গল্প লেখকঃ
জয় চন্দ্র রায়
(এপ্রিল – ২০১৮)
……………
ভয়টা তখন ই লাগতে শুরু করল, যখন দেখলাম মেয়েটার পায়ের পাতা গুলো উল্টা, মানে তার পায়ের স্যান্ডেল গুলো উল্টো দিক করে আছে আর সে এইভাবেই হাটছে। আমি এটা লক্ষ্য করার পর ভয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম, তারপর মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“আপনার পাগুলো এএ এরকম কেন?”
এই প্রশ্ন শুনার পর মেয়েটার হাসি হাসি মুখটা কিছুটা শক্ত হয়ে গেল, তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“দেখেই যখন ফেলেছিস,তাহলে পুরোটাই দেখ”
এই বলে মেয়েটা একটা পৈশাচিক হাসি দিলো, আর আমি আমার চোখের সামনে মেয়েটার চেহারা পরিবর্তন হয়ে ক্রমশ একটা বিদঘুটে চেহারা হতে লাগল। সব মাংসপিণ্ড আস্তে আস্তে ঝুলে পড়তে লাগল, দাঁতগুলো বেড় হতে লাগল চোখগুলো আরো লাল হচ্ছিল!
বেডরুম এ খাটের উপর বসে টিভিসেট এর চ্যানেলগুলা খালি চেঞ্জ করছিলাম, তখন সনিতে আহাট এর এই সিনটা দেখলাম। বেশ ভয় ও পেলাম, তাই পাশে শুয়ে থাকা আমার সাথে সদ্য বিয়ে হওয়া রিতা নামক মেয়েটাকে ডাকতে লাগলাম কিন্ত আশ্চর্য এর বিষয় এত ঠ্যালানোর পরে ও কিংবা ডাকার পরেও মেয়েটা উঠল না। আমি এবার একটু গরম হয়ে গেলাম, ওকে একটা ধমক দিতে যাব, তখনই একটা প্রকাণ্ড হাসির আওয়াজ পেলাম, আহাট এর অই মেয়েটার হাসির মত। ভাবলাম যে টিভিসেট অন করা, কিন্ত অনেক বিস্ময় নিয়ে দেখলাম যে টিভি অফ! “তাহলে হাসলো কে? এবার আমার বউকে উঠতে দেখলাম বিছানা থেকে, ওর মুখ থেকেই হাসিটা আসছিল, আর ওর চেহারাটা ও আস্তে আস্তে অই মেয়েটার মত বিদঘুটে হতে লাগল! আমি ভয়ে বিকট চিৎকার দিতে যাব, তখনই কেউ বলল,
“বাবা, এবার মেয়ের সিথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দাও”।
আমি বিস্ফোরিত চোখে দেখলাম যে আমি এখন বিয়ের মন্ডপে বসে আছি এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি রিতা নামের মেয়েটিকে বিয়ে করতে চলেছি, ওর মাথায় সিঁদুর পড়িয়ে! তাহলে এসব ঘটনা কি শুধুই কল্পনা ছিল? নাকি আগাম বিপদের আভাস, এসব চিন্তা করতে করতে কখন যে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম, সেটা টের ও পেলাম না”!
জ্ঞান ফিরার পরে আমি নিজেকে কমিউনিটি সেন্টার এর সোফার উপর শোয়া অবস্থায় আবিষ্কার করলাম! তারপর অজ্ঞান হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করতেই আমি সব কিছু বললাম! ভেবেছিলাম সবাই হাসবে কিন্ত কেউ তা না করে আমাকে বরং আরেকটা অবাক করা খবর শুনাল যে আমি অজ্ঞান হওয়ার পর হঠাৎ করে কমিউনিটি সেন্টারের কারেন্ট চলে যায়, কিন্ত যখন আবার সব ঠিক করা হয় তখন দেখা যায় যে বর আছে কিন্ত কনে নেই, মানে কনে অন্য একজন এর সাথে পালিয়েছে!
আমি আরো অবাক হলাম শুনে যে আমাকে এই লজ্জার হাত থেকে বাচাতে আমারই বান্ধুবি প্রিয়তার সাথে এখন বিয়ে হবে। বন্ধু রাকিব নাকি বাবাকে এই বুদ্ধি দিয়েছে!
আমি আর দ্বিমত করি নি কারণ বাবার মুখের উপর তর্ক করার সাহস আমার কোনদিন ই ছিল না!!
বাসর ঘরে প্রবেশের পূর্বে আমার মোবাইল এ শৈবাল এর কল এলো।
-ভাই, অনেক অনেক থ্যাংকস তুই যদি তখন অজ্ঞান হওয়ার এক্টিং না করতি তাইলে জেনারেটর এর লোকটা তোকে দেখতে যাইত না আর আমরাও মেইন সুইচ অফ করতে পারতাম না!”
………(খুবি খারাপ ভাষার গালি)………হ্লা তুই জানিস জ্ঞান ফিরার পর আমারে কতগুলা আজগুবি কাহিনী বানায় বলা লাগসে?
-কি করতাম রে ভাই? অই রাশেদ মিয়া যারে কারেন্ট এর দেখাশুনার জন্য আনছিল সে ত পাওয়ার রুম থেকে কোন মতেই সরতাসিল না, তাই আর কিছু করতেও পারতাসিলাম না।
সরি ভাই!!
-হুম, যাই হোক। তোর কারনেই আজকে আমার লগে প্রিয়তার(মোর ফ্রেমিকা) বিয়েটা হইল, তাই তোরে আর কিছু বললাম না।কিন্ত একটা কথা, যদি শুনি যে তুই আমার আপন বোনের মত রিতারে কষ্ট দিসিস তাইলে কিন্ত খবর আসে!
– হে হে,আইচ্চচা!
– ওকে এখন ফোন রাখ, প্রিয়তা আমার জন্য ওয়েট করতাসে , বাই!
অসাধারণ একটা গল্প