দাবাড়ু বনলতা সেন
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 1,746 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

লেখক:
মুহাম্মদ সজল ( muhammad sajal)
(এপ্রিল – ২০১৮)
………………

এক তারাজ্বালা রাত্রিতে বেলার সাথে আমার পরিচয়। তখন সম্পূর্ণ অপরিচিত, অপরিজন- দু’জন কেউ কাউতে চিনি না। সময়টা ছিলো মার্চের, বসন্তের উত্তাল সময়। মনে ও মগজে একই সাথে বয়সে। পল্টনের এনএসি টাওয়ারের তিনতলা ভবনে আমি দাঁড়িয়ে আছি। দাবা প্যাকটিস সেরে বারান্দা দিয়ে বের হয়ে নিচে নামতে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো বেলা। আমার হাতে ফোন ছিলো, আমি অপ্রস্তুত কন্ঠে হ্যালো বলে ফোনটা কানে চাপার ভান ধরে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা আমার সামনে দাঁড়িয়ে মৃদুহেসে আমাকেই বলছে;
– ভাইয়া, কিছু বলবেন?
আমি চাপা আনন্দ ঠোঁটে চেপে বললাম,
– জ্বী। আপনি দাবা খেলেন, কখনো দেখিনি।
– এর আগে শুধু একবারই এসেছি, দু’বছর আগে। এবার ১’মাসের প্রশিক্ষণের জন্য এখানেই থাকছি। আব্বু-আম্মুও এসেছে।
এটা বলে এদিক-সেদিক কী মনে করে যেনো তাকালো।
– ওহ! আমি গতমাসে একটা রেপিড টুর্ণামেন্টে খেলেছি, দু’দিন ব্যাপি। সম্ভবত ২০ তারিখের দিকে। প্রথম দিন দেখেছিলাম আপনাকে কিন্তু পরেরদিন দেখিনি।
– আচ্ছা, সেদিন সবাইকে নিয়ে বইমেলায় গিয়েছিলাম।
আমি তীব্র উৎসাহে জিগ্যেস করি,
– কী বই কিনলেন?
– কোনো বই কিনিনি। অনেক মজা করেছি, ঘুরেছি, ছবি তুলেছি।
আমি শাণিত স্বরে, ও চশমাটা নেড়ে বললাম,
– দেখুুন না। হড়বড় করেই যাচ্ছি কতক্ষণ, এখনো আপনার নামই জানি না।
– না ভাইয়া। ইটস ওকে। আমি ‘বেলা’ নাটোরে থাকি।
‘নাটোর’ শুনেই আমার বহুকালে’র সুপ্ত অপরিমেয় স্বপ্ন সফেনে কিঞ্চিৎ ঢেউ খেলে যেতেই মৃদু দুলে উঠলো বনলতা, সুরঞ্জনা’রা।
তারপরে আমাকে বললো,
– আপনি?
এটা বলতে না বলতেই আমাদের চোখে পড়লো ওর আব্বু খেলার রুম থেকে পাশের আরর্বিটারের কক্ষের দিকে যাচ্ছে।
– ও বললো, আচ্ছা আসি।
আমি তখন নিরুত্তর চেয়ে আছি। মনে হচ্ছিলো অপার্থিব আনন্দ আর অলৌকিক সৌন্দর্যের ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে এক মায়াবী জোছনাস্নাত রাত আমার পাশে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে।

তার দু’দিন পর আমি দাবা ফেডারেশনে গেলাম। দেখি বেলা দাবা বোর্ডে গভীর মনোযোগে মগ্ন। অপনেন্ট একটা ছেলে। আরো অন্যান্য অনেকেই খেলছে টেবিলে। কোনদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে উৎসুক কৌতুহলী চোখজোড়া নিয়ে ওদের টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছি। ছেলেটা হঠাৎ আমার দিকে তাকাতেই বলে উঠলো,
– আরে তানিম ভাই যে, বসেন ভাই। আগে তো নিয়মিত খেলতেন, আপনি একবার গ্রান্ডমাস্টার রাকিব ভাইকে রেপিডে হারিয়ে দিয়েছিলেন- সে খেলাটা আমি দেখেছি। আমি কিছুটা বিব্রত হয়েই বললাম, ‘ভাই থামো, কেমন চলছে?’
ছেলেটার নাম মুরাদ। আগে থেকেই কিছুটা চেনা। ও’কে থামানোর আগেই পাশ থেকে বেলা বললো,
– ভাইয়া! সরি সরি, সেদিন হঠাৎ চলে গিয়েছিলাম কথা শেষ না করে, কিছু মনে করবেন না। আব্বু আসাতে..
আপনার নামটাও মুরাদ ভাইয়ার মুখ থেকে শুনতে হলো মাত্র।
আমি অতীন্দ্রিয় অনুভবের উষ্ণ শ্বাস নিয়ে বললাম,
– ও কিছু না। নামটা তো শুনলেন’ই এবার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি। হাতে কিছু ফাঁকা সময় থাকাতে এখানে আসা হচ্ছে। আপনি কবে চলে যাচ্ছেন?
বেলা হঠাৎ মুরাদের সাথে খেলাটা রিজাইন করে, বললো,
– আগামীকাল দুপুরেই আমরা চলে যাচ্ছি। আব্বু টিকিট করে ফেলছে।
শুনে আমি ভিতরে ভিতরে আর্দ্র বেদনার্ত হয়ে উঠলাম। কিন্তু কেনো? খানিক কয়েক’বারের দেখায় কি, কারো স্বর্গীয় আনন্দের উদ্ভাসনে আলোকিত হয় একটা হৃদয়! একটা মুহূর্ত? আমার জানা ছিলোনা। আমি বললাম,
– বেশ তো। দ্রুতই চলে যান, বনলতা’রা না থাকলে নাটোর তাঁর হাজার বছরের ধ্রুপদী সৌন্দর্য হারিয়ে বসবে। হাহা..
বেলা’ও মুচকি হেসে দিলো। মুরাদ’ও ততক্ষণে চলে গিয়েছে। আমরা একটা দাবা বোর্ডের দু’প্রান্তে দুটি মানুষ গল্প করে যাচ্ছি। যেখানে কোন জটিলতা নেই, মন্ত্রিকে ফাঁদে ফেলানোর কৌশলী পরিকল্পনা নেই। রাণীকে বন্দী করে গল্প শেষ করবার কোনো তাড়া নেই। এ গল্প, সে গল্প, যে হাসি মুক্তোর মতো খুঁজবে বালুচরে কেউ একদিন।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *