লেখিকাঃ- জিন্নাত রিমা
.
অভাগীর ভালো একটা নাম আছে।আশা। শৈশবে বেশ চঞ্চল ছিল। অভাবের সংসার ছিল তাদের। দিনমজুর বাবা কোনরকম টেনেটুনে পাঁচ সদস্যের সংসারের ভরণপোষণ করতেন। আশা ছিল তিন বোনের মধ্যে সবার বড়। একদিনের ডায়রিয়ায় মারা যায় আশার বাবা। বাবার পরে সংসারের ভরণপোষণের দায়িত্বটা এসে পড়ে মায়ের কাঁধে। এলাকার দুয়েকটা বাড়ির ঝিয়ের কাজ করে সংসার টেনে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আশা তখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। কতইবা বয়স! স্কুল ছেড়ে লেগে যায় ইট ভাঙার কাজে। অবশ্য তার কাছে ইট ভাঙার কাজটাই ভালো লাগে। যে মেয়ের স্কুল ড্রেসের জন্য প্রতিদিন শিক্ষকের বেত্রাঘাত এবং অপমান সহ্য করতে হয় সে মেয়ের জন্য ইট ভাঙার কাজটাই শ্রেয়। এতে করে দিন শেষে কিছু টাকা হাতে আসে। যা দিয়ে জীবনটা বাঁচিয়ে রাখা যায়। আশা নিজের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেনি মোটেও। তার লক্ষ ছিল ছোট বোন দুটোকে অনেকদূর পর্যন্ত পড়াবে। তাদের সংসারের অভাব মোচন করবে তার ছোট দু’বোন।
দুই বোনের পড়ালেখা এবং পরিবারের খরচ জোগাতে আশা যোগ দিল গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে।
বোন দুটোকে মানুষের মত মানুষ করেছে সে। দু’বোনই আজ শিক্ষিকা। কিন্তু তারা পরিবারের অভাব মোচন করেনি। তাদের ঘেন্না লাগে উচ্চ শিক্ষিত এবং শিক্ষিকা হয়ে একজন অক্ষরজ্ঞানহীন গার্মেন্টস কর্মীর সাথে কথা বলতে।
বছর কয়েক আগে আশার মা মারা যায়। মা মারা যাওয়ার পর আশা শহরে চলে আসে। গার্মেন্টসের পাশের ছোট্ট এক বস্তিতে এক কামড়া বিশিষ্ট একটা ঘরে বসবাস করছে সে। গ্রামে আর ফিরেনি সে। অবশ্য ফেরার প্রয়োজনও নেই। তার ছোট দু’বোন নিজেদের পছন্দের পাত্র খুজে বিয়ে করে সংসার করছে। গ্রামের কেউ আর তাকে টানেনা। গ্রাম্য মানুষের মতে গার্মেন্টস কর্মী মানেই খারাপ মেয়ে। সবাই আড়চোখে দেখে। কানাকানি করে। আশা জীবনসঙ্গী হিসেবে খুজে পায় তারই কর্মস্থলের ইলিয়াসকে।
দু’জনে বিয়ে করে সংসার পেতেছে বস্তির ছোট্ট ঘরটাতে। বেশ ভালোই কাটছিল আশা-ইলিয়াস দম্পতীর। দেখতে দেখতে ছয়টা বছর কেটে যায়। তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় দুই মেয়ে। বড় মেয়ে জন্ম নেওয়ার পর, আশা – ইলিয়াস খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ে। মেয়ের নাম রাখে, খুশি। যার বয়স পাঁচ। ছোট মেয়ের নাম রাখেন সুখি। যার বয়স তিন। দুই মেয়ে নিয়ে বেশ সুখেই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু এই সুখ আশার কপালে বেশিদিন সইল না। বিয়ের ছয় বছরের মাথায় গার্মেন্টসের ভবন ধসে গিয়ে কর্মস্থলে মারা যায় ইলিয়াস।
একদিকে ইলিয়াসের মৃত্যু শোক অন্যদিকে ছোট্টছোট্ট দু’মেয়ের জীবন বাচাঁতে পাগল প্রায় হয়ে যায় আশা। বিয়ের পর ইলিয়াসে উপার্জনেই চলেছিল তাদের সংসার। আশা কাজ করতে চাইলেই ইলিয়াস বলতো,’আমি বেঁচে থাকতে তোমার কাজ করে উপার্জন করতে হবেনা।আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো সংসার চালাতে।’ তাই বাধ্য হয়ে গার্মেন্টসের কাজটা ছেড়ে দিতে হয় আশার। কোনরকম স্বামী হারানোর শোক কাটিয়ে দুই মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার উঠেপড়ে লেগে যায় জীবন নামক নদীতে সাঁতার কাটতে। আবার তার পরিচয় একজন গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে। স্বামীর মৃত্যুর পরপর তার আশা নামটা হারিয়ে যায়। নিজেই নিজের নাম রাখে অভাগী। আজকাল কেউ জিজ্ঞেস করলেও আশা নামটা মুখে আসেনা তার। গার্মেন্টসের কাজ করে কোনরকম মা মেয়ে তিনজন খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে। মেয়েদের পড়ালেখা করানোর সামর্থ্য হয়নি তার। ফলে দুই মেয়েই নিরক্ষর।
দুই মেয়ে বড় হয়েছে। বড় মেয়ে খুশি একটু বোকা ধরনের। কারো সাথে খুব একটা মেলামেশা করেনা বললেই চলে। এমনকি ছোট বোন সুখির সাথেও না। খুশির বিয়ে হয়। কিন্তু সে বিয়ে বেশিদিন টিকেনি। স্বামীর বিয়ের এক বছরের মাথায় আরেকটা বিয়ে করে তালাকে দেয় খুশিকে। ফিরে আসতে হয় মা বোনের কাছে। বস্তির সেই ছোট্ট ঘরটাতে।
আশা এখন শয্যাগত। সংসারের হাল ধরেছে ছোট মেয়ে সুখি। গার্মেন্টসের মায়ের জায়গাটা দখল করে নিয়েছে সুখি। সেও একজন পরিপূর্ণ গার্মেন্টস কর্মী।
মাঝরাতে আশা স্বপ্ন দেখে সে আগের মতোই একজন যৌবতী কন্যা।তার স্বামী ইলিয়াসও যৌবক। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে একটা ফুলবাগানে হাত ধরে হাটছে। হাটতে হাটতে দু’জনেই বলছে, এই সে চিরস্থায়ী সুখের স্থান। আজ থেকে আমরা এইখানের বাসিন্দা।
ভোরের দিকে আশার শরীরের জ্বর তীব্র মাত্রা ধারণ করে। বিড়বিড় করে উল্টাপাল্টা কথা বলে যাচ্ছে। দুই মেয়েকে ডেকে পাশে বসায়। বিড়বিড় করে বলতে থাকে,’জানিস আজ তোদের বাবা আমাকে নিয়ে যাবে। আমরা চিরস্থায়ী সুখী স্থানের বাসিন্দা হতে চলেছি। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের দুঃখ কষ্ট নিয়ে আফসোস করিস না। দেখবি একদিন তোদের জন্যও সেই চিরস্থায়ী সুখের সন্ধান নিয়ে আসব।’
বড় মেয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে চোখের অশ্রু ঝরাচ্ছে। ছোট মেয়ে সুখি মাকে ধমক দিয়ে বলল,’মা একদম চুপ করো। এসব বলবেনা তুমি। আমি তোমাকে বাবা কাছে যেতে দিবনা। একটু পরেই ডাক্তার নিয়ে আসবো। তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। ‘
আশা নামের অভাগী ছোট মেয়েকে ডাক্তার আনার সময়টা দেয়নি। তার আগেই চিরতরের চোখ বুজে নিয়েছে। আশা চোখ বুজতে বুজতে বলে,’ আল্লাহ তোমার পৃথিবী নামক ক্ষণস্থায়ী শস্যক্ষেত্রে আমার আরও দুই অভাগী রেখে গেলাম। তাদের তুমি দেখে রেখো।’
মা
ইশু মণি বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে তাসবিহ্ ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ করে ঘরের এক কোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।টিনের চালে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ায় অনবরত শব্দ হচ্ছে, বাসার সাথে লাগানো পেয়ারা গাছটার বিশাল বড় ডালপালা গুলো চালের উপর চলে এসেছে বারবার সেগুলো বারি খাচ্ছে যার কারণে শব্দ...
যৌবক-যুবক
বুজে-বুঁজে
গল্পে টাইমিং এর ব্যাপারটা একটু এলোমেলো হয়েছে। আপনি ভালভাবে ভেবে দুই এক পড়লেই ঠিক করে নিতে পারবেন।
শুভ কামনা 🙂
ধন্যবাদ আপু।
অনেক ভালো ছিল। শুভ কামনা
ধন্যবাদ আপু।
সত্যিই অনেক সুন্দর হইছে কবিতাটা।
আশার জীবনের দূর্ভাগ্যের কথা ফুটে উঠেছে।
যার কপালে সুখ নেই।কোনদিনই হয় না।
সুখ যদি থাকতো তাহলে এতো কষ্ট করার পরও আশার জীবনটা এমন হতো না।
বোনদের জন্য এতো কিছু করলো শেষ মুহূর্তে বোনরাই ভুলে গেলো। স্বার্থপররাই ভালো থাকে।
আশার মতো তার মেয়েদের কপালেও সুখ থাকলো না।
খারাপ লাগলো আশার জন্য।
বাস্তবে আশার জীবনের গল্পের মতো কতো গল্প রয়েছে।তাদের জীবনের গল্প কেউ শুনতে চায় না।
সমাজে ঘৃনার চোখে বাস করে।
যৌবক–যুবক
যৌবতি–যুবতি
বাবা কাছে–বাবার কাছে
শুভ কামনা রইলো।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু ভুল বানান ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।এভাবেই পাশে চাই।
আমার কাছে গল্পটা এলোমেলো লাগলো। থিমটা সুন্দর ছিল, আপনি আরেকটু সময় নিয়ে গল্পটা বড় করে গুছিয়ে লিখলে আরো ভালো লাগত। তাদের মত কত অভাগী যে আমাদের সমাজে আছে, তার হিসেব নেই,প্রত্যেকেই একটা সুন্দর জীবনের আশায় থাকে, কিন্তু সৌভাগ্য তাদের সাথী হয় না। বানানের প্রতি সচেতন হবেন অনেক ভুল আছে।
দুয়েকটা- দু’একটা।
ঝিয়ের- ঝি’য়ের।
ভবিষ্যত- ভবিষ্যৎ।
লক্ষ- লক্ষ্য।
দুটোকে- দু’টোকে।
কামড়া- কামরা।
ধসে- ধ্বসে।
বাচাঁতে- বাঁচাতে।
যৌবতী- যুবতী।
যৌবক- যুবক।
হাটছে- হাঁটছে।
লিখে যান। শুভ কামনা আপনার জন্য।
ধন্যবাদ আপু। ভুল বানান গুলো ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। আর আপু এখনও তেমন লিখিনা তাই এলোমেলোই হয়। তবে চেষ্টা করছি।
এটা গল্প নাকি কবিতা। জানালে খুশি হতাম।
গল্প ভাইয়া
তবে কবিতার বিভাগে কেন?
গল্পের থিম ভালো ছিল, আরও একটু গুছিয়ে লিখলে আরও বেশি ভালো হত। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য…
কবিতার ভাব ধারা পেলাম না,
চরণ এলোমেলো,
বানান, শব্দ গঠন, বাক্য এই দিকগুলো নজর দিবেন?
যেমনঃ প্রথম চরণ টি এমন হওয়া দরকার ছিলো,
অভাগী ছিলো তাঁর নাম,
তাঁর ছন্দ নাম কি জানেন,
না তো সকলে তাকে আশা
ডাকিত।
শুভকামনা
আপু এটা কবিতা না। অনুগল্প। কবিতার লিংকে এডমিনরা ভুলে দিয়েছেন।
এটা তো গল্প! কবিতার লিস্টে রাখা কেন?
এডমিনরা ভুলে দিয়েছেন আপু।
অনেক ভালো লেগেছে।আশার মতো কিছু অভাগী সারা জীবন দিয়েই যায়,কিছু নিতে পারে না।তাদের জীবনে দুঃখ,কষ্ট ছাড়া আর কিছু নেই।তারা নিজেদের এতোই ছোট মনে করে যে তারা নিজেদের অধিকার আদায় করে নেয় না।
তাদের জীবনটাই নিয়তির নির্মম পরিহাস।
গল্পটা আরেকটু বড় করলে ভালো হতো।
বানানে কিছু ভুল আছে।
পরেরবারের জন্য শুভকামনা রইলো।