আঁধারে আলোর খোঁজ
প্রকাশিত: এপ্রিল ৩, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 2,511 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05
গল্প লেখকঃ
সুমাইয়া সারাহ মিষ্টি
(এপ্রিল – ২০১৮)
……………………
ঋতুর অস্বস্তি হয় ছেলেটার পলকহীন তাকিয়ে থাকা দেখে! কতক্ষণ থেকে একই ভাবে তাকিয়ে আছে! সে তাড়াহুড়া করে চালডালের দাম মিটিয়ে বের হয়ে যায় দোকান থেকে৷ ধানক্ষেতের আইল ধরে হাটতে থাকে বাড়ির দিকে৷ কিছুদূর যাওয়ার পর পিছন ফিরে দ্যাখে ছেলেটা ওর পিছু নিয়েছে! দ্রুত পায়ে হাটতে থাকে ঋতু! এইবার ছেলেটা এক্কেবারে ওর সামনে এসে পথ আটকে দাঁড়ায়! ভয় পেয়ে যায় ঋতু, তার চেয়ে বেশি বিরক্তি নিয়ে বলে: :এসব কি অসভ্যতা? পথ ছাড়ুন বলছি!
– কোথায় চলে গেছো তুমি? কত খুঁজেছি জানো? তুমি চলো আমার সাথে! তোমাকে আমার প্রয়োজন!
– কি বলছেন এসব? কাকে খুঁজছেন, কোথায় যাব?
– তুমিই তো সেই যে  ঐদিন রাতে…(কথা শেষ হয়না)
– আমি কেউ না, দেখুন ভালো হবেনা বলছি! পথ ছাড়ুন! (চিল্লিয়ে বলে পাশ কাটিয়ে চলে যাই)
উদয় সেখানেই বসে পরে৷ যার জন্য সে সমস্ত শহর তল্লাশ করেছে, যার জন্য রাতের পর রাত ঘুমাতে পারেনি, যার জন্য পাগল হয়ে ছুটে এসেছে এই গ্রামে সেই কি না এভাবে চলে গেলো?
ঋতুর সবটা মনে আছে। ওইদিন রুপালি খালা ঋতু কে কল দিয়ে বলল “ভালো করে সেজেগুজে চলে আয়। মালদার এক কাস্টমার পেয়েছি, দেরি করিসনা!” ঋতু ফাজলামি করে বলল, “সেজেগুজে কি হবে গো খালা? খানিকক্ষণ পরেই তো সব নষ্ট করে দিবে তোমার ওই মালদার কাস্টমার!” খালা রেগে গিয়ে বলল “ঢং করিস না তো মা* জলদি আয়, মদ গিলে এসেছে, থামতে চাচ্ছেনা!” আসছি বলে মোবাইল রেখে সেজেগুজে চলে যাই খালার বাসায়৷ খালার বাসা একটা পতিতালয়। কিছু মেয়ে এখানেই থাকে, আর কিছু মেয়ে ঋতুর মতো মোবাইল করলে আসে কাস্টমার পাওয়া গেলে৷
ঋতু ঘরে ঢুকে দেখে ছেলেটা মাতাল অবস্থায় বিড়বিড় করছে৷ সে কাছে যায়। ছেলেটার সামনে বসে শাড়ির আচল সরিয়ে বলে “তাড়াহুড়া করছিলেন না কি? কই শুরু করেন!” কথা শেষও হয়না ঠিকমতো অমনি ঋতুর গালে থাপ্পড় দেয় ছেলেটা! “তোদের শুধু শুইতে ভালো লাগে তাইনা রে খা**! টাকা বুঝিস শুধু তাইনা? টাকাই সব তোদের কাছে তাইনা? নে কত টাকা নিবি নে!” বলতে বলতে পকেট থেকে টাকা বের করে ছুড়তে থাকে ঋতুর দিকে! ঋতু নির্বিকার ভঙ্গিতে টাকাগুলা কুড়িয়ে ছেলেটার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে “টাকার গরম দেখানোর জন্য এসেছেন, না কি শরীরের গরম মিটানোর জন্য?” এইবারও ছেলেটা থাপ্পড় দিয়ে ঋতুকে ফেলে দিয়ে বলে “চুপ, এক্কেবারে চুপ!” না এইবার আর চুপ থাকেনা ঋতু। চিল্লিয়ে উঠে, “মারছেন কেন!? কি দোষ করেছি আমি? হ্যা, টাকার জন্য শুই, তাতে আপনার কি? আপনারা আসেন বলেই তো শুই! আসেন কেন? আসেন আবার আমাকেই গালি দেন!? কেন!?” হুশ ফিরে বোধহয় ছেলেটার! কাঁদতে থাকে! কাঁদতে কাঁদতে নিচে লুটিয়ে পরে৷ এইবার ঋতু খানিকটা অবাক হয়ে যায়! কিন্তু কিছু বলেনা৷ ছেলেটা কাঁদতে থাকে বাচ্চাদের মতো৷ একসময় তার কান্না থামে, যদিও চোখের পানি তখনও পড়ছিলো! ছেলেটা নিরবতা ভেঙে বলা শুরু করে, “মা মারা গেছে আজ ১৮ দিন, বাবা ছোটবেলায়৷ বিকেলবেলা বন্ধু ওর বাসায় নিয়ে যায়, সন্ধেবেলা মনে হলো অরিন একা থাকলে ভয় পাবে, ভেবে বাসায় ফিরে আসি৷ অরিন আমার বউ৷ কারেন্ট ছিল না তাই কলিংবেল কাজ করছিলো না, নিজের চাবি দিয়েই গেট খুলে বাসায় ঢুকি। ঘরে ঢুকতে যেয়ে দেখি, দেখি অরিন অন্য এক লোকের সাথে শুয়ে আছে! আমার অরিন! ছেলেটা আবার কাঁদতে থাকে! এবার কান্না আরও জোরে হয়! ঋতু বুঝে উঠতে পারেনা সে কি করবে, কি বলবে! কাছে যেয়ে ছেলেটার মাথায় হাত বুলায়। ছেলেটা শান্ত হয়ে ঋতুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে যায়৷ এবার ঋতু বলতে শুরু করে৷ “আমারও বাবা নাই, আমরা চার বোন। মা অন্যের বাসায় কাজ করে আমাদের পড়ালেখা করায়। কিন্তু সে একা আর কতই বা করবে! আমার বুবুর বিয়ে হয়েছে, স্বামী টাকার জন্যে অনেক মারে বুবুকে! ছেড়ে দিতে বলেছি, মায়ের বোঝা বাড়বে বলে ছাড়ে না! আমার ছোট দুই বোন গ্রামের স্কুলে পড়ে, আর আমি এইখানের কলেজে পড়ি, চাকুরীর অনেক চেষ্টা করেছি পাইনি! যেখানে গেছি সেখানেই বিনিময়ের কথা, বিছানার কথা। এইসব টাকার জন্য করি এটা সত্য, তবে লোভে না, প্রয়োজনে!” একদমে কথাগুলা বলার পর ঋতু দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে৷ ছেলেটা উঠে বসে এইবার বলে “পারলে আমাকে মাফ করে দিবেন! বউ টাকার জন্য বিয়ে করেছিলো। টাকার জন্যেই সংসার করেছে এসব শুনে, দেখে এসেছি তো মাথা ঠিক নেই!” ঋতু বলে, “সবাই এক না, কেউ সংসার খোঁজে টাকার জন্য, আবার কেউ টাকা খোজে সংসারের জন্য! এই যে আমাকে দেখুন, আমি কখনো টাকার স্বপ্ন দেখিনি! সংসারের স্বপ্ন দেখতাম! অথচ ভাগ্য আমাকে টাকা খুঁজতে বাধ্য করেছে! বাধ্য করেছে সংসারের স্বপ্ন মাটি দিতে!” তারপর চুপচাপ সেই রাত কেটে যায়৷
ঋতুর বিবেক জেগে ওঠে। তওবা করে আল্লাহ কাছে আর সিদ্ধান্ত নেয় এ অভিশপ্ত জীবনে না থাকার। গ্রামে ফিরে নিজের জমানো টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন কিনে কিছু মেয়েকে পোশাক বানানোর কাজে রাখে। আর সেসব বিক্রির টাকা দিয়েই সংসার চালায়৷ কিন্তু আজ, আজ এতদিন পর এই ছেলে গ্রামে কেন এসেছে? এসব ভাবতে ভাবতে মাথাটা ভার হয়ে আসে! মাগরিবের আযান শুনে উঠে ঘরে বাতি জ্বলায়, জানালা বন্ধ করতে যেয়ে দেখে উদয় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে! এখনো যায়নি সে! এতক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছে? কেন? কি চায় ও? সাথে মায়াও হয়, সারাদিন বোধহয় খায়নি ছেলেটা! মুখ টা শুকনা হয়ে আছে! ঋতু বের হয়ে আসে। রাগ নিয়েই জিজ্ঞেস করে “কি চান? এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার মানে কি?” উদয় বলে, “অরিন চলে গেছে আমাকে রেখে, বাবা মা তো তারও আগে গেছে! অন্ধকার খুব ভয় লাগে আমার! আমার ঘরে আলো হয়ে আসবা প্লিজ? আর কখনো মারবো না, বকবো না, কিচ্ছু বলবো না সত্যি বলছি! শুধু সংসার করব! প্লিজ না বলোনা!” আরও বলল, “তোমাকে আজ কতদিন থেকে খুজছি! রুপালি খালা, সব কলেজ, রাস্তা বাজার সবখানে খুঁজেছি! হাজারও বার গেছি রুপালি খালার কাছে! তাই হয়তো তার মনে দয়া হয়েছে, তাই ঠিকানা দিয়েছে!” ঋতু বলে, “সব জেনেও কেন সংসার করতে চান এই নষ্টা মেয়ের সাথে?” “খবরদার আমার বউকে আর কক্ষনো নষ্টা বলবা না! নয়তো থাপ্পড় দিবো!” বলে উদয়! ঋতু চোখভরা পানি নিয়ে বলে, “একটু আগেই না বললেন মারবেন না কখনো, আবার এখনি মারতে চাচ্ছেন? কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা?” একেবারে কাছে, নিঃশ্বাস শোনা যায় এতটা কাছে এসে উদয় বললো “শুধু তুমি আমি সত্য! বাকিসব মিথ্যে!” ঋতু বলে, “আমি যে আধার জগতের বাসিন্দা!” উদয় এইবার ঋতুর কপালে আদর একে দিয়ে বলে “আলোতে থেকেও সত্য থেকে থেকেছি নিখোঁজ, আধারেই পেয়েছি পবিত্র আলোর খোঁজ!” 

সম্পর্কিত পোস্ট

শয়তানকে পরাজিত করুন –

শয়তানকে পরাজিত করুন –

কোন এক দাওয়াতে এক ভাবী গল্প করছিলেন যে, এক মহিলা যখন তার Husband রাগ হয় তখন তিনি আয়াতুল কুরসি পড়েন আর তার স্বামী বিড়াল হয়ে যান । তখন আর এক ভাবী বললেন," ভাবী - আয়াতুল কুরসি পড়লে উনার স্বামী বিড়াল হন না বরং ঐ মহিলার সাথের শয়তানটা পালিয়ে যায়” । ভাবীদের এই...

একজন মানুষের গল্প

একজন মানুষের গল্প

দুই টাকার আইসক্রিম, বই সামনে নিয়ে চিৎকার করে পড়া, কলম দিয়ে এক অক্ষর বারবার লিখে হাত ব্যাথা সহ্য করতে করতেই ছোটবেলা কাটিয়ে দেওয়া। একটু বড় হওয়ার পর ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়া। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়া কোনো এক বট তলা। যেখানে বসে আড্ডা দিত কয়েকজন স্কুল পালানো...

অস্ফুট কান্না

অস্ফুট কান্না

লেখা: মোহসিনা বেগম , প্রচণ্ড শীত পড়েছে আজ। চারদিক কুয়াশা যেন চাদর বিছিয়ে রেখেছে। সকাল এগারোটা বেজে গেছে এখনও সূর্যের দেখা নেই। ছুটিতে কয়েকটা দিন গ্রামে থেকে আনন্দ করব কিন্তু প্রচণ্ড শীতে জমে যাচ্ছি। লেপের নীচ থেকে বের হতেই ইচ্ছে করছে না। ওদিকে মা কতক্ষণ ধরে ডেকেই...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *