বিয়েরডালা
প্রকাশিত: জুন ৫, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 2,577 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

লেখিকাঃ
সুমাইয়া সারাহ মিষ্টি
(জুন – ২০১৮)
………………

বিয়ে, শব্দটা একজন মেয়ের জন্যে অনেক গুলো অনুভূতির সংমিশ্রণ! এখানে স্বপ্ন পূরণের হাতছানি থাকে, কড়া শ্বাশুড়ির বকার ভয় থাকে, স্বামীর সোহাগের লজ্জা থাকে, নিজ স্বাধীনতা হারানোর আশংকা থাকে, আরও থাকে কত্তো ভাবনা!

আমি ভালবেসে বিয়ে করছি, স্বামী হিসেবে প্রেমিককে পাচ্ছি এ যেন আমার হাজারও রাতের প্রার্থনার ফল!

রাদ দেশের বাইরে থাকে, বিয়ের পর আমিও ওর সাথে বিদেশে থাকবো। এ নিয়েও আমার উচ্ছ্বাসের শেষ নেই! কি কি নিয়ে যাবো, ওখানে কিভাবে ঘর সাজাবো, বেডশিট কি রঙা হবে, জানালার পর্দা, বারান্দায় ফুলের টব থেকে শুরু করে পা মোছা পাপোশ টা নিয়েও ভেবে একাকার করছি! আমার দিন যেন এসব ভেবেই কাটে!

ও বিদেশ থাকলেও মোবাইল, ইমো, ফেসবুক সবকিছু দিয়ে আমার কাছেই থাকে সবসময়৷

দুজন মিলে খোলা চোখে স্বপ্নময় ভবিষ্যৎ দেখি, প্ল্যান করি কিভাবে কি করব, কিভাবে সংসার সাজাবো! এমনকি বাবুর নামও আমরা দুজন মিলে ঠিক করে ফেলেছি! রাদ এর রা আর ফারিয়ার ফা মিলে রাফা হবে আমাদের বাবুর নাম৷

সংসারের স্বপ্ন দেখি, আবার হঠাৎ ভয় হয় স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার! চমকে উঠি! বিয়ে ভাঙার কথা মনে আসলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে রুমার কথা। রুমা পাশের বাসার মানসিক ভারসাম্যহীন এক মেয়ে! দেখতে খুবই সুন্দরী! লোকমুখে শোনা যায় এক ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, একসময় বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছেলে শারীরিক সম্পর্ক করে। যখন রুমা বুঝতে পারে সে গর্ভবতী ওই ছেলেকে জানায়, তারপর না কি ছেলে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়! মেয়েটার এবোর্শান করানোর পর থেকে কেমন যেন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে! ছোটবেলায় ওর সাথে পুতুল খেলতাম, গল্প করতাম কিন্তু এখন দেখলে ভয় ভয় লাগে, আবার মাঝেমাঝে খুব মায়া হয়! ইশ রে মেয়েটা, ভুল মানুষ কে ভালবাসার মাশুল দিচ্ছে এভাবে!

নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয়, আমার ভালবাসার মানুষটা ওই ছেলেদের মতো ধোঁকাবাজ না যারা শুধু প্রেম করতে পারে! বিয়ে না!

আর মাত্র কদিন বাকি বিয়ের! ও দেশে চলে এসেছে, এখন আর প্রযুক্তির ব্যবহার করে ওকে দেখতে হয় না, যখন ইচ্ছে সামনাসামনিই দেখা করি। বলা যায় সারাদিনই একসাথে থাকি! বিয়ের বাজার করছি দুজন মিলে, আমাদের বিয়ের সবকিছু হবে আমাদের পছন্দে!

আমরা ঠিক করেছি গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এক বাসায় করব, দুজন একসাথে বসে।

ভাবনা অনুযায়ী গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান একসাথে হচ্ছিলো। আমরা দুজন একসাথে বসেছিলাম। আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী সবাই এসেছিলো। আমাদের হলুদের ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছিলো একে একে, বন্ধুরা দুষ্টুমি করে কি যেন সব বলছিলো৷ এদিকে ক্যামেরা ফ্ল্যাশ, সবার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা আর ওর লুকিয়ে লুকিয়ে তাকানোতে আমি তো লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলাম৷

হুট করে রুমা দৌড়ে এসে রাদের সাথে ধ্বস্তাধস্তি শুরু করে দিলো! ঘটনার আকস্মিকতায় আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না!

রুমা রাদ কে মারছে আর বিলাপ বকছে! “কেন আমার জীবন নষ্ট করেছিস? কি দোষ ছিল আমার? এই মেয়েটার জীবন নষ্ট করছিস তাইনা?” এরকম আরও কিছু বলছেই! আমরা এতোজনেও যেন ওর শক্তির সাথে পেরে উঠছি না!

রুমার মা এসে তাড়াহুড়া করে ওকে টেনে নিয়ে চলে গেলো! বলে গেলো কারো বিয়ে দেখলে ওর অতীত মনে পরে যায়, তাই এরকম করেছে৷

বন্ধুবান্ধবদের চেষ্টায় পরিবেশ স্বাভাবিক হলো ও হলুদ সন্ধ্যা শেষ হলো।

সবাই চলে গেলো, পরদিন বিয়ে সে অনুযায়ী আয়োজন চলছিলো, সবই স্বাভাবিক তবুও যেন আমার মনের কোথাও কিছু একটা খটকা লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো কিছু একটা ভুল হচ্ছে৷

নিজেকে স্বান্তনা দেয়ার জন্যই হোক, আর সত্যটা জানার জন্যই হোক চলে গেলাম রুমাদের বাসায়। রুমার ঘরে ঢুকতে যাবো এমন সময় শুনলাম ওর মা ওকে বলছে “ওই ছেলে তোর সাথে যাই করুক না কেন, এই মেয়েকে তো বিয়ে করেছে! তারা একে অপরকে ভালবাসে, মা তুই ওদের মধ্যে যাস না! ফারিয়া অনেক ভালো মেয়ে, ওর সংসার নষ্ট করিসনা মা!”

আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো! দম বন্ধ হয়ে আসলো! বসে পরলাম সেখানেই৷ আমার উপস্থিতি টের পেয়ে ওরা বাইরে এলো। রুমার মা মুখে হাসি নিয়ে বললো “আরে, এ যে নতুন বউ এসেছে! আয় মা, ঘরে আয়, বস!”

আমি অবাক হয়ে গেলাম! এই মায়ের মনে এতো কষ্ট, কে বলবে?

স্পষ্ট করে বললাম, আমি সত্যটা জেনে গেছি কাকী! সম্পূর্ণটা জানতে চাই!

অনেকবার এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার পর, শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলো সত্যটা জানাতে ৷

রাদ ই সেই ছেলে যে রুমার এই অবস্থার জন্য দায়ী ৷ রুমা প্রেগন্যান্ট হবার পর এবোর্শান করতে বলে এবং যোগাযোগ বন্ধ করে বিদেশে চাকুরী পেয়ে চলে যায় ৷

বাসায় ফিরে দেখি আমার বিয়ের ডালা এসেছে, তাতে বিয়ের শাড়ি সহ যাবতীয় সবকিছু খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো ৷ ইশ, কতই না স্বপ্নের ডালা এইটা। ভাবতেই চোখের কোণায় পানি টের পেলাম ৷

বাসায় খুব স্বাভাবিক ভাবে বললাম, “বিয়ে টা হবে না। বরযাত্রী যেন না আসে। আমি ঘুমাবো, কেউ যেন না ডাকে।”

দরজায় খিল দিলাম, কাঁদলাম! খুব করে কাঁদলাম। আমার চোখের সামনে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো, আমার স্বপ্ন ভেঙে ভাঙা কাচের মতো টুকরো টুকরো হয়ে গেলো ৷

বিয়ে করব না শুনেই রাদ ছুটে এসেছে। দরজা খুলতে বলছে বারংবার ৷

আমি জানি, একবার দরজা খুলে দিলেই আমি হেরে যাবো নিজের কাছে! ওকে দেখলেই আমার রাগ, অভিমান, ক্ষোভ, ঘৃনা সব মিটে যাবে! কিন্তু তা যে হতে দেয়া যাবে না! ওর অন্যায়ের শাস্তি ওকে পেতেই হবে!

ও বুঝি বুঝে গেছে সব! বার বার বলছে একটা বার দরজা খুলো আমি সব বলছি!

দরজার কপাট ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললাম বলো কি বলতে চাও, আমি শুনছি এপাশ থেকেই।

ও বলল, “তখন বাস্তবতা বুঝতাম না, বয়স কম ছিল, ভুল হয়ে গেছিলো! আমাকে আমার ভুলের শাস্তি দাও, আমি মাথা পেতে নিবো! শুধু আমাকে ছেড়ো না প্লিজ!”

বললাম “রাদ, এখন বাস্তবতা বুঝো? পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাও? তাহলে যাও, রুমা কে বিয়ে করো! তোমাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না! ভালবাসা হারিয়ে কেমন লাগে তোমার বুঝা উচিৎ ওই মেয়েটার মতো! চলে যাও এখান থেকে, এক্ষুণি!”

ও বললো “যে ভুল আমি করেছি তার মাশুল এভাবে দিতে হবে জানলে কখনো করতাম না! পারলে মাফ করে ফিরে এসো, তোমার অপেক্ষা করবো।”

ওর চলে যাওয়ার শব্দ পেলাম, দরজা খুলে ডাকলাম “রাদ শোনো!”

ও ফিরে তাকালো, হয়তো ভেবেছিলো আমি ওকে যেতে বারণ করব ৷

ওর ভাবনা ভেঙে দিয়ে বললাম “বিয়ের ডালা ফেলে যাচ্ছ, ওটা নিয়ে যাও!”

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *