গল্প লেখকঃ
সুর্বনা ইসলাম
(মার্চ – ২০১৮)
……………
তিহান হাসি দেওয়ার পর ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। মা ফোস করে একটা নিঃশাস ছাড়ল। সে ভাবতে থাকে কে জানে এই বাদর ছেলেটা নতুন করে কি বাদরামি করবে।
রাতে খাবার টেবিলে রীতিমত তুলকালাম বেধে গেলো। এই বাসার সবার চেয়ার আলাদা করে রাখা বাবার জন্য একটা মার জন্য একটা তিবুর জ্ন্য একটা তিশির জন্য একটা (তিবুর বড় বোন) তানির জন্য একটা (তিবুর ছোট বোন কিন্তু তিহানের বড়) আর তিহানের জন্য একটা । যেহেতু তিহান বাসার সবচেয়ে ছোট তাই তার চেয়ার টাও সবচেয়ে ছোট। আজ ঠিক কেনো যেন তিহানের চেয়ার টাতে বসতে ইচ্ছে হল না। আজ তার হঠাৎ করেই তিবুর চেয়ারে বসতে ইচ্ছে করছে। তাই সে চুপ করে তিবুর চেয়ারে বসে পরল। সবাই যে যার মত করে বসে খাবার টেবিলে এসে যে যার চেয়ারে বসল। কিন্তু যখন তিবু এলো সে দেখল তার চেয়ারে তিহান বসে আছে। তিবু চুপচাপ শান্ত ছেলে সে কখনো তিহান কে কিছু বলে না। সে চুপ করে গিয়ে তিহানের চেয়ার টাতে গিয়ে বসে রইল। কিন্তু যেহেতু তিহানের চেয়ার অনেক বেশি ছোট তাই তিবু শান্তি মত বসতে পারল না কিন্তু তাও সে কিছু বলল না। তিবু নড়াচড়া করতে থাকল।
তিবুর মা তিবুর নড়াচড়া দেখে ভারি বিরক্ত হলেন। প্রথমেই তিনি তিবুকে কিছু বললেন না। খানিক বাদে তিনি বুঝতে পারলেন আজ তিহান তিবুর চেয়ারে বসেছে। মা অনেকটা ধমকের সুরে তিহানকে বললেন
– তিহান তুমি কেন তিবুর চেয়ারে বসেছ?
তিহান কিছু বলল না। কারন তার কাছে মনে হল এই কথার উত্তর না দিলে তেমন কিছু হবে না (যদিও তার ধারনা পুরপুরি ভুয়া)
মা হাল্কা পাতলা রাগ থেকে এবার ভংয়কর ভাবে রেগে গেলেন। তিনি বললেন
-তিহান তুমি কিছু বলবে না আমি যাব তোমার কাছে।
তিহান কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিলো
-আমার চেয়ারটা এখন আর আমার ভাল লাগছে না। তাই আমি আজ থেকে তিবু ভাইয়ার চেয়ারে বসবো।
ভাইয়ার চেয়ারটা ভাইয়ার মতই সুইট।
এটা বলে তিহান ফোকলা দাঁতে হাসি দিল। কিন্তু তার হাসি দেখে কেন যেন মা আরও রেগে গেলেন। এরপর তিনি বললেন
-না তা মোটেই সুইট না তুমি গিয়ে নিজের চেয়ারে বসো। তিবুর তোমার চেয়ারে বসতে সমস্যা হচ্ছে।
তিহান মুখ শক্তো করে সবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। পাঁচ মিনিট পর সে বলল
– না আমি আজ তিবু ভাইয়ার চেয়ারে বসব শুধু আজ না রোজ তিবু ভাইয়ার চেয়ারে বসব।
মা এবার সাইক্লোন ঝড়ের মত রুপ নিলেন হুংকার দিয়ে বললেন,
– তুমি যদি এখন না ওঠ কালকে সান্তা মিস কে বলবো পৃথিবির সব ম্যাথ হোম ওয়ার্ক দিয়ে যেতে। এর সাথে বাকি সাব্জেট তো আছেই।
তিহান আর কাউকে ভয় না পেলেও সান্তা মিসের ম্যাথ হোম ওয়ার্ক কে চরম ভয় পায়।
সে আবারো চুপ করে রইল। হঠাত সে তার চেয়ার থেকে উঠে মুখ থেকে একদলা থুথু ফেলে দিল চেয়ারের উপর। এতে সবাই বেশ অবাক হলো।তার সাথে নাকের ময়লাও লাগিয়ে দিল
থুথুর ওপর। এরপর সবার দিকে তাকিয়ে বলল
– কেউ যদি এই চেয়ার টা তে বসতে চাও তাহলে বসতে পার।এখন আর আমার কোন সমস্যা নেই। তিবু ভাইয়া চাইলে এটা মুছে বসতে পারে। এটা বলে তার দুটো দাত ছাড়া মারি নিয়ে চমৎকার একটা হাসি দিল।
তানি বলল -তিহান তুমি এটা কি করেছ?
তিশি বলল- তুমি একটা খাটাস।
তিবু কিছু বলল না শুধু অবাক হলো।
বাবা বোধ হয় তার কাছে এটাই আশা করেছিল কারন শুধু ফোস করে একটা নিঃশাস ফেলল। আর মা তো রেগে মেগে আগুন।
এরপর ঐ চেয়ারটা কে আর কখনো দেখা যাই নি। ঠিক কি কারনে যেন ঐ চেয়ারে বসতে আর কেউ কখনো রাজি হয়নি।
০ Comments