লেখকঃ
Moniruzzaman Sarkar
(ফেব্রুয়ারী’১৮)
…………….
প্রায় দুইবছর ধরে সরকারি চাকুরি নামক সোনার হরিণের পেছনে ছুটে চলা এক ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত,বিধ্বস্ত, শোচনীয়ভাবে পরাজিত যুবক নাবহান। সমাজের চোখে সে এখন জীবন্ত জঞ্জাল। সদা হাস্যোজ্জ্বল পরিবারের একমাত্র দুশ্চিন্তার কারণ এখন সে। গেল দুবছর সময় যেন তার জীবনে মরুভূমির তপ্ত ল্যু হাওয়া। অরিনের সাথে কাটানো দুরন্ত সময়গুলোকেও যেন স্থবির করে দিয়েছে বেকারত্ব নামক যন্ত্রণা।মেয়েটা অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। উচ্চতা মাঝারী। লম্বাটে মুখমন্ডল। শ্যামবর্ণের মেয়েটার চুলগুলো অদ্ভুত সুন্দর। সবমিলিয়ে ভয়ংকর সুন্দরী হয়তো সে নয়, তবে তাকে অগ্রাহ্য করার সাধ্যও বোধকরি অনেক পুরুষেরই নেই। তবে সম্ভবত তার চোখ দুটোই তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করেছে। চোখ দুটোর মাঝে যেন মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতা। সে গভীরতা মাপতে পারে এমন সাধ্য কার! অরিনের মুখটা আজ অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশিই কালো দেখাচ্ছে। কালবৈশাখীর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ঈশান কোণ যেরকম দেখায়, অনেকটা সেরকম। ছেলেরা কয়েক টাইপের হয়। যেমন: সেয়ানা টাইপ, ঘাউরা টাইপ(নেতিবাচক সেয়ানা), ভ্যাবলা টাইপ ইত্যাদি…। অরিন যে বিরাট সমস্যায় পরেছে তা নাবহানের মতো ভ্যাবলা টাইপের ছেলেও বুঝতে পেরেছে।
অরিন: তা এভাবে কী জীবন চলবে?
নাবহান:(অন্য সময় হলে বলতো হ্যাঁ, আজ পরিবেশ ভয়াবহ গুমোট) না।
– কত মানুষতো কতো কিছু করে। তোমারই কিছু হয় না।
– হুম
– বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে।
-বুঝলাম
-বুঝলাম মানে কি?
-বুঝলাম মানে বুঝলাম।
– ফাইজলামি কর?
-না
– ফোন বন্ধ রাখো কেন?
– চার্জ ছিলো না
– তুমি কী আমাজন ডট কমের সিইও যে ফোন চার্জ দেয়ারও সময় পাওনা? তুমি সব ব্যাপারেই এত উদাসিন কেন?
– নাবহান কথাগুলা শুনলো তবে উত্তর করলো না। কাষ্ঠ হাসি দিলো। ফিল্ম ওয়ালা ক্যামেরার যুগে মানুষ ছবি তুলতে গিয়ে পোজ দেওয়ার সময় যে রকম হাসি দিতো অনেকটা সেরকম। নাবহানের এই অপরিচিত হাসি দেখে অরিনের মনটা হাহাকার করে উঠলো। তবে অরিন মুখে কিছুই বললো না। ডুবন্ত সূর্যটা নাবহানের ভ্যাবলা মুখটাকে মায়াবী করে তুলেছে। অরিন নাবহানের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কারও মুখে কোন কথা নেই। কখনো কখনো নিরবতাই সবচেয়ে কার্যকর ভাষা….
০ Comments