-আহমেদ সবুজ
মফস্বলের রাস্তায় বাস পাওয়া যে কতটা দুষ্কর তা আজ দুইঘন্টা যাবৎ যাত্রী ছাউনিতে বসে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। এদিকে ক্ষুধায় নাড়ী হজম হবার জো হয়েছে।
পাশে একটা মাত্র দোকান শুধু সিগারেট আর পান বিক্রি করে। দোকানদার আমার হাতে দু’দিন আগের একটা পাউরুটি দিয়ে বললো, আমার নাকি ভাগ্য ভালো।
প্যাকেট খুলেই বুঝতে পারলাম আমার ভাগ্য কেমন ভালো।
পাশেই একটা খোঁড়া কুকুর বসেছিলো, কে বা কারা কুকুরটির পিছনের দুটি ঠ্যাং ভেঙে দিয়েছে, ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে হাটে।
কুকুরটি রুটির দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, ওকেই দিলাম ওটা। দৌড়ে রুটিটা নিতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে গেলো। তারপর উঠে রুটির দিকেই জোরেসোরে এগোচ্ছিলো অমনি এক বাঘা কুকুর এসে ওকে থাবা মেরে এবং মুখ খিঁচিয়ে ঘেউঘেউ করে
তার শক্তির পরিক্ষা দিলো। খোড়া কুকুরটি শুধু অস্ফুটভাবে দু’বার ঘেউ করে যেনো মিনতি জানালো। ততক্ষণে বড় কুকুরটা তার খাবার কেড়ে নিয়ে প্রস্থান করেছে।
কিছুক্ষন হলো আরো দু’তিনজন যাত্রি চলে এসেছে, তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলো। মলিন পোশাক আর গ্রাম্য আলাপে আন্দাজ করতে কষ্ট হয়না এরা প্রান্তিক চাষিবধূ।
কোলে একটা বাচ্চা তার পোশাকও ময়লা। বাচ্চা যতক্ষণ কোলে থাকে ততক্ষণ পরিষ্কার রাখা যায় কিন্তু গরিবের বাচ্চাকে সারাক্ষন কোলে করে ঘুড়লে খাবার আসবে কোথথেকে? তাই সন্তানকে মাটিতে রেখেই মা সাংসারিক নানান কাজ করে।
পাশে বসা ১২-১৩ বছর বয়সি উনারই মেয়ে বোধহয়, বসে বসে চাটনি খাচ্ছে। উস্কো-খুস্কো চুল, যত্ন না নেওয়ায় বাদামি হয়ে গেছে। লিপিস্টিক খানিকটা ঠোটের কোনায় বেশি লেগেছে, কাজলেরও একই দশা, টিপটা কপালের মাঝখানে না হয়ে খানিকটা পাশে চলে গেছে। যে কেউ তাকে দেখে হয়তো একগাল হেসে নিতো কিন্তু আমি মনে মনেও হাসতে পারলাম না। বরং এই অপটুতায় কেনো যেনো খুব মায়া হলো মেয়েটার উপর। হয়তো কিছুদিন পর বাবা-মায়ের অভাবের সংসারে টিকতে না পেরে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাবে আরেক হতদরিদ্রদের সাথে। সেই পাষাণ স্বামী হয়তো যৌতুকের টাকার জন্য মেয়েটিকে তিন বেলা পিটাবে, গরম খুন্তির ছ্যাঁক দিবে কিংবা এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দিবে। এরকমই হয়ে আসছে…
চাষি-বধূটি পাশে বসা আরেকজন মধ্যবয়স্কা গৃহবধূর সাথে বাচ্চার অসুস্থতা নিয়ে কথা বলছিলো। এতক্ষণে পায়ের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম কোলের ছেলেটার পা অনেকটাই সরু। অনিচ্ছাসত্ত্বেও জিজ্ঞেস করে ফেললাম, আপনার ছেলের কি পোলিও হয়েছে?
তিনি না বুঝেও সায় দিয়ে দুঃখ করে বললেন, “হ বাবা, পোলিওর অভাব আচে।”
আমি বললাম, পোলিওর টিকা নিয়েছিলেন?
তিনি বললেন, তাদের এলাকায় যেদিন টিকা দিয়েছে সেদিন কাজে ব্যাস্ত থাকায় দিতে পারেনি।
তারপর ছেলের রোগ ঢাকতে ছেলের সম্পর্কে নানান প্রশংসা বলে যেতে লাগলেন। এসব ছোট ছোট গুণের আড়ালে মা তার ছেলের বড় অসুস্থতা ডাকতে চাচ্ছেন, এ যেনো টুকরো টুকরো কাপড় দিয়ে তিমি ডাকার চেষ্টা। মায়ের চোখে ছেলে আকাশের চাঁদ নাহলেও তার চেয়ে কম কিছু নয়। ছেলে যদি ময়লারডিপো হয়, মায়ের কাছে সে হয়তো সোনার খনি। হয়তো আমার মায়ের কাছেও তাই।
পরপরই ছেলেটির অসুস্থতার কথা ভেবে মন খারাপ হয়ে গেলো। খানিক আগের খোড়া কুকুরটির কথা মনে পড়লো। পৃথিবী শুধু যোগ্যদের টিকিয়ে রাখে আর অযোগ্যদের মহাকালের অতলে তলিয়ে দেয়।
যোগ্য!
আচ্ছা, আমি কি যোগ্য?
আমি কি আমার জায়গা থেকে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পেরেছি?
আমরা সবাই কি পৃথিবীর কাছে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করার জন্যই ছুটছি না?
কেউ স্রষ্টার কাছে,
কেউ বা সৃষ্টির কাছে,
কেউবা দু’জনের কাছেই নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে অপ্রাণ চেষ্টা করছে।
কেউ ক্ষমতার আশায়,
কেউ ধনের আশায়
কেউ স্বর্গের আশায়,
কেউ বা শুধু দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের আশায় নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করেই চলছে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলবে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করার এই প্রচেষ্টা। মহাকাল আমাদের দিকে রোষদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলছে, “যোগ্য হও নাহয় যোগ্যকে জায়গা ছেড়ে দাও।”
আমরা সবাই মহাকালের আজ্ঞাবহ দাস।
পুরো গল্পই চমৎকার। শেষের কিছু লাইন অতিমাত্রায় চমৎকার। সত্যিই ভাবিয়ে তোলার মত। আমরা কি সত্যিই যোগ্য হতে পেরেছি, যতটুকু হওয়ার দরকার?
খুবই ভালো লিখেছেন। তবে বানানে বেশ কিছু ভুল আছে। সংশোধন করে দেই।
পরিক্ষা- পরীক্ষা।
খোড়া- খোঁড়া।
কিছুক্ষন- কিছুক্ষণ।
যাত্রি- যাত্রী।
ঘুড়লে- ঘুরলে।
ঠোটের- ঠোঁটের।
ব্যাস্ত- ব্যস্ত।
ডাকবে- ঢাকবে।
বাস্তবতার সাথে মিল রেখে গল্পটি লিখেছেন।
যোগ্য হতে সবাই চায়। আমরা কি পারছি? পারতেই হবে।
বানানের দিকে নজর রাখবেন।
শুভেচ্ছা রইল।
খুবই সুন্দর উপস্থাপনভঙ্গি এবং একইসাথে বিষয়টাও দারুণ।
বানানে বেশ কিছু ভূল চোখে পড়েছে।
লেখাটাকে বোধহয় গল্প না বলে প্রবন্ধ বললেই যথার্থ হবে।
তবে,নাম নির্বাচনে আরো সচেতন হতে হবে।
লিখার সাথে সর্বোচ্চ মিল রেখেই প্রধান পাঠক আকর্ষন অর্থাৎ নাম নির্বাচন করতে হয়।।
শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ! আপনার ”ভুল’ বানানটা ভুল হয়েছে 🙂