লেখক :Rana Ahmed
(মে- ২০১৮)
……………
মা রোজ রোজ আলুভর্তা শাকভাজি খেতে যে ভালো লাগে না। কতদিন যে রুই মাছের ঝোল খায় নি, বড্ড খেতে ইচ্ছা করে। বাবা, আমার কি ইচ্ছা করে তোকে রোজ রোজ একই খাবার খেতে দিতে কিন্তু কি করিব বল ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ এ অবস্থা। সেদিন যদি সড়ক দূর্ঘটনায় তোর বাবা পা দুটো না হারাতো তাহলে তুই সবার মতো হেসে খেলে বড় হতে পারতি, বলে কান্নায় ভাঙ্গে পড়ল মা। তবে সে কান্না যেন আমার কাছে অগোচরে থেকে যায় তাইতো কাপড়ের আচল দিয়ে মুখটা ঢেকে নিলো।
মা তুমি কান্না করছো? কই বাবা না তো, কি যেন চোখে পড়েছে বলে সেখান থেকে প্রস্থান করল । কেন জানি নিজের উপর নিজের বড্ড রাগ হচ্ছে কেননা আমি যদি রুই মাছের কথা না বলতাম তাহলে মা এত কস্ট পেত না।
আমি রানা। সবে মাত্র ফাইভে পড়ি। আমার পরিবারে আব্বু, আম্মু এবং আমি। আব্বা সড়ক দূর্ঘটনায় পা দুটো হারিয়ে পঙ্গুত্বের অভিশাপ ধারন করছে আর মা এই পরিবারটাকে টেনে তুলবার আপ্রান চেস্টা করছে। আমিও পড়াশুনার ফাকে মাকে তার কাজে সাহায্য করে থাকি। স্কুল বন্ধ থাকলে রহিম চাচার জমিতে কাজ করি। মা ও আমার ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে পাশের বাড়ি কাজ করে যেটা আমার কাছে ভালো লাগে না। অনেকবার মা কে বলেছি, মা তুমি পাশের বাড়ি কাজ করো এটা আমার ভালো লাগে না তার থেকে বরং লেখাপড়া ছেড়ে আমি কাজ করি। ততবারই মা ধমক দিয়ে বলেছে, অমন অলক্ষুণে কথা মুখে তুলতে নাই বাবা। তুই লেখাপড়া করবি, বড় হবি তবেইতো আমার কষ্ট ঘুচবে। হ্যাঁ আমি লেখাপড়া করব, অনেক বড় হবো। ততক্ষণে দুফোটা অশ্রু মায়ের গাল বেয়ে ঝরে পরছে এবং শক্ত করে জরিয়ে ধরে একখানা আদরের পরশমনি একে দিয়েছে।
স্কুল ছুটি পরশু ফরম ফিলাপ। ফরমফিলাপে একশত পঞ্চাশ টাকা লাগবে। তো বাসায় গিয়া মাকে বলতে হবে।
মা, মা,
তোর মা বাসায় নাই বাবা (আব্বু)
গেছে কই আব্বু ।
পাশের বাসায় হয়তো।
দৌঁড়ে পাশের বাসায় গেলাম। কিন্তু গিয়ে যা শুনলাম পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
আফা যদি কিছু মনে না করতেন একটা কথা বলতাম। (মা)
জি বলেন, (পাশের বাসার আন্ট)
মাসের তো অনেক দেরি তবুও যদি একশত টাকা দিতেন বেশ উপকৃত হতাম।
আচ্ছা নিয়েন কিন্তু কি করবেন?
ছেলেটা অনেক দিন ধরে রুই মাছ খেতে চায় কিন্তু আপনি তো বাসার অবস্থা জানেন আফা।
আচ্ছা আমাদের বাসায় রুই মাছ আছে ওকে নিয়ে রান্না করে দেন।
ততক্ষণে মায়ের মুখে হাসির আভা ফুটে উঠল।
কথাগুলো শুনে কখন যে কেঁদে দিয়েছি টের পাইনি কিন্তু আমাকে যে কাঁদলে চলবে না কেননা মায়ের মুখ থেকে শুনেছি ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেই। মা কে ফরম ফিলাপের কথা বললাম না।
পরবর্তী দিন স্কুলে না গিয়ে রহিম চাচার জমিতে ধান কাটলাম। যার বিনিময় সে আমাকে দুইশত টাকা দিল। একশত পঞ্চাশ টাকা দিয়া ফরম ফিলাপ করলাম এবং পঞ্চাশ টাকা দিয়া রুই মাছ কিনলাম যা তৃপ্তি সহকারে পরিবার নিয়া খেলাম।
আজকে ফাইভের রেজাল্ট দিবে।
ও রানার মা, কই তুমি তোমার ছেলে গোল্ডেন এ প্লাস পাইছে। (রহিম চাচা)
সেটা আবার কি? (মা)
মানে ফাস্ট হইছে তোমার ছেলে।
আমি জানতাম আমার বাপজান ফাস্ট হবে। অতঃপর মায়ের মুখে ফুটে উঠল বিজয়ের হাসি।
আজকে আমি কলেজে পড়ি। এইটে এবং টেনে গোল্ডেন এ প্লাস পাইছি। বর্তমানে টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ এবং পরিবারের খরচ চালাই। এখন আর মাকে পাশের বাসায় কাজ করিতে দেই না এবং আব্বাকে একটা হুইল চেয়ার কিনে দিয়েছি।
হয়তোবা এ “জীবনযুদ্ধের ” কথা পত্রিকায় ছাপা হবে না ঠিকই কিন্তু আমার স্মৃতির পাতায় ঠিকই অমরত্ব লাভ করবে।
০ Comments