এক ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত রাস্তায় ব্যস্ত থাকবে তুমি।
সেদিন তুমি ভুলে যাবে সব,
ভুলে যাবে রূপালী অতীতের সাদা কালো স্মৃতিগুলো।
ভুলে যাবে কাঠফাটা রোদ্দুরে পথের ধারে তোমারই অপেক্ষায় থাকা এক শ্যামবর্ণা মেয়ের কথা।
যার দু-চোখ ছিলো স্বপ্নে বিভোর।
আলিশান প্রাসাদের আনাচে কানাচে ব্যাপ্ত সুগন্ধী হয়তো তোমাকে ভুলিয়েই দিবে একদিন তোমায় মোহিত করতো গ্রাম্য শিউলির ঘ্রাণ।
প্রাসাদের ঠিক বাঁ দিকের বিলাসী বাগানটায়,
রোজ চোখ বুলাতে বুলাতে তোমার মনেই হবে না এতো পূর্ণতার মাঝেও শূন্য তোমার বাগান বিলাস।
তুমি ঠিক ভুলে যাবে,
কোনো এক বর্ষায় কথা দিয়েছিলে মেয়েটিকে
তাকে অর্ধাঙ্গিনী করবে,
পুসকুনি থেকে কচুড়ির ফুল তুলে এনে তার খোঁপায় গুঁজে শপথ করেছিলে
সারাটা জীবন তার হয়েই কাটাবে।
তুমি ভুলেই যাবে,
একদিন মেয়েটি লজ্জ্বায় কাঁচুমাচু হয়ে কিভাবে মুখ লুকিয়েছিলো তোমার বুকে,
কেমন করে কেঁদে ভাসিয়েছিলো তোমার বুক
কাজল লেপ্টেছিলো নিজ আখি পল্লবে,
ভুলেই যাবে সেদিন, সে মিশেছিলো তোমার অন্তরে, অন্তরালে।
তোমার মনে থাকবে না আর,
একটা সময় শিব মন্দিরে মেয়েটি তোমার জন্য অপেক্ষা করতো,
তুমি আসবে তার উপোস ভঙ্গ করবে।
একটি বারের জন্যও মনে পড়বে না তোমার,
মেয়েটি তোমার পায়েই ফুল দিয়ে কানে কানে বলতো “তুমিই আমার শিব ঠাকুর।”
তারপর,
তারপর লজ্জায় লাল হয়ে মুখ লুকিয়ে দৌঁড়ে পালাতো।
মেয়েটি সেবার তার স্বর্ণের দুল জোড়া তোমার হাতে দিয়ে বলেছিল,
“তুমিই আমার বড় অলংকার।”
তুমি সেদিন কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটির কোমল হাত দুখানা ধরে বলেছিলে
“তোকে আমি এর চেয়েও ভালো দুল গড়িয়ে দিবো দেখিস।”
কিন্তু বিলেতি বউয়ের জন্য হীরের দুল গড়াতে গিয়ে, সে কথা আর মনে পড়ে না তোমার।
তুমি ভুলে যাবে, খুব যত্ন করে ভুলে যাবে তাকে, তার গ্রামকে।
মনে থাকবে না ডুমুর গাছটার কথা।
তোমার কখনোই মনে পরবে না ডুব সাঁতারের খেলার কথা,
তুমি ভুলে যাবে মাটির ঘরের জলন্ত মাটির পিদিমখানি,
আম গাছটায় বাঁধা দোলনা,
পুসকুনির পাড়ে মাছ মারা,
বিকেলের ঘুড়ি উড়ানো,
সন্ধ্যায় কেরোসিনে জ্বালানো কুপির গন্ধ।
ভুলে যাবে সবই।
গরম ভাতের স্বাদ তোমার মুখে রুচবে না,
কচুশাক, পুঁইপাতা, ট্যাংরা মাছের ঝোল,
আর তোমাকে তৃপ্ত করবে না।
শ্যামল সবুজে ঘেরা বাংলা
তোমার চোখে সেইদিন আর রূপসীর ন্যায় ধরা দিবে না।
উলুর ধ্বনি রক্তে মিশে গিয়ে তোমার হৃদয়কে মোহিত করবে না আর
তোমার ব্যস্ত শহরে সেইদিন আর তোমার মধ্যে তুমি বাস করবে না।
মেয়েটিও থাকবে নিজের সরলতায়।
আর তুমি
তুমিও ব্যস্ত থাকবে, ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত কোনো রাস্তায়।
অসাধারণ হয়েছে কবিতাটা। একেবারে আবৃতি করে মনে মনে পড়তে লাগলাম। কখন শেষ হলো বুঝতেই পারিনি।
অনেক সুন্দর হয়েছে কবিতাটা। শব্দচয়ন আর উপস্থাপনা অত্যন্ত চমৎকার। পাঠক কবিতার প্রতিটি চরণ পড়তে পড়তে কল্পনার আবেগে সিক্ত হয়ে যাবে।
অসাধারণ হয়েছে। বানানে দু’টো ভুল আছে।
লজ্জ্বায়- লজ্জায়।
আখি- আঁখি।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ????।
কতটা আবেগ মেশানো তা বলে বুঝাতে পারবো। ছিল চাপা মনের ব্যথা, প্রিয় মানুষের প্রতি হালকা অভিমান আর এত্তগুলা ভালোবাসা। দীর্ঘ কবিতায় ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। বেশ ভালো লাগলো।
শুভ কামনা রইলো।
সত্যিই অসাধারণ কবিতা।পড়ে মুগ্ধ হলাম।
অন্যরকম একটা কবিতা পড়লাম।
চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন।
প্রতিটা চরণ যেনো বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।
শেষের লাইনটাও বেশ ভালো লেগেছে।
বানানে ভুল নেই তেমন
লজ্জ্বায়–লজ্জায়
আখি–আঁখি
শুভ কামনা রইলো।
অসাধারণ আপনার লেখার হাত!
ভাবা যায়?
কতোটা আবেগ মিশালে এমন সুন্দর কবিতা রচনা করা যায়?
ভাবের পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটেছে।
চর্চা করবেন,প্রতিভাকে মরতে দিবেন না।
সম্ভাবনাকে সত্যি করবেন।
শুভকামনা রইলো।