মানিব্যাগ
প্রকাশিত: মে ১৯, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 2,406 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

লেখকঃ
সামিও রাহমান
(মে -২০১৮)
……………

উৎসর্গঃ সাজিদ ওরফে কষ্ট ফেরিওয়ালা – যাকে আমার প্রায়ই গল্পের প্রধান চরিত্র সুমন মনে হয় ????

হাতে পিতজার প্যাকেট থাকা দৈর্ঘ্যে প্রস্থে সমান ইতালিয়ান লোকটি যখন বাসের অন্যান্য অনেকগুলো সিট ফাকা থাকা স্বত্বেও আমার পাশে এসে বসলেন তখনই আমার সিক্সথ সেন্স ব্রেনের মাঝে অ্যালার্ম বাজাতে শুরু করে – ‘সুমন, সাবধান! সুমন, সাবধান!!’
এমনিতেই ইতালিতে নতুন এসেছি, যাকে দেখি, তাকেই কেমন যেন সন্দেহ লাগে, তার উপর এই হোদল কুতকুত যখন আমার পাশে বসে আড়চোখে আমাকে মেপে দেখছিলো, তখন একই সাথে ভয় এবং বিরক্ত লাগছিলো।
দেশে থাকতে বেশকিছু হাতের কাজ জানা স্বত্বেও সুবিধে করতে না পেরে জমিজমা বেচে ১২ লাখ টাকা খরচ করে মাস খানেক হলো ইতালি এসেছি। কাগজপত্রে কিছু ঘাপলা থাকায় এখানে এসেও এখন পর্যন্ত তেমন সুবিধে করতে পারছি না। বন্ধুর কাছে রাখা শ’ দুয়েক ইউরো আর মানিব্যাগে থাকা খুচরো পঞ্চাশ ইউরো বাদে আর কিছুই নেই। নেহায়েত বন্ধু থাকা খাওয়ার খরচ এখনো পর্যন্ত চায়নি বলে বাচোয়া।
হোদল কুতকুত আমার সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে।
‘কোন দেশ থেকে এসেছো ?’
‘বাংলাদেশ।’
‘সেটা কোথায়?’
‘ইন্ডিয়ার পাশে।’
‘ও, তুমি ইন্ডিয়ান?’
‘হু? হু।’ বাংলাদেশ যে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, এটি ইন্ডিয়ার পাশে অবস্থিত তবে তাই বলে ইন্ডিয়া না – এই হোদল কুতকুতের সাথে সে সব নিয়ে ভ্যাজর ভ্যাজর করা যেত, কিন্তু কি জন্য যেন ইচ্ছে করছে না। হোদল কুতকুতের অবশ্য তার জন্য আমার সাথে ভাব জমানোতে ভাটা পড়ে না। আমিও আমার ভাসা ভাসা ইতালিয়ান ভাষা জ্ঞানে কথা চালিয়ে যাই।
‘তোমরা ইন্ডিয়ানরা নাকি রান্নায় বেশি ঝাল খাও?’
‘হু।’
‘আমরা ইতালিয়ানরাও অবশ্য ইদানিং ঝাল খাওয়া শিখেছি। আমাদের পিতজা তো দুনিয়া বিখ্যাত জানোই, এই পিতজার ভেতর কিছু পিতজা আছে হট অ্যান্ড স্পাইসি। খেলেই ঝালে তোমার পেট ফুটো হয়ে যাবে। হাঃহাঃহাঃ।’ কথাটা বলে হাতে থাকা পিতজার প্যাকেটটা খুলে খেতে শুরু করে। আমি জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখি।
‘খাবে নাকি?’
জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে হোদল কুতকুতের দিকে তাকাতে দেখি আমার দিকে পিতজার প্যাকেট এগিয়ে দিয়েছে। খাবো কি খাবো না – এই নিয়ে যখন দোটানায় ভুগছি, তখনই দেখলাম হোদল কুতকুত চোখের ইশারায় বিপরীত পাশে বসা আরেক ইতালিয়ানকে কি যেন সংকেত দিলো। সাথে সাথে আমার সিক্সথ সেন্স পুনরায় ব্রেনের মাঝে অ্যালার্ম বাজাতে শুরু করে – ‘সুমন, সাবধান! সুমন, সাবধান!!’
‘কি হলো! নাও।’
‘না, ধন্যবাদ।’
‘আরে খাও একটা।’ বলে জোর করে পিতজার একটা পিস আমার হাতে গুজে দিতে চায়। কিন্তু আমিও পেটের পীড়ার দোহায় দিয়ে দূরে সরে যাই।
পিতজার পিসটা না নেওয়ায় হোদল কুতকুতের চেহারা থেকে ‘পীস পীস’ ভাবটা দূরে সরে যায়। তার জায়গায় কেমন যেন একটা কুটিল এবং হতাশা মেশানো অবয়ব ফুটে উঠে।
এরমাঝে বাস নতুন স্টপেজে এসে থামে। স্বয়ংক্রিয় দরজা খুলতেই বাস থেকে দু’জন যাত্রী নেমে যায় এবং একজন যাত্রী উঠে আসে।
হোদল কুতকুত পিতজা খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে হঠাতই আমাকে প্রশ্ন করে – ‘তোমার কাছে দু’টো দশ ইউরো হবে? আমার একটু বিশ ইউরোর ভাংতি দরকার ছিল।’ আমি কি করবো বুঝে উঠতে না পেরে মানিব্যাগ বের করে দু’টো দশ ইউরোর নোট তার দিকে বাড়িয়ে দেই। তবে মানিব্যাগটা একটু আড়াল করে রাখি যেন ভেতরে কত ইউরো আছে দেখতে না পায়।
হোদল কুতকুত মনে হয় মানিব্যাগের ভেতর কত ইউরো আছে দেখতে না পেয়ে আমার উপর একটু রুষ্ট হয়। তাই আমার কাছ থেকে দশ ইউরোর নোট দু’টো নিয়ে সস্তা একটা থ্যাঙ্কস বলে নিজের মানিব্যাগ থেকে বিশ ইউরোর একটা নোট বের করে নিরস বদনে আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়। আমি অবশ্য এই ফাকে আড়চোখে দেখে নেই তার মানিব্যাগে বেশকিছু একশ ইউরোর কোণা উঁকিঝুঁকি মারছে।
খাওয়া দাওয়া শেষে হোদল কুতকুত ঝিমুতে থাকে। আমিও জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকি। এভাবে কিছুক্ষন যাওয়ার পর হোদল কুতকুত ঝিমুতে ঝিমুতে হঠাতই আমার গায়ে ঢলে পড়ে। আমি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে সরে বসি। আমার নড়াচড়া টের পেয়ে হোদল কুতকুতও সরে বসে। তবে সেটা মিনিট দুয়েক স্থায়ী হয়। দুই মিনিট পর আবারো আমার গায়ে ঢলে পড়ে। আমি আর থাকতে না পেরে পরের স্টপেজে বাস থামতেই নেমে পড়ি। তবে নামার ঠিক আগ মুহূর্তে হোদলের দিকে তাকাতেই দেখি সে বিপরীত পাশে বসা সেই ইতালিয়ানকে থামস আপ দেখিয়ে কি যেন সংকেত দিলো।
বাস থেকে নেমেই প্যান্টের পেছনের পকেটে হাত দিয়ে থমকে যাই। পঞ্চাশ ইউরো সমেত মানিব্যাগটি নেই। আমি এক মুহূর্ত থমকে থেকে পরমুহূর্তেই জনি ডেপের ন্যায় একটি ক্রূর হাসি দিয়ে সামনের পকেট থেকে হোদল কুতকুতের মানিব্যাগটি নিয়ে পেছনের পকেটে রেখে ফিরতি বাসে উঠে পড়ি।

সম্পর্কিত পোস্ট

মা

মা

ইশু মণি বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে তাসবিহ্ ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ করে ঘরের এক কোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।টিনের চালে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ায় অনবরত শব্দ হচ্ছে, বাসার সাথে লাগানো পেয়ারা গাছটার বিশাল বড় ডালপালা গুলো চালের উপর চলে এসেছে বারবার সেগুলো বারি খাচ্ছে যার কারণে শব্দ...

শখের পাখি

শখের পাখি

লেখিকা-উম্মে কুলসুম সুবর্ণা এই তো সেদিন মেলা থেকে বাসার ছোট্ট ছেলেটা আমাকে কিনে এনেছিলো। তখন তো ছানা পাখি ছিলাম এখন বুড়ো হয়েছি। বাসায় মোট ছয়জন থাকে। আগে ভাবতাম দুই রুমের ক্ষুদ্র ফ্ল্যাট এ এত গুলো মানুষ কিভাবে থাকতে পারে। পরে বুঝলাম এই সব কিছু ছেলের বউয়ের চমৎকার। অনেক...

নীল কমলিনী

নীল কমলিনী

অনুগল্প: নীল কমলিনী লেখা: অনুষ্কা সাহা ঋতু . চন্দনের শেষ ফোঁটাটা দিয়েই মা ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। ছোট বেলায় এমন কত সাজিয়েছেন আমাকে। তখন মুচকি মুচকি হাসতেন, আর আজ কাঁদছেন। মা টাও ভারি অদ্ভুত। আচ্ছা, তবে কি দুটো সাজের অর্থ ভিন্ন! কি জানি? . হঠাৎ শঙ্খ আর উলুধ্বনি ভেসে...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *