বিভ্রম
প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 1,330 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

Ahmed Ishtiaq

‘একটুও ভালবাসোনা আমাকে?’
‘একশ ভাগের এক ভাগও না?’
‘এক চিমটি?’ ‘মিথ্যে আশা দিয়ে ভুলিয়ে রাখবার মতও না?’
ঘন বৃষ্টিতে মিনু’র প্রশ্নগুলো গম্ভীর মেঘের গর্জনের মত কানে বাজে রফিকের।ঝিম ধরে বসে থাকে।বাইরের ঝুম বৃষ্টি কেমন অন্যমনস্ক করে দেয় আজ।ব্যাঙের অনবরত ডাকগুলো শুনে কেমন কেমন লাগছে রফিকের।ঘরের অন্ধকারের বুক চিরে সময় সময় বজ্রের উতপাতে চোখ ঝলসে যায়।জানালার গ্রীল বেয়ে এক ফোটা দু’ফোটা করে পানি গড়িয়ে পড়ছে নিচে। কেমন গা শিহরিত অনুভূতি,কিছু উত্তরবিহীন প্রশ্ন এই মনোটোনাস জীবনটাকে একটু নাড়া দিয়ে যায়।
এই যে এত ভালোবাসা,ভালোলাগা, মিনুর,যে মেয়েটি দেড় ফুট খাটের উপরে নিষ্পাপ ঘুমন্ত মুখ নিয়ে চেয়ে আছে রফিকের দিকে,কখনো কি রফিক ভেবেছিলো তার প্রতি মিনুর এই নিষ্পাপ নিষ্কলঙ্ক ভালোবাসাটুকুকেও অবহেলায় কাটিয়ে পারবে দিনের পর দিন।
উদ্ভ্রান্তের মত চেয়ে থাকে রফিক দূরে সাদা কালো অন্তরীক্ষে।এই স্যাঁতসেঁতে ভেজা বিকেল,আলো আধারীর নিঃশব্দ খেলা আবছায়া হয়ে ঘুরতে থাকে চোখে।
যেদিন খুব রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়েছিলো রফিক, টেবিলে মিনু খাবার নিয়ে বসে ছিলো, যখন ঘড়ির কাঁটা রাত দুটো ছুঁই ছুঁই।রফিক বাসায় ফিরলো।মিনুর খাবার নিয়ে বসে থাকা দেখে অবাক হয়েছিলো ভীষণ।মিনু কখনও খাবার নিয়ে অপেক্ষা করেনা।রফিক কখন বাসায় ফিরে তার নিজেরই হিসেব থাকেনা।জামাকাপড় ছেড়ে খেতে বসে রফিক বলেছিলো,
‘আর কখনো আমার জন্যে অপেক্ষা করবেনা’
‘কে করবে শুনি তাহলে?কে আছে তোমার?’
রফিক মৃদু হাসে।সে মিনুর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেনা।কেমন এক অপরাধবোধ নিষ্ক্রিয় করে দেয় তার নিজস্ব সত্তাকে।টেবিলের দিকে তাকিয়ে রফিক বলে,
‘কেউ না থাকাটায় ভালো ছিল আমার।কখনো কাউকে প্রয়োজন মনে হয়নি,বোধহয় হবেও না’
‘বিয়ে করলে কেন তাহলে?’
রফিক একবার চোখ তুলে তাকায়।আবার নামিয়ে ফেলে।
নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেনি সে।বাবা মায়ের অবাধ্য হয়েছে বহুবার।শেষবার এসে আর পারেনি।কাঠের পুতুলের মত হয়ে গেছিলো যেন।প্রাণ নেই,নির্জীব।সুখ নেই,দুঃখ নেই,অন্তসারশূন্য।
‘তুমি চাইলেই ডিভোর্স নিতে পারো’
‘এতই সহজ!’
‘কি পেয়েছো তুমি!এতদিনে!দু’বছরে?’
‘ভালোবাসতে পেরেছি’
‘আমি পারিনি’
খাবারের প্লেটের মাঝে আঙুল দিয়ে ভাতগুলো এলোমেলো করতে থাকে মিনু।চোখ থেকে এক ফোঁটা বা কয়েকফোঁটা পানি হয়তোবা সাদা ভাতে গিয়ে মিশেছিলো।
দুটো সেপ্টেম্বর পেরিয়ে গেছে।রফিক কখনো তমা’র ঘোর থেকে বের হতে পারেনি।একটা মরীচিকা,একটা মৃত স্বপ্ন,একটা বিভ্রমের পৃথিবী তাকে বিকলাঙ্গ করে রেখেছে মিনুর সাথে পাশাপাশি বালিশে কাটানো সব রাত।
ইদানীং কি সব স্বপ্ন দেখছে রফিক।সেদিন রাত সাড়ে তিনটাই ঘুম ভেঙে যায় হঠাত,স্বপ্নে দেখেছিল সে মিনুর গলা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে।তার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করছে।ঘুম থেকে উঠে দেখে আসলেই তার এক হাত মিনুর গলায়।ভয়ে মিনু বড় বড় চোখ করে রফিকের দিকে তাকিয়ে ছিল।
আজকেও সেরকম একটা স্বপ্ন দেখেছে রফিক।টি-টেবিলের উপরের ফল কাটার ছুরিটা মিনুর গলায় ঢুকিয়ে দিয়েছে।ঘুম থেকে উঠে রফিক বিভ্রমে পড়ে গিয়েছে।সে কি এখনো স্বপ্নে আছে?
জানালা দিয়ে আসা বৃষ্টির পানিতে বিছানা ভিজছে,লাল রঙের পানিতেও ভিজছে।ঘুমন্ত মুখে চেয়ে আছে মিনু রফিকের দিকে।
আবার একটা ঘোর তৈরি হবে রফিকের।মিনুর ঘোর।
ঘোর বাড়বে।বিভ্রম বাড়বে।এরকম বিভ্রমের লুপে আটকে পার হয়ে যাবে হয়তো রফিকের জীবনের সব সেপ্টেম্বর।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

২ Comments

  1. Parvej Mosharof

    গল্পটা বেশ ছোট। তবে কম শব্দে যে বেশকিছু তুলে ধরেছেন সেটাই আপনার গুণ। তবে আরো বেশী শব্দে আরো বিস্তারিত লিখলে ভালো হতো, গল্পের অবস্থান ভালোভাবে বুঝা যেতো।

    Reply
  2. Rifat

    গল্পটা একটু ছোট হয়ে গেল না?
    আর একটু বড় করলে ভালো হতো। তবুও খুব ভালোভাবে লেখাটাকে উপস্থাপন করতে পেরেছেন।
    শুভ কামনা।

    Reply

Leave a Reply to Parvej Mosharof Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *