সোয়েটার
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০১৮
লেখকঃ

 1,212 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ

সোয়েটার
সজল আহমেদ জয়

— মা , ও মা এইবারও কি বাপজান আইবো না ? বাপজান কি আমাগো ভুইলা গেছে ?

জমিলা বেগম তার আট বছরের ছেলের মুখে কথাটা শুনে হকচকিয়ে গেলেন । কি বলবেন বুঝতে পারছে না । তিন বছর যাবৎ তার ছেলেকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে আসছেন তিনি একেক সময় একেক কথা বলে । রাত প্রায় অনেক হয়েছে । ঘরে জালানো দোয়াতটাও প্রায় নিবু নিবু কারণ দোয়াতের তেল শেষের দিকে । এদিকে শীতও বেশ‌ পড়েছে । আজকে অন্য দিনের চেয়ে একটু শীত বেশি । জমিলা বেগম তার ছেলেকে তার কাছে নিয়ে কাঁথাটা আর কয়েক জায়গায় জোড়াতালি দেওয়া লেপটা ভালোভাবে দিয়ে গায়ে দিয়ে বলতে লাগলো

— না রে বাবা তোর বাপজান আমাগো ভুলে নাই ।
— তাইলে আমাগো‌ সাথে দেখা করতে আসে না কেন ?
— তোর বাপজান একটা বড় একটা কাজে গেছে তো তাই আসতে পারতেছে না কিন্তু আইবো তুই চিন্তা করিস না বাপ ।
— তুমি তো খালি কউ আইবো । আসে না তো ।
— আইবো‌রে বাপ কিছু দিনের মধ্যেই ।
— সত্যি কইতাছো মা ।
— হো বাপ সত্যি কইতাছি ।
— মা সেদিন না দেখলাম শফিকের বাপে ওকে আর ওর মাকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে গেছিল । অনেক মজা করেছে ওরা । আসার সময় ওর বাপ ওরে শীতের জন্য মেলা থেকে নতুন সোয়েটার কিনে দিছে । আসার সময় ওর সাথে দেখা হইলে ও আমাকে অনেক আনন্দের সাথে সোয়েটার দেখাইছিল । জানো মা কত সুন্দর দেখতে সোয়েটারটা । আমার না সোয়েটারটা অনেক ভাল লাগছে । বাপজান আইলে আমরাও মেলায় ঘুরতে যামু । মেলায় যাইয়া সারাদিন ঘুরমু, অনেক মজা করমু । আসার সময় বাপজান রে কমু শফিকের সোয়েটারটার মতো আমারে একটা কিনা দিতে । মা তুমি কিন্তু বাপজান রে কইবা আমারে কিনা দিবার ঐ রকম একটা । অনেক দিন হইলো নতুন কোন জামা পড়ি না মা । তুমি যেটা রফিক চাচার বাসায় কাজ করার সময় তার ছেলে‌টার টা চাইয়া আইনা দিছিলা ঐটা মা নষ্ট হয়ে গেছে । কয়েক জায়গায় ছিঁড়েও গেছে । তুমি তো সেইদিন সেলাই করে দিলা মনে নেই তোমার মা ? দেখছো তো সোয়েটারটা কেমন হয়ে গেছে ? বাপজান আইলে‌ কিন্ত এইবার নতুনটা কিনে দিতে কইবা । আমার সোয়েটারটা অনেক পছন্দ হয়ছে মা ।

ছেলের কথা শুনে জমিলা বেগমের চোখে পানি চলে আসে পরেছে । অবাধ্য হয়ে নিরবে কয়েক ফোঁটা পানি ঝরে পড়ল তার চোখ থেকে । কয়েক বছর আগে তারও সুখের সংসার ছিল । সে তখন অনেক ছোট । বয়স আর কত হবে তখন চৌদ্দ বা পনেরো এর বেশি না । জমিলা বেগমের বাবা তাকে অল্প বিয়ে দিয়ে দেন রশিদ খাঁর সাথে কারণটা হয়তো অতি দরিদ্রতা বা তার ঘাড়ে থেকে বোঝা কমাতে । বিয়ের পরে তাঁদের সংসার জীবন ভালো চলছিল আর চার-পাঁচটা সাধারণ মানুষদের মতো । কিন্তু তার কপালে সুখ বেশি দিন রইল না । রশিদ খাঁ তাঁদের রেখে চলে যায় । তখন তাঁদের ছেলে কেবল হাঁটতে শিখেছে । রশিদ খাঁ কাজের কথা বলে বাড়ি থেকে সেই যে বেরিয়ে গেল সে আর ফিরে আসল না । গ্ৰামবাসীরা সবাই বলছে তাঁরা নাকি রশিদ খাঁকে অন্য মেয়েকে নিয়ে গ্ৰাম থেকে বের হয়ে যেতে দেখেছে । কিন্তু জমিলা বেগম বিশ্বাস নাই । মেয়ে মানুষ তো স্বামীর প্রতি তাদের অনেক বিশ্বাস । যতক্ষণ তাদের নিজেদের চোখে না দেখবে বিশ্বাস করবে না । আজ পর্যন্ত তিনি এই বিশ্বাস নিয়ে আছেন রশিদ খাঁ ফিরে আসবে তাঁদের জন্য । কিন্তু তার এই আশা আজ প্রতি মুহূর্তে নিরাশায় পরিণত হচ্ছে । গ্ৰামের অনেকেই তাকে নতুন বিয়ে করতে বলেছে কিন্তু জমিলা বেগম করেন নি কারণ তার ছেলের মুখে দিকে তাকিয়ে । আজকালটাও বিভিন্ন প্রশ্ন করতে শুরু করছে । বুঝার বয়স হচ্ছে আজ না হয় কাল সব বুঝতে পারবে যে ওর বাপ আর আসবে না তাঁদের কাছে । জমিলা বেগম ভাবতেছে এইভাবে আর কতদিন মিথ্যে বলে যাবে ?

— মা , ও মা । কি হলো কিছু কউ না কেন ? ঘুমিয়ে পরছো মা ?

জমিলা বেগম ছেলের কথা শুনে তার চোখ মুছে বলতে লাগলো

— ঠিক আছে বাপ । তোর বাবা আসলে সব কিনে দিতে বলমু । তুই এখন ঘুমিয়ে পড় । অনেক রাত হয়েছে । আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই তুই চোখ বন্ধ কর ।

জমিলা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন । আজ রাতে তার ঘুম আসবে না । স্মৃতিগুলো তার চোখের পাতায় এসে ভর করেছে । জমিলা বেগম ছেলের বুলিয়ে দিতে দিতে এক দৃষ্টিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছেন । হয়তো ভাবছেন আর কিছুক্ষণ পর ভোর হয়ে যাবে । নতুন আর একটা দিন শুরুর সাথে ছেলের প্রশ্নগুলোর জন্য নতুন কোন মিথ্যে বলতে হবে তার ছেলেকে বা ভাবছেন ধার করে হলেও এইবার ছেলের ইচ্ছেটা পূরণ করতে হবে তাকে ।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *