বকুলের বাস
প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 2,623 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

গল্প লেখকঃ
সুকন্যা সরকার
(মিষ্টি পেত্নী ভুতু)
(এপ্রিল ২০১৮)
……………

জানালার কাঁচের কাছে খুব কাছে মুখটা আস্তে আস্তে বাড়িয়ে দেয় সাঁঝ। বৃষ্টির ফোঁটা গুলো কাঁচের গাঁয়ের বাঁধা ভেদ করে সাঁঝের মুখ মন্ডলীকে ভিজিয়ে দিতে বড়ই উতলা হয়ে আছে যেনো।

সাঁঝ বৃষ্টি দেখছে। দুচোখ বৃষ্টি দেখতে দেখতে একটা সময় ভারী হয়ে উঠে। এমন সময় সন্ধ্যা নামে পৃথিবীর বুকে। অন্ধকার পৃথিবীকে কিংবা পৃথিবী অন্ধকারকে নিজের মধ্যে ধারণ করছে ধীরে ধীরে। ঠিক এমন সময়টায় সাঁঝের দুচোখে দেখা দেয় মেঘের ঘনঘটা। সাঁঝ তার ভারী হয়ে আসা চোখের পাতাকে উপেক্ষা করে আকাশ পানে তাকায়। এই সময় সাঁঝ বেশ মনোযোগ দিয়ে আকাশ দেখে। যেনো সাঁঝ আর অসীম দূরত্বে আকাশটা মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। সাঁঝ দেখলো পুরো আকাশ জুড়ে এখন নিকষ কালো মেঘের রাজত্ব শুরু হয়েছে। তাই আজ অনেক দিন পরে মুগ্ধ হয়ে অন্ধকারের বুকে চোখ বুলাচ্ছে সাঁঝ।এই অন্ধকারকে সাঁঝ ভালোবাসে। এই অন্ধকারের মধ্যবর্ত্তি যে নেশা রয়েছে সাঁঝ তাতে বুদ হয়ে রয়। এই নেশা সাঁঝকে একলা দুর্গম পথ পাড়ি জমাতে সাহায্য করে। সাঁঝের ক্লান্তিময় দুপুরের ক্লান্তি গ্রাস করে নেয় এই নেশা। তাই সাঁঝ থেমে থাকেনা। চলতে থাকে। অবিরত সাঁঝ চলতেই থাকে। অনেকটা পথ যে চলতে হবে সাঁঝের। সাঁঝের কষ্ট নেই কোনো, সাঁঝের কাঁন্না নেই কোনো, তবে মাঝে মাঝে কাল বৈশাখী ঝড় ওঠে সাঁঝের বুকের ভিতরে, একেবারে গহীনে। সেই ভীষণ উদ্দাম ঝড়ের হওয়া ওর মনের মধ্যে বিরাজমান সমস্ত অন্তর আত্মাকে উলটে পাল্টে দিয়ে যায়। সাঁঝ নির্বাক হয়ে থাকে তখনও। এই নির্বাক ভঙ্গি সাঁঝের দুচোখে তখন বর্ষা নামায়। জলে থৈথৈ করা বর্ষার দুপুর নামায় ওই মায়াবী চোখে। কিন্তু সাঁঝ এই ঝড়ের বেগে সামলে উঠতে পারেনা। চিৎকার করে উঠে তখন, শব্দ হীন চিৎকার। হাহাকার করে ছটফট করে উঠে, অদৃশ্যমান যন্ত্রণায় কাতর হয়ে দৃশ্যহীন ছটফটানি ওকে কাবু করে ফেলে। তখন সাঁঝ দুচোখের পাতা এক করে ফেলে। চলে যায় তার মস্তিষ্কের স্মৃতি ভাণ্ডারের কোনো একটা সময়ে……..

সাঁঝ একটা কন্ঠ শুনতে পায়। পরিচিত এক কন্ঠ…..

– আমার মাথায় হাতটা একটু রাখবে প্লিজ।

সাঁঝ মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে হাতটা মাথায় রাখার জন্য উঠালে বকুল সাঁঝের হাতটা স্পর্শ করে। সাঁঝ এত্তটা স্নেহে পরিপূর্ণ স্পর্শ যতবার পেয়েছে ততবার চমকে উঠেছে এর গভীরতায়। বকুল এই চমকে উঠা চেনা। বকুল এই চমকে উঠাটাকে ভালোবাসে। বকুল সাঁঝের হাতটা নিয়ে তার মাথায় রাখে। সাঁঝ বকুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলে, বকুল সাঁঝকে বলতে থাকে ..

– জানো সাঁঝ আজ বসন্তের প্রথম দিন। পহেলা ফাল্গুন। জানো আজ আকাশটা ভীষণ সুন্দর লাগছে। একেবারে অন্য রকম। ভীষণ স্বচ্ছ নীল আকাশের গায়ে তুলোর মতো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। আর সূর্য্যের সোনালি আভা যেনো কেউ লেপ্টে দিয়েছে পুরো আকাশটা জুড়ে।

বকুল থেকে যায়। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার
“সাঁঝ শুনো” বলে সাঁঝকে ডাক দেয়। সাঁঝের গলাটা ভারী হয়ে আসে। সাঁঝ মাথা ঝাঁকালে
বকুল বলতে থাকে আবার
– সাঁঝ তোমার কোলে একটু মাথাটা রাখি?
সাঁঝ আবারও নির্বাক হয়ে শুধু মাথা ঝাঁকায়। বকুল সাঁঝের কোলে মাথা রাখে
– জানো সাঁঝ আমি মরে যাবো এইটা ভেবে আমার কষ্ট হচ্ছে না, কষ্ট হচ্ছে তোমাকে মাকে একা ফেলে এইভাবে চলে যেতে হবে। কষ্ট হচ্ছে আর তোমার কপালের লাল টিপের মায়ায় পড়বো না বলে। তোমাকে লালটিপ পরিয়ে দিবো না এই ভেবে। তোমার খোঁপায় কৃষ্ণ চূড়া আর গুঁজে দিতে পারবো না। কষ্ট হচ্ছে তোমার জীবনের আগামী বসন্ত গুলোতে আর তোমার কাঁধে মাথা রেখে বসন্ত উপভোগ করতে পারবো না ভেবে। সাঁঝ ওর কথা গুলো সহ্য করতে পারলোনা। ওর দুচোখ ওকে স্নান করিয়ে দিলো। বকুলের গাল বেয়েও নেমে পড়লো দু ফোটা জল। স্বচ্ছ নীল আকাশেই সোনালী আভা এসে পড়ছে বকুলের মুখে। আর সেই আলোয় বকুলের চোখের জল ঝিলিক দিয়ে উঠলো। সাঁঝ দেখতে পেলো না কি ভীষণ মায়াবী পবিত্র লাগছে বকুলকে। দুজনেই নির্বাক হয়ে কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর সাঁঝ অনুভব করলো বকুল ঘুমিয়ে পড়েছে। যাকে বলে চিরনিদ্রা। আর সাঁঝ পাগলের মতো চিৎকার করে উঠলো। এর ৫ দিন পরে একই কেবিনে সাঁঝের চোখ খোলা হয়। সাঁঝ চোখ মেলে প্রথমটায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু একটু পরে আবার চোখ মেলে সাঁঝ সোনালী আকাশ দেখতে পায়। প্রথমবার দৃষ্টি ফিরে পেয়ে পুরো পৃথিবীকে সাঁঝের অচেনা লাগলেও এই স্বচ্ছ নীল আকাশটাকে সাঁঝ চিনতে পেরেছিলো……বকুল চিনিয়ে ছিলো যে এই আকাশ। এই আকাশকে বকুল ভীষণ ভালোবাসতো। তাই সাঁঝ দুচোখ ভরে আকাশ দেখে। সাঁঝ আজো বিশ্বাস করে ওর দৃষ্টিতেই বকুলের বাস…..

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

২ Comments

  1. joy roy

    এত ভালা কেরে????

    Reply
  2. দূরবীণে মেঘ কাব্য

    এক কথায় অনবদ্য

    Reply

Leave a Reply to দূরবীণে মেঘ কাব্য Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *