চশমা
প্রকাশিত: মে ২৯, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 2,447 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

লেখকঃ
সাকি সোহাগ
(মে -২০১৮)
………………

দিনকাল খুব ভালোই যাচ্ছিল আমার। কিন্তু আমাকে ভেবে অন্য কারো দিন হইত খুব বেশি একটা ভালো যায় না। আমার সাত জন ছেলে চার জন মেয়ে। ছেলেগুলোকে বিয়ে করিয়েছি এবং মেয়েগুলোকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে মেয়ের সবারই আবার ছেলে মেয়ে আছে। মানে এক কথাই আমার নাতি নাতনির সংখ্যা একুশ জন। আমার স্ত্রী মারা গেছে আজ থেকে প্রায় ছয় বছর আগে। আমি যে দুরভাগা তার প্রমান এখানেই ।
আমার স্ত্রী আমার আগেই চলে গেছে না ফেরার দেশে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, গত ছ’বছরে আমি অনেক কিছু শিখছি। প্রকৃতি থেকে শিখছি। এই সমাজের শিক্ষিত মানুষ গুলোর থেকে শিখছি। শিখছি আমার নিজের ছেলে ও ছেলের বউদের কাজ থেকে। যেমন আমার স্ত্রীর মৃত্যুর পর আমার আদরশ ছেলে গুলো সবাই বৈঠক বসে বলল –
‘অহন তো আব্বার আর কেউ নাই। তাইলে আব্বা কেমনে খাইবো কি করবো? সুতারাং আমরা সাত ভাই এক সপ্তাহ কইরা আব্বারে খাওয়ামু। কি বলস সবাই?’
সবাই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল । কেউ কেউ আবার মুখেও বলল-
‘হ হেইডায় ভালো হইব ।’

তারপরের জীবন মহা এক ইতিহাস। মানে বড় ছেলের ঘরে এক সপ্তাহ, মেজো ছেলের ঘরে এক সপ্তাহ, ছোট ছেলেদের ঘরে এক সপ্তাহ, এক কথায় কুকুরের মত হয়ে গেলাম । শুধু আকাশ পানে চেয়ে একটা কথায় বললাম তাঁকে –
‘আমি কি অপরাধ করছিলাম? আমাকে কেন রাখলা এই স্বার্থপরের দুনিয়ায়?’
যা হোক আরেকটা বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে-
আমি ভালো করে লক্ষ করলাম । আমি আমার সাতজন ছেলেদের মধ্যে যে কারো ঘরে যখন এক সপ্তাহ খাই, তখন সেই ছেলের বউ আমার সাথে খুব খারাব আচারণ করে। কিন্তু বাকি ছয় ছেলের বউগুলো তখন খুব ভালো ব্যবহার করে। তবে আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে, যার ঘরে খাই তার খারাপ আচারণ করার একটা লিমিট আছে। শুধু ঐ সাত দিনই খারাপ আচারণ করে। আবার যখন অন্য ঘরে চলে যাই, সেই ঘরের ছেলের বউ আবার খারাপ আচারণ করা শুরু করে দেয়। মানে জীবনটা আমার গত ছ’বছরে এতটা তিক্ত হয়ে গেছে যে, এখন আমার ছেলের বউদের খারাপ আচারণে আমার আর কিছুই হয়না। বরং ভালোই লাগে। তার মধ্যে আরেকটা কথা বলি- আমি একটু নরম মানুষ বটে। কারো কথায় কখনো রাগি না। যে কথাটা রেগে গিয়ে বলা দরকার সেটাও আস্তে বলি। আমার সাথে খারাব ব্যবহার করে কেউ মজা পায়না। কারণ আমি রিয়েক্ট করি না। যারা রিয়েক্ট করে না তাদের সাথে রাগারাগি করে বা কোনো খারাব ব্যবহার করে মজা নাই। সুতারাং আমার ছেলের বউরা আমি রিয়েক্ট করি না বিধায় আরো রেগে যায়।
যা হোক এখন খাচ্ছি সবার ছোট ছেলের মাঝে। ছোট ছেলে জাহাজে চাকুরি করে। বাড়ীতে বউমা ও আমার একমাত্র নাতি থাকে। নাতির বয়স সারে তিন বছর। ওর নাম হচ্ছে রিজু। ছোট ছেলের এই একটিই ছেলে। দেখতে অনেক সুন্দর।

আজ অনেক সকালে ঘুম ভাঙ্গছে। ঘুম থেকে উঠে ঘড়িতে দেখি ৬ঃ৩৭ বাজে। ঘরের দরজা খুলেই দেখি আঙ্গিনায় রিজু খেলছে আর বউমা রান্না ঘরে সকালের নাশতা বানানো নিয়ে ব্যস্ত। আমি ফ্রেশ হয়ে ঘরের ব্যালকনিতে গেলাম। সেখানে অবশ্য আমার জন্য একটা চেয়ার রাখা আছে। গিয়ে চেয়ারটায় বসলাম। গ্রিলের ছোট ছোট ফাঁক দিয়ে সকালটাকে দেখছি মন ভরে। কিন্তু খুব বেশি দূর দেখতে পাচ্ছি না। বয়স হয়ে গেছে তো! চোখে ঠিক আগের মত আর ভালো দেখতে পারিনা। কিন্তু চশমাটাও টেবিলে রেখে আসছি। কেমন জানি আনমনা হয়ে বউমা কে ডাক দিলাম-
‘বউমা, বউমা।’
কোনো সারা পেলাম না। তারমানে বউমার মেজাজ ভালো আছে। যদি মেজাজ খারাপথাকতো তাহলে ঠিক বলতো- ‘কি হয়ছে সকাল সকাল চিল্লাইতাছেন কিল্লাইগা?’
যেহেতু বউমার ঠাণ্ডা মেজাজ দেখলাম , সেহেতু প্রশ্ন করা যায় ভেবে বললাম-
‘বউমা আমার ঘর থেকে চশমাটা নিয়ে আসবে একটু!’

ঐ পাশ থেকে কোনো প্রকার সারা শব্দ পেলাম না। তাই আবছা আবছা চোখ দুটো নিয়ে আবার হারিয়ে যাচ্ছিলাম এই মধুমাখ সকালের মাঝে ।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে বউমা হাতে চশমাটা নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির। এবং খুব রাগান্বিত মুখে আমার সামনে চশমাটা রেখে বলল-
‘লন আফনার মরন্নে চশমা।’
‘ধন্যবাদ বউমা ।’
‘আফনার কি একটুও লজ্জা করেনা, এই চশমাডা আবার আমার থোন আইনা লইতে?’
‘না তো বউমা ।’
‘আফনার সাথে কথা কইতেই ইচ্ছে করতাছেনা ।’
‘কইতাছো ক্যা!’
উফ, বলে বউমা জ্বালা শরিরটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো। আমি চশমাটা চোখে পরে সকালটাকে একটু স্পষ্ট করে দেখতেই রিজু চলে আসলো।
‘দাদু কি করতাছো এখানে?’
‘সকাল কে দেখছি।’
‘আমিও দেখবো ।’
‘এসো কোলে এসো। ঐ যে দেখছ সকাল।’
‘কোথায় সকাল।’
‘তুমি যা দেখছ, সেটাই সকাল।’
‘আমি তো কাউকে দেখছি না।’
‘আমি তোমাকে কিভাবে বুঝাই!’
‘দাদু আমি চলে যাবো।’
রিজুকে কোল থেকে নেমে দিলাম। কিন্তু সে গেলো না। দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আবার বললাম –
‘রিজু সকাল দেখবে?’
‘দাদু তুমি পাগল।’
বলেই এক দৌড় দিলো।
আমি নন কমিটাল একটা হাসি দিয়ে আবার সকালকে দেখতে অগ্রসর হইলাম। ভালোই লাগছে সকালকে দেখতে। এক ফালি মিষ্টি রোদ্র এসে গ্রিলে পরছে। গ্রিলের ছোট ছোট ফাঁকের ছায়া এসে পরছে আমার গায়ে। নিজেকে কেমন জানি বন্দী লাগছে। যা হোক এক কাপ চা খাওয়া যায়। এরকম একটা সকালে চা ছাড়া কেমন জানি বেমানান লাগে।
‘বউমা, এক কাপ চা দিয়ে যাবে মামুনি ।’
বলার সাথে সাথে আমার সামনে চা নিয়ে আসলো বউমা। বোধহলো চা নিয়েই আসতেছিল আমার কাছে।
চা দেখেই মন ভরে গেলো। হাতে নিয়ে শুকনো ঠোঁট দুটো আগে ভিজিয়ে নিলাম। তারপর বউমাকে লম্বা একটা ধন্যবাদ জানালাম। কিন্তু বউমার রাগান্বিত চোখ দুটির নজর আমার এই কালো চশমার উপর। ভুলবসত একটা দূর ঘটনা ঘটেই গেছে । তার জন্য এই প্লাটিকের চশমাটার উপর এত রাগ করে কেউ থাকতে হবে ।
‘চা খাইতাছেন না কেন?’
‘খাচ্ছি তো লক্ষী বউমা আমার।’
‘এত মিষ্টি করে কথা কওন লাগবো না। আফনার মিষ্টি কথা গুলোর মধ্যে লুকিয়ে আছে বিষ। বিষ চিনেন?’
‘বিষ চিনি তো।’
‘সেই বিষ ।’

বলেই চলে গেলো। আমার চশমার উপরে রাগ হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে- গত শনিবার এরকম চশমা না নিয়েই ব্যালকনিতে এসে বসে বউমাকে চশমাটা আনতে বলছিলাম টেবিল থেকে। টেবিলে বৈদ্যতিক তার ছিল এলোমিলো করানো। পরে জানতে পারি বউমাই তারগুলো এলোমেলো করে রাখছিল আমাকে বৈদ্যতিক সক দেওয়ার জন্য। যা হোক বউমা টেবিল থেকে চশমাটা আনতেই তার পাতানো ফাদে সেই পরে। মানে বৈদ্যতিক সক খেয়ে চিটপটাং।
তারপর থেকে আমার এই চশমাটার উপরে আমার বউমা ভদ্রমহিলার খুব রাগ। এমন কি আমার উপরেও।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

১ Comment

  1. Parvej Mosharof

    দোষটা তো আপনারই,, সতেরোটা পোলা পয়দা করসেন,,, যদি একটা করতেন তাহলে নিশ্চয় এতো কষ্টো করতে হতোনা।

    Reply

Leave a Reply to Parvej Mosharof Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *