ছেলেটা ভীষণ Careless ছিলো
প্রকাশিত: জানুয়ারী ৭, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 1,614 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05
মোহাম্মদ জুনায়েদ
আজ ২৩ এ নভেম্বর! প্রতিবছর এর মতো এবছরও জুনায়েদ একটা সিগারেট হাতে এক নিস্তব্ধ কবরের ৫-৬ হাত দূরে বসে আছে। ঠিক বসে আছে না একটা গাছকে বাম হাতে বুকে জড়িয়ে হেলান দিয়ে রয়েছে। আর ডান হাতে সিগারেট পুরছে। আজ তাহাজ্জুদ পড়ে আসতে একটু দেরী হয়ে গেছে। সে কখনো রাত ৩টার আগে কবরের কাছে যায় না,যখনই চাঁদটা তার আলো ছড়িয়ে মৃদু হেসে ডাক দেয় তখনই সে বুঝে যায় তার সময় হয়েছে! যাইহোক চোখে হাল্কা হাল্কা জল নিয়ে একটু পুরোনো কথা ভাবতে লাগল সে।
-কিরে জুনায়েদ আজকাল ছেলেদের বকাঝকা করা হয়, দেখে রাখতে হয় প্রেমের জন্য!
আর তোকে কিনা মারপিট এর জন্য?
-স্যার, প্রেম-টেম আজকালকার ছেলেমেয়ের ফ্যাসন হয়ে দাঁড়ালেও এসব প্রেমিকের ক্যারেক্টারে আমায় মানায় না। আমি আমার রাজনীতি আর মারামারি নিয়ে খুব ভালোই আছি।
জুনায়েদের মনে হলো কেউ একজন যেন হেসে উঠল। হ্যাঁ,সে নিশ্চিত হলো এ আর অন্য কেউ নয়। কোচিং এর সবার সপ্নচারিনী। মেয়েটির নাম নিশাত শিমা তন্নী! দেখতে তো অনেক সুন্দরী সাথে একটু লাজুকও।কয়েকদিন ধরে সে খেয়াল করলো মেয়েটি তার দিকে বেশিরভাগ সময় তাকিয়ে থাকে। বেপারটি জুনায়েদ এর মোটেও ভালো লাগে না। তাই সে ক্লাস শেষে ধমকের সাথে উচ্চস্বরে তন্নীর কাছে তাকিয়ে থাকার কারণ জানতে চায়। তন্নী প্রায় কেঁদেই দিয়েছিল তবুও চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। রাতে শুতে যাবার সময় সে বুঝল জুনায়েদ এর হাত ঝারি দেয়াটাতে তার ডান হাতের কব্জিতে একটু ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে। তারপরও হাতটা গালের নিচে রেখে বলল,’ভালোবাসি।’ কেউ হয়ত জানে না ক্লাসের সবার সপ্নচারিণী যে উদ্র মেজাজি ছেলেটা বড্ড ভালোবাসে ফেলেছে। তবে তাকে দেখে জুনায়েদ এর ঘৃনার ভঙ্গির কারণে কখনো সাহস হলো না বলার,”ভালোবাসি তোমাকে বড্ড ভালোবাসি।”
অনেকদিন এভাবেই কেটে গেল। কোনো এক গভীর রাতে জুনায়েদ এর মতো পাথরও কেন যেন তন্নীর কথা ভেবে কেঁদে দিল। তন্নীর কান্না কান্না ভাবের সাথে লাল মুখটা একবার দেখে ছুঁয়ে দেয়ার ইচ্ছা করছে। বুঝতে দেরী হলো না ভালোবাসা হয়ত এমনই হয়। পরদিন কোচিং এ গিয়ে সবার আগে দেখল তন্নী কোথায় আছে, তবে তন্নীকে ক্লাসে দেখা গেল না। কোনোদিন মেয়েদের সাথে কথা না বলা ছেলেটি আজ তন্নীর বান্ধবীর থেকে তন্নী কখন আসবে জানতে চাইল। বান্ধবী বলল,”তুমি তো ওকে ইগ্নোর করতে বসে থাকতে তাই বোধয় ওর ১ সপ্তাহ ধরে না আসাটা তোমার চোখে পড়ে নি!”
আজ কাউকে কোনো রাগিং নেই, তন্নী কিছু বলতে চাইবে তা ইগ্নোর করার সুযোগটুকুও নেই। শুধু  কয়েকফোটা জল গড়ীয়ে পড়ল চোখ দিয়ে। কয়েকদিন পর কোচিং বাইরে তন্নীকে দাঁড়ানো দেখে জুনায়েদ মৃদূ হেঁসে দিল। তবে তন্নী তার ওড়নাকে এভাবে মাথায় পেঁচিয়ে রেখেছে কেন? আচ্ছা এগুলো পড়ে ভাবা যাবে আগে ওর কাছে গিয়ে দাঁড়াই।
-না তুমি আসবে না দয়া করে। পিছিয়ে যাও প্লিজ তোমারর কাছে মিনতি করি!
-আমি বুঝিনি ভালোবাসা কেমন। আজ বুঝছি দয়া করে আমাকে মাফ করে দাও। আমি তোমাকে এতোদিন পাগলের মতো খুঁজেছি! এই ১৩টা রাত আমি জেগে তোমার জন্য কেঁদেছি। আমি আস্তে আস্তে একটা জীবন্ত লাশ এ পরিণত হয়ে গিয়েছি।
-আমি কি তোমাকে বলেছি আমি তোমার উপরে রাগ করে আছি? হ্যাঁ সত্য আমি তোমাকে ভালোবাসি।ভালোবাসলেই কি আর এক হওয়া যায় বলো? আল্লাহ যা চান তাই হয়, নিয়তি কেউ বদলাতে পারে নাহ!
-এ কি তুমি এভাবে কাঁদছো কেন? আমরা কেন এক হতে পারব না? তুমি কি আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না? আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসব বিশ্বাস করো!
-শুধু ভালোবাসলেই হয়? নিয়তি যে সব বদলে দিয়েছে। আমরা যে আর কখনো এক হব না! জানতে চাইবে না আমার মাথায় ওড়না বাধার কারণ কি? আমার কান্সার হয়েছে আর বেশিক্ষণ নেই আমি।
         আমি আজ চুপ হয়ে যাব,
         শরীরে আমার বইছে নীল ঢেউ!
শেষ বারের মতো তোমার কাছে একটু ঝারি, একটু অপমান আর কিছুটা ইগ্নোরের আবদার নিয়ে এসেছি! কি দেবে তো? নাকি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বলবে চিনি না চিনি না!
-কি বলছো তুমি এসব? কি হলো তন্নী তোমার?
-আমি আর বেশিক্ষণ নেই বোধয় বুকটা বেশি ব্যাথা করছে। একটা কাজ করতে পারবে? কালেমা শাহাদাত পরতে পারবে?
-আশ্হাদূ আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারীকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু!
-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ!
-কথা বলো তন্নী, ভিক্ষা চাই প্লিজ কথা বল! বিশ্বাস করো আমি আর কোনোদিন ইগ্নোর করব না। একবার কথা বলো!
ততক্ষণ এ তন্নী জুনায়েদ এর কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে! কথায় আছে না মানুষকে কিছু ঘটনা আকাশ থেকে একেবারে পাকায় ফেলে দেয়। মানুষ সে গল্পগুলো ভুলতে পারলেও আকাশ থেকে পড়ার সময় যে ব্যাথাটা পায় তা কাটিয়ে উঠতে পারে না। জুনায়েদেরও এমনটাই হয়েছে! আজ সে দুটো লাল চোখের অধিকারী!
১৭টা সিগারেট শেষ, চোখে সাদা আভা নিয়ে সে নিজে নিজেই বলতে থাকে!
যে ছিল আমার সপ্নচারিণী তাকেই বুঝতে পারিনি। আচ্ছা এ পথ ঘুরে ও পথে কি তোমার ছদ্মবেশ? তুমি তো এখন অসূর্যস্পর্শী তাই না? আচ্ছা তোমার শেষ শব্দ তো ছিল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তুমি তো হয়ত জান্নাতে তাই না?আচ্ছা আমাকে একটু বলবে জান্নাত কেমন? আচ্ছা একটু তো কথা বলবে নাকি?
তোমার জন্য আত্মাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে,
চোখকে দিয়েছি স্বশ্রম কারাদণ্ড! ২১ টা যখনই শেষ হলো বমি করে দিল সে! অনেকটা অজ্ঞান সে! হাল্কা কান পেতে শুনতে পেল,
  দেড়ি হয়েছে অনেক তুমি কি জানো?
  এখন আর কোনো ফেরার পথ নেই!
  এভাবে আমায় আর ডেকো না,
  চোখ দিয়ে রক্ত ঝরিও না!
  আমি আর ফিরব না কোনোদিন কোনোদিন!
তবুও,শীতের চাদর জড়িয়ে, কুয়াশার মাঝে দাঁড়িয়ে, হাত দুটি দাও বিলিয়ে। শিশিরের শীতল স্পর্শে যদি শিহরিত হয় তোমার মন, তাহলে বুঝে নিও আমি আছি তোমার পাশে সারাক্ষণ!

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

৩ Comments

  1. তাহমিদ রায়হান

    তন্নি নামক মেয়েটি হয়তো এমন সর্বহারা জুনায়েদকে ভালোবাসেনি,
    সে হয়তো ভালোবেসে ছিলো, সবসময় হাসি খুশি থাকা জুনায়েদকে।। তাই জুনায়েদের উচিত জীবন টাকে আগের মতো করা।।
    কাল্পনিক গল্পটার পেছনের দৃঢ় বাস্তবতা রয়েছে, যেখানে হয়তো এখনো তন্নি জুনায়েদের জীবনে রয়েছে, তবে careless জুনায়েদ তার কর্মের মাধ্যমে, বর্তমান বাস্তবতাকে, কাল্পনিক গল্পের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে,তার উদাসীনতা দিয়ে।।
    গল্পটা অনেক সুন্দর ছিলো, একটু ইমোশনাল,।।

    Reply
  2. Mohammed Iftan

    Really well written!
    Love this Story.বিশেষ করে ছেলেটার বসে থাকার বেপারটা সাথে সিগারেট! ????????

    Reply
  3. Md kawsar

    Je vabnata create Korse out a joss.????

    Reply

Leave a Reply to Md kawsar Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *