হিমু ও মায়া
-সজল আহমেদ জয়
অনেকক্ষণ ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি । ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে । এর আগেও আকাশ দেখেছি কিন্তু আজকের আকাশটা অন্য দিনের চেয়ে আলাদা । কালো মেঘ গুরি গুরি বৃষ্টি সাথে হলকা বাতাসে মেঘের খেলা । তাই তো আকাশটার সৌন্দর্যের গভীরতা বুঝার জন্য তাকিয়ে আছি ।
আজকে রুপার কথা মনে পরছে কারণ রুপার ইচ্ছে ছিলো নীল শাড়ি পড়ে ঝুম বৃষ্টিতে আমার পাশে দাঁড়িয়ে হাত ধরে আকাশটা দেখবে । কিন্তু কখনো বলেনি আমাকে ওর ইচ্ছেটা । কারণ রুপা জানতো আমি কখনই ওর ইচ্ছেটাকে পূরণ করবো না । কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম যখন ওর মায়া টানা চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম । বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকি কারণ আমার জন্য ওর অনেক মায়া ছিল । মায়া জিনিসটা অন্য মানুষের জন্য হিমুদের জন্য নয় । বাবা আমাকে মহামানব বানানোর জন্য মায়া ত্যাগের শিক্ষা দিয়েছিলেন প্রথমে। হয়তো তিনি জানতেন মায়া নামক বস্তুটি থাকলে মহামানব হতে পারবো না । জানি না বাবার ইচ্ছের মহামানব হতে পেরেছি কিনা ।
ভাবান্তর ঘটলো গাড়ির হর্নে । মেয়েটি গাড়ির বাইরে মাথা বের করে বলছে লাগলো “এই যে রাস্তার মাঝখানে এইভাবে দাঁড়িয়ে ঊপরে কি দেখছেন ?” পিছনে তাকিয়ে বললাম আমাকে বলছেন ?
সে বলে উঠলো এখানে আর কেউ আছে আপনি বাদে আশে পাশে আর এভাবেই বা আকাশ দেখার কি আছে, আগে দেখেন নি ? আমি মৃদু হাসি হেসে বললাম দেখেছি কিন্তু আজকের আকাশটা অন্য দিনের আকাশের থেকে আলাদা । কথাটা বলতেই রেগে গেল গিয়ে বলল ফালতু কথা এক এক দিন আকাশ অন্যরকম হয় নাকি । রাগি মুখে মেয়ের একটু বেশি সুন্দর লাগে কিন্তু রুপার থেকে বেশি না । আজ পর্যন্ত কাউকে ওর থেকে বেশি সুন্দর দেখিনি ।
হুম বললাম শুধু । তাতেই আরও রেগে গিয়ে বলল দেখবেন ঠিক আছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দেখেন । আমি বললাম রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এই আকাশটা দেখা যাবে না ।
তাতেই রেগে বলল পাগল নাকি । মৃদু হেসে বললাম মিস মিমি ছেলেটার কিছু হবে না । কালকে তার জ্ঞান ফিরে আসবে আর হ্যাঁ আপনার কানের নিচের তিলটা অনেক সুন্দর । মেয়েটি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । হয়তো এইটাই ভাবছে আমি জানলাম কেমনে ছেলেটা হসপিটালে ভর্তি আর নামটাও জানলাম কেমন করে । এইসব প্রশ্ন তার মুখে ভেসে উঠছে । তাকে বিচলিত করতে পেরেছি । মানুষ অল্পেই বিব্রত হয়ে যায় । মানুষের বিব্রত মুখ দেখতে অন্যরকম হয় । আর কিছু না ভেবে হাঁটতে শুরু করলাম । জানি পিছনে মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । কালকে আমাকে খুঁজতে এখানেই আসবে কারণ তার প্রশ্নের উত্তর চায় । সাধারণত মানুষ কিছু জিনিসের জন্য সব করতে পারে তার মধ্যে এটি একটি ।
অনেকদিন হলো ময়ূরাক্ষী নদীটার পারে বসে শীতল পানিতে পা ডুবিয়ে রাখে পাকুড় গাছে বসে থাকা ঘুঘুর বিষন্ন গলার ডাক শুনা হয় না । নদীটা বের করে আনতে পারলে অনেকটা সময় কাটানো যাবে । ময়ূরাক্ষী নিয়ে ভাবতেই শফিক এসে ডাকতে শুরু করলো ।
হিমু ভাই আছো ? তোমার সাথে কে যেন দেখা করতে আসছে । অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে গাড়ি নিয়ে ।
হুম । কে আসছে মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম । জানি না কিন্তু একজন মেয়ে । ও আচ্ছা যা দেখছি আমি বলে বিছানা থেকে উঠে পরলাম আমার বুঝতে বাকি নেই যে মিমি আসছে আমার খোঁজ করতে করতে এখানে । রুম থেকে বের হয়ে গাড়ির দিকে যেতেই লক্ষ্য করলাম সে নীল রঙের শাড়ি পড়ে চোখে কাজল আর কপালে একটা নীল টিপ দিয়ে সেজেছে । গাড়ির কাছে যেতেই বলে উঠলো সে । আজ সাতদিন ধরে আপনাকে খুঁজছি । মৃদু হেসে বললাম জানতাম আপনি খুঁজবেন । জানতেনই যখন দেখা করলেন না কেন ? কিছু বলার আগেই সে বলে উঠলো উঠে পড়ুন গাড়িতে আপনার সাথে কিছু কথা ছিল । কিছু না বলে উঠে পরলাম । গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার চালাতে শুরু করল । আমি বলে উঠলাম ছেলেটা ঠিক হয়েছে না ?
মিমি মাথা নেড়ে বলল আপনি কেমন করে জানলেন ছেলেটির কথা আর জানলেই বা কেমন করে আমার সম্পর্কে ? আমি বললাম তাকে বলতে পারেন ধারণা । সে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল ধারণা থেকে এতো নিখুঁত ভাবে মিলে যায় ? আপনার কি কোন অদ্ভুত ক্ষমতা আছে যে কাউকে দেখে বলে দিতে পারেন তার সম্পর্কে ? মৃদু হেসে ড্রাইভারকে বললাম গাড়িটা থামাতে । গাড়ির দরজা খুলে নেমে পড়লাম । মিমি বলে উঠলো আমাদের কি আবার দেখা হবে ? মৃদু হেসে তাকে বললাম ছেলেটাকে বিয়ে করে নিন ভালো থাকবেন আপনারা । আপনাকে অনেক ভালোবাসে বলেই হাঁটতে শুরু করলাম । জানি মেয়েটা মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে আছে কিন্তু আমাকে এইসব মায়ায় জাড়ানো যাবে না করণ
হিমুরা অন্যদের মায়ায় জড়ায় , নিজেরা মায়ায় জড়ায় না ।
হাঁটতে হাঁটতে ভাবছি আজকে আসাদ ভাইয়ের অফিসে যাব । সেখানে গেলে ফ্রিতে চা পাওয়া যাবে সাথে রুপাকে ফোন করতে পারবো অনেক দিন হলো ফোন দেওয়া হয় না জানি আজকে ওর বাবা ধরবে আর রুপা পাশেই থাকবে দাঁড়িয়ে । ভাবতে ভাবতে হাঁটতেছি । আজকে অন্ধকারটা অন্যরকম । খারাপ লাগছে না হাঁটতে অন্ধকারে।
০ Comments