একজন দুঃখীনি মায়ের স্বপ্ন
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 2,712 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

মোঃ শোয়াইব

গ্রামটির নাম ছায়াপুর। আঁকা বাঁকা পথ। গ্রামের একটু ভিতরে ছোট্ট একটি কুড়ের ঘর। সেই ঘরে থাকতো এক দুঃখিনী মা,আর তার হাজারো স্বপ্নে মোড়ানো ছোট্ট একটি রাজপুএ রাজন। রাজনের বাবা মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে লালন-পালন করছে রাজনকে। দুঃখ যে কি তা রাজন কখনো বুঝেনি। বুঝবেই বা কিভাবে তার চাওয়াটা যাই হতো না কেন, শত কষ্ট হলেও তার মা পূরন করে দিতো। কখনো কিছুর অভাব বুঝতে দেয় নি তার মা। মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে কাজ করে, মাঠে-ঘাটে কাজ করে, এঘর ঐঘর ঘুরে ঘুরে সংসার চালাতেন। তার স্বপ্ন,আশা তার ছেলে পড়ালিখা করে অনেক বড় হবে। অনেক বড় চাকরি করবে। একদিন অনেক টাকা হবে। তার কষ্টের অবসান ঘটবে। রাজনের পড়ালিখা অনেক ভালো ছিল। সে গ্রামের স্কুল থেকে ভালো রেজাল্ট করে। রাজনের মার ভাবনা ছেলেকে বড় করতে হলে বড় কলেজে পড়াতে হবে। তাই সে পাশের বাড়ীর জমিলার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে তার ছেলেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য শহরে পাঠায়। রাজন তার মাকে খুব ভালোবাসতো। রাজন কিছুতেই তার মাকে এবং গ্রামের মায়া ছেড়ে যেতে চায় না। তবুও তাকে যেতে হচ্ছে শহরে তার মার স্বপ্ন পূরনের জন্য। রাজন শহরে পড়াশুনা শুরু করে। কয়েক বছর কেটে গেল, কিন্তু দুঃখিনী মা রাজনের কোন খবর পায় না। সে প্রায় পাগলের মত হয়ে গেল। যাকে দেখে তাকেই রাজনের কথা জিগ্গেস করে, কিন্তু কেউ রাজনের খবর দিতে পারে না। দুঃখিনী মা দিন গুনতে গুনতে বৃদ্ধ হয়ে গেল। তবুও তার আশা তার রাজন ফিরবে, তার স্বপ্ন পূরন করবে। কিন্তু রাজনের কি হলো??? রাজন তো পড়াশুনা করতে শহরে গিয়েছিল!
রাজন যখন কলেজে ভর্তি হয় তখন পরিচয় হয় ইভার সাথে। ইভা অতিজেদি একটি মেয়ে। সে নিজের জন্য সব করতে পারে। ইভার সাথে রাজনের ভাল সম্পর্ক হয়। কিন্তু এই সম্পর্ক যে কাল হয়ে দাড়াবে তা রাজন জানত না। ইভা রাজনের সকল পড়ার খরচ বহন করতো। ইভা মনে মনে রাজনকে ভালোবেসে ফেলে কিন্তু রাজন তা বুঝতে পারে নি। একদিন ইভা রাজনকে বলল তাকে বিয়ে করতে। রাজন স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে সে বিয়ে করবে না, কারন তার মার অনেক স্বপ্ন তাকে নিয়ে। সেই স্বপ্ন পূরন করতে হবেই। সেই স্বপ্ন সে কিছুতেই ভেঙ্গে দিতে পারবে না। তখন ইভা তাকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল, হয় আমাকে বিয়ে করো? না হয় আমার সকল খরচ করা টাকা ফেরত দাও? ইভা আগেই জানতো টাকা ফেরত দেওয়ার মত সামার্থ রাজনের নেই। কিন্তু রাজন নাছর বান্দা সে কিছুতেই তার মার স্বপ্ন ভাঙ্গতে দিবে না। তাই সে ইভাকে টাকা ফেরত দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই টাকা যোগাতে রাজন মরিয়া হয়ে উঠে। যে কোন কাজের বিনিময়ে সে টাকা চায়। সে কিছুতেই কোনো টাকা যোগাতে পারছে না। নিস্তব্ধ হয়ে সন্ধায় ঘরে ফেরার পথে দেখা হয় তার বন্ধু সুজনের সাথে। সুজন তার সব কথা শুনে এবং তাকে একটি কাজের কথা বলে। শুধু একটি ব্যাগ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে হবে। বিনিময়ে ৫০০ টাকা। একজন ব্যাগ দিয়ে যাবে আরেকজন এসে নিয়ে যাবে। রাজন না বুঝেই রাজি হয়ে যায়। পরের দিন থেকে রাজন কাজে লেগে যায়। এভাবে কিছু দিন কেটে গেল। হঠাৎ একদিন এক লোক তার কাছে ব্যাগ দিয়ে দিলো ভোঁ দৌড়। রাজন কিছুই বুঝতে পারল না। সে ব্যাগটা নিয়ে হাটবে ঠিক তখনি তার সামনে হাজির হলো কালো পোশাক পরা এক দল লোক, মাথায় কালো নোমাল বাধা, চোখে কালো সানগ্লাস। একজন তার হাত থেকে ব্যাগটা কেড়ে নিলো, তারপর ব্যাগটা খুললো এবং মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক ইশারা করল। অন্য জন পকেট থেকে কি যেন বের করে, এরপর ঠাস করে এক শব্দ। চারদিক যেন স্তব্ধ, কানে যেন ঝিঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। শরীরটা নড়াতে চাচ্ছে কিন্তু নড়ছে না, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। কিছুক্ষনের মধ্যে মাটিতে পড়ে লুটোপুটি খাচ্ছে রাজন। ঠিক সেই সময় রাজন বলতে থাকলো, পারলাম না মা তোমার স্বপ্ন পূরন করতে। আস্তে আস্তে দুনিয়ার মায়া কাটিয়ে রাজন চলে গেল পরপারে। প্রানশূন্য দেহটি পরে আছে ঘন জঙ্গলের মাঝে। রাজনের মা এখনো বসে চেয়ে আছে পথের দিকে , আসবে আমার রাজন, আমার স্বপ্ন পূরাতে।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

২ Comments

  1. Shahrul Islam sayem

    প্রও কমন কমন লাগছিলো কিন্তু শেষে এসে ধারনা পুরো পাল্টে গেলো। শেষটা সত্যিই দারুন ছিলো

    Reply
  2. Rifat

    বাড়ী — বাড়ি
    পড়ালিখা — পড়ালেখা
    জিগ্গেস — জিজ্ঞেস
    দুখিনী এক মায়ের ছেলের অকালেই হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা অনেক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেক সুন্দর একটা গল্প।

    Reply

Leave a Reply to Shahrul Islam sayem Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *