গল্প লেখকঃ
Anushka Saha
(ফেব্রুয়ারী’১৮)
…………
বেশকিছুদিন ধরে চোখ বন্ধ করলেই কেমন যেন অস্থির লাগে। মনে হয়, নিজের দোষেই বোধহয় অনেক দামী কিছু হারিয়ে গেছে। সারাক্ষণ কেমন যেন চাপা একটা কষ্ট অনুভূত হয় রুদ্রের।
মাসখানের আগের কথা। রাত ১১টার দিকে প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রীসহ ঢাকাগামী একটা বাস সাংঘাতিক দূর্ঘটনার মুখোমুখি হয়। কাছেরই একটা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সকলকে। নামেই সরকারি। না আছে ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা না আছে পর্যাপ্ত চিকিৎসক। ইতিমধ্যেই বিনা চিকিৎসাই মারা গেছে ২জন। ব্যবস্থাপক আর পরিচালকবৃন্দ কেবল উন্নয়নের নামে টাকা খেয়ে গেছে। উন্নয়নের ‘উ’টাও হয়নি।
সকল যাত্রীদের মধ্যে যে ৩জন মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলো তাদের ২জন মারা গেছে, বাকিজন হলো রুদ্র। যায় যায় অবস্থায় কোনোমতে ঢাকা আনা হয়। পাজরের কবচ ভেদ করে পাজরেরই হাড় হৃদপিন্ডে ঢুকে গেছে। পুনঃস্থাপনেও যথেষ্ঠ ঝুঁকি। হাসপাতালের মজুদে কোনো হৃদপিন্ড ছিলো না। হাল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই কারন, অন্য কোথা থেকে আনিয়ে নেওয়ার মতো সময় হাতে নেই।
দীর্ঘ ১সপ্তাহ পর রুদ্র একটু সুস্থ হলে তাকে কেবিনে দেওয়া হলো। বেশ হাসি হাসি মুখে একটা নার্স এসে ঢুকলো। প্রাণোচ্ছল নার্স ঢুকেই বকবক শুরু করলো,” আপনি অনেক ভাগ্যবান। একদম মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। সবাই ধরেই নিয়েছিলো আপনি আর বাঁচবেন না। হৃদপিন্ড পাওয়া যাচ্ছিলো না তো। হঠাৎ একজন এসে বললো তাদের কে একজন মারা যাওয়ার আগে তার হৃদপিন্ড আপনাকে ডোনেট করে গেছে। কি অদ্ভুত! উনি কি করে জানলেন বলুন তো!”
রুদ্র আচ্ছনের মতো কথাগুলো শুনছিলো। বেশ কৌতুহল নিয়েই বলল,” আচ্ছা, কে ডোনেট করেছে তার নামটা জানেন বা কাগজগুলো একটু দেখতে পারি?”
বোকার মতো বসে আছে রুদ্র কাগজগুলো হাতে নিয়ে। কষ্ট হচ্ছে খুব তবে শারীরিক না। মনটা আনচান করছে। মুচড়ে উঠছে ভেতরটা। কানে খালি বাজছে,”নিজের কলিজাও যদি দিতে হয় দেবো, তবুও তোর কোনে ক্ষতি হতে দেবো না। এই তোকে ছুঁয়ে কথা দিলাম”।
রুদ্র আর অন্বেষা। গলায় গলায় ভাব না হলেও ২বছরের বন্ধুত্বকে বেশ মানতো ওরা। কলেজ শেষ হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখলো। তখনো অন্বেষা রুদ্র ছাড়া আর কারো সাথেই তেমন মিশতো না। নতুন বন্ধু হলো আর রুদ্রের জীবনে অন্বেষার জায়গাটাও বদলে গেলো।
বন্ধুকে ফিরে পাওয়ার মিনতি একসময় রুদ্রের কাছে অতিরিক্ত পাগলামি মনে হতে থাকে। একদিন বলেছিলো অন্বেষাকে,”তোর মানসিকতাও ছোট, মনও নোংরা। কখনো আমার সামনে আসবি না”। সত্যি ও আর সামনে যায়ইনি। সেদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় মেয়েটা।
শেষ কথাটা আজো কানে বাজে,” জীবন থেকে সড়িয়ে দিলেও মন থেকে সড়াতে পারবি না। কথা দিয়েছি পাশে থাকার। মরার পরও থাকবো দেখিস”।
ঐ নোংরা মনটাই জীবনীশক্তি দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে রুদ্রকে। যখন কাছে ছিলো দাম দেয় নি। দামী জিনিসটা হেলায় হারালো। বন্ধু কে।
অন্বেষার মৃত্যুর ৩মাস পূরণ হলো। তবে আজো কেউ জানে না মৃত্যুর এতোদিন পরও অন্বেষা কিভাবে আর কেন নিজের হৃদপিন্ড রুদ্রকে দিয়ে গেছে। যাকে দুর ছাই করেছিলো তাহলে কি সে ই বন্ধুত্বের প্রতিজ্ঞা পূরণ করে গেলো? কে জানে!
® দুষ্টু™
লেখনীতে প্রাঞ্জলতা আছে। চমৎকার ছিলো উপস্থাপনা।শুভ কামনা নিরন্তর প্রিয় লেখিকা।।
বন্ধুত্বের প্রতিজ্ঞা ছড়িকে যাক প্রতিটি বন্ধুত্বে। প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানের যুগে বন্ধুত্বের পরিধি ব্যাপক এবং ব্যাপক হলেও প্রকৃত বন্ধুও কম নয়। আশা্ করি বন্ধু বেঁচে থাকবে বন্ধুর জীবনে।