে চলে যায়।
–নিজামের দাদি কুলসুম বলছে, তোর মেয়ে দু’টো লক্ষী হবে রে। দেখিস তুই। কতো ভদ্র মেয়ে তোর। ভাগ্য করে এমন মেয়ে পেয়েছিস।
— আর ভাগ্য! দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নাজমা বলছে, ভাগ্য যদি ভালো হতো তাহলে আজ আমি মহারানী থাকতাম। মেয়ে জন্ম দিয়েছি বলে আজ শ্বশুরবাড়িতে কোনো দাম নেই। স্বামীর কাছে প্রতিনিয়ত কথা শুনতে হয়। এবার ছেলে না হলে আমাকে আর আমার মেয়েদের বের করে একটা বিয়ে করবে। ছেলের মুখ দেখতে চান ওরা।
— বড়মেয়ে ফারজানা এসে বলছে, এই যে ম্যাডাম নাস্তা হয়েছি কী? নাকি গল্পে জমে আছেন? তাড়াতাড়ি নাস্তা দিয়ে যান।আমার ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যেতে হবে। উফ!! কত কাজ! কথাটি বলে চলে গেল।
— কুলসুম বানু বলছে, নাতবউ তোর কষ্ট একদিন থাকবে না। তুই অনেক সুখী হবিরে।আল্লাহ তোর মনের আশা পূরণ করবে একদিন। তারপর সে তার ঘরে চলে গেলেন।
নাজমা নাস্তা বানিয়ে সবার ঘরে চা দিয়ে এসে নাস্তা টেবিলে পরিবেশন করে ওদের খাওয়াচ্ছে।
এদিকে নাবিলা, নোভা খেয়ে প্লেট ধুয়ে স্কুলে চলে গেল।
ওরা হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে।
–হঠাৎ মাঝপথে একটা গাড়ি সামনে দাড়িয়ে জানালার কাঁচ নামিয়ে নাবিলার ক্লাসমেট বলছে, কিরে নাবিলা তোদের বাবা নাকি অনেক বড়লোক? তাহলে হেঁটে হেঁটে কেনো যাচ্ছিস? সেদিন তো খুব কথা শুনিয়েছিস। তোর বাবা, দাদারা অনেক বড়লোক।হুহ! ভিখারী কোথাকার। এই ড্রাইভার চলেন।দেরি হয়ে যাচ্ছে।
–নাবিলা বলছে, চলো বোন।অনেকটা পথ যেতে হবে আমাদের।
ওরা স্কুলে গিয়ে যার যার রুমে বসে আছে। নাবিলার কোনো বান্ধবী নেই। কারন নাবিলা পড়াশুনায় খুব ভালো।তাই সবাই ওর সাথে হিংসা করে। বড়লোকের ভাব দেখায়। নাবিলাকে স্কুলের প্রত্যেক স্যার বা টিচাররা খুব ভালোবাসেন।
ক্লাস শেষ করে নোভার জন্য অপেক্ষা করছে নাবিলা। নোভা কোচিং শেষ করে বোনকে বলছে চলো আপু। নোভার টিচার রোকসানা বেগম বলছেন, নাবিলা তুমি তো ভালো ছাত্রী। তুমি কোনো কোচিংএ পড় না? আমার জানামতে, তোমার পরিবার খুব বড়লোক। ওনারা তোমাকে কেনো পড়ায় না?
— নাবিলা বলল, ম্যাম আমিই ইচ্ছা করে পড়তে চাই না। আমি চাই আমার বোন আরো ভালো রেজাল্ট করুক। ম্যাম এই নিন নোভার বেতন। তারপর ওরা বাসায় চলে এলো।
সারারাস্তায় নোভা ভাবছে, আপু ম্যামকে মিথ্যা বলল? তাও ও আমার জন্য? আপুকে জিজ্ঞেস করি? নাহ্! আপু যদি রেগে যায়? থাক! পরে কখনো জেনে নিবো।
— নাবিলা নোভাকে বাড়ির গেটে দিয়ে বলছে, তুমি বাসায় যাও। আমি ঘন্টাখানেক পর আসছি।
–আপু তুমি কোথায় যাও প্রতিদিন?
— নাবিলা রেগে বলল, এত কথা কেন? আমি প্রতিদিন একই উত্তর দিবো না। যাও ঘরে।ফ্রেশ হয়ে ভাত খেয়ে নিও।
নোভা মাথা নিচু করে রুমে চলে যায়। প্রতিদিনের মতো মায়ের কাছে মিথ্যে বলা। আর বোনের জন্য অল্প খেয়ে ভাত বাঁচিয়ে রাখা।
এদিকে নাবিলা ছোট ক্লাসের বাচ্চাদের পড়ায়। দুইশ টাকা বেতন। তিনজন পড়ায়। ছয়শত টাকা বেতন পায়। নিজের জন্য না। বোনের পড়ার জন্য ও টিউশনি করে।
বাসায় আসতেই বোন আর নিজের কাপড় ধোয়ে খেতে বসলো নাবিলা। নোভা দৌড়ে এসে বসে বসে কাঁদছে।
–নাবিলা ভাত রেখে বলছে, কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে তোমার? কী হলো বলবে?
— আপু মা আমাদের নানুর বাড়ি পাঠিয়ে দিবে। বাবা আমাদের ভালোবাসেন না। বাবা আমাদের খরচ চালাতে পারবেন না। মা বাবাকে ফোনে বলেছে পাঠিয়ে দিবে আমাদের। আচ্ছা আপু আমরা কী খুব খারাপ? মা-বাবা আমাদের কেনো পছন্দ করেন না? কেনো সবাই দূরদূর করে?
— নাবিলা জড়িয়ে ধরে বোনকে বলছে, কাঁদবে না বোন। একটা কথা দেও আমাকে। দিবে বলো কথা?
— হুম দিবো। আমি তোমাকে কথা দিলাম। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো। তারপরও আমি বাবা-মায়ের আদর চাই।
— পাবে। তার আগে যে তোমাকে আর আমাকে বাবা-মায়ের দেখা স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।
— কী স্বপ্ন? বলো। বলো না আপু।
— শোনো, আমরা মেয়ে বলে আমাদের বাবা বা দাদু,ফুপুরা পছন্দ করেন না। আমাদের বোঝা ভাবেন। তাই আমাদের পড়াতে চান না। খরচ দিতেও চান না। তারপরও মা ওনাদের মানিয়ে আমাদের পড়াচ্ছে। আর ওনাদের মতো চলতে গিয়ে মাকে প্রতিনিয়ত কাজ করতে হচ্ছে। কথা শুনতে হচ্ছে। বাবা ভাবেন মেয়েরা পরের বাড়ির বউ। মেয়েরা বাবার ঘাঁড়ে বোঝা থাকে। কিন্তু ছেলেরা প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা-মার ছাদ হয়ে দাড়ায়।
— আচ্ছা আপু মেয়েরা পারেনা? মেয়েরাও তো ডাক্তার, শিক্ষক, উকিল হয়। ঘরে বাইরে মেয়েরাও তো এখন কাজ করছে। তাহলে বাবা এমনটা কেন ভাবেন?
–জানি নারে! তাই তো বলছি আমরা দুইবোন আমার বাবা,দাদাকে দেখিয়ে দিবো।আমরা মেয়ে হয়েছি বলে আমরা যে কিছু পারি না তা নয়। আমরাও মাথার ছাদ হতে পারি। পারবে না বাবার ধারনাটাকে পাল্টাতে? বলো না বোন পারবে? কাঁদছে নাবিলা।
–হুম আপু আমি পারবো। দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে।
দরজার আড়াল থেকে কুলসুম বানু ওদের দুইবোনের কথা শুনে মুখে কাপড় গুজে কাঁদছে। মনে মনে বলছে, তোরা পারবি। তোরাই পারবি। আমি তোদের সাহায্য করবো। কথাটি বলে কুলসুম বানু নাবিলা নোভার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে বনুরা! কাঁদছিস তোরা? কাঁদিস না। তোদের পাশে স্বয়ং আল্লাহ আছেন। তোদের কোনো ভাবনা নেইরে। তোরা চল আমার সাথে। আয়..!
নাবিলা, নোভা চোখমুছে বড়মার সাথে তার রুমে গেল।
বড়মা একটি ছোট সিন্দুক বের করে কাপড় দিয়ে মুছে বলছে এটা আমার শ্বাশুরি দিয়েছিল। এতে কিছু টাকা। আর আমার বাবার বাড়ির জমি আছে। আমি তোদের নামে দিয়ে দিয়েছি। তোরা সই করে দে।
— নাবিলা বলছে, বড়মা আমরা এটা নিতে পারবো না। এটাতো তার প্রাপ্য যে কিনা এই বংশের প্রদীপ। মানে আমার ভাই। আপনি তাকেই দিয়ে দেন। আমরা তো মেয়ে।আমাদের জন্মই পরের বাড়ির জন্য তাইনা?
— নারে বোন এভাবে বলিস না। আমি তোদের সাথে কোনো তুলনা করি না। তোরাও একদিন পারবি। মন ভরে দোয়া করি। তবে কী জানিস আমি এগুলো দিয়ে কিবাই করবো। তোদের কাজে লাগবে। আমি আজ আছি কাল নেই। পড়াশোনা করার জন্যও তোদের কাজে লাগবে। তোরা সই করে দে বনু। বল দিবি?
— নোভা বলছে আপু করে দেই চলো। বড়মা এতো করে বলছে। আর আমাদের তো কিছু নেই বলো।পড়াশোনা করার জন্যও তো টাকা লাগে। চলো না দেই?
নাবিলা আর নোভা সই করে দিল। তারপর বড়মার পা ধরে সালাম করে বলল, আমরা তো চলে যাবো একদিন। তবে ফিরবো।সেদিন আমার বাবার মুখ উজ্জ্বল করেই ফিরবো।
প্রায় মাসখানেক কেটে গেল। নাবিলা, নোভার পরিক্ষা শেষ হয়ে গেল। আজ ওদের বাবা আসবেন। তাই ওদের বাড়িতে সবাই অনেক খুশি। নাবিলা, নোভাকে নিতে আসছেন ওদের নানাভাই।
সকাল থেকেই নাজমার মন খারাপ।নাজমার মেয়েগুলো চলে যাবে আজ। মেয়ে গুলোর সাথে খারাপ ব্যবহার করলেও নাজমা লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েদের দেখেছে। মেয়েগুলোকে দেখতে না পেলে নাজমা হয়তো মরেই যাবে। পরিবারের সুখের জন্য আজ মেয়েদের দূরে পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে। নাজমার মনের কথা বোঝার জন্য কেউ নেই ওর পাশে। এমনকি নিজের ভালোবাসার মানুষটিও আজ তার পাশে নেই। নাজমা ভিতর থেকে বড্ড অসহায়।আল্লাহ্ আপনি তো সবই দেখছেন। আপনি ধৈর্য্য ধরার শক্তি দেন। আমার মেয়ে দু’টো কে আপনি দেখবেন।
হঠাৎ শুনতে পেল নিজাম এসেছেন। নাজমা দৌড়ে গেল। এত বছর পর নিজের স্বামীকে দেখতে পেয়ে সব ভুলে গেলেন।নিজামের সেবাযত্ন করতে লেগে পড়লেন। শ্বশুর মেয়ের জামাইয়ের সাথে দেখা করে নাবিলা আর নোভাকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলেন। নিজামের কাছে এসে নাবিলা আর নোভা বলল, বাবা আমরা চলে যাচ্ছি।আমরা আপনার বোঝা হয়ে আর থাকবো না। তবে ছোট মুখে একটি কথা বলছি আপনার ধারনা একদিন আমরা পাল্টে দিবো। মেয়েরাও যে পারে সেটা আপনাকে আমরা দেখিয়ে দিবো। আর হ্যাঁ এখন তো আর আমরা থাকবো না। সুতরাং আমার মাকে আপনারা এতো শাস্তি দিয়েন না। কথাগুলো বলে নাবিলা, নোভা চোখমুছে মায়ের কাছে গিয়ে বলল, মাগো তোমাকে আর কাঁদতে হবে না। আজকের পর থেকে তুমি হাসবে।তোমার আপদ বিদায় হচ্ছে।ওরা চলে গেল।মায়ের বুক কেঁপে উঠল।হাহাকার শুরু হতে থাকল।
রাতে বিছানায় শুয়ে আছে নাজমা। নিজাম মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে, নাজমা আমি জানি তুমি কেনো কাঁদছো! কিন্তু একটা কথা বলছি তোমার ত্যাগে আল্লাহ আমাদের ছেলে সন্তান দিবে। কত স্বপ্ন আমার! আমার ছেলে আর আমি একসাথে নামাজে দাড়াবো। আমার ছেলে ডাক্তার হবে। দেশের সেবা করবে। আমার মাথা উচু করবে। তুমি দেখো বাবা-মায়ের মাথার ছাদ হয়ে দাড়াবে।
নিজামের চাওয়া যেনো পুরণের পথে।নিজাম আর নাজমার ঘর আলো করে এক ছেলে সন্তান এসেছে। তার নাম রাখা হয়েছে নিবির। নিবিরকে পেয়ে নাবিলা,নোভাকে সবাই ভুলে গেলেন।
দেখতে দেখতে নিবির বড় হয়ে গেল। পড়াশুনায় একদমই মন বসে না ওর। সারাদিন টাকা উড়িয়ে বন্ধুদের সাথে পার্টি করায় ওর কাজ। নিজাম বাহিরে থাকায় ওনার যত জমি বা ব্যাংক ব্যালেন্স আছে সবকিছু লুটেপুটে খাচ্ছে নিবির।
নিজাম নিবিরের অত্যাচারে দেশে চলে আসেন। ওদের ঠিকানা বলতে শুধু এই বাড়িটা। নিবিরের নামে এলাকার লোকেরা বিচার দিতে আসেন।
কতো দোকানদার এসে বাকি খাতা দেখিয়ে টাকা নিয়ে যান নিজামের কাছ থেকে।নাজমার চোখের পানি যেন শুকিয়ে গেছে। ও ভাবে এটা ওর করা অন্যায়ের ফল। মেয়েদেরকে অবহেলা করার ফল।
এদিকে নাবিলা সরকারি বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা। আর নোভা একজন ডাক্তার। দুই বোন নিজেদের গড়া ঠিকানায় আছে। নিজেদের সুখ- দুঃখ দুইবোন ভাগাভাগি করে বেঁচে আছে। নিজেদের একটা আলাদা পরিচিতি হয়েছে।
নিজাম তার পাপের ফল ভোগ করছেন।মেয়েদেরকে দাম না দিয়ে সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছেন। যে ছেলেকে নিয়ে তার এত স্বপ্ন ছিল।আজ সে ছেলেকেই ঘৃণা হয়। নেশাখোর,চোর,বাটপার, ছেচরা নামে পরিচিতি লাভ করেছে নিবির।
নিজামের বাবা মারা যান। মারা যাওয়ার পরপরই নিজামের মাকে বোনেরা নিয়ে যায়। আজ ভাইয়ের দুঃসময়ে কেউই পাশে নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিজামের। নাজমা জায়নামাজে বসে বসে কাঁদছে। নিজাম দাদি কুলসুম বানুর কাছে গিয়ে নাবিলা আর নোভার ঠিকানা নেন। তারপর একদিন মেয়েদের সাথে দেখা করতে চলে আসেন।
–বাড়ির গেটে দাড়াতেই দারোয়ান বলছেন, কাকে চায়?
–আচ্ছা আমরা নাবিলা আর নোভার সাথে দেখা করতে পারি?
— ওহ্! ম্যাডামরা তো এখন বাড়িতে নেই।
— কোথায় গিয়েছে? কখন আসবে?
— একঘন্টা লাগবে। আপনারা একঘন্টা পরে আসুন।
— আমরা কী বসতে পারি? অনেক দূর থেকে এসেছি।
— আচ্ছা আসুন।এখানে বসুন।
একঘন্টা পর দুইবোন গাড়ি করে আসল। দারোয়ান গেট খুলে দিল। ম্যাম আপনাদের সাথে কারা যেন দেখা করতে এসেছে।
— কারা? নোভা বলল।
— বলতে পারি না। একঘন্টা ধরে অপেক্ষায় আছেন।
— আচ্ছা পাঠিয়ে দেও নাবিলা বলে চলে গেল। ওরা ফ্রেস হয়ে নিচে আসতেই দেখল ওদের বাবা-মা। এতো বছর পর দেখে খুশির কান্নায় ভেঙে পরলো। বাবা-মার দুঃখের কথা শুনলো। তারপর বলল বাবা মেয়েরা যে কিছু পারে না তা তো দেখলেনই।মেয়েদের
কে নিয়েও গর্ব করা যায়।মেয়েরাও বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করে। আর আপনারা কেনো ক্ষমা চায়ছেন? আপনারা আমাদের বাবা-মা।আপনারা আজ থেকে এখানেই থাকবেন।
অবশেষে বাবা চোখমুছে বলল মেয়েরাই আমার গর্ব!

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

৪ Comments

  1. সুস্মিতা শশী

    “মেয়েদের জন্মই পরের বাড়ির বউ হওয়া। ” না দিয়ে “মেয়েদের জন্মই পরের বাড়ির বউ হওয়ার জন্য ”
    চারবোনই বিয়ে হয়ে গেছে না দিয়ে চার বোনেরই বিয়ে হয়ে গেছে দিলে ভালো লাগতো।
    কেনো – কেন
    এখনো – এখনও
    সারারাস্তায় – সারা রাস্তায়। মাঝে স্পেস হবে
    ছেলের আশায় আশায় দুই মেয়ে লাইনটা কেমন যেন খাপছাড়া লাগছে। কারণ দুইজন সন্তান তো মানুষ স্বাভাবিক নিবে। তাছাড়া নিজামেরও তো চার বোন তাহলে নাবিলা আর নোভাকে এত তাচ্ছিল্য করে দেখার কারণটা কেমন যেন হয়ে গেলো না?
    শুভ কামনা আপনার জন্য।

    Reply
  2. Eti Akter Chandni

    বাস্তবার সাথে মিল রেখে গল্পটা লেখা হয়েছে, তবে গল্পের সৌন্দর্য গল্প উপস্থাপনাতে যা খুব বেশ ভালো হয়নি।
    কেনো শব্দটি ব্যবহার হয় কোনো কিছু কিনতে চাওয়ার ক্ষেত্রে, তাই কেনো না দিয়ে কেন শব্দটি ব্যবহার করবেন। গল্পটা সুন্দর ছিল,এত, মত, কত, শব্দ গুলো এইভাবে হবে। গল্প লিখতে থাকেন ইনশাআল্লাহঅনেক ভালো লিখতে পারবেন। দোয়া রইলো, শুভ কামনা আপনার জন্য।

    Reply
  3. Md Rahim Miah

    শুনো-শোনো
    হওয়া-হওয়ার জন্য(সাথে জন্য দিলে সুন্দর হয় উক্তি)
    কিন্তু ভবিষ্যৎ ধরে রাখে না, এটা ছেলেদের কাজ। (এই লাইনে ভুল আছে ছেলেরা ভবিষ্যৎ না বংশধর ধরে রাখে)
    চাকরানী-চাকরাণী
    কেনো-কেন
    দু’টো এইভাবে হবে(মিসটেক হয়েছে আপনার মনে হয়)
    পারেন নি-পারেননি(নি শব্দের সাথে বসে)
    কি-কী(কি হ্যাঁ কিংবা না বুঝানোর উক্তির
    ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, কিন্তু এইখানে অন্য কিছু বুঝিয়েছে)
    শুনে-শোনে(যেহেতু চলিত শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার হয়েছে)
    দাড়িয়ে-দাঁড়িয়ে
    তৈরী-তৈরি
    মহারানী-মহারাণী
    বড় মেয়ে(কিসের বড় মেয়ে? বাড়ির বড় মেয়ে হলে এইভাবে লেখার উচিত ছিল, বাড়ির বড় মেয়ে)
    হবিরে-হবি রে
    কেনো-কেন
    কারন-কারণ
    পড়-পড়ো
    কেনো-কেন
    দেও-দাও
    ঘাঁড়ে-ঘাড়ে
    দাড়ায়-দাঁড়ায়
    পারেনা-পারে না (না আলাদা বসে যেহেতু শব্দ)
    ধারনাটাকে-ধারণাটাকে
    জরিয়ে-জড়িয়ে
    শুনে-শোনে
    নেইরে-নেই রে
    তাইনা-তাই না
    পরিক্ষা-পরীক্ষা
    মেয়ে গুলোর-মেয়েগুলোর(গুলো শব্দের সাথে বসে)
    এমনকি-এমন কী
    ধারনা-ধারণা
    কেনো-কেন
    দাড়াবো-দাঁড়াবো
    দাড়াতেই-দাঁড়াতেই
    দেও-দাও
    বাহ্ অসাধারণ গল্প লিখেছেন। থিমটা সেই ছিল। পড়ে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। আসলে বাস্তবেও এইরকম হয় মেয়েদেরকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিন্তু কয়জন মেয়ে বা পারে তাদের বাবা-মাকে আগলে রাখতে কিংবা প্রতিষ্ঠিত হতে। তাদের সংখ্যা কমই বলা যায়। কিন্তু দুই সন্তান তারপরও মেয়ের প্রতি এমন অবহেলা গল্পের মাঝে উল্লেখ করছেন, এটা অন্যরকম হয়ে গেল না। কারণ নিজামেরও তো ৪বোন ছিল। এই ক্ষেত্রে মেয়ে সংখ্যা বাড়ালে ভালো হতো। গল্প ভালো ছিল, কিন্তু বানানে ভুলের মান বেশি। বেশ করে কেন শব্দ কেনো লিখে ফেলেছেন যা বেশি প্রয়োগ হয়েছে। আগামীতে বানানের প্রতি খেয়াল রাখবেন আশা করি, শুভ কামনা রইল।

    Reply
  4. Halima Tus Sadia

    দারুণ লিখেছেন।

    গল্পটিতে তুলে ধরেছেন মেয়ে হয়ে জন্ম হলে অবেহলার পাত্র হয়ে যায় কিছু পরিবারে।

    আমাদের সমাজে কিছু পরিবার আছে মেয়েদের সঠিক মূল্যায়ণ করে না।মেয়ে মানেই সংসারে ঝামেলা মনে করে।টাকা খরচ করে বিয়ে দিতে হবে।আরও কতো কি…

    নোভা ও নাবিলা দুই বোন একদিন বড় হইছে।
    তবে বর্তমান সমাজে এভাবে বড় হওয়া,টিকে থাকা বড় কষ্টের।
    অনেক কষ্ট করতে হয়।আর অনেক টাকারও দরকার হয়।
    গল্পের মতো অতো সহজে হওয়া যায় না।

    নোভা ও নাবিলাকে ছাড়া কিভাবে থাকতে পারলো এতো বছর তাদের মা?
    এটা কখনোই সম্ভব না।

    পরিবারে ছেলেদেরকে প্রাধান্য দিলেও সব ছেলে পরিবারের সম্মান রাখতে জানে না।

    চারবোন–চার বোন

    শ্রেণীতে–শ্রেণিতে

    পারেন নি–পারেননি

    ধারনা–ধারণা

    তৈরী–তৈরি

    জরিয়ে–জড়িয়ে

    শুভ কামনা রইলো।

    Reply

Leave a Reply to Eti Akter Chandni Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *