আপন
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 1,342 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

লেখক:অনামিকা দাস রিমঝিম।

“কাপড় গুলো লন্ড্রি থেকে এনেছ বৌমা?
-না, মা।আমি আসলে ভুলে গেছি।সারাদিন এত কাজ ছিল অফিসে।আমি কাল আসার সময় মনে করে নিয়ে আসব।
-না, থাক।আমি অন্য কাওকে দিয়ে আনিয়ে নেব।তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা। মনে যখন রাখতে পারনি তখন এত ভাবতেও হবেনা।”
রিশা আর তার শ্বাশুরির কথপোকথন আজকাল এমনই হয়।রিশা কোন ভুল করলেই তার শ্বাশুরি সেটা নিয়েই তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে।
বাড়িতে সদস্য পাঁচ জন।রিশা,তার স্বামী অপু,শ্বশুর,শ্বাশুরি আর ননদ রিমি। ভুল যে শুধু রিশার একা হয় তা নয়,রিমি আর অপুরও হয়। তবে নব্বই দশকের শ্বাশুরিদের মত রিশার শ্বাশুরিও মনে করেন, পরের মেয়ে সারাজীবন পরই থাকে।তাই জেনে শুনে প্রতিদিন এত ভুল করে রিশা।কারণ এই সংসারের দিকে তার মন নেই।
রিশার বর অপু বছরের বেশিরভাগ সময়ই ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে থাকে। তাই বাড়ির কোন বিষয়ে তেমন মাথা গলায় না।
রিমিও রিশাকে তেমন পছন্দ করেনা। রিশা বুঝতে পারেনা তার ভুলটা কোথায়।সে যথাসাধ্য চেষ্টা করে সবাইকে ভাল রাখার। সারাদিন চাকরি করে ক্লান্ত হয়ে ফিরে বাড়ির এত কাজ করেও এইটুকু ভুল পেলে অপুর মা সেটা নিয়ে ঝামেলা শুরু করে দেয়।কড়া কড়া কথা শুনাতেও ছাড়েনা।
দিন যেতে যেতে একদিন রিশা বুঝতে পারল,সে মা হতে চলেছে। খবরটি জানার পর অপুও বেশ খুশি।তবে আগামী এক বছর তাকে দেশের বাইরেই থাকতে হবে। তাই রিশাকে ফোন করে নিজের যত্ন নিতে বলা ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারে না অপু।
অপুর মা রিশার প্রেগনেন্সির ব্যাপারে তেমন মাথাব্যথা দেখান না।রিশার খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও তেমন খোঁজ খবর নেন না।পেটে আট মাসের বাচ্চা নিয়েও অফিস করতে লাগলো রিশা।
রিশার মা নেই। তাই এসময় বাপের বাড়িতে পাঠিয়েও লাভ নেই। বুড়ো বাপ তার যত্ন করতে পারবে না।
রিশা একা একা কাঁদে,জানালার গ্রিল ধরে মন খারাপের বৃষ্টি দেখে। ভাবে,কেন সে এত একা।এই পরিবারকে এত ভালবেসেও বিনিময়ে সে কি পেল?
বাড়ির ল্যান্ড লাইনে একদিন ফোন এল। অপুর মা ফোনটা ধরল।এক মহিলা অপুর মাকে অনেক কিছু বলল।কথা গুলো শুনে তার হাত থেকে ল্যান্ড ফোনটা পরে গেল। অপুর বড় বোন,সিমির এক প্রতিবেশি ফোন করেছিল।সিমি অনেক বছর আগে পালিয়ে গিয়েছিল বলে এবাড়ির কেউ তাকে আর এবাড়ির সদস্য মনে করত না। সিমি অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু কিছুই ঠিক হয়নি।প্রতিবেশি ফোন করে জানালো,এত বছর কি অমানবিক অত্যাচার হয়েছিল সিমির উপর। মেয়েটা একা ছিল। নিজের কষ্ট মাকেও বলতে পারত না।বলত শুধু সেই প্রতিবেশিকে।তবে সে বেশ গরিব হওয়ায় তেমন কোন সাহায্য করতে পারেনি।সিমি ভাবেনি যে ভালবেসে এত বড়লোক হয়ে বউ হয়ে এসে তার এই অবস্থা হবে। লাস্ট কয়েকদিন আগে নাকি সিমি প্রেগনেন্ট ছিল।তবে বাড়ির ভারি কাজ গুলো করিয়ে নেওয়াতে বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে।শেষে সিমিকেও বাঁচানো যায়নি।অপুর মা সব শুনে কাঁদতে থাকে আর বুঝতে পারে রিশার কষ্ট,একাকিত্ব। ক্ষমা চাইবার জন্য রিশার ঘরে গিয়ে দেখে যে রিশার প্রসব যন্ত্রনা উঠেছে। তাড়াতাড়ি হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হলো তাকে।
অপুর মা নিজের মেয়ের কথা ভাবতে লাগলো।সে এখন রিশার কষ্টটাও বুঝতে পারছে।আসলে পরের মেয়েকেও নিজের মেয়ের মত ভালবেসে নিজের মেয়ে করে নেওয়া যায় সেটা বুঝতে পেরেছে সে।রিশাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানোর সময়, অপুর মা রিশার কপালে চুমু খেয়ে বলল,আমাকে ক্ষমা করে দিস মা,সব কিছুর জন্য।এখন থেকে নিজের মেয়ের মতই ভালবাসব তোকে।তুই যা,আমি এখানে তোর অপেক্ষা করছি।আমি বুঝতে পেরেছি আজ,তুই আমার পর না,আপন….খুব আপন!
অপুর মায়ের সাথে সাথে অপুর বাবা,আর ছোটবোন রিমিও নিজেদের ভুল বুঝতে পারল।
রিশা কিছু বলতে পারল না।শুধু চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
অনেক্ষণ পর,নার্স এসে বলল মেয়ে হয়েছে।অপুর মা জানতে চাইল তার বৌমা কেমন আছে।নার্স মাথা নিচু করে চলে গেল।দৌড়ে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে দেখল রিশা আর নেই। শোকে প্রায় পাথর হয়ে গেল অপুর মা।
রিশার সদ্য জন্ম দেওয়া শিশুটার কান্নায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার।আদর করে কোলে নিল তাকে। জড়িয়ে ধরে বলল,আপন অনেক বেশি আপন তুই আমার। তবে বাচ্চার মুখের দিকে চেয়েই অবাক হলো অপুর মা।
কি আশ্চর্য! ফুটফুটে এই বাচ্চা মেয়েটারও তো ঠোটের বাম দিকে একটা ছোট কালো জন্মদাগ,ঠিক যেমন সিমির ছিল!

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

৪ Comments

  1. আফরোজা আক্তার ইতি

    অনেক সুন্দর শিক্ষামূলক এবং সচেতনতামূলক গল্প। খুব ভালো লিখেছেন। রিশার মতো অনেক মেয়েই তাদের শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচারিত হচ্ছে নির্দোষ হয়েও। তার শ্বাশুরি অবশেষে তার ভুল বুঝতে পারলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
    বানানে খুব বেশি ভুল পেলাম না।
    গরিব- গরীব।
    যন্ত্রনা- যন্ত্রণা।
    মাথা গলায় না।- উপমাটি ভুল। কারণ, নাক গলায় না উপমা হয়, আর মাথা ঘামায় না উপমাটি হবে।
    শুভ কামনা রইল।

    Reply
    • Anamika Rimjhim

      ধন্যবাদ ♥

      Reply
  2. আরাফাত তন্ময়

    বাস্তবতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ। যদিও অনেক ক্ষেত্রে আর ক্ষমা চাওয়া হয় না। তবুও বলবো বেশ সাবলীলভাবেই লিখেছেন। যেন বাস্তবতায় ডুবে ছিলাম!
    শুভ কামনা রইলো।

    Reply
    • Anamika Rimjhim

      ধন্যবাদ ♥

      Reply

Leave a Reply to Anamika Rimjhim Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *