গল্প লেখকঃ
জেলী আক্তার
(এপ্রিল – ২০১৮)
……………
অদ্ভুত এক সময়ে পা দিয়েছি।
জীবন নেই অথচ নির্জীব বস্তু নয় –
প্রাণী নয় তবুও চলতে পারে
তবে কিছু সাদৃশ্য আছে প্রাণীদের মত হাত পা নেই, শিরা উপশিরা নেই- তবে চাকা রয়েছে টায়ার টিউ এর সম্বনয়ে ।
লোহার তৈরী একটা ইঞ্জিন আছে
মগজের বুদ্ধি খরচ করে তৈরী করা এক অটোতে বসে ভাবছি,
বোটানির স্টুডেন্ট তো তাই সব কিছু শুধু পর্যবেক্ষন করার ধান্দা। ইন্টারমেডিয়েটে ঠিক তেলাপোকার নালীতন্ত্র যেভাবে খুঁজেছি তেমনি করে সুখের দুঃখের নালীতন্ত্র খুঁজতাম কিন্তু কিছু উদ্ভট সন্ত্রাসী ভাবনা টেনে হিচড়ে আলাদা করে দিতো সব গবেষণা।
অনার্স লেভেল অর্থাৎ সম্মান বর্ষের স্টুডেন্ট হলাম কিন্তু ইউনিভার্সিটি কথার আগে ন্যাশনাল শব্দটার কারণে প্রতিনিয়ত সম্মানের নামে উপহার পাচ্ছি অসম্মান-যাই হোক সম্মান বর্ষের বোটানি ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট বক্কর স্যারের ক্লাস করে ফিরছি বাবার তৈরী স্নেহালয়ে ।
মস্তিষ্কের কোষগুলো এক অস্থিরতায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছে, ভাবছে কলেজ থেকে ২৬ কি.মি পথ পাড়ি দিবো সোপিছ এর মত করে অসম্ভব!
কোষগুলোর অস্থিরতা আমায় বার বার আভাস দিচ্ছে ওরা ২৬ কি.মি পথ পারি দিতে অজানা চরিত্রের ব্যবচ্ছেদ করতে চায় ।
সব বুঝতে পারছি তবুও নিরুপায় হয়ে অটোতে বসলাম, প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে সিগনাল আসছে প্রতিবাদ উঠছে অজানা চরিত্রের ব্যবচ্ছেদ করতে চাই ।
ঠিক ১ কিমি.পারি দিতে না দিতেই ড্রাইভার কষে ব্রেক চেপে ধরলো সামনে ধাক্কা খেলাম মেজাজ ৩৬০ ডিগ্রী কোনে রেগে গেল, ভাবলাম কষে এক চড় মাড়বো ড্রাইভারের গালে। কিন্তু চোখ তুলতে না তুলতেই দেখি লাল চোখ ।
মহুর্তেই থেমে গেল মস্তিস্কের কোষগুলোর প্রতিবাদ, তাকিয়ে আছি লাল চোখের দিকে এত্ত বেশি লাল মনে হচ্ছিল খুনি।
পেয়ে গেলাম চরিত্র। শুরু হলো গবেষণা লাল জোড়া দেখে ভেবে নিলাম এ এক মরবিড় রিজুভিনেশনের গল্প।
ড্রাইভার:কজন যাবেন?
লাল চোখ:আঙ্গুল উচিয়ে ঐ তো!
আমার দৃষ্টি ও তখন ই বিদ্যুৎ বেগে চলে গেল দিক নির্দশক প্রান্তে।
শুরু হলো এক চরিত্রের ব্যবচ্ছেদ,
আসছে তিন জন মহিলা তবে একজন অন্যরকম ।
অন্যরকম মেয়েটাকে অভিনেত্রী আর লাল চোখের ছেলেটাকে অভিনেতা ধরে শুধু হলো ব্যবচ্ছেদ।
মেয়েটার গঠন বলে অভিনেত্রী
চলন বলে অভিনেত্রী
রুপ বলে অভিনেত্রী
গাড়িতে উঠলো লাল লাল চোখ জোড়ার অভিনেতা কে মনে হলো সেই অন্যরকম অভিনেত্রী সহকর্মী।
বিদ্যুৎ আবিষ্কার এর ফলে চলছে অটোর ইঞ্জিন।
তেমনি হয়তো ইস্পাতের প্রলেপে মনকে শক্ত করে মনে হয় অভিনয় করে চলছে।
কালো প্যান্ট, কালো জ্যাকেটের পকেটা সাদা চেনটা দুলছে, মনে হয় বুকের তিন ইঞ্চি ভিতরটাও দুলছে,তবে মাথার চুল গুলো ডিফেন্সের লোকদের স্টাইলে ছাটা। এক কথায় সুদর্শন অপর দিকে বার বার তাকালাম সেই অভিনেত্রীকে পর্যবেক্ষণ করতে হাতে কাচের চুড়ি, মেহেদী, লাল ঠোঁট, মিষ্টি কালার শাড়ী আর গায়ে কাচা হলুদের আবীরের ছাপে যেন সুদর্শনা-
তবে মেয়েটাকে দেখে অসুখী মনে হয়নি আন্দাজ করতে পারি নি কারণ মেয়ে জাতি পাক্কা অভিনেত্রী ।
স্থির হয়ে বসতেই চোখ পরলো আয়নার ছেলেটার হাতে একটা আংটি বুঝে নিলাম শশুর বাড়ীর কিন্তু ছেলেটার চোখ জোড়া এতটাই লাল এবার মনে হচ্ছে চোখে লাল মরিচের গুড়ো পড়েছে,
জল ছলছল করছে মনে হচ্ছে কয়েক ফোটা চোখের জল ঝড়লেই বোধ হয় হালকা হতো।
বিয়ের কাচা হলুদের রঙ ছেলেটাকে স্পর্শ করতে পারে নি ।
মেয়েটাকে নানান প্রশ্ন করছে প্রশ্নের ধরন কানের টিমপেনিক পর্দাকে আঘাত করছে। কথা’বার্তা শুনে বুঝলাম প্রশ্ন কর্তা সম্পর্কে ভাবী –
গোয়েন্দার মত কান পেতে শুনছি কি বলছে যতটুকু শুনলাম ট্রান্সফার করলাম বিবেকের আদালতে কিছুক্ষণ পর রিপোর্ট পড়লাম তাতে দেখা যাচ্ছে মেয়েটা নবদম্পতি ছেলেটা অর্থাৎ সেই লাল চোখ ওয়ালা মেয়েটার স্বামী, কিন্তু ভাবীর প্রতিটা প্রশ্নে মেয়েটা ভালই উত্তর নিয়ে খেলছে !
হঠাৎ ভাবী বললো অনামিকা ননদীনি তুমি সুখে থাকলে আমরাও সুখি ।
ভাবীর ভ্যানিটি ব্যাগে ফোনের রিংটন শোনা ঝাচ্ছে কথা বলতেই অনামিকা বিড়বিড় করে বলছে ভাবী তুমি বাইরের মেকাপের সৌন্দর্য অবলোকন করছো কিন্তু তুমি একবার আমার ভিতরের খন্ডবিখন্ড হৃদয়টা অবলোকন করলে না ।
ভাবী একটা প্রশ্নের উত্তর দাওতো বিয়ের রাতে স্বামীর মুখ থেকে যদি শোনা হয় সে আর মাত্র কয়েকদিন পৃথিবীতে তবে কোনো নববধু কতটা সুখে বাকী জীবন কাটাবে?
ভাবী ফোন কেটে আবার ননদীকে বলছে,
-অনামিকা সত্যি তুমি ভাগ্যবতী।
লাল চোখ আর সইতে পারলো না বলে উঠলো আচমকা ব্যস এখানেই থামুন।
এক ফোটা চোখের জল টপ করে পরে গেল, কেউ খেয়াল করে নি আমার চোখ এড়িয়ে যায়নি।
ড্রাইভার – এই খানে নামবেন?
ভাবী – আরে নাহ আর একটু সামনে আর আমার একমাত্র ননদের মহাপুরুষ তোমার কি হলো? চোখে জল কেন? কাল থেকে লাল চোখ কি হয়েছে আবার এখানে থামতে বলছো?
লাল চোখ: সরি ভাবি। কাল থেকে চোখটা জ্বালা করছে আর এখন কি জানি পড়লো। চোখে হয়তো মরিচা পোকা ।
ড্রাইভার ভাই আপনি গাড়ী স্টার্ট করুন ।
আবার অটো চলছে একটু সামনে বড় বট গাছের নিচে নেমে গেল চরিত্রের মুখ্য অভিনেতা অভিনেত্রী।
বুঝতে পারলাম সব মেয়েটার সুন্দর জীবনের সঙ্গে নিজের ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বকে জড়িয়ে অনেক কষ্টে আছে আর মরিচ পোকার দোহাই দিয়ে রোজ লোক চক্ষুর অগোচরে নির্ঝরে জল ঝড়াচ্ছে। হয়তো পরিবার পরিজনের কাছ থেকে যন্ত্রনা লুকাতে এই অভিনয়ের মহা আয়োজন।
অনেক চেষ্টা করলাম লাল চোখের মুখে আলো দেখতে পারলাম না –
তারপর নিজের চোখ জোড়ায় জল ছল ছল করছে অনেক চেষ্টা করলাম মেয়েটার ভবিষ্যতের অসময়ের প্রতিচ্ছবি আনতে পারলাম না ঝাপসা ছবি নেগেটিভ হয়ে ভেসে উঠছে।
হারিয়ে গেলাম সেই লাল চোখের কষ্টগুলোয় -নিজের চোখ জোড়াও লাল হয়ে গেল ।
অটো ড্রাইভার : আপা নামুন উলিপুর এসেছে ”
-চোখ জোড়া কচলিয়ে নামতেই আবার ড্রাইভার বলে উঠলো।
আপা, আপনি কান্না করছেন কেন ?
আমি- আরে ভাই কিছু না, চোখে মনে হয় মরিচা পোকা পরছে ।
ড্রাইভারঃও
ড্রাইভার কে টাকা দিয়ে আসছি আর ভাবছি সত্যি অনিভনয় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা কম্পালসরি অধ্যায়।
Gd