বীর নারী
প্রকাশিত: অগাস্ট ১৯, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 1,347 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

আসিফ_আহমেদ

খবরের কাগজে একটা শিরোনামের হেড লাইন দেখে চমকে ওঠে রোজান। সেখানে লেখা,
“নিজের স্বামীকে জঘন্য ভাবে কুপিয়ে হত্যা অতঃপর পুলিশের কাছে আত্মসমার্পন”।
চায়ের কাপ টা রেখে কৌতুহলী হয়ে খবর টা পড়ে ও । তবে বেশি কিছু লেখা নেই। আত্মসমার্পন করায় হয়তো মূল ঘটনা দেয় নি । তবে রোজানের খুব জানতে ইচ্ছে করছে যে, কেন এই খুন ? আবার কেনোই বা আত্মসমার্পন করা। রোজান ঠিক করে সে ঐ মহিলার সাথে দেখা করবে। ওর কেন জানি মনে হচ্ছে এটা কোন সাধারণ ব্যাপার না। অবশ্যই কোন রহস্যজাল বোনা আছে। রোজান ঠিক করলো কালই ঐ থানায় যাবে আর যে কোন মূল্যে ঘটনা টা শুনবে।
রোজান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র। ছোট বেলা থেকেই ওর দর্শনের উপর ঝোঁক ছিলো। রোজানের আরেক টা নেশা হলো বিভিন্ন মানুষের জীবনের গল্প শোনা। ওর মতে, সব মানুষের জীবনেই অসাধারণ কিছু গল্প রটে। যেগুলা অরচিত থাকে। রোজানের এসব গল্প শুনতে ভালো লাগে। ওর মতে এসব গল্প অনেক শিক্ষনীয় হয়।
পরদিন সকাল সকাল রোজান বাসা থেকে বের হয় সেই মহিলার সাথে জেলে গিয়ে কথা বলবে বলে।
প্রায় পাঁচ ঘন্টার যাত্রা শেষে দুপুরের দিকে সেই কারাগারে পৌঁছায়। ও মহিলার সাথে দেখা করবে বলে এ’কথা থানার ওসি’কে জানালে ওসি সরাসরি না করে দেন। কারণ, রোজান না মহিলাটির কোন আত্মীয় আর না কোন উকিল। আর যেহেতু মহিলাটির যাবৎজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে তাই উকিলের কোন ঝামেলা নেই। রোজান অনেক বলা কওয়ার পরেও যখন ওসি ঢুকতে দিলেন না তখন রোজান ওসির পকেটে একটা খাম ঢুকিয়ে চুপিচুপি কি যেন বললো। তারপর ওসি ইতস্থ হয়ে বলে, দেখা করেন তবে সময় কিন্তু কম। রোজান মুচকি হেসে জানায় যে, সে বেশি সময় নেবে না। ওসি হাবিলদারকে ডেকে মহিলাটি যে সেলে আছে ঐ সেলে নিয়ে যায়। আর রোজান মুচকি হেসে ভাবে, ‘বর্তমানে পকেট গরম হলে সবাই ছাড় দেয় ।’
হাবিলদার সেলের তালাটি খুলে রোজানকে ঢুকতে দেয়। রোজান দেখে প্রায় বাইশ কী পঁচিশ বছর এমনই হবে হয়ত বেশিও হতে পারে একজন মহিলা বসে আছে। রোজান যে তার সেলে ঢুকেছে এতে মনে হচ্ছে তার বিন্দু মাত্রও আক্ষেপ নেই।
‘ আমি রোজান । আপনার সাথে কিছু কথা বলা যাবে কি?’
মহিলা টি কোন কথাই বললো না।
‘আপনার কাছে একটা গল্প শুনবো বলে এসেছি। একটু বলবেন কি কেন এভাবে নিজের স্বামীকে মারলেন?’
রোজানের কথার উত্তর না দিয়ে মহিলাটি আগের মতোই বসে রইলো। রোজান আবার বললো,
‘আপনার নাম টা কি জানতে পারি?’
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মহিলাটি বললো,
‘আমি বীর নারী। আর আমার কোন গল্প নেই। শুধু একটা কালো অধ্যায় ছাড়া।’
বীর নারী! নামটা শুনে অবাক হয় নি রোজান। কারণ, ওর এ বিষয়ে খুব ভালোই ধারণা আছে। তাই এ’কথা কে প্রাধান্য না দিয়েই বললো,
‘সেই অধ্যায় টাই না হয় বলুন।’
‘আমি একজন যাবৎজ্জীবন প্রাপ্ত আসামী। আমার কোন অধ্যায়, কোন গল্প শুনে আপনি কি করবেন’ ?
‘যারা আপনার মতো যাবৎজ্জীবন প্রাপ্ত তাদের সবারই আলাদা একটা গল্প থাকে আর আমি সে গল্পটাই শুনতে চাই’। বলেই মেঝেতে বসে পড়লো রোজান।
কিছুক্ষণ নিরবতার পর মহিলাটি বলতে শুরু করলো,
জন্মের ছ’মাসের মাথায় মারা যায় মা। তার না কি আমি হওয়ার কয়েক বছর আগে থেকেই অসুখ ছিলো। ছোট বেলাতেই এতিমের খাতায় নাম উঠাই আমি।
পরিবারের চতুর্থ সন্তান ছিলাম আমি। তবে বাবা আমাকে কখনোই দেখতে পারতেন না। তার ধারনা আমার জন্যই মা মারা গেছেন। তাই বাবা থাকতেও তার আদর পাইনি। পাঁচ বছর বয়স থেকেই একা থাকতাম। বড় ভাবি আর ভাইয়াও বাবার মত ছিলো। কোনদিনও খাওয়ার সময় বলতো না যে, আমাদের সাথে বসে খা। সব কিছুই পেতাম শুধু ভালোবাসা ছাড়া। ছোট থেকেই ভাবতাম বিয়ের পর শ্বাশুড়ি কে মা বলে ডাকবো আর শ্বশুর কে বাবা। জীবনে তো মায়ের আদর পাইনি তবে তাদের থেকেই পুষিয়ে নেবো। ক্লাস নাইনে যখন পড়ি তখন একটা ছেলে আমার পিছু পিছু ঘুড়তো । ছেলেটা প্রায় দু’বছর আমার পিছে পিছে ঘুড়লো তবুও আমি আমার জায়গায় অটল ছিলাম । সে অনেক বার ভালোবাসার কথা বলেছিলো তবুও আমি বার বার “না” বলতাম। না বলার পরেও শুনতো না ছেলেটা। বলতো আমি না ভালোবাসলে সে সুসাইড করবে। তবুও আমি না ই বলেছি। এরপর ছেলেটা একদিন সত্যি গলায় দড়ি দেয়। ওকে কোন রকমে বাঁচায় ওর পরিবার। আমার বাবা আর ভাইয়ের কাছে এসে ওর মা-বাবা বলে যে, আমাকে যেন তারা তাদের ছেলের জীবনের জন্য হলেও ভিক্ষা দেয়। তারা না কি আমাকে নিজের মেয়ের মত রাখবে। বাবা হয়তো সুযোগ টা হাত ছাড়া করতে চান নি। কারণ, আমি যে অপয়া। তাই বিয়ের কথা পাকা হলো। আমিও ভাবলাম ভালোই হলো। এখানে তো মা-বাবার আদর কি বুঝি নি অন্তত ওখানে তা পাবো। খুব তাড়াতাড়িই বিয়েটা হয়ে গেলো আমার। সাথে শিক্ষা জীবনেরও ইতি ঘটলো। ওহ্, বলতে ভুলে গেছি আমার স্বামীর নাম তমাল।
প্রথম প্রথম শ্বশুর বাড়িতে খুবই ভালো লাগতো। মা-বাবা ভাই-বোন সবাই কে পেয়েছিলাম। তবে আস্তে আস্তে সব কেমন যেন ফিকে হতে শুরু করলো। সারাদিন সংসারের সব কাজ একা হাতে করেও কুল পেতাম না বরং শ্বাশুরীর খোটা শুনতে হতো। তবুও তমালের বুকে শুয়ে নিমেষেই সে সব ভুলে যেতাম। এরই মাঝে তমালের ঢাকাতে একটা চাকরি হয়ে গেলো। খুব ভালো চাকরি। তমাল ঢাকা চলে যায়। আমাকে পরে নিয়ে যাবে জানায়। আর এদিকে শুরু হয়ে যায় আমার উপর অমানুষিক নির্যাতন। শ্বাশুরী সর্বদা কথা শোনাতেন। যেন আমি তার বাড়ির চাকরানি। আরও বলতেন, আমি নাকি তার ছেলের মাথা খেয়েছি। ওকে কু’কথা বলে বলে তাদের থেকে দূরে পাঠিয়ে দিয়েছি ।
বিয়ের সাতটা মাস কেটে যায় তবুও একটা বারের জন্যও বাবা দেখতে আসেন নি। কোনদিন বলেনও নি যে, মা কেমন আছিস।
কিছুদিন পর আমি নিজের ভিতরে কারো উপস্থিতি টের পাই। ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারি আমার পেটে আরেক জীবন। সেদিন খুব, খুব খুশি হয়েছিলাম। তবে খুশি হয় নি শ্বাশুরী আর তার মেয়ে। তাদের কথা এতো তাড়াতাড়ি বাচ্চা লাগবে কেন?
তমাল ও আমার উপর রেগে যায়। অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলে, বাচ্চা কি করে বাঁধলো! কথা টা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এটা তো আমাদেরই সন্তান ।
পেটে বাচ্চা থাকা সত্তেও কাজ কমে না আমার। সকাল থেকে বাড়ির সব কাজ করা, শ্বাশুরী মায়ের কাপড়-চোপড় কাচা সহ বাড়ির সব কাজ একা করতে হতো। অথচ এ সময়ে আমার বিশ্রাম দরকার ছিলো। আমাকে কখনোই ডাক্তার দেখানোর কথা বলতোও না। এভাবে অনেক কষ্টের মাঝেই আমার ডেলিভারীর সময় হয়ে এলো। খুব কষ্ট হচ্ছিলো সেদিন। মনে হচ্ছিলো হয়তো মরেই যাবো। তবে ভাগ্য ক্রমে আমি আর আমার ছোট্ট ছেলে দু’জনেই ভালো ছিলাম।
সিজার করা অবস্থায়ও কাজ কমে নি আমার। ছ’মাসের রেস্ট আমার দু’মাস ও টিকলো না। এরই কয়েক মাস পর তমাল ঢাকায় নিয়ে আসে আমি সহ ওর পরিবারের সবাইকে। ঢাকাতে এসেই দেখি এ তমাল আর সে তমাল নেই! ওর মাঝে অনেক পরিবর্তন। আমাকে একটুও সময় দিতো না। আমার যে একটা চাহিদা আছে, ছোট্ট একটা ছেলেও যে আছে এটা কখনোই যেন মনে হতো না। সবার মানসিক অত্যাচার আর তমালের এমন অবহেলায় চুপিচুপি কান্না করতাম ছেলেকে নিয়ে। এক সময় নিজেকে আর তমালের বউ মনে হতো না, মনে হতো আমি কোন এক পতিতা। ভাবতে পারেন স্বামীর কাছে পতিতা!
হ্যাঁ, এটাই ঠিক। আমি যে ওর বউ আমার মনে হয় কখনোই ও ভাবে নি। সারাটা দিন একটা বারও আমার খোঁজ নিতো না। শুধু রাত হলেই নিজের যৌন কামনা মেটাতে মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য আমার কাছে আসতো। এমন ভাবে আমাকে খুবলে খেতো যেন আমাকে ধর্ষন করছে। হ্যাঁ, আমি ধর্ষিতাই। নিজের স্বামীর দ্বারা ধর্ষিত। আমি প্রতি রাতেই ধর্ষিত হয়েছি। আমি তো এমনটা চাই নি। আমি তো একটু ভালোবাসা চেয়েছিলাম। মা-বাবা আর একটা সুখী পরিবার চেয়েছিলাম। তবে আমি পাই নি।
তমালের এমন পরিবর্তনের কারণ টা একদিন রাতে আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ও রাত জেগে জেগে কোন এক মেয়ের সাথে কথা বলতো। মাঝে মাঝে রাতে ও আসতো না বাসায়। বুঝে গেছিলাম সব। তবুও স্বামী হিসেবেই মানতাম। তবে আমি হয়তো তার কাছে শুধু একজন পতিতা ছাড়া আর কিছুই ছিলাম না। আমি শুধুই ছিলাম ওর কামনার পাত্র। দিন দিন ওর নোংরামি আর আমার উপর ওর আর ওর পরিবারের অত্যাচার বাড়তেই থাকে। মাঝে মাঝেই চেষ্টা করতাম গলায় দড়ি দেয়ার। তবে নিষ্পাপ ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আর কিছুই করতে পারতাম না।
ওর মা- বাবা কিছুদিনের জন্য দেশের বাড়ি চলে গেলো আর এর পরই শুরু আমার হলো সব’চে খারাপ দিনের। তমাল রাতের পর রাত আমার উপর শারিরীক নির্যাতন করতো। তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গায়ে হাত তুলতো। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো। কোন কাজ করতে একটু দেরি করলেই মারত। আর মাঝে মাঝেই বাইরে রাত কাটাতো। মুখ বুজে সহ্য করতাম সব। ভাবছেন এসব হওয়ার পরও আইনের সাহায্য কেন নিই নি। আমি কি বলতাম আইন কে ?
বলতাম যে, আমাকে আমার স্বামী ধর্ষন করে এটা?
দিন দিন সহ্য সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো আমার। নিজের কাছেই ঘৃণা লাগতো যে, ওর শরীরের ভাগীদার হয়ে গেছে। তমাল সেই মেয়েকে নিয়ে দু’দিন বাসাতেই রাত কাটায়। আর বলতেই হাসি পাচ্ছে আমি ছিলাম সে দু’দিন ওর বোন। আমি এ দু’দিনের কথা কখনোই ভুলবো না। এসব করেও ক্ষান্ত হয় নি তমাল। মাঝে মাঝেই অফিসের কলিগদের ডেকে নিয়ে এসে রুমে ফুর্তি করতো। ওর কলিগরা বিভিন্ন ভাবে বাজে ইঙ্গিত দিতো যেটা আমি সহ্য করতে পারতাম না। এক দিন রাতে ওর কলিগরা আমাকে নিয়ে অনেক বাজে কথা বলে। শরীরে হাত দিয়েও খারাপ আচরণ করে। তমাল কিছুই বলতো না। শুধু রাত শেষে শরীর খুবলে খেতো । আমার ভাবতেও অবাক লাগতো যে আমি ওর বউ ছিলাম। এই তমালই আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো আর এই তমালই আমার জন্য গলায় দড়ি দিয়েছিলো। মুখ খুলে একদিন বললাম,
এতো ভালোবাসা কোথায় গেলো? সেদিন ও বলেছিলো
“কোন ভালোবাসা তো নাই। তোর জেদ ছোটানোর জন্যই তোকে বিয়ে করেছিলাম । খুব দেমাগ না তোর? এখন কেমন লাগে বোঝ”।
আমি আর এসব সহ্য করতে পারছিলাম না। আমি মুক্তি খুঁজছিলাম, মুক্তি! অনেক ভেবে দেখি একমাত্র একটি কাজই আমাকে মুক্তি দেবে সাথে শান্তি ও।
সেদিন সকাল থেকেই তমালের সাথে খুব ভালো আচরণ করি। যেন আমি ওর এমন অত্যাচারে অভ্যস্থ। রাতে ওর জন্য ওর সব প্রিয় খাবার রান্না করি। খুব সেজেছিলামও সেদিন। একদম আমার মনের মতো করে। খাওয়ার পর নিজে ওকে কিনে আনা মদ পুরো বোতল খাইয়ে দিয়েছিলাম। ও আমার উপর এতটাই খুশি ছিলো যেটা জীবনে দেখি নি। রাত গভীর হতেই তমাল মাতাল হয়ে ঝাপিয়ে পড়ে আমার উপর। শকুনের মতে খুবলে খেতে থাকে আমার দেহ টা। আমি শুধু হাসি। সেদিন আর বাঁধা দিই না। আমাকে ভোগ করা শেষে এক সময় ওর শরীর টা নিস্তেজ হয়ে আসে অতিরিক্ত মদ পান করায় । আর আমিও এ সময় টারই অপেক্ষায় ছিলাম। ও ঘুমিয়ে যেতেই খুব সুন্দর করে ওর হাত, পা, মুখ বাঁধি। তারপর ওর জেগে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। রাত তিনটার দিকে ও জেগে ওঠে। তাকিয়ে দেখে ওর হাত-পা বাঁধা। কথা বলার চেষ্টা করে, নড়ার চেষ্টা করে তবে পারে না। আমি খুব সুন্দর করে ওকে বলেছিলাম,
খুব ভালোবাসতে না আমাকে ? আমিও তো বাসতাম। আমি তো কোন অপরাধ করি নি। ভালোবেসে একটু কাছে রাখতে। তা তো হলো না।
তবে শুধু আমিই কেন কষ্ট পাবো। বলেই হাতে থাকা নতুন ব্লেট দিয়ে ওর বুকের উপর একটা একটা করে টান দিতে থাকি। মুহূর্তেই ওর সারা বুক রক্তে ভেসে যায়। ব্যাথায় ছটফট করে ও। সেদিন আমি মোটেও কষ্ট পাই নি।
কোন মেয়ে, কোন বউ কি চাইবে তার স্বামীর ভাগ দিতে? আমিও চাই নি। তবুও কেন এমন হলো?
দোকান থেকে কিনে আনা চাকুটা দিয়ে ওর হাতে আস্তে আস্তে দাগ কাটতে থাকি। যেন মনে হচ্ছে আমি লাল রঙ দিয়ে কিছু আঁকছি ক্যানভাসে । ওর কষ্ট দেখে হাসছি আমি। চারটা বছর ধরে খুব কষ্ট সহ্য করেছি।
ওর হাতের রগ টা কেটে দিতেই ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়তে লাগলো। আমি ওর বুকের কাটা জায়গাতে একটু মরিচের গুড়া লাগিয়ে দিলাম। সাথে সাথেই ও কাটা মুরগির মতো ছটফট করতে লাগলো। আমি হাসতে হাসতে ওর সারা শরীরে চাকু দিয়ে আঘাত করছিলাম আর বলছিলাম,
কেন এমন করলে? আমি তো একটু ভালোবাসাই চেয়েছিলাম।
ওর যে বুকে আমি ঘুমাতাম সে বুকেই সেদিন শত শত ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছিলাম। রক্তে পুরো ফ্লোর ভেসে গেছিলো।
ও কখন মারা গেছিলো জানি না। তবে ফজরের আজান পর্যন্ত আমি অনর্গল ওর বুকে চাকু চালিয়েছিলাম। ওর সুন্দর কপালটাতে একটা চুমু দিয়ে ওর বিভৎস লাশটা ঠিক-ঠাক করে ফ্লোর পরিষ্কার করে গোসল করে এসে ফজরের নামাজ আদায় করে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে বসেছিলাম অনেকক্ষণ।
সকাল ন’টার পর থানার ওসিকে ফোন দিয়ে আমার কাজ, ঠিকানা সব বলে দিলাম। ওরা এসে লাশটা নিয়ে গেলো। সাথে আমাকেও। আমি হাসতে হাসতে চলে এলাম ছেলেকে নিয়ে। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম ছেলেকে না আমার বাবাদের কাছে দেবো আর না তমালের বাড়ির কারো কাছে। ও থাকবে এতিমখানায়। আমার ছেলে মানুষ হবে একা।
আসলে কি জানেন তো, শুধু বাইরেই নারীরা ধর্ষিত হয় না। ধর্ষন ঘরেও হয়। আমার মত অনেকেই এমন ধর্ষিত হয় নিজ স্বামীর দ্বারা । তবে এসব ধর্ষনের খবর কেউ জানতেও পারে না।
তবে আমি খুনি না। আমি একজন বীর নারী। আমি জীবনযুদ্ধে জয়ী। আমি একজন বীর নারী।
রোজান মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো মহিলাটি বিশ্বজয়ের হাসি হাসছে। তবে ও আজ পর্যন্ত যত গল্প শুনেছে এটা সব’চে আলাদা।
রোজান ওনার ছেলে যেখানে থাকে সেখানকার নাম জানতে চালে মহিলাটি বলেন,
আমি চাই না কেউ ওর খবর নিক। ও একাই মানুষ হবে। আর একদিন জানতে পারবে ওর বাবার পরিচয়। জানতে পারবে ওর মায়ের পরিচয়।
রোজান আর কিছু বলল না। মহিলাটির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেল থেকে বেড়িয়ে এলো। ততক্ষণে প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। রোজান ওসির হাতে আরেকটা টাকার খাম ধরিয়ে দিয়ে চলে এলো।
রোজান গাড়িতে করে যাচ্ছে আর ভাবছে,
মানুষের জীবনের গল্প গুলা আসলেই রুপকথার গল্প কেও হার মানায়। যে সংসার মানুষের জীবনের প্রধান আশ্রয় সেখানেও কত নারী নিরবে কষ্ট সহ্য করে।
এটা আসলেই একজন বীর নারীর গল্প।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

৩ Comments

  1. আফরোজা আক্তার ইতি

    খুব ভালো একটা গল্প। ভিন্নধাঁচের একটা গল্প পড়লাম। ভালো লেগেছে। যেহেতু মেয়েটার কোন নাম নেই, তাই তাকে বীর নারীই বলছি। তার মত কত মেয়ে যে এরকম দোযখের মধ্যে থাকছে, সব মুখ বুজে সহ্য করছে। আর তমালের মত কিছি নরপশু নিজের স্ত্রীকে শুধু ভোগের পন্য হিসেবে মনে করে। তার উচিৎ শাস্তি হয়েছে। তবে তমাল খামে করে ওসিকে ঘুষ দিয়েছে ব্যাপারটা ভালো লাগে নি। আর তমালের ছেলেরও কোন সুন্দর ব্যাবস্থা হতে পারতো।
    আত্মসমার্পন- আত্মসমর্পণ।
    শিক্ষনীয়- শিক্ষণীয়।
    ধারনা- ধারণা।
    ঘুড়তো- ঘুরতো।
    বাঁধা- বাধা। প্রতিরোধ হলে বাধাতে (ঁ) হবে না।

    Reply
  2. Mahbub Alom

    টাইম ইজ আ গ্রেট হিলার।
    সময় মানুষকে নানাভাবে পালটে দেয়।তখন তার আসল রূপটি দেখা যায়।তমাল হয়তো কোনদিনি এই বীর নারীকে ভালোইবাসেনি।
    কিন্তু তমালের পরিবারটি নির্মম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেয়।তাদেরো তো একটি মেয়ে আছে।

    গল্পের এসব দিক থেকে আমাদের সবার উচিত শিক্ষা গ্রহণ করা।

    Reply
  3. Halima tus sadia

    শিক্ষণীয় গল্প।
    আমাদের সমাজে এই নারীর মতো কতো নারী নিজের স্বামী দ্বারা ধর্ষণ হচ্ছে।সে খবর কেউ রাখে না।একজন নারী ছোট কাল থেকে এতো কষ্ট সহ্য করার পর বুঝতে পেরেছিল হয়ত্র তার জীবনে সুখ আসবে।তমাল যদিও বীর নারীর জন্য আত্মহত্যা করতে চাইছিলো কিন্তু সবই মনে হলো অভিনয় মানুষ যে কতো রকমের অভিনয় করতে পারে হিসেব নেই।
    তবে সে কাজটা এভাবে না করে আইনের সহায়তা নিতে পারতো।

    বানানে ভুল আছে
    সমার্পন–সমর্পন
    শ্বাশুরী–শ্বাশুড়ি
    আসেন নি–আসেননি
    কারন টা–কারণটা
    চাই নি–চাইনি
    পাই নি–পাইনি
    ধর্ষন–ধর্ষণ
    ব্যাথায়- ব্যথায়
    নিই নি–নেইনি
    দেখে নি–দেখেনি
    চালে–চাইলে
    সব’চে আলাদা–সবচেয়ে আলাদা
    কমে নি–কমেনি

    শুভ কামনা

    Reply

Leave a Reply to Halima tus sadia Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *