কোন কুক্ষণেই না ওর সাথে আমার দেখা হয়েছিল
প্রকাশিত: জানুয়ারী ১৫, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 1,902 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

Writer: সানিয়া আজাদ
…………………

আমাদের বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর। এই পাঁচ বছরে আমার গড় আয়ু আরো পাঁচ বছর কমেছে। আমার বর্তমান বয়স ত্রিশ বছর। গড় আয়ু সত্তর বছর হলে আমি আরো বেঁচে থাকব পঁয়ত্রিশ বছর ঐ পাঁচ বছর বাদে। তবে মনে হচ্ছে ওখান থেকেও বড় রকমের কিছু কাটছাঁট হবে। কাটছাঁট হয়েও যদি আরো পঁচিশ বছর বাঁচি সেটাও হবে আমার জন্য সাংঘাতিক শাস্তি। ওর সাথে এক ছাদের নিচে বাস করা আর বিনা বিচারে জেল খাটা যে একই কথা সেটা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। ঘুমের ঘোরেও যেন এর প্রভাব পড়ে। শেষ রাতে স্বপ্ন দেখছি আমি মারা গিয়েছি, আমার শেষ বিচার হচ্ছে এবং সেখানে আমাকে নরক বাস দিল। আমি সবিনয়ে প্রার্থনা করলাম – ধর্মাবতার, এত বছর কমলের সাথে বাস করেও কি করে আমার নরকবাস হয়? আমিতো জমানো শাস্তির প্রায় সবটুকুই শেষ করেই এসেছি। ধর্মাবতার বললেন – বাছা, কমলের সাথে বাস করার চেয়ে নরক কি ভালো নয়? আমার ঘুম ভেংগে গেল।

কমল, আমার হাসবেন্ড, আমার এক সন্তানের পিতা। শুধু বয়সটাই বাড়ছে, সাথে সাথে যে দায়িত্ববোধ টাও বাড়াতে হবে সেটা বেমালুম ভুলে বসে আছে। তার প্রতিটি কান্ড কারখানা আমার কাছে অসহ্য, আমি আর টিকতে পারছি না। সেই সাথে আছে বাচ্চার যন্ত্রনা। তিন বছরের একটা বাচ্চা যে কতটা দুরন্ত হতে পারে সেটা আমার বুবানকে না দেখলে কেউ বিশ্বাসই করবে না। যতক্ষণ ওরা বাপবেটা ঘুমিয়ে থাকে ততক্ষণই আমার শান্তি। এই মূহুর্তে আমি বেশ শান্তিতেই আছি, শুধু শান্তি না, একেবারে বেহেস্তে আছি। মানে ওরা ঘুমোচ্ছে। ঘুম থেকে উঠলেই শুরু হবে নানান অশান্তির কান্ডকারখানা।

আমি দেখতে খুব সুন্দর, চোখ দুটো অপূর্ব একথা শুনতে শুনতে যখন আমি শিহরণের সব অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছিলাম, তখনই এক বিয়েবাড়িতে ওর সাথে পরিচয়। লতায় পাতায় সে আমার আত্মীয় হয়। আমাকে দেখে একপাশে ডেকে নিয়ে বলল- ‘আমি ধন্যবাদ জানাই সেই স্রষ্টা কে যিনি অত্যন্ত সময় নিয়ে, ধৈর্য ধরে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন, আর সেই প্রসাধনী কোম্পানিকে যে এই সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করেছে’। প্রশংসার এই অভিনব কায়দা শুনে আমি হতভম্ব। আমি কি বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমার সেলফোন নাম্বার নিল, কিন্ত বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেল কোন ফোন করেনি। হঠাৎ মাঝরাতে একদিন ফোন বেজে উঠল, আমি হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে বলে উঠল – আমি দুঃখিত যে এত রাত্রে আপনাকে ঘুম থেকে জাগালাম। আমি আসলে জানতে চাচ্ছিলাম আপনি মুখে কোন ক্রীমটা মাখেন। ফেয়ার এন্ড লাভলী না তিব্বত পমেট ক্রীম? এত রাতে ফোন করেছেন আমার ফেসক্রীম এর সন্ধান নিতে?
– আহা রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি আসলে ঘড়ি দেখিনি। মোবাইল ফোনটা সমস্যা করছে, মোবাইলের সিমকার্ড খুলেছিলাম, সময়টা ঠিক করা হয়নি। আমার মোবাইলে এখন সাতটা বাজে।
– ওহ! তা আপনি কি সকাল সাতটা না সন্ধ্যা সাতটা ভেবেছেন? আসলে সমস্যা আপনার মোবাইলে নয়, সমস্যা আপনার মাথায়।
– একেবারে ঠিক ধরেছেন, সমস্যা আমার মাথায়। সেদিন ওই বিয়েবাড়ি থেকে আসার পর থেকে সমস্যাটা আরো প্রকট হয়েছে, এখন আর সময়জ্ঞান ঠিক থাকে না।
– তাহলে ডাক্তার দেখান।
– সেটাইতো সমস্যা। ডাক্তার দেখিয়েছি। সে আমার চোখ, জীভ, নিঃশ্বাস সব দেখে বলল আপনার কোন সমস্যা নেই, আপনি ঠিক আছেন। তবে আপনার সমস্যা মানসিক। যত তাড়াতাড়ি পারেন একজন স্থায়ী সংগী খুঁজে নিন। আমি ডাক্তারকে বললাম এটা কি প্রেসক্রিপশনে লিখে দেয়া যায় স্যার?
– ডাক্তার কি সেটা লিখে দিল?
– জ্বী।
– তাহলে তো ভালই, বাবা মাকে দেখান।
– দেখিয়েছিলাম, ওরা আপনার সাথে কথা বলতে বলল।

এভাবেই রাতের পর রাত চলছিল আমাদের কথোপকথন, আর সমৃদ্ধ হচ্ছিল মোবাইল কোম্পানীর আয়ের খাত। অবশেষে সাতপাকে বাঁধা পড়লাম আমরা। এরপর থেকেই শুরু হল আসল বিপত্তি।

বিয়ের পর ওর ছোট ফ্ল্যাটের শেয়ারহোল্ডার হলাম আমি। এক বাথ, এক বেড, এক বারান্দা আর ড্রইং ডাইনিং নিয়ে আটশ স্কয়ারের ফ্ল্যাট। আমিও যে এখন এই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সে কথা তার মনেই রইল না। অসহ্য গরমে গভীর রাতে ফ্যান অফ করে লাইট জ্বালিয়ে অফিসের সব কাগজপত্র নিয়ে বসে কাজ করতে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আমার ঘুম ভেংগে যায়, আমি জেগে উঠে ফ্যান চালাই। সে ‘কর কি কর কি, আমার সব কাগজ উড়ে যাবে বলে’ দৌড়ে ফ্যান অফ করে দেয়।
– তাই বলে এই গরমে ফ্যান ছাড়া ঘুমাব?
– আহা একটু কষ্ট কর, ভেবে নাও লোড শেডিং হচ্ছে।
আমি কৃত্রিম লোডশেডিং এ হাসফাস করতে থাকি। নির্ঘুম রাত সকাল হয়। আমি একহাতে সকালের নাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। সে যে ফ্রেশ রুমে ঢুকে বেরোনোর কথাই ভুলে যায়। ফ্রেশ রুমে ঢুকে সে উদিত নারায়ণ হয়ে যায়। একের পর এক ভুলভাল হিন্দি গান গেয়েই চলে। আমার ধারণা সে কমোডে বসে নিজেকে আবিষ্কার করে জনাকীর্ণ কোন ওপেন স্টেজে। দর্শকরা হাততালি দেয় আর ওয়ান মোর ওয়ান মোর করে চিৎকার করে, আর সে একের পর এক গান গেয়েই যায়।
– এই শীগগির বের হও। সাতটা বিশে ঢুকেছ আর এখন বাজে পাঁচ মিনিট কম আটটা। পঁয়ত্রিশ মিনিট ধরে গান গাচ্ছ, দর্শকরা সব চলে গেছে। এইবার দয়া করে বের হও।
– হা হা বের হচ্ছি, একটু সময় দাও।
– তুমি বের হয়ে আমার জন্য একটা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে দাও। যদি পার মান্থলি টাকায় ভাড়া করে নিও।
– কেন? বাপের বাড়ি যাবে না বাবুকে স্কুলে ভর্তি করাবে?
– তার কোনটাই নয়, গুলিস্তান পাবলিক টয়লেটে যাব। ওখানে গেলে হয়তো নিজেকে হালকা করতে পারব।
– তাহলে ভাংতি টাকা নিয়ে যেও। ওখানে ছোট কাজের জন্য পাঁচ টাকা আর বড় কাজের জন্য দশ টাকা নেয়।
আমি রাগে দরজায় লাথি মেরে চলে আসি।

আমি দাঁতে দাঁত পিষে ওর এমনতর হাজারো অত্যাচার সহ্য করি। কিছুদিন আলাদা থাকার প্ল্যান করেছি। দেখি, তাতে যদি কিছুটা দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন হয়। তাই আমি বাবার বাড়ি যাওয়াই স্থির করেছি। যদি আমাদের ফিরিয়ে নিতে আসে তবেই বুঝব ও কিছুটা হলেও ম্যাচিউর হয়েছে।

আজ তিনদিন হল বাবার বাসায় আছি, আমি এখন ওর ম্যাচিউর হওয়ার অপেক্ষায় আছি।।।

–সে দিন আর কত দূরে–

সম্পর্কিত পোস্ট

শয়তানকে পরাজিত করুন –

শয়তানকে পরাজিত করুন –

কোন এক দাওয়াতে এক ভাবী গল্প করছিলেন যে, এক মহিলা যখন তার Husband রাগ হয় তখন তিনি আয়াতুল কুরসি পড়েন আর তার স্বামী বিড়াল হয়ে যান । তখন আর এক ভাবী বললেন," ভাবী - আয়াতুল কুরসি পড়লে উনার স্বামী বিড়াল হন না বরং ঐ মহিলার সাথের শয়তানটা পালিয়ে যায়” । ভাবীদের এই...

একজন মানুষের গল্প

একজন মানুষের গল্প

দুই টাকার আইসক্রিম, বই সামনে নিয়ে চিৎকার করে পড়া, কলম দিয়ে এক অক্ষর বারবার লিখে হাত ব্যাথা সহ্য করতে করতেই ছোটবেলা কাটিয়ে দেওয়া। একটু বড় হওয়ার পর ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়া। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়া কোনো এক বট তলা। যেখানে বসে আড্ডা দিত কয়েকজন স্কুল পালানো...

অস্ফুট কান্না

অস্ফুট কান্না

লেখা: মোহসিনা বেগম , প্রচণ্ড শীত পড়েছে আজ। চারদিক কুয়াশা যেন চাদর বিছিয়ে রেখেছে। সকাল এগারোটা বেজে গেছে এখনও সূর্যের দেখা নেই। ছুটিতে কয়েকটা দিন গ্রামে থেকে আনন্দ করব কিন্তু প্রচণ্ড শীতে জমে যাচ্ছি। লেপের নীচ থেকে বের হতেই ইচ্ছে করছে না। ওদিকে মা কতক্ষণ ধরে ডেকেই...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *