#লেখাঃনওমিতা_সুপ্তি
–মা! তুমি কাঁদছো?
–কে? কে কথা বলছে?
–মা,,, আমি! আমাকে চিনতে পারছোনা?
–প্রান্তর? বাবা তুই? এতদিন কোথায় ছিলি? মায়ের কথা মনে পড়ল? কত রাত আমি একা একা কাঁটিয়েছি। তোকে কোথায় কোথায় খুঁজেছি। কোথায় ছিলি বাবা?
–মা আমি তো তোমার পাশেই ছিলাম এতদিন। বলেছিনা মা আমি তোমার পাশে ছায়ার মত থাকব। তারপরও কেন তুমি কাঁদো বলো তো?
–বাবা আমি আর কাঁদবনা। এই দেখ আমি চোখের পানি মুছে ফেললাম। তুই আমাকে ছেড়ে আর যাবি নাতো?
—না মা আমি যাবোনা। মা জানো অনেকদিন তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমায়না। আমাকে তোমার বুকে মাথা রাখতে দিবে? আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারাবে?
–হ্যাঁ রে বাবা আয় বুকে আয়।তোকে কতদিন আমি বুকে নিয়ে ঘুম পাড়ায়না।
“ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি,
মোদের বাড়ি এসো।
আমার খোকার চোখে ঘুম নেই।
ঘুম হয়ে খোকার চোখে বসো”!
লা,,,লা,,লা,,,,,হুম হুম হুম।
–এত সুন্দর সুরে কে গায়ছে স্যার?
–চলো তো দেখি।
—স্যার! দেখুন। ওইতো সকালে যাকে ঘুম পাড়ানো যাচ্ছিল না।সেই ভদ্র মহিলা গান গায়তাছে। আহা! কি সুর,,,!
–হুম। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। মা আমাকে এভাবে ঘুম পাড়াতো।
–এরকম একটি অল্প বয়সী মেয়ে কিভাবে মানষিক অসুস্থ হলো? কি সুন্দর করে গান গায়তে পারে। স্যার আপনি কি জানেন কেন মেয়েটি অসুস্থ?
–নাহ্। রোগী আজ সকালেই নতুন এসেছে। আচ্ছা, তুমি গিয়ে উনাকে ঘুমের মেডিসিন টা খাইয়ে দিয়ে আসো।উনার ঘুমের প্রয়োজন।
–আচ্ছা স্যার।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
সেবিকা নায়মা গেট খুলে অবনীর রুমে গেল।
অবনী নায়মাকে দেখে কোলের পুতুলটাকে জরিয়ে ধরে পিছনে চলে গেল।
–নায়মা বলল ভয় পেওনা।আমি তোমাকে কিছু করবনা।এসো এখানে।
–নাহ্। আমার কাছে আসবেন না।আমার ছেলেকে আমি কাউকে ছুতে দিবোনা। চলে যাও এখান থেকে।
–আমি তোমার ছেলেকে নিতে আসেনি।দেখো তোমার বিছানাটা গুছিয়ে দিয়েছি। আসো তুমি শুয়ে পড়।দেখ অনেক রাত হয়েছে তো।তোমার ছেলেটাও ঘুমিয়ে পরেছে।
—অবনী পুতুলটাকে ধরে বলছে, “বাবা তুমি ঘুমিয়ে গেছো? এইতো লক্ষীটি আমার। এই মেয়ে তুমি সরে যাও আমি শুয়ে দিব আমার প্রান্তরকে। সরো সরো। এইতো তুমি এখানে শুয়ে পরো।আমি তোমার পাশেই আছি।ভয় নেই মা আছে তো তোমার সাথে।
—নায়মা চোখের পানি মুছে বলছে অবনী এবার এই ওষুধটা খেয়ে নেও লক্ষী মেয়ের মতো।না হলে যে তুমি ভালো থাকবেনা।
–অবনী বলছে না আমি কোনো ওষুধ খাবোনা। আমি ওষুধ খেলেই ঘুমিয়ে যাব।তখন প্রান্তর জেগে খুব ভয় পাবে। তুমি যাও।আমি রাত জেগে আমার বাবাকে পাহারা দিব।
–নায়মা বলছে এ ওষুধ না খেলে তুমি ঘুমায়বেনা।আসলে এটা খেলে তোমার মাথাব্যথা কমে যাবে।তোমার না মাথাব্যথা করে? সকালে না বললে।ভুলে গেছো?
–অবনী বলল হ্যাঁ আমার অনেক মাথাব্যথা করে।মনে হয় কে যেন মাথায় বারি দিচ্ছে হাতুরি দিয়ে। খুব যন্ত্রণা করে। তুমি কি করে জানলে? এই ওষুধ খেলে কি মাথাব্যথা কমে যাবে?
–হুম কমে যাবে।নেও খেয়ে নেও। এইতো ভালো মেয়ে তুমি শুয়ে পরো।আমি তোমার ছেলেকে পাহারা দিব।
–অবনী বলল ঠিকআছে। তুমি ওকে ফিটারটা খাইয়ে দিও।ও কিনতু খুব দুষ্টু। খেতে চাইবেনা। জোর করে খাওয়াবে।
—আচ্ছা তুমি ভেবোনা। আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই।তুমি ঘুমাও।
নায়মা হাত বুলিয়ে অবনীকে ঘুম পাড়িয়ে দিল।তারপর লাইট অফ করে।গেট লাগিয়ে বাকিদের দেখতে গেল।
এটা মানষিক হাসপাতাল। এখানে হাজার হাজার মানষিক রোগী আছে। একেকজন একেক রোগের স্বিকার। নায়মা এখানে ত্রিশবছর যাবৎ সেবিকার কাজ করছে।
নায়মা সবাইকে ঘুম পাড়িয়ে স্যারের কাছে গেল।
–স্যার আসবো?
—হুম। আসেন।রোগীদের ঘুমের ওষুধ দিয়েছেন?
—জ্বি স্যার। একেবারে ঘুম পারিয়ে তারপর এসেছি।স্যার আপনি এবার ঘুমিয়ে পরেন।আমি তো আছি। কারও কোনো সমস্যা হলে আমি আপনাকে ডাকবো।
—কে চিল্লাচ্ছে? এমন করে? চলেন তো।
–নায়মা আর ডা: জাবেদ অবনীর রুমে গেল।গিয়ে দেখে অবনী ভয়ে জোরে জোরে কাঁদছে আর বলছে, ” প্লিজ ওকে ছেড়ে দেও।আমার প্রান্তরকে ছেড়ে দেও।ওকে এভাবে মেরোনা। ছেড়ে দেও।”
নায়মা আলো জ্বালিয়ে অবনীকে জরিয়ে বলছে কি হয়েছে তোমার? আমি তো আছি আমার দিকে তাকাও। জাবেদ বলছে কি হয়েছে আপনার? ভয় পাচ্ছেন কেন? নায়মা আপা তারাতারি ইনজেকসনটা রেডি করেন।
—জ্বী স্যার। তারপর ইনজেকসন এনে অবনীর হাতে পোষ করল। অবনী আস্তে আস্তে বলছে ছেড়ে দেও ওকে। তারপর ঘুমিয়ে গেল। নায়মা মাথার চুলগুলো সরিয়ে মুখ মুছে অবনীকে শুয়ে দিল।
–জাবেদ নায়মাকে বলল আজ আপনি রোগীর কাছেই থাকুন।তারপর
নিজের রুমে চলে আসল। রাতভর হাঁটাহাঁটি করছে। অবনীর কথা ভাবছে।
সকালে অবনীর বাড়িতে ফোন দিয়ে অবনীর বড়দাকে আসতে বলল ডা: জাবেদ।
অবনী ঘুম থেকে জেগে পুতুলটাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে। নায়মা অবনীকে নাস্তা করিয়ে মাথা বেঁধে বাইরে নিয়ে এসেছে।
অবনী ফুলের বাগানে হাঁটছে আর পুতুলটাকে প্রান্তর ভেবে ফুল, আকাশ সব চিনাইতাছে।
এখানে বাকি মানষিক রোগীরা কেউ গান গাচ্ছে, কেউ চিঠি লিখছে, কেউ বাদাম খাচ্ছে, কেউবা কাঁদছে। যারা বেশি মানষিক রোগী তাদের রুমেই রেখেছে।
অবনীর বড়দা অবনীকে এভাবে দেখে কাঁদছে। ডাঃ জাবেদ বলছে আপনাকে এখানে অবনীর ব্যাপারে জানার জন্য ডেকেছি। কি হয়েছিল ওর সাথে? আসলে সবটা জানলে হয়ত অবনীকে সেভাবেই ওর ট্রিটমেন্ট শুরু করা যেত।
অবনীর বড়দা বলল আমি সব বলব।
দুইবছর আগের কথা,,,,
অবনী কলেজ পড়াকালীন সময়ে একটা ছেলের সাথে সমপর্কে জরিয়ে যায়। ব্যাপারটা আমার স্ত্রী কে অবনী জানায়।কিনতু ছেলেটার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলনা। তাই মা,বাবা মেনে নেয়নি। আমরা অবনীকে নিয়ে ঢাকা চলে যায়।সেখানে অবনীর চালচলনে আমাদের মনে হয়েছে অবনী সব ভুলে গিয়েছে।ও পড়াশুনা শুরু করে তারপর ইন্টারে ভালো রেজাল্ট করে।একসময় অবনী বিবিএ কমপ্লিট করে। হঠাৎ ও বাড়িতে কিছু না বলে সেই ছেলেটির সাথে পালিয়ে যায়। কত জায়গায় ওর খোঁজ করেছি। পরে জানতে পারি অবনী জয়কে বিয়ে করেছে।অবনী একটা স্কুলে জব করে। জয় বাইরে গান করতো। কখনো আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি অবনী।আমরা অনেকবার ওর সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছি।কিনতু ও কখনোই রাখেনি। একবছর পর জানতে পারি অবনীর ছেলে হয়েছে। নাম নাকি প্রান্তর রেখেছে। আমিও প্রান্তর কে দেখতে গিয়েছিলাম।কিনতু সেখানে গিয়ে আমি জানতে পারলাম জয় অবনীর সাথে থাকেনা। অবনীকে নিয়ে আসতে চাইলাম।কিনতু ও আসতে চাইলোনা। ও অনেক চাপা ছিল।কখনো কোনো সমস্যা আমাদের জানাইনি। বলেনি হয়ত এই ভেবে পালিয়ে বিয়ে করেছে তাই বাবা,মা ওকে কথা শুনাবে তা ভেবে।এভাবে কিছুদিন কেটে গেল।অবনী যে বাসায় থাকতো সেখানে আর থাকেনা।কতবার ওকে দেখতে গিয়ে ফেরত এসেছি।ওর খোঁজ পেলামনা আর।প্রায় দেড় বছর পর জানতে পারলাম অবনী নেই। আমরা ছুটে গেলাম। কিনতু গিয়ে শুনি পাশের বাসার লোক বলছে প্রতি রাতেই নাকি অবনী আর জয়ের মধ্যে ঝগড়া হত।প্রতিদিনই অবনীকে জয় মারধর করতো। জয় নেশাখোর ছিল।নেশার টাকা না দিলেই অবনীকে মারতো। কিনতু গতকাল রাতে মারামারি হয়।একপর্যায় ছোট শিশু বাবাকে বাঁধা দেয়।ফলে জয় প্রান্তর কে কোলে তুলে দুইতলার উপর বারান্দা থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়।সেই থেকে আমার বোন অবনী পাগল হয়ে যায়। বড়দা কেঁদে দিল।তার সাথে ডাঃ জাবেদও।
—তারপর জাবেদ বলল আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি অবনীকে বিয়ে করব। আমার বিশ্বাস অবনী আবার আগের মত হাসবে।
আমার একটি ছেলে আছে মা মরা। আমার স্ত্রী একবছর যাবৎ মারা গেছে।আমার মা মরা ছেলেটির মা দরকার।আর অবনীর হারিয়ে যাওয়া প্রান্তর।
—অবনীর দাদা বলল আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিব জানিনা।তবে আমি চাই আমার বোনটা আগের মত হয়ে যাক।আবার আমাদের কাছে ফিরে আসুক।
— তারপর জাবেদ অবনীর সিথিতে সিঁদুর পরিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে জাবেদের ছেলেকে প্রান্তর ভেবে কাছে টেনে নেয়।আর শ্রাবণ ও তার মা পেয়ে অনেক খুশি।
প্রায় দুই বছর পর—-
টিংটিং,,,, কলিংবেল বেজে উঠল।
–কে এসেছে দরজাটা কেও খুলো তো।খুলছি।
—অারে জাবেদ? কেমন আছো?
— জ্বি বড়দা ভালো। আপনারা কেমন আছেন?
—কুশলাদি পরে হবে আসো ভিতরে।কই গো সবাই দেখ কে এসেছে।আমাদের বাড়ির জামাই এসেছে।
–বাড়ির সবাই জাবেদকে দেখে অনেক খুশি।সবাই অবনীর কথা জিগেস করল।
–জাবেদ বলল আপনাদের জন্য সারপ্রাইজ আছে। আমি আসছি। তারপর শ্রাবণ কে কোলে নিয়ে আর অবনীর হাত ধরে ভিতরে আসল।
—অবনীকে দেখে বাড়ির সবাই খুশিতে পাগল পাগল।মা,বাবা, বড়দা সবাই অবনীকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিল।
—অবনী মুখ ফুলিয়ে বলছে বড়দা তুই কাঁদছিস? কাঁদলে তোকে একদমই বাচ্চা মনে হয়।বৌদি দাকে বলোনা এভাবে কাঁদতেনা।
তারপর অবনীর পরিবার অবনীকে বলল কখনো যাবি নাতো আমাদের ছেড়ে বল??
–অবনী বলল যেতে তো হবে। মা আমি বিবাহিত এখন।আমার সংসার আছে।আমার ছেলে প্রান্তর অাছে।সাথে আমার স্বামী আছে। ওদের ছেড়ে কি আমি এখানে থাকতে পারি বলো?
তবে হ্যাঁ আমি রোজ একবার করে আসব বড়দা কে কাঁদাতে।
অবনী তার হারিয়ে যাওয়া প্রান্তর আর জাবেদকে নিয়ে নতুন করে সংসার সাজিয়েছে।খুব সুখে আছে ওরা।
———সমাপ্তি
পূনর্জন্ম
জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...
আমার চোখে পড়া কিছু ভুল তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
কাঁদবনা – কাঁদব না (“না” একটি শব্দ। সুতরাং, আলাদা বসবে)
ঘুম পারাবে – পাড়াবে
আপনি কি – আপনি কী
মেডিসিন টা – মেডিসিনটা (স্পেস হবে না)
জরিয়ে – জড়িয়ে
পরেছে – পড়েছে
শুয়ে পরো – পড়ো
বারি – বারি অর্থ পানি (“আঘাত করছে” দিলে পূর্ণতা পাবে)
হাতুরি – হাতুড়ি
ঠিকআছে – ঠিক আছে। (স্পেস হবে)
ফিটারটা – ফিডারটা
কিনতু – কিন্তু
স্বিকার – স্বীকার
অবনীকে জরিয়ে – জড়িয়ে
আপনাকে কি বলে – কী বলে
ভালো ছিল। বানানের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।
শুভ কামনা রইল।
বানানের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
আর খেয়াল রাখবেন, কাহিনীতে যেন অতিরঞ্জিত কিছু না আসে।
এই কাহিনীটা (শেষাংশ)সিনেমেটিক,বাস্তবে এরকম কম দেখা যায়।
তবে মা-ছেলে, স্বার্থহীন ভালবাসা, মমতার সরল প্রকাশ গল্পকে আকর্ষনীয় করেছে।
শুভকামনা
????????
শুরুটা কষ্টের হলেও গল্পের শেষটুকু ছিল চমৎকার। অবনীর দুর্ভাগ্য ছিল, তাই তার প্রথম সন্তান প্রান্তরকে এমন নির্মমভাবে হারাতে হল। কিন্তু তবুও সৌভাগ্য তার সাথেই ছিল তাই সে পেয়েছে ডা. জাবেদ এর মত একজন ভালো স্বামী এবং সন্তান।
সুন্দর লিখেছেন। কিন্তু বানানে এতো ভুল, এই ভুলগুলো গল্পের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। বানানের প্রতি যত্নশীল হবেন।
কাঁটিয়েছি-কাটিয়েছি।
গায়ছে, ঘুমায়না, ঘুমায়বেনা- গাইছে,ঘুমাইনা, ঘুমাবেনা। ই এবং য় এর মধ্যে অনেক গড়মিল করে ফেলেছেন।
পারাবে- পাড়াবে।
মানষিক- মানসিক।
ছুতে- ছুঁতে।
লক্ষীটি- লক্ষ্মীটি।
ফিটারটা- ফিডারটা।
কিনতু- কিন্তু।
রোগের স্বিকার- রোগের শিকার।
পোষ- পুশ।
সমপর্কে- সম্পর্কে।
ছুড়ে- ছুঁড়ে।
শুভ কাম্না রইল।