গল্প লেখকঃ
মায়াবতী টিপান্নিতা
(ফেব্রুয়ারী)
………..
মেয়েটার পছন্দ রবীন্দ্রনাথ আর ছেলেটা ঘোর জীবনানন্দ দাশের ভক্ত। কবিতা বলতে তার কাছে জীবনবাবুর রূপসী বাংলা! আর যেই মেয়েটা রবীবাবু ছাড়া কারো কবিতায় প্রেমের স্পর্শ পেতো না সেই মেয়েই কিনা প্রেমে পড়ে গেলো জীবনানন্দ দাশের কবিতার এক একচ্ছত্র ভক্তের প্রেমে!
শুরুটা ছিলো কবিতার এক পেজে কমেন্টের মাধ্যমে, বনলতা সেনকে নিয়ে কারো এত ভাবাবেগ থাকতে পারে তা মেয়েটা জানতো না। এরপর যেচে এড দেয়া, টুকটাক কথা বলা তারপর আস্তে আস্তে দুই মেরুর দুইজনের ভালো একটা বন্ধুত্ব! মেয়েটার নাম অধরা থাকে সিলেট। আর ছেলেটার নাম দিব্য পড়াশুনা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৩৪৬ মাইলের দুরত্ব ভুলে গিয়ে এক আশ্চর্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে অধরা আর দিব্য। প্রতিদিন চ্যাট,মেসেঞ্জারে কল কিংবা হুটহাট ভিডিও কল এভাবেই চলছিল দুজনের দিন। রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দ নিয়ে প্রায় ই তাদের মাঝে ঝগড়া হত তবুও শেষমেশ মিটমাট হয়ে যেতো।
.
একদিন দিব্য হুট করে জানতে চায় তুমি কী আমার বনলতা হবে অধরা? মুখোমুখি বসিবার একটুকু বনলতা সেন! প্রথমে বুঝতে পারেনি অধরা ম্যাসেজটা, পরে বুঝতে পারে দিব্য তাকে প্রপোজ করছে। অবশ্য জীবনবাবুর ভক্তের কাছে আর কি ই বা চাওয়া যায়! সে তো এভাবেই তার ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করবে এটাই স্বাভাবিক। তবু অধরা সময় নেয়,আর এদিকে কোন রিপ্লাই না পেয়ে দিব্য টেনশনে অস্থির। বারবার মোবাইল হাতে নিয়ে দেখছে ম্যাসেজ টোন বাজলো কিনা! অবশেষে রিপ্লাই পেলো দিব্য,অধরা লিখেছে “জীবনানন্দ কাকে দেখে বনলতা লিখেছেন আমি জানিনা,জানি আমি কোনো বনলতা সেন না তবু আমি চাই তোমার বনলতা হতে,পাশাপাশি বসে হাতটা ছুঁয়ে জীবনের বাকিটা পথ পাড়ি দিতে! ”
সেই থেকে দিব্যের কাছে অধরার নাম হয়ে গেলো বনলতা, মোবাইলের কন্টাক্ট নেম থেকে ম্যাসেঞ্জারে নিক নেম ও বনলতা। মাঝেমাঝেই দিব্য বলতো আমার একটা স্বপ্ন আছে কী জানো?? তুমি হুট করে ঢাকায় এসে বলবা পাগল আমি কমলাপুর, তোমাকে ছাড়া থাকা অসম্ভব। আর আমি রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে ছুটে যাবো। তারপর জড়িয়ে ধরে কি আদর তোমাকে! এরকম হলে জীবনটা একেবারে কবিতার দৃশ্যের মত হয়ে যেতো! জীবনবাবুর কবিতার মত সেই মেয়েটাকে কি করে যে আগলে রাখতাম। সময় বয়ে যায় তাদের অনলাইনে প্রেম চলতে থাকে একজন আরেকজনকে না দেখেই। এদিকে পরীক্ষার জন্য দিব্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক থেকে বাইরে থাকে তাই সাময়িক যোগাযোগ অফ থাকে তাদের। কিন্তু এর মাঝেই হুট করে বাসা থেকে অধরার বিয়ের কথা চলতে থাকে। কি করবে না করবে ভেবে অধরা বাসা থেকে বের হয়ে আসে বিয়ের দিন ই। একটা ছেলেকে কখনো দেখে নি তবুও তার জন্য বিয়ের আসর থেকে চলে আসে কেনো?? একটুকু ভালোবাসার স্পর্শ পেতে!
.
বিয়ের সাজে একটা মেয়ে ট্রেনে বসে আছে আর ক্রমাগত কাঁদছ। সবাই রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে মেয়েটাকে দেখছে! অধরা জানেও না কি করবে না করবে; সে শুধু জানে কমলাপুর স্টেশন গেলেই দিব্যকে পেয়ে যাবে। কিন্তু সে তো মোবাইলও আনে নাই! তার অবস্থা দেখে ট্রেনে থাকা এক পুলিশ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। জিজ্ঞেস করেন কেনো তুমি বাসা থেকে চলে আসলে এভাবে?? অধরা বলে “সম্মান গেলে দু চারদিন মানুষ এটা ওটা বলবে এরপর সব ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু দু’টা মানুষ আলাদা হয়ে গেলে আর এক হয়না!” একথা শুনে তার মন ভরে যায় মেয়েটার ভালোবাসা দেখে তিনি আশ্বাস দেন যে দিব্য না আসা পর্যন্ত তিনি অধরার সাথে থাকবেন। কমলাপুর আসার পর তার মোবাইল থেকেই দিব্যকে ফোন করে অধরা, আসতে বলে তাকে।
দিব্য অবাক বিস্ময়ে এসে দেখে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়া একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে অধরা। আর দিব্য মনে মনে বলে আমাকে দু’দন্ড শান্তি দিয়েছে সিলেটের বনলতা সেন!
গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারে, অদেখা আর ভার্চুয়াল জগতের প্রেম শেষে সামনাসামনি ভালোবাসার একটু স্পর্শ পাওয়া। কিংবা এটাও শেষদৃশ্য হতে পারে যে, দু’জন কাজি অফিসে গিয়ে এই অফলাইনের প্রেমের সমাপ্তি ঘটায়। সাক্ষী হিসেবে থাকেন সেই সাহায্য করা পুলিশটা। অধরা পায় শোভনলালকে আর দিব্য পেয়ে যায় তার বনলতাকে! এভাবেই শুভসমাপ্তি হয় দুজন রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দ প্রেমীর!
০ Comments