স্টেশন মাস্টার
প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০১৮
লেখকঃ augustmault0163

 2,977 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ augustmault0163

গল্প: স্টেশন মাস্টার
লেখা: জুয়েল ইসলাম

বিদায়ের ক্ষণে সূর্যের রক্তিম লালা আভা ছড়িয়ে পড়ছে জঙ্গলের গাছপালার ফাঁকে ফাঁকে।তীক্ষ্ণ আলোর পথ বেয়ে দৃষ্টির সীমানার বাইরে পথচিহ্ন ফেলে যায়। নীড়ে ফিরতে শুরু করেছে ক্লান্ত অভিমুখী মানুষগুলো।কিছুটা বন-জঙ্গলে ঘেরা প্রাকৃতিক অনাবিল সৌন্দর্যময় চন্দ্রপুর গ্রাম।গ্রামের উত্তর-পশ্চিম দিকে দিয়ে চলে গেছে রেলস্টেশন। নাম দূর্গাপুর স্টেশন।নিরব,নির্জন বন-জঙ্গলে ঘেরা দূর্গাপুর স্টেশন। যতটুকু দৃষ্টি যায় জায়গাটা পুরো জনমানবহীন।লতাপাতা আর ঝোপঝাড়ে ঘেরা স্টেশনের আশপাশ। বসতবাড়িও অনেকটা দূরে দূরে অবস্থিত।এখানের সন্ধ্যা নেমে আসে গাঢ় কালো অন্ধকারের অবির্ভাবে।

প্রকৃতি নিস্তব্ধ হয়ে আসছে।অন্ধকার হয়ে আসছে চারপাশ।খাকি রঙ্গের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন আব্দুর রহমান।গায়ে ঢিলেঢালা শার্ট,পরনে ময়লাটে প্যান্ট।বয়স হবে প্রায় পঞ্চাশের মতো।কিন্তু শরীরে চামড়াগুলো ঢিলে হয়ে গেছে।দৃষ্টি অনেকটা ক্ষীণ মনে হচ্ছে।
অনেকটা অবহেলার শিকার হয়ে প্যান্টের যে নাজেহাল অবস্থা তা খুব সহজেই অনুমান করা যায়। মুখটাও খুব মলিন।ক্লান্তির একটা ভাব মুখে দৃশ্যমান।

দূর্গাপুর স্টেশনে একমাত্র স্টেশন মাস্টার হলেন আব্দুর রহমান। প্রতিদিন নিয়ম করে সন্ধ্যা হলেই তাকে বাড়ী ফিরতে হয়।দিনে মাত্র দু’বার ট্রেন আসে এ স্টেশনে।তাই অনেকটা ঝামেলামুক্ত হয়েই বাড়িতে ফিরতে পারেন।
যে কেউ হঠাৎ করে এ স্টেশন দেখে ভূতুড়ে স্টেশনে মনে করতে পারে।কারণ সপ্তাহে মাত্র পাঁচ-দশজন লোক ছাড়া কেউ তেমন এ স্টেশনে আসেননা।যারা আসেন তারা শহরে যাবার উদ্দেশ্যে এখানে এসে থাকেন।এরকম নির্জন একটা জায়গায় প্রায় দশবছর ধরে চাকরি করছেন রহমান সাহেব।বেতন খুব একটা বেশি নয়।তবে বাবা-মেয়ে দুজনে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে একটা মাস পার করে দিতে পারেন।

প্রতিদিন প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা এই নির্জন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পেরিয়ে তাকে গ্রামে যেতে হয়।আজো প্রতিদিনের মতো একটা উৎকণ্ঠাভাব নিয়ে দ্রুত হেঁটে চলছেন বনের মধ্য দিয়ে।এই পথচলায় ভয় তাকে কখনো কাবু করতে পারেনি।হাজারো দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে সাফল্যে পৌঁছানো দীপ্ত সৈনিকের মতো হেঁটে চলছেন রহমান সাহেব।সংশয় মনে খুব ঠান্ডা আবহাওয়াতেও বিন্দুবিন্দু ঘাম কপালে জমাট হচ্ছে।

সারাদিন মেয়েটাকে একা একটা ঘরে বন্ধি করে আসেন রহমান সাহেব। বোবা মেয়েটা সারাদিন বাবার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকে।নিয়ম করে প্রতিদিন ঘরের দরজায় তালা দেওয়ার সময় নিরবে অশ্রু বিসর্জন দেন আব্দুর রহমান।তবু কোনো অকল্যাণের ছায়া মেয়ের উপর পড়তে দিতে চাননা।জানে মেয়ের ইচ্ছের কথা।মুক্তমনা হয়ে আকাশে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখে পরীর মন।

রহমান সাহেবের স্ত্রী খুব ভালোবেসে মেয়ের নাম রাখেন পরী।কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! পরীর মুখে হাসি কখনো দেখতে পাননি তিনি।পরীকে জন্ম দিয়েই নিজের কর্তব্য থেকে ছুটি নিয়ে অভিমানী হয়ে চলে যান পরপারে।

একমাত্র মেয়েকে সম্বল করে আজো বেঁচে আছেন আব্দুর রহমান।
বনজঙ্গলের পথ পেরিয়ে সরু রাস্তাটার পথ ধরে হনহন করে হেঁটে চলছেন তিনি।প্রায় ত্রিশ মিনিট পর বাড়িতে এসে পৌঁছালেন। রহমান সাহেব দরজা খুলে দেখেন পরী বিছানায় ঘুপটি মেরে বসে আছে।গায়ে আস্তে করে হাত দিতেই পরী ফিরে তাকায়।
বাবাকে দেখেই এক টুকরো রৌদ্রময় হাসি ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে।পরক্ষণেই কি যেন ভেবে অভিমান করে মুখ ঘুরিয়ে নেয় পরী।

রহমান সাহেব সাহেব একটু বিচলিত হয়ে পড়েন।মেয়ের মিষ্টি অভিমানে তার কপালে ভাজ পড়ে।প্যান্টের পকেট থেকে কিছু চকলেট বের করেন।চকলেট দেখেই পরীর মন খুশিতে ভরে যায়।বাবাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়।রহমান সাহেবও আবেগপ্রবণ হয়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।কপালে আলতো করে চুমু দেন।খুব ইচ্ছে হয় তার সারাজীবন এভাবেই যেন ভালোবেসে আগলে রাখতে। কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব? একদিন তো পরীকেও অন্যকারো ঘরে যেতে হবে।তখন কিভাবে থাকবে নিজে,পরীকেই বা কেউ কি বিয়ে করবে? তাতে অবশ্য রহমান সাহেব একটুও চিন্তিত নন।মেয়েকে বুকে জড়িয়ে একটা জীবন অনায়াসেই কাটিয়ে দিতে পারবেন তিনি।পরী ইশারায় বাবার সাথে কথা বলে।যখন ইশারায় না বুঝে, তখন সেটা খাতায় লিখে বাবাকে দেখায়।

হঠাৎ রহমান সাহেবের ঘোর কাটে।দেখে পরী শার্ট ধরে টানছে।ইশারায় বাবাকে খাবারের জন্য ডাকে।রহমান সাহেবও বুঝতে পেরে খাবার প্লেটে নিয়ে আসেন।সবসময় রান্না না করতে পারলে বাজার থেকে খাবার কিনে নিয়ে আসেন। রাতের খাওয়া শেষে বাবা-মেয়ে মিলে অনেক গল্প করে।পরীর গল্প,ভূতের গল্প এসব শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পড়ে পরী।কিন্তু ঘুম যে রহমান সাহেবের চোখে আসেনা। অচেনা এক আতঙ্কে হৃদয় আঁতকে উঠে। বাইরে ঝিঁঝিপোকারা অনবরত ডেকে যাচ্ছে। নিস্তব্ধ থমথমে নির্ঘুম রাতগুলো ঘুম কেড়ে নেয় রহমান সাহেবের কাছ থেকে।হাজারে কল্পনা-জল্পনা তার পরীকে ঘিরে।এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েন টেরই পাননি।

ভোরে ঘুম ভাঙ্গলে রহমান সাহেব দেখেন পরী তার বুকে ঘুমাচ্ছে। মেয়ের মাথা হাত বুলিয়ে দিয়ে তিনি নামাজ পড়ার জন্য উঠে পড়েন।রান্নাবান্না করে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে স্টেশনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে রহমান সাহেব।আচমন পরী এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।বায়না ধরেছে তার সাথে আজ স্টেশনে যাবে।কিন্তু রহমান সাহেব নিতে নারাজ।ওরকম একটা নির্জন জায়গায় মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার সাহস হচ্ছিলোনা তার।কিন্তু পরীর চোখের জল তার সিদ্ধান্তকে হার মানিয়ে দেয়।

সারাদিন ঘরে বন্ধি হয়ে থাকা মেয়েটির এই ছোট্ট ইচ্ছাটা কিভাবে মানা করবে সে? যে মেয়েটার প্রতিটা দিন কাটে পুতুলের সাথে,তার কি ইচ্ছে জাগতে পারেনা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার? পাখির কিচিরমিচির শব্দশুনার? রংধনুর নীল আকাশটা দেখবার? অচেনা এক আর্তনাদ রহমান সাহেবের বুকে বারবার আঘাত হানছে।মেয়েকে আর মানা করতে পারলেন না।পরীকে নিয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন।পরী বাবার হাত ধরে লাফাতে লাফাতে পথ চলছে।ঠিক যেমনটা কোনো বন্ধি পাখি খাঁচা থেকে মুক্ত হওয়ার পর করে থাকে।

প্রায় ঘন্টাখানেক পর তারা স্টেশনে পৌঁছালো।স্টেশনে পৌঁছাতেই পরীকে খুব বিষণ্ণ মনে হলো।নির্জন একটা এলাকা দেখে পরী ভয়ে স্থির হয়ে গেলো।রহমান সাহেব বুঝতে পারলেন পরী মোটেও এখানে এসে খুশি নয়।চারিদিকে কেমন যেন একটা নিরবতা বিরাজ করছে।সুদূরে কোনো পাখির আওয়াজ স্পষ্ট কানে ভেসে আসছে।রহমান সাহেব মেয়েকে তার অফিস রুমে বসিয়ে স্টেশন পরিষ্কারে মগ্ন হলেন।এই কাজটি তিনি বিগত দশ বছর ধরে করে আসছেন।কখনো বিরক্তির ছাপ তার মুখে আসেনি।একা একজন মানুষ পুরো স্টেশনটার দায়িত্বে আছেন।

কাজ শেষ করে অফিস রুমে এসে রহমান সাহেব থ হয়ে গেলেন।পরী রুমে নেই! একটা বড় কম্পন বয়ে গেলো রহমান সাহেবের শরীরে।অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসলো।দৌড়ে স্টেশনের চারপাশ খুঁজে বেড়ালেন। কিন্তু কোথাও পরীকে পেলেন না।গভীর অরণ্যে হারিয়ে ফেলার সেই ভয় যেন আজ তার বাস্তবে পরিণত হচ্ছিল।পাগলের মত হন্নে হয়ে জঙ্গলের মধ্যে মেয়েকে খুঁজতে লাগলেন। হঠাৎ দেখেন একটা গাছের কুঠরির আড়ালে গুড়িসুড়ি হয়ে বসে আছে পরী।বাবাকে দেখেই দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরে।প্রচণ্ড রাগে মেয়ের গালে চড় বসিয়ে দেন রহমান সাহেব।

আশ্চর্য! পরীর চোখে কোনো জল নেই।কিন্তু গালে আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মুখটা বিষণ্ণ হয়ে এসেছে ব্যথায়।রহমান সাহেব ব্যথিত মনে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
:- এভাবে কেন চলে এসেছিলি মা? জানিস না তোকে দেখতে না পেলে যে আমার ভয় হয়।
অভিমানী স্বরে বললেন রহমান সাহেব।পরী এতক্ষণ বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে ছিলে।পরে বাবাকে ইশারায় বললো,
:- তুমি বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাবারটা ব্যাগটা টেবিল রেখে বাইরে যাওয়ার পরই হঠাৎ কোথায় থেকে যেন একটা কুকুর এসে ব্যাগটা কামড় দিয়ে নিয়ে বাইরের দিকে চলে যায়।আমি কুকুরের পিছনে আসতে আসতেই হঠাৎ করে পথ ভুলে যায়।খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম বাবা।তাই এখানে চুপ করে বসে ছিলাম।

নিজেকে নিজের কাছেই অপরাধী মনে হচ্ছিল রহমান সাহেবের।আদর করে দু’হাতে মেয়ের গাল ধরে বললেন,
:- সরি মা।আমার ভুল হয়ে গেছে।আর কক্ষনো এমন হবেনা প্রমিস।
পরীর মুখে হাসির ঝলক দেখে অশান্ত মনে প্রাণ ফিরে পায় রহমান সাহেব।দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে প্রায়।এরকম একটা ঘটনার পর মেয়েকে আর এখানে রাখার সাহস পেলেন না।অগত্যা মেয়েকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন।

সময়টা বিকালবেলা।আকাশটা থমথমে।মনে হচ্ছে প্রকৃতি আপন কক্ষপথে এসে থমকে গেছে।বিষণ্ণ করে তুলেছে হাওয়াকে। পূর্বদিকের আকাশটা একখণ্ড কালো মেঘ এসে জমা হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ার পূর্বাভাস খুব সহকেই আন্দাজ করতে পারলেন রহমান সাহেব।ইতিমধ্যে পরীকে বাড়িতে রেখে স্টেশনের দিকে রওনা দিয়েছেন।ঠান্ডা বাতাসে শরীরে একটা অন্যরকম শীতল অনুভূতি কাজ করছে। মা হারা মেয়েটাকে রেখে আসতে মনটা তার কোনোভাবেই সায় দিচ্ছিলোনা।কিন্তু নিরুপায় হয়ে তাকে যেতেই হচ্ছে।
মাঝপথে থাকা অবস্থায় গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেলেন রহমান।বয়স্ক মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে কাঁপতে লাগলেন।খুব ঠান্ডা লেগেছে মনে হয়।তার উপর আবার ঝড়ো বাতাস।স্টেশনে পৌঁছে অনেকটা চিন্তায় পড়ে গেলেন রহমান সাহেব।ঘরে মেয়েটা একা বন্ধি।কাছে অন্য কোনো ঘরবাড়িও নেই।এদিকে বৃষ্টি আর বাতাসের তেজ ক্রমশ বেড়েই চলছে।

রহমান সাহেবের মন অস্থির হয়ে উঠছে।নিজেকে কোনোভাবেই স্থির রাখতে পারছেন না।অফিস রুমে ঢুকে চেয়ারটায় ধপ করে বসে পড়লেন।মেয়েকে নিয়ে তার হাজারে স্বপ্ন চোখের সামনে ছবির মতো ভাসতে লাগলো।মনে হচ্ছে চাইলেই স্বপ্নগুলোকে তিনি ছুঁয়ে দিতে পারেন।মেয়ের বিয়ে হবে,সুন্দর একটা ঘর হবে পরীর।সুন্দর করে বউয়ের সাজে সাজবে তার পরী।পরীর সাজতে খুব ভালোবাসে।কিছুদিন আগে স্টেশনে কোনো কাজ না থাকায় দুপুরের দিকে বাড়িতে ফিরেন রহমান সাহেব।দরজা খুলতেন দেখতেন পান পরী সাজুগুজো করছে।বাবাকে দেখে লজ্জা পেয়েই মুখ ঘুরিয়ে নেয় পরী।রহমান সাহেব মুচকি হেসে মেয়ের পাশে গিয়ে বসে।গায়ে হাত রাখতেই লজ্জায় বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরী।রহমান সাহেব মেয়ের মুখ তুলে জিজ্ঞেস করেন,
:- কিরে মা সাজতে বুঝি তোর খুব ভালো লাগে?
পরী ইশারায় হ্যাঁ উত্তর দেয়।
:- দেখবি একদিন তুই এর চেয়েও অনেক সুন্দর সাজে অন্যের ঘরের বউ হয়ে যাবি।সেদিন আবার আমাকে ভুলে যাবি নাতো?
পরী লজ্জায় দৌড়ে বাইরে চলে যায়।

রহমান সাহেব আবারো মুচকি হাসে।এত সুন্দর মায়াময়ী একটা মেয়ে পেয়ে জীবনটাকে পূর্ণ মনে করেন রহমান সাহেব।হাজারো আহ্লাদী, খুনসুটি আর ভালোবাসায় প্রতিটা দিন কেটে যায় বাবা মেয়ের।
হঠাৎ একটা ঝড়ো হওয়ার শব্দে চমকে উঠেন রহমান সাহেব।ধড়ফড় করে চেয়ারে ঠিক হয়ে বসে পড়েন।চোখদুটো কচলাতে কচলাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন রাত দশটা বেজে গেছে।তারমানে তিনি এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলেন!বাইরে ঝড় হচ্ছে।বাতাসের প্রবল বেগে গাছপালা সব প্রায় উপড়ে যাওয়া অবস্থা। মেয়ের কথা ভাবতেই বুকেরর ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে রহমান সাহেবের।ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ছুটে চললেন পঞ্চাশ বছর বয়সের এই বৃদ্ধ।

অন্ধকারাচ্ছন্ন ঝড়ের রাতে ঝোপঝাড়ের মধ্য দিয়ে ছুটে চলছেন রহমান সাহেব।গায়ে থাকা ভেজা শার্টের অংশ দিয়ে বারবার মুখ মুছছেন তিনি।কোনোভাবেই স্থির হতে পারছেন না।পায়ের ক্ষিপ্রতা ক্রমশ বেড়েই চলছে।
প্রায় অনেকক্ষণ পর বাড়িতে পৌঁছালেন রহমান সাহেব।

কিন্তু একি! বাড়ী কোথায়? একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে জায়গাটা।রহমান সাহেব স্থির হয়ে গেলেন।মনে হচ্ছে থমকে গেছে সময়ের পথচলা।নিঃশ্বাসগুলো ঘন হয়ে আসছে।পৃথিবী সরে গেছে তার কক্ষপথ থেকে।একটু দূর থেকে একটা অদ্ভুত শব্দ শুনে চমকে উঠেন রহমান সাহেব।খুব কাজে গিয়ে দেখতে পান তার পরী রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে।পকেট থেকে লাইট বের করে পরীর মুখের দিকে তাকান।মাথাটা থেঁতলে গেছে পরীর।অন্ধকারে লাইটের ঝাপসা আলোয় বাবাকে অস্পষ্টভাবে দেখছে পরী।ঠোটটা কেঁপে উঠছে বারবার। যেন হাজারো আকুতি হৃদয় চিরে বের হয়ে বলতে চাচ্ছে, বাবা আমি না তোমার মেয়ে ? তোমাকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকি বলো? আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা।তোমার মুখটা আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিনা কেন? সবকিছু খুব ঘোলাটে লাগছে। আমি কি আর বাঁচবো না বাবা?

রহমান সাহেব স্তব্ধ হয়ে গেছেন।নির্বাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।জীবনে এই প্রথম হারানোর ব্যথা তীব্রভাবে কুকড়ে খাচ্ছে তাকে।মেয়েকে বুকে জড়িয়ে আহাজারি করতে লাগলেন।তবে কি এটাই হারানোর ভয়? প্রিয়জন যেখানে নির্মমভাবে চোখের সামনে নিজেকে একা করে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায়।হঠাৎ রহমান সাহেব বুঝলেন পরীর শরীর ঠান্ডা হয়ে এসেছে।ঘোর কাটলে বুঝতে পারলেন তার পরী আর কখনো নিঃশ্বাস ফেলবে না।অভিমান করবে না তার বাবার সাথে।রহমান সাহেবের চোখে পানি নেই।হৃদয়টা পাথর গেছে তার।আচমকা মাথা ঘুরে তিনি মাটিতে পড়ে যান।
সকালে সূর্যের মিষ্টি রোদের আলো এসে রহমান সাহেবের মুখে পড়ে।মেয়ের লাশটা কাঁধে করে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন তিনি।দু’ফোটা চোখের জল মাটিতে গড়িয়ে পড়লো।একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন রহমান সাহেব।বিষণ্ণ শুকনো মুখে হাসি দিয়ে মনে মনে বিধাতাকে প্রশ্ন করেন,এটাই কি তবে হারিয়ে ফেলার মানে?

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

৬ Comments

  1. Md Rahim Miah

    অনেক ভালো লেগেছে

    Reply
  2. Md Rahim Miah

    আজো -আজও
    কক্ষনো-কখনো
    ঠোটটা-ঠোঁটটা
    খুব কষ্টের একটা গল্প পড়লাম ভালোই লেগেছে। শেষে যে এইভাবে শেষ হবে ভাবতে পারিনি। কত স্বপ্ন ছিল রহমান সাহেবের মেয়েকে নিয়ে কিন্তু তা পূরণ হয়নি। আপনার জন্য শুভ কামনা

    Reply
  3. Tanjina Tania

    তোমার গল্প নিয়মিত পড়া হয় না। লাস্ট বোধহয় ডাকপিয়ন পড়েছি। দারুণ ছিল। আজ গল্পে তোমার নাম দেখে মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। মানুষের জীবনের স্বপ্ন তো পূরণ হয় না, তাই হয়তো বাবার স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে গেল। কষ্ট লাগলো পড়ে।

    Reply
  4. Nafis Intehab Nazmul

    গল্পটা সুন্দর হয়েছে। অনেকটা বাস্তবতার সাথে মিলে গেছে। মূলত, কিছু মানুষের কষ্ট কখনো ফুরোয় না। স্বপ্ন গুলো অপূর্ণ রয়ে যায়।
    বানান….
    বন্ধি~ বন্দী
    ঝিঁঝিপোকা~ ঝিঁঝিঁপোকা
    আচমন~ আচমকা
    হন্নে~ হন্যে

    Reply
  5. অচেনা আমি

    আসসালামু আলাইকুম। গল্প প্রসঙ্গে কিছু কথা :
    গল্পের লেখনী মোটামুটি ভালো লেগেছে। আরও ভালো হওয়া উচিত ছিল। বেশ কিছু ভুল রয়েছে। যেগুলো না থাকলে বেশি ভালো লাগতো।
    প্রথমেই যেটা বলতে চাই তা হলো :
    পৃথিবীতে এতো জায়গা থাকতে বন জঙ্গলে থাকার কী দরকার। স্টেশন বন জঙ্গলের কাছে তাই? কিন্তু মেয়ে যেহেতু ছোট আর বোবা সেহেতু লোকালয়ে থাকায় তো যুক্তিযুক্ত তাই না? এখন হয়তো বলবেন এটা গল্প। হুম এটা গল্প বটে, তবে বাস্তবতার সাথে মিল থাকলে পড়তে বেশি ভালো লাগে।
    যাইহোক ভুলগুলো নিচে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম :
    লালা – লাল
    পথ
    পথচিহ্ন – পদচিহ্ন
    ঝামেলামুক্ত – ঝামেলা মুক্ত
    দশবছর – দশ বছর
    আজো – আজও
    পথচলায় – পথ চলায়
    অন্যকারো – অন্য কারো
    বনজঙ্গলের – বন-জঙ্গলের
    না আলাদা বসে। যেমন :
    আসেননা – আসেন না
    চাননা – চান না
    আসেনা – আসে না
    হচ্ছিলোনা – হচ্ছিলো না
    পারেনা – পারে না
    হবেনা – হবে না

    কিভাবে – কীভাবে
    হাজারে – হাজারো
    মেয়ের মাথা হাত বুলিয়ে… – মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে…
    রান্নাবান্না করে প্রস্তুত হচ্ছে.. – রান্নাবান্না করে প্রস্তুত হচ্ছেন
    আচমন – আচমকা
    শব্দশুনার – শুব্দ শোনার
    গুড়িসুড়ি – গুটিসুটি
    সহকেই – সহজেই
    হওয়ার – হাওয়ার
    চোখদুটো – চোখ দুটো
    তারমানে – তার মানে
    কাজে – কাছে
    ঠোটটা – ঠোঁটটা
    পূর্বদিকের আকাশটা একখণ্ড কালো মেঘ এসে জমা হয়েছে – পূর্ব দিকের আকাশটাতে / আকাশে এক খণ্ড কালো…

    পরীর সাজতে খুব ভালোবাসে – পরী সাজতে…
    দরজা খুলতেন দেখতেন পান পরী সাজুগুজো… – দরজা খুলতে দেখতে পান পরী সাজুগুজু…

    জীবনে এই প্রথম হারানোর ব্যথা…. – আচ্ছা উনি তো স্ত্রীকেও হারিয়েছেন। তাহলে প্রথম হারানোর ব্যথা কেন হতে যাবে? নাকি স্ত্রী মারা গেলে তিনি ব্যথা পাননি?

    এক লাইন শেষ হলে (।) এর পর স্পেস দিয়ে আর এক লাইন শুরু করতে হয়। কিন্তু পুরো গল্প জুড়েই এই ভুল বিদ্যমান।
    যাইহোক আগামীতে খেয়াল রেখে লিখলে অনেক ভালো করতে পারবেন আশা করি।
    আপনার জন্য শুভ কামনা ।

    Reply
  6. Halima tus sadia

    অসাধারণ লিখেছেন।
    খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।
    মানুষের জীবনে কিছু কিছু আশা,আকাঙ্খা স্বপ্নই থেকে যায়।সব স্বপ্নতো আর পূরণ হয় না।
    তবুও নতুন করে স্বপ্ন দেখার জন্য বাঁচতে হয়।
    বাস্তবতা বড় কঠিন।

    বানানে ভুল আছে।উপরে কমেন্টে অনেকে বলেছে।
    শুধরে নিবেন।
    শুভ কামনা রইলো।

    Reply

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *