লেখিকাঃ
Ayesha Orthy
(মে – ২০১৮)
…………
ট্রেন আসার কথা বিকাল ৫ টায় সেখানে আসবে নাকি রাত ৮ টায়। এতোক্ষণ কি করবে বসে বসে তাই ভাবছিলো নিশাত। স্টেশনে একটা কাঠগোলাপের গাছ ছিলো। নিশাত কাঠগোলাপ গাছের নিচে বেঞ্চিতে বসেছিলো। নিশাত চিটাগাং এসেছিলো ফটোগ্রাফিরর জন্য।
হঠাৎ নিশাত যে বেঞ্চিতে বসে ছিলো ওখানে একটা মাঝবয়সী মেয়ে এগিয়ে এসে বললো শুনেন “রাজশাহী যাবার ট্রেন ৫টায় ছাড়ার কথা ওটা কি ছেড়ে গেছে?” আমার আসতে ১০মিনিট লেট হয়ে গেছে।
নিশাত বললো হে চলে গেছে!
মেয়েটা যেন একদম ভেঙে পড়লো। নিজে নিজেই বলতে লাগলো আমি তো ভোরবেলা এসেছি, ইন্টারভিউ শেষ করে আবার বিকার ৫টায় ফিরে যাবো বলে। আমি তো কিছুই চিনি না এখানে, এখন কি করবো আমি? ওই ঢিলেঢালা সিএনজির জন্য আমার ট্রেনটা ছেড়ে গেল।
নিশাত নিরবে সব দেখছিলো। একটুপর উঠে দুইকাপ চা নিয়ে এসে এককাপ মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিলো।
নিশাত-এই নিন চা খান
মেয়ে-আমি খাবনা, আপনি খান!
নিশাত-আরেহ আমি মিথ্যা বলেছি। ট্রেন আজ লেট করে আসবে, কি যেন সমস্যা হয়েছে। ৫ টার ট্রেন রাত ৮ টায় আসবে
মেয়ে-মিথ্যা বলেছিলেন কেন?
নিশাত-আসলে নিজেকে একটু বিনোদন দেবার জন্য। স্টেশনে একা একা বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছিলাম তাই আপনাকে মিথ্যা বলে আপনার অনুভূতি দেখে বিনোদন নিলাম।
মেয়ে-কাজটা কিন্তু ভালো হয়নি।
নিশাত-আপনি কোথায় যাবেন?
মেয়ে- রাজশাহী, আপনি?
নিশাত- আমিও রাজশাহী যাব।
মেয়ে-অহ
কিছুক্ষন নীরবতা।
প্রায় সন্ধ্যা নেমে আসছে। বিকেলের শেষ আলোয় স্টেশনটা সেজে উঠেছে গৌধুলীর লাল রঙে। নিশাত হঠাৎ ক্যামেরাটা বের করে ছবি তুলতে শুরু করলো, ছুটে চলা মানুষ, স্টেশনের কোণে বসে থাকা কিছু যাযাবর আর সবশেষে কাঠগোলাপ গাছের নীচে মাটিতে পড়ে থাকা কিছু ফুলের ছবি তুলছিলো।
মেয়েটি এগিয়ে আসতেই নিশাত বললো এভাবেই দাড়ান গাছটার নীচে। দারুন ছবি আসছে নড়বেন না একদম। অনেকগুলো ছবি তুলে দিলো নিশাত। ছবিগুলো দেখে মেয়েটি বেশ মুগ্ধ হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে ছেলেটা বেশ ভালোই ছবি তুলতে পারে। ও হ্যাঁ আপনাদের ত বলাই হলো না। মেয়েটার নাম রূপন্তী।
রূপন্তী- বাহ আপনি ত খুব সুন্দর ছবি তলতে পারেন।
নিশাত- জানিনা ঠিক কতোটা সুন্দর ছবি তুলতে পারি তবে এটা জানি ফটোগ্রাফি আমার ধ্যান জ্ঞান আমার নেশা।
রূপন্তী- হাহাহা, আপনি কিন্তু খুব সুন্দর ভাবে কথা বলেন। খুব চমৎকার মানুষ আপনি।
নিশাত একগাল হাসি দিয়ে বললো ধন্যবাদ!
সূর্যটা পাড়ি জমিয়েছে অন্যদেশে, স্টেশনের আলোগুলো জ্বলে উঠে। হেঁটেই চলেছে কিছু মানুষ আর কিছু মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনছে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের অপেক্ষায়। মাঝে মাঝে কিছু ট্রেন আওয়াজ দিচ্ছে বিকট শব্দে।
আবারো কিছুক্ষন নীরবতা
রূপন্তী আর নিশাত বসে আছে একই বেঞ্চের দুই প্রান্তে। আবারো নিশাত ক্যামেরাটা বের করে উঠে দাঁড়ালো। ছবি তুলতে শুরু করলো রাতের অন্ধকারে জেগে থাকা ব্যস্ত স্টেশনটার।
ছবি তুলতে তুলতে নিশাতে চোখ গেলো স্টেশনের কোনো এক কোণে অনেকগুলো বাচ্চাকে কেউ একজন পড়াচ্ছে।
একরাশ কৌতূহল নিয়ে নিশাত রূপন্তীকে নিয়ে এগিয়ে যায় বাচ্চাগুলোর দিকে। কাছে গিয়ে বসলো তাদের পাশে, কিছুক্ষণ গল্প আর কিছু ছবি তুলে ফিরে আসে সেই আগের জায়গাতে।
নিশাত ও রূপন্তী এক মনে ছবিগুলো দেখেছিলো।
হঠাৎ করেই নিশাত চাপা সুরে গেয়ে উঠল-
“আজ সন্ধ্যা সন্ধ্যা আসে ফিরে
ট্রেন আসে পথে তাই।
থেমে যাওয়া ট্রেনে রাখি চোখ
নেমে আসে না তো কেউ আর।
তাই মেনে নিতে পারিনি এ ঝড়
একা একা লাগে শহর।”
রূপন্তী- বাহ গানের কথা গুলোত খুব সুন্দর। আপনাকে যত দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। খুব সুন্দর আপনার গানের গলা। আর ছবি গুলোর কথা নাই বা বললাম। অসাধারন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সব সাধারন জিনিস গুলোকে।
নিশাত কিছুই না বলে তার চির চেনা সেই হাসিটা দিলো যার ভেতর খুঁজে পাওয়া যায় প্রতিটি কথার উত্তর।
নিশাত-সময় ত প্রায় হয়ে এলো, কিছুক্ষনের মধ্যে ট্রেন এসে পৌঁছাবে।
রূপন্তী- হুম সময়টা কিভাবে যেন ফুরিয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ স্টেশনের মাইকে ঘোষনা এলো “সম্মানিত যাত্রীবৃন্দ আপনাদের জানানো যাচ্ছে যে রাজশাহীগামী গৌধুলী এক্সপ্রেস তিন নাম্বার প্লাটফর্মে এসে পৌঁছেছে। দয়া করে আপনারা নিজ নিজ আসন গ্রহন করুন, নির্ধারিত সময়ে ট্রেন রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।”
চলুন ম্যাম ট্রেনে উঠা যাক, বাকি কথা নাহয় যেতে যেতে বলা হবে।
-হুম চলেন।
৯টায় ট্রেন প্লাটফর্ম ছেড়ে যায়…..
ট্রেন ছুটে চলেছে তার আপন গতীতে। শহর পেরিয়ে গ্রামের মধ্য দিয়ে ছুটে চলেছে ট্রেন।
আকাশ ভরা তারার ঝিকিমিকি রঙ আর জোনাকির আলোতে চারপাশটায় এক স্বর্গীয় সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়।
নিশাত- আজকের রাতটা খুব সুন্দর তাই না?
রূপন্তী- আমার দেখা অন্যতম সেরা রাত।
নিশাত- হুম। নীল আকাশে সাদা মেঘের ছুটোছুটি, মেঘের সাথে চাঁদের লুকোচুরি, তারাদের ঝিকিমিকি আর জোনাকির রঙিন আলো। দেখতে বেশ ভালোই লাগছে।
রূপন্তী- হুম
নিশাত- তা এবার বলেন চিটাগাং কেন এলেন?
রূপন্তী- একটা ইন্টারভিউ ছিলো এজন্যই এসছিলাম। আপনি কেন এসছেন?
নিশাত- ইন্টারভিউ কেমন হলো?
রূপন্তী- ভালো হয়েছে বাকিটা আল্লাহর হাতে।
নিশাত- হুম তা ঠিক।
রূপন্তী- এই যে মিস্টার বললেন ত চিটাগাং কেন এলেন?
নিশাত- ও হ্যাঁ চিটাগাং এসছি মূলত ফটোগ্রাফির জন্য। অনেকদিনের ইচ্ছা সবুজে ঘেরা চিটাগাংকে ক্যামেরাবন্দি করার। তাই সুযোগ পেয়েই চলে এলাম।
রূপন্তী- আপনি কিন্তু খুব ভালো ছবি তুলেন।
রাত গভীর হতে থাকে। ট্রেন ছুটে চলে দূরন্তগতীতে। ট্রেনের চাকার ঝিকঝিক শব্দ করে এগিয়ে চলেছে। মাঠ পেরিয়ে, নদী পেরিয়ে ছুটে চলে সিল্কসিটির উদ্দেশ্যে। চলতে থাকে রূপন্তী নিশাতের কথোপকথন।
তখন প্রায় সকাল ৮টা। ট্রেন এসে পৌঁছায় রাজশাহী স্টেশনে। ঘুম ভাঙা চোখে রূপন্তী আর নিশাত ট্রেন থেকে নামে। স্টেশনে রূপন্তীর ভাই অপেক্ষা করছে। একে অপর থেকে বিদায় নিয়ে যে যার যার মতো চলে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে।
চলতে চলতেই হঠাৎ দুজনেরই মনে পড়ে এতো কথার মাঝেও যে কে কোথায় থাকে আর মোবাইল নাম্বার বা নীল সাদা জগতের ঠিকানা কোনটাই জানা হয়নি। রিকশা ততক্ষনে অনেকটা পথ পার করে চলে এসেছে। দুজনের পথ চলে গিয়েছে দুদিকে।
তারপরও রুপন্তী অনেক খোঁজ করে ফটোগ্রাফার নিশাতের কিন্তু কোনো খোজ মিলে না।
অন্যদিকে নিশাতও অনেক খুজে রূপন্তীকে কিন্তু তাদের গন্তব্য যে আলাদা হয়ে গেছে।
সেদিনের মতো আজও ট্রেন আসতে দেরি হবে প্রায় ৪ঘন্টা। আজও স্টেশনের ঠিক সে জায়গাতেই বসে আছে নিশাত।কাঠগোলাপ গাছটার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিলো!
হুম নিশাত ভাবছিলো প্রায় ৫ বছর আগের কথা……
হঠাৎ কানে এলো ” আংকেল আংকেল! শুনো না আংকেল”
নিশাতের হুশ ফিরলো। স্টেশনে বসে ছিলো, একটা ছোট্ট পিচ্চি মেয়ে এসে বলছে আংকেল ফুলটা পেড়ে দাও না। পিচ্চি মেয়েটা সেই কাঠগোলাপ ফুল চাইছে।
নিশাত পুরোনো স্মৃতি তে চলে গেছিলো; পিচ্চি মেয়েটির আঙুল ধরে কাঠগোলাপ গাছের নীচে গেলো নিশাত।
হঠাৎ পিছন থেকে একটা নারী ছুটতে ছুটতে আসছে আর বলছে- ইশারা কি করছো ওখানে তুমি? ইশারা এদিকে এসো তাড়াতাড়ি। কাছে আসতেই নারীটির চোখে চোখ পড়ল নিশাতের।
আরেহ এ যে রূপন্তী। নিশাত খুব অবাক হয় রূপন্তীকে দেখে। রুপন্তীও এতো বছর পর নিশাতকে দেখে অবাক। দুজনই যেন ঘোরের ভেতর ডুবে যায়।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইশারা রুপন্তিকে বললো আম্মু আংকেলটা আমাকে ফুল পেড়ে দিয়েছে দেখ কি সুন্দর!
নিশাত সবটা বুঝতে পারলো। ইশারা রূপন্তীর মেয়ে। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই। রূপন্তী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইশারার হাত ধরে এগিয়ে যায় সেই তিন নাম্বার প্লাটফর্ম এর দিকে। কি যেন ভেবে রূপন্তী একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে আবার হাঁটতে থাকে। নিশাত সেই আগের মতোই একগাল হাসি দিয়ে বসে পড়ে পাঁচ বছরে আগের সেই স্মৃতি জড়ানো বেঞ্চিতে।
“স্টেশনটাও সেই আগের মতো আছে। গাছটাতে আজও ফুটে আছে কাঠগোলাপ। নিশাতের মুখে আজও হাসি আছে, নেই শুধু হাসির সেই প্রাণচাঞ্চল্য আছে এক রাশ হতাশা আর পাহাড়সম দুঃখ।”
অস্থির…. ????????…best of one story???????? bunuu..best of luck.. I hope u will gift us to the same short of story next time…
গল্পটা খুব ভালো ছিলো।
স্টেশনেই শুরু স্টেশনেই শেষ। এর মাঝে হারিয়ে খোঁজা কিছু সময় ও দুজন মানুষের গল্প।
খুব ভালো লেগেছে। লেখিকা কে ধন্য এতো ভালো একটা গল্প উপহার দেওয়ার জন্য।
Cele ta ki tar por single e thaklo ?
Onk sundor hoiche lekha ta….