আনিস আরমান
আজকাল মামুনদের প্রতি আমার খুব ঘৃণা হয়
কেন এমনটা হয়, তা কোনদিনও জানা হয়নি
মামুনরা ভালোবাসা শেখাতে জানে, ভালোবাসতে জানে না
পুরাতন প্রেমিকার গালি শুনে খিলখিল করে হাসতে জানে,
কাউকে হাসাতে জানে না
গাজা-মদ আর ফেন্সিডিল খেয়ে ঠোঁট কালো করতে জানে
প্রেয়সীর মুখে একটু হাসি ফোটাতে জানে না।
দিব্যি ও পাড়ার চায়ের দোকানে বসে, পায়ের ওপর পা রেখে
চশমাটা নাকে এঁটে, সিগারেটের ধোঁয়ায় কালো করতে জানে পুরো পৃথিবী।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে
অন্ধকারে গিলে খায় আলোময় ধরণী
রাত হয়ে যায়, গভীর রাত, খুব গভীর
চারিদিকে পিনপতন নীরবতা
মামুনরা ঘরে ফেরে না
ঘরে ফিরতে কি ওদের মোটেও ইচ্ছে করে না?
প্রিয়তমার জন্য কি একটুও টান নেই?
কিঞ্চিত ভালোবাসা নেই?
কিসের নেশা ওদেরকে চেপে ধরে?
মুঠো চারেক ভাত, একটি আলুভর্তা, অর্ধেক কাটা পেঁয়াজ
পাতের গোড়ায় দুইটা মরিচ রেখে অপেক্ষায় বসে থাকে নিরপরাধ মাসুদা
পুরাতন দিনের কুপিটি জ্বলে আর নেভে নেভে অবস্থা
প্রিয়তম’র আশায় এভাবেই কাটে মাসুদার প্রতিটি রাত।
ঘুমের তাড়নায় দরজার বাম কপাটে মাথা এলিয়ে দেয় মাসুদা
রাত শেষ হয়ে যায়
ফজরের আজান শুরু হয়
তবুও ঘরে ফেরে না মামুন
পশ্চিমাকাশে সূর্য উঠতে শুরু করেছে
অমনি দেখা মেলে মামুনের
মাতালের মত টাল খেতে খেতে গড়িয়ে পড়ে দক্ষিণের বারান্দায়
ওদিকে ক্ষুধার তাড়নায় মাসুদার জীবন যায় যায়
প্রিয়তমকে ছাড়া একদিনও এক লোকমা ভাত মুখে দেয় না মাসুদা।
মাতাল স্বামীর গোঙানির শব্দে সম্বিত ফিরে পায় মাসুদা
পরনে তার সেই ছেঁড়া একখানা শাড়ি
বিবাহের সময় বাবা যেটা কিনে দিয়েছিল
হাতের চুড়িগুলো ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে মামুন।
তবুও মাসুদা মামুনের ঘর ছেড়ে যায়নি
দিনরাত মারধর খেয়ে, সন্তানের সোনামুখখানি দেখার আশায়
অপেক্ষার প্রহর গোনে মামুনের ভাঙাচোরা ঘরে।
অবশেষে মাসুদার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক সন্তান
নাম রাখলো মুমু
মাসুদার চোখে আনন্দাশ্রু বইতে শুরু করেছে।
খুশি হতে পারিনি নির্লজ্জ, নিষ্ঠুর বেইমান ‘মামুন’
মেয়ে জন্মের কথা শুনে বাড়ি ছেড়ে গিয়েছে সে
আর ফিরে আসেনি মাসুদার কাছে
খোঁজ নেয়নি কলিজার টুকরা মুমুর।
মামুনদের প্রতি তাই আমার ঘৃণা হয়,খুব ঘৃণা হয়।
নির্বাক_পাখি
হে কবি, শক্ত করে ধরো, তোমার অস্ত্র। আবারো, তোমার অস্ত্রের মধ্য দিয়ে, রক্তে রঞ্জিত করে দাও, এই শুভ্র ময়দান। হে কবি, শক্ত করে ধরো, তোমার অস্ত্র। যেভাবে, কবি নজরুল ধরেছিল, ইংরেজদের বিরুদ্ধে। যেভাবে, কবি সুকান্ত চেয়েছিল, ...
সত্যিই মামুনদের মতো পুরুষের জন্য ঘৃণা গয়।
কন্যা সন্তান হওয়াতে মাসুদাকে একা করে চলে গেছে নিখোঁজ হয়ে।
আর ফিরে আসলো না
অনেক সুন্দর লিখেছেন।
শুভ কামনা রইলো।
আপনি বরাবরের মতোই চমৎকার একটি কবিতা লিখে পাঠিকাকে মুগ্ধ করে দিলেন।
বর্তমানে আমাদের সমাজে মামুনদের মতো পুরুষের কোনও অভাব নেই। ভবঘুরে জীবনকে বেছে নিয়ে দায়িত্বশীলতার প্রতি উদাসীনতা দেখানোই এদের কাজ। সংসারের সকল কাজ থেকে পিছিয়ে নিজেকে আলাদা ভুবনে নিয়ে ডুবে থাকে এরা। উপরন্ত কন্যাসন্তান জন্ম হলে এদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
কতো সুন্দরভাবেই না বাস্তবকে কবিতার চরণে উপস্থাপন করলেন।
ফোটা- ফোঁটা।
কাটা- কাঁটা।
খুবই সুন্দর হয়েছে। অজস্র শুভ কামনা আপনাকে।
শুনে-শোনে
মত-মতো
বইতে-বয়তে
বাহ্ চমৎকার লিখেছেন। কবিতার মাঝে বাস্তবতা ফুটে উঠেছে বলা যায়। কন্যা সন্তান হয়েছে বলে সংসার ছেড়ে চলে গিয়েছে, আহারে। আর আমাদের নবীর সময় কন্যা সন্তান জন্ম হলে জিন্দা কবর দেওয়া হতো। আরও অনেককিছু ফুটে উঠেছে কবিতাতে। যেমন স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা, যে স্বামী যেভাবে রাখুন কিংবা মারধোর করুক স্বামীর কাছেই পড়ে থাকে ভালোবেসে। অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।